1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

৪০ বছরের পরিত্যক্ত জঙ্গলে ধান আর সরিষার বাম্পার ফলন

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১ এপ্রিল, ২০২৩

আট মাস আগেও এই বিশাল জায়গটি ছিল পরিত্যক্ত ঘন জঙ্গলে ভরপুর। এখন সেখানে হলুদ আর সবুজ ধানের ঢেউ খেলানো হাসি। বাংলাদেশ রেলওয়ের হালিশহর ট্রেনিং একাডেমির পরিত্যক্ত প্রায় ১৫ একরের দিগন্ত বিস্তৃত জমিতে এখন হলুদ সরিষা ফুলের বাহারি সাজ, আধা–পাকা ধানি জমিতে চোখ জুড়ানো শস্যের সমারোহ।

আর বাহারি ফুল ও সবজির মনোলোভা–আভা ছড়িয়ে পড়েছে চারিদিকে। সরকারি পতিত জমি আবাদের পরিকল্পনার অংশ হিসেবে এই উদ্যোগ বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ রেলওয়ের এই ট্রেনিং একাডেমির প্রধান প্রশিক্ষক প্রকৌশলী আতাউল হক ভুইয়া।

চট্টগ্রামের হালিশহরে বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির বিস্তীর্ণ এই এলাকাটি এক সময় ছিল ঘন জঙ্গল, বিষাক্ত সাপ, পোকা মাকড়ের বিচরণ ক্ষেত্র। বখাটে আর মাদকসেবীদের কাছে তাই জায়গাটি ছিল বেশ নিরাপদ। এখানে বসেই দিন–দুপুরে মাদক কেনাবেচা এবং সেবন উভয় কাজই চলতো।

চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহরে প্রায় ১০০ একর জায়গার উপর প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ রেলওয়ের একমাত্র ট্রেনিং একাডেমি। এখানে রেলওয়েতে কর্মরত বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মীদের কারিগরি প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সমপ্রতি অভ্যন্তরীণ কৃষি উৎপাদন বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণায় এই ট্রেনিং একাডেমি নিজেদের ১৫ একর জায়গায় নানান জাতের সবজি–ফল ও ফুল চাষের উদ্যোগ নেয়। এসব কাজ স্বেচ্ছাশ্রমে করছেন প্রশিক্ষণ একাডেমির কর্মকর্তা ও অস্থায়ী কর্মচারীরা। ইতোমধ্যে ফলনও পাওয়া গেছে বেশ। মোট ১৫ একর জমির মধ্যে ৮ একর জুড়ে ধান, ৫ একর জুড়ে সরিষা ও ২ জুড়ে সবজি চাষ করা হয়েছে বলে জানান চট্টগ্রাম রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির প্রধান প্রশিক্ষক এবং রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ব্রিজ) আতাউল হক ভুইয়া। তিনি বলেন, প্রায় ২৫ টনের উপরে ধান পাওয়া যাবে। এবার ধানের ব্যাপক ফলন হয়েছে। সরিষার বীজ হয়েছে ১০ মন এবং শিমের বিচি হয়েছে ১০ মন। সরিষা বীজগুলো কুমিল্লায় ঘানি ভাঙ্গা মেশিনে তেল করার জন্য পাঠানো হয়েছে। প্রতি মন থেকে ১৩ লিটার করে খাটি তেল পাওয়া যাচ্ছে। ১০ মনে প্রায় ১৫০ লিটার তেল হবে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান ধার উৎপাদনে এতো বাম্পার ফলন আর কখনো দেখা যায়নি।

পর্যায়ক্রমে একাডেমিতে ব্যবহারের বাইরে থাকা পুরো এলাকায় চাষাবাদের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান তিনি।

এই উদ্যোগে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। সরকারি অব্যবহৃত জমিতে এই রকম চাষাবাদ সাধারণের মধ্যে আলাদা উৎসাহ তৈরি করবে বলে মনে করছে কৃষিবিভাগ। পাশাপাশি যেসব সরকারি অফিসে পতিত জমি রয়েছে সেখানেও এইধরনের কৃষি আবাদ করা উচিত বলেও মনে করেন তারা।

এই ব্যাপারে চট্টগ্রাম রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমির প্রধান প্রশিক্ষক এবং রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের সাবেক অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (ব্রিজ) আতাউল হক ভুইয়া বলেন, ৮ মাস আগেও ট্রেনিং একাডেমির এই বিশাল জায়গাটি ছিল ঘন ঝোঁপঝাঁড় আর জঙ্গলে ভরপুর। ছিল বিষাক্ত নানান প্রজাতির সাপ আর এশিয়ার মাইনর প্রজাতির বিষাক্ত ভিমরুলের আবাসস্থল।

এই গভীর ঘন জঙ্গলের ভেতরে চলতো মাদকসেবীদের মাদক ব্যবসা এবং অসামাজিক কার্যকলাপ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর যুগোপযোগী নির্দেশনা-‘কোনো চাষযোগ্য জমি অনাবাদি রাখা যাবে না’। প্রধানমন্ত্রীর এই নির্দেশনাকে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বাংলাদেশ রেলওয়ে ট্রেনিং একাডেমি তাদের নিজেদের প্রায় ৪০ বছরের অধিক সময়ের পতিত, অনাবাদি, দুর্গম জঙ্গলে আচ্ছাদিত ভূমিকে আবাদিকরণের উদ্যোগ নেয়। একাডেমির সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং অস্থায়ী কর্মচারীগণের স্বেচ্ছাশ্রমে অভূতপূর্ব আত্মনিবেদনে একাডেমি অঙ্গন আজ ফুলে–ফসলে সুশোভিত। এই বিশাল অনাবাদি জমিকে উৎপাদন মুখর করে তোলার উচ্ছ্বল কর্ম প্রয়াসের মূলে যারা নিয়োজিত ছিল তারা হল– আমাদের একাডেমিতে অস্থায়ী ভাবে নিয়োজিত সদা–উচ্ছল ৭ জন কর্মচারী।

সমপ্রতি ট্রেনিং একাডেমির ২৫ হেক্টর পতিত জমিকে চাষযোগ্য করার উদ্যোগ নেয়া হয়। শিম, সরিষা আর ধান চাষ ছাড়াও লাগানো হয়েছে নানা ফলের গাছ। এমন একটি ঘন জঙ্গলে পরিপূর্ণ জায়গাকে কৃষিতে রূপান্তর করা ছিল অনেক কষ্ট সাধ্য এবং কল্পনাতীত। জায়গাটিতে চাষাবাদ ছিল বেশ চ্যালেঞ্জিং। তবে এতে সব ধরনের সহায়তা দেয় কৃষি  সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

এমন অনাবাদী জমিতে ফসলের আবাদ আশা জাগিয়েছে সবার মাঝে। এটাকে মডেল হিসেবে নিয়ে ধীরে ধীরে রেলের পতিত জমিকে চাষযোগ্য উপযোগ্য করা যায় বলে মনে করেন রেলওয়ের অভিজ্ঞ এই ব্রিজ প্রকৌশলী। তিনি বলেন, কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে এই ঘন জঙ্গল পরিস্কার করে আজকে চাষাবাদের উপযোগী করে তুলেছেন একাডেমির ৭ জন অস্থায়ী কর্মচারী। এই সাত কর্মচারী হলেন মো: আনিসুর রহমান, কাউসার আলী, সুজিত চন্দ্র নাথ, কৃষ্ণ বাহাদুর শাস্ত্রী, মো. বাহাউদ্দিন, রোকেয়া বেগম ও তাপসী রানী। তারা দিনের পর দিন পরিশ্রম করেছেন। বিষাক্ত সাপের কামড় খেয়েছেন। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এই ঘন জঙ্গল পরিস্কার করে চাষাবাদের উপযোগী করে তুলেছেন। কোনো কিছুর বিনিময়ে তাদের কষ্ট আর শ্রমের মূল্যায়ন করা যাবে না।


সর্বশেষ - রাজনীতি