সোলার হোম সিস্টেমের মাধ্যমে ২ কোটির বেশি গ্রামীণ জনগণ বিদ্যুতায়নের আওতায় এসেছে। বায়ুর ম্যাপিং নয়টি সাইটে করা হয়েছে এবং খুব শিগগিরই অফশোর বায়ুর সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা করা হবে। বিদ্যুতের মহাপরিকল্পনা হালনাগাদ করা হচ্ছে। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৮০,০০০ সোলার হোম সিস্টেম বিক্রি হচ্ছে। সারাদেশে প্রায় ৩০ লক্ষ সোলার হোম সিস্টেম বিভিন্ন এনজিওর সাহায্যে ইন্সটল করা হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশেও নবায়নযোগ্য শক্তির উপর নির্ভরতা বাড়ছে।
নবায়নযোগ্য এনার্জির জন্য সৌরশক্তিকে কাজে লাগিয়ে সরকার দেশের বিভিন্ন স্থানে সোলার পার্ক, সোলার মিনি গ্রিড, সোলার রুফটপ, সোলার ইরিগেশন ইত্যাদি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। বায়ুশক্তি কাজে লাগিয়ে জেনারেটরের টারবাইন ঘুরিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। বাংলাদেশের প্রথম বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্র মুহুরী প্রজেক্ট বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রে অবস্থিত ৪টি ২২৫ কিলোওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন টারবাইন দিয়ে প্রায় এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। কক্সবাজার জেলার কুতুবদিয়ায়, কুতুবদিয়া বায়ুবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ২০ কিলোওয়াট ক্ষমতার ৫০টি টারবাইন দ্বারা ১ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হয়। বায়োগ্যাস এবং বায়োমাস থেকেও দেশের বিভিন্ন স্থানে জ্বালানির চাহিদা মেটানো হচ্ছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতিমালা অনুযায়ী, সরকার ইতোমধ্যে বেশকিছু প্রকল্প গ্রহণ করেছে। ১৩টি স্থানে উইন্ড রিসোর্স ম্যাপিং চলছে। চট্টগ্রাম বিভাগে পানিবিদ্যুতের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। এছাড়া আরও যেসব ক্ষেত্রে সমীক্ষা কাজ শুরু হয়েছে, সেগুলো হলো সোলার বোটিং সিস্টেম, শিল্পক্ষেত্রে সোলার ওয়াটার হিটিং, মৎস্যচাষে সোলার ওয়াটার সাপ্লাই, পৌরবর্জ্য হতে বিদ্যুৎ উৎপাদন, শিল্প স্থাপনায় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সোলার রুফটপ সিস্টেম স্থাপন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে বাণিজ্যিক ভিত্তিতে সোলার রুফটপ সিস্টেম স্থাপন ইত্যাদি।
নবায়নযোগ্য জ্বালানি ঘিরে ক্রমেই সম্ভাবনা তৈরি হচ্ছে। পরিবেশবান্ধব এই জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও রোল মডেলে পরিণত হচ্ছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি নিয়ে গ্লোবাল স্ট্যাটাসের রিপোর্ট অনুযায়ী, বাসাবাড়িতে সৌরবিদ্যুতের ব্যবহারে বাংলাদেশের অবস্থান এখন বিশ্বে দ্বিতীয়। আর নবায়নযোগ্য শক্তি খাতের বৈশ্বিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল রিনিউঅ্যাবল এনার্জি এজেন্সির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, সৌরবিদ্যুৎ খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে পঞ্চম। এর মাধ্যমে দেশের ১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে।
নবায়নযোগ্য জ্বালানির মধ্যে সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে সৌরবিদ্যুৎ। বর্তমানে সারাদেশে ১ হাজার ৪৬৭ মেগাওয়াট ক্ষমতার সোলার পার্ক স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। সরকারি বিভিন্ন ইউটিলিটি কর্তৃক আরও ৩৯০ মেগাওয়াট ক্ষমতার সোলার পার্ক স্থাপনের কার্যক্রম বাস্তবায়নাধীন আছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে ১ হাজার ৯৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সোলার পার্কের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত করা সম্ভব হবে। দেশের গ্রিডবহির্ভূত গ্রামীণ এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে ইডকলসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠান দ্বারা এরই মধ্যে প্রায় ৫৮ লাখ সোলার হোম সিস্টেম স্থাপন করা হয়েছে। এর ফলে প্রতি বছর ২২৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার মূল্যের ১ লাখ ৮০ হাজার টন কেরোসিন সাশ্রয় হয়েছে।
এ ছাড়া দুর্গম ও দ্বীপাঞ্চলে সোলার মিনিগ্রিড প্রকল্পের মাধ্যমে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে। এ পর্যন্ত ১৯টি সোলার মিনিগ্রিড প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। আরও ৯টি প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। গ্রেডার তত্ত্বাবধানে ইডকল কর্তৃক মনপুরা দ্বীপকে ১০০ শতাংশ নবায়নযোগ্য জ্বালানিভিত্তিক দ্বীপ হিসেবে গড়ে তুলতে বিদ্যুতায়নের কার্যক্রম চলমান আছে। কিছুদিন আগেই ময়মনসিংহের ব্রহ্মপুত্র তীরে সুতিয়াখালী ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প পরীক্ষামূলক উৎপাদনে গেছে। ১৭৪ একর জমির ওপর ৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ পর্যন্ত এটি দেশের সবচেয়ে বড় সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প। সৌরশক্তি ব্যবহারের কয়েকটি নতুন প্রযুক্তি নিম্নে উল্লেখ করা হলো, যার মাধ্যমে আমরা সহজেই এই শক্তি ব্যবহার করতে পারব।