1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ক্ষতিকর উপাদান দূর করে নীতিবান নেতা খুঁজুন

এ কে এম আতিকুর রহমান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২১ জুন, ২০২৩

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকেই মনে করেন বর্তমান সরকার অনেক সহনশীল। এই সহনশীলতা ভবিষ্যতে সরকার ও দলের জন্য দুর্ভোগ ডেকে আনতে পারে বলেও অনেকের আশঙ্কা। সরকার ও দলের অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায়ই বিরোধী পক্ষের লোকজন ঘাপটি মেরে বসে আছে, এমন কথা তো প্রায়ই শোনা যায়। তাদের অনেকেরই রং বদল করতে সময় লাগবে না।

আবার এটাও ঠিক যে আওয়ামী লীগে বহু যোগ্য আদর্শবাদী ও নীতিবান নেতা আছেন, যাঁরা এই কঠিন সময়ে দায়িত্ব পেলে যোগ্যতার পরিচয় দেবেন। সংকট উত্তরণে প্রধানমন্ত্রীকে সহায়তা করবেন। তাঁদের সামনে আনতে হবে।

কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, যোগ্য আদর্শবাদী ও নীতিবান নেতার সংজ্ঞা কে নির্ধারণ করবে? বাছাই করার পদ্ধতি কী হবে? নির্ধারিত সংজ্ঞা অনুসরণে যোগ্যদের বাছাই করার দায়িত্ব কে বা কারা পালন করবে? বাছাইকালে যেকোনো প্রভাব খাটানো বা পক্ষপাত করা হবে না তার নিশ্চয়তা কী? যোগ্য আদর্শবাদী ও নীতিবানদের দায়িত্ব দেওয়ার ইচ্ছা বা মানসিকতা দল পোষণ করে কি না? দলের মধ্যে বিরাজিত অভ্যন্তরীণ বিভাজনের কারণে যোগ্য নেতাদের যথাযথ দায়িত্ব প্রদান থেকে বঞ্চিত না করার কি কোনো ব্যবস্থা আছে? মাঠ পর্যায়ে যেসব আদর্শবান ও ত্যাগী নেতারা আছেন তাঁদের যথাযোগ্য মূল্যায়নের ব্যবস্থা কি দলের মধ্যে আছে? সব শেষে এসব কারণে সার্বিকভাবে দল যে কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে তার দায়িত্ব কে নেবেন?

আওয়ামী লীগের সভাপতি, যিনি বাংলাদেশের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, তাঁকে যোগ্য, ত্যাগী ও নীতিবান নেতাদের কথা কারা জানাবেন? যাঁদের মাধ্যমে তিনি সঠিক ও পক্ষপাতহীন তথ্যাদি নেবেন, তাঁরা কি সেসব সরবরাহ করার মতো অবস্থানে রয়েছেন? এসবের জন্য তাঁদের নির্ভর করতে হবে যাঁদের ওপর, তাঁদের অনেকেই তো ওই সব জঞ্জালের মধ্যে নিমজ্জিত।

দলে অভ্যন্তরীণ বিভাজন আর নানা কোন্দলের মধ্যে তাঁদের রাজনীতি চালিয়ে যেতে হয়। যোগ্য, সৎ আর আদর্শবানদের জন্য জায়গা খুবই সীমিত হয়ে আছে। রাজনীতির যে সিন্ডিকেট বর্তমানে চলমান রয়েছে, তা ভেঙে ফেলা খুব সহজ কাজ নয়। বরং দিন দিন সিন্ডিকেটের প্রভাব ও প্রতিপত্তি শক্তিশালীই হচ্ছে।

আর সেই শক্তির কাছে হেরে যান দলের ত্যাগী, সৎ, আদর্শবান নেতা ও কর্মীরা। তাঁদের দলে কোণঠাসা করে রাখা হয়। তাঁদের সঠিক মূল্যায়ন করা হয় না।

চলতি বছরের ৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় পার্টির ত্রিবার্ষিক কাউন্সিল অধিবেশনের প্রধান অতিথির বক্তব্য দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, ‘ভালো মানুষ রাজনীতিতে আসতে চায় না। আমরা রাজনীতিকে তাদের জন্য উপযুক্ত করতে পারিনি।

চরিত্রবানদের রাজনীতিতে নিয়ে আসতে হবে। চরিত্রবানরা রাজনীতিতে না এলে রাজনীতি খারাপ হয়ে যায়।’ এর সপ্তাহ দুয়েক পর ২৬ জানুয়ারি আওয়ামী লীগের ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রতিনিধিসভায় তিনি নিজের লোক, আত্মীয়-স্বজন দিয়ে কমিটি করা চলবে না বলে উল্লেখ করে ত্যাগী, দুঃসময়ে যাঁরা ছিলেন তাঁদের দিয়ে কমিটি করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। রাজনীতির মঞ্চে এ ধরনের কথা বলা যতটা সহজ, ঠিক ততটাই কঠিন বাস্তবায়ন করা। বোধ হয়, ওসবই কথার কথা, রাজনীতির কথা। বাস্তবে চলে ঠিক উল্টোটাই। আত্মীয়-স্বজন বা নিজেদের ঘরানার লোক দিয়েই কমিটি করা হয়ে থাকে। এ ক্ষেত্রে সৎ, ত্যাগী এবং দলের দুঃসময়ের সারথিরা সর্বদাই থাকেন উপেক্ষিত, বঞ্চিত। প্রায়ই এমন সব ব্যক্তিকে দলে অন্তর্ভুক্ত করতে দেখা যায়, যাঁদের না আছে রাজনৈতিক মেধা, সততা বা দলের জন্য উল্লেখ করার মতো কোনো ত্যাগ। এমন ধারায় যদি আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো চলে, তাহলে কিভাবে জনগণ সৎ, মেধাবী ও ত্যাগীদের নেতৃত্ব দেখতে পাবে? আর এই বাস্তবতায় তাঁদের সামনেই বা আনবে কিভাবে? এ দায়িত্বটি নেওয়ার মতো বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দল আওয়ামী লীগের মধ্যে কি কেউ আছেন? তবে এর উল্টো চিত্র দেখে কেউ যেন কষ্ট না পান।

ইচ্ছা থাকলে নাকি একটা না একটা উপায় বের করা যায়। আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব যদি সে রকম ইচ্ছা পোষণ করে, তাহলে উপায় বের করা যে যাবে না তেমনটি নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সেটি তাঁরা করতে চান কি না। যদি উত্তরটি ইতিবাচক হয়, তবে আর সময় নষ্ট না করে পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু করে দিতে হবে। সে এক দুস্তর পারাবার। মেরামত করা ততটা সহজ হবে না। কারণ যেমনটি জনাব ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘আসলে রাজনীতি তো খারাপ হয়েই আছে।’ তবে কঠোর হাতে সেটি করতে পারলে দলই উপকৃত হবে। দেশ পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়ার মতো যোগ্য ও অঙ্গীকারবদ্ধ নেতার অভাব হবে না, তাঁরা নিজেরাই এগিয়ে আসবেন। তখন তাঁরা জনগণের সেবায় আন্তরিক ও সততা প্রদর্শন করতে পারবেন। দুর্নীতি অনেকটাই কমে আসবে, জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করা যাবে এবং দেশের উন্নয়নের গতি বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।

এবার আসি আমলাদের প্রসঙ্গে। বর্তমান সরকারের বিরোধী আমলাদের প্রভাব ও তৎপরতা এখন বেড়েছে বললে একটু কমই বলা হয়। একটি চিহ্নিত মহল এখন রাষ্ট্রযন্ত্রের সব ক্ষেত্রে কলকাঠি নাড়ছে। সেই ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর থেকে আমলাদের রাজনীতির ‘স্ট্যাম্প’ মারা শুরু হয় এবং সেই প্রক্রিয়াটি কমবেশি চলমান থাকে। তবে কিছু আমলা রং পাল্টে চলেন, সব দিক ম্যানেজ করে নেন; এমনকি অনেক ক্ষেত্রে এই বর্ণচোরা আমলাদের সরকার বিশ্বাস ও ভরসা করে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদের দায়িত্ব দেয়, অবসরের পরও চুক্তিতে বহাল রাখে। অথচ তাঁরা সুযোগ পেলেই সরকারকে বেকায়দায় ফেলে দিতে বিন্দুমাত্র সময়ক্ষেপণ করেন না। আওয়ামী লীগ নেতাদের মনে করা ভুল হবে যে সব আমলাই তাঁদের আদর্শে বিশ্বাসী। আমার ধারণা, আমলাদের, বিশেষ করে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মধ্যে ৬০ থেকে ৭০ শতাংশই আওয়ামীবিরোধী। এমন কোনো মন্ত্রণালয় বা সরকারের দপ্তর নেই, যেখানে তাঁদের সরব উপস্থিতি পাওয়া যাবে না। এ প্রসঙ্গে আরেকটি বিষয় উত্থাপন না করলেই নয় যে অনেকেই আবার ওই সব আমলার যোগসাজশে দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির আশ্রয় গ্রহণ করে থাকেন বিধায় আমলারাও তাঁদের দুর্বলতার সুযোগ হাতছাড়া করেন না। রাজনৈতিক বলয়ে আশ্রিত ওই আমলারা অবশ্যই অসৎ হবেন এবং সময়মতো আঘাত হানতে কুণ্ঠিত হবেন না। যখন এসব বিষয় সাধারণ জনগণও জানতে পারে, সে ক্ষেত্রে দেশের নীতিনির্ধারকদের কর্ণকুহরে অবশ্যই তা প্রবেশ করার কথা। সত্যিই কি তাঁরা এসবের কিছুই অবগত নন? নাকি তাঁদের জানা আছে, কিন্তু কিছুই করার অবকাশ নেই। অথচ দায় তো তাঁদের ঘাড়েই যাচ্ছে।

যেহেতু জাতীয় নির্বাচনের মাত্র কয়েক মাস বাকি আছে, তাই বর্ণচোরা ও সুযোগসন্ধানীদের ব্যাপারে সতর্ক না থাকলে যেকোনো বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। আমলারা যখন রাজনৈতিক প্রশ্রয়ে ক্ষমতায় থাকেন, তখন তাঁদের হিতাহিত জ্ঞান থাকে না, যা খুশি তাই করে বেড়ান। অন্যদিকে প্রার্থী মনোনয়নকে কেন্দ্র করে দলের অভ্যন্তরীণ কলহ আগামী নির্বাচনে নেতিবাচক পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে। সার্বিক বিবেচনায় দলীয় মনোনয়নে নিবেদিতপ্রাণ, সৎ ও যোগ্য ব্যক্তিদের অগ্রাধিকার দিতে হবে। সময় থাকতে লাগাম টানতে হবে। অঘটন ঘটে গেলে কিছুই করার থাকবে না। আর শেষ ভোগান্তিটা হবে দেশের, জনগণের।

লেখক:  সাবেক রাষ্ট্রদূত ও সচিব।


সর্বশেষ - রাজনীতি