শোকাবহ আগস্টে বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করতে গিয়ে আজ তাঁর নিজের শ্রমে-ঘামে-রক্তে গড়া তাঁর স্বপ্নের বাংলাদেশের বিস্ময়কার রূপান্তরের কথা বলতে চাই। স্বাধীনতার পর পরশত-সহস প্রতিকূলতার মধ্যে যাত্রা শুরু করা বাংলাদেশ ‘তলাবিহীন ঝুড়ি’র অপবাদ মুছে ফেলে আজ সারা পৃথিবীর সামনে অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের এক রোল মডেল। তিনি বাংলাদেশ স্বাধীন করেছিলেন বলেই তো তা সম্ভব হয়েছে। পাকিস্তান সৃষ্টির গোড়া থেকেই শাসকগোষ্ঠীর কোনো অন্যায়কে বঙ্গবন্ধু বিনা-চ্যালেঞ্জে যেতে দেননি। মূলত অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ-প্রতিবাদ করাই ছিল তাঁর স্বভাব। বঙ্গবন্ধু গভীরভাবে বিশ্বাস করতেন, কৃষির উন্নতি ছাড়া এ দেশের মানুষের প্রকৃত মুক্তি আসতে পারে না। কৃষকরাই এ দেশের প্রাণ। আক্ষরিক অর্থেই তিনি ছিলেন দুখী মানুষের বন্ধু। তাদের দুখ তিনি খুব কাছে থেকে দেখেছেন এবং তরুণ বয়সেই প্রতিজ্ঞা করেছেন সেই দুখ মোচনের জন্য তিনি কাজ করবেন। তাঁর রাজনৈতিক জীবনের বড় এক অংশই কেটেছে কারাগারে। তাঁর লেখা ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ ও ‘কারাগারের রোজনামচা’ পড়লেই বোঝা যায় তিনি গরিব-দুখী মানুষের দুখ কতোটা গভীরভাবে বুঝতেন। যারা কারাবন্দি ছিলেন এবং তাঁর রান্নাবান্নাসহ নানা কাজে সাহায্য করতেন সেই সব দুখী মানুষের জীবনের দুখ- বেদনার কথা গভীর মনোযোগ সহকারে শুনতেন। আর মনে মনে ভাবতেন এদের মতো মানুষের দুখ কি করে মোচন করা যায়।
সে কারণে যখনই দেশ পরিচালনার সুযোগ পেয়েছেন তখনই তাদের জন্য কিছু না কিছু করার উদ্যোগ নিয়েছেন। বিশেষ করে স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষে বঙ্গবন্ধু যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলদেশের পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তি অর্জনের জন্য এক মনে কাজ করছিলেন তখনই ঘাতকের নির্মম বুলেট তাঁকে জনগণের কাছ থেকে শারীরিকভাবে কেড়ে নেয়। বঙ্গবন্ধু প্রায়ই বলতেন- “এ স্বাধীনতা আমার ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না খায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি আমার মা বোনেরা কাপড় না পায়। এ স্বাধীনতা আমার পূর্ণ হবে না যদি যুবক শ্রেণি চাকরি না পায় বা কাজ না পায়”। মাত্র সাড়ে তিন বছরের দেশ শাসনের মাধ্যমে তিনি যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের রাস্তাঘাট, সেতু, রেল, বন্দরসহ সকল ভৌত অবকাঠামো পুনর্নির্মাণে সফল হয়েছিলেন। বাংলাদেশ ব্যাংক, স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হাসপাতালসহ সামাজিক অবকাঠামো পুনর্নির্মাণ করতে সক্ষম হন। স্বল্পতম সময়ে দেশের সংবিধান, প্রথম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা তৈরি করেন। আরো হয়তো অনেক কিছুই তিনি করতে পারতেন। কিন্তু ষড়যন্ত্রকারীদের বুলেটে স্তব্ধ হয়ে যায় এই মহাপ্রাণ।
আজ দেশ চালানোর ভার তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাঁধে। যদি আজকের উন্নয়ন পরিকল্পনার দিকে দেখি, সেটা রূপকল্প ২০২১ হোক বা সপ্তম পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা, আমরা বঙ্গবন্ধুর কথাগুলোরই প্রতিফলন দেখতে পাই। বঙ্গবন্ধুর কৃষি ভাবনার আলোকেই বর্তমান সরকার কল্যাণধর্মী ও কৃষকবান্ধব উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করেছে।
ড. আতিউর রহমান, সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক