1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ভারত-বাংলাদেশ : একে অন্যের সহযাত্রী

মোস্তফা হোসেইন : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে বাণিজ্যে ভারসাম্যরক্ষা বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হচ্ছে। বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে দুটি দেশের মধ্যে সামঞ্জস্য আনা দুটি দেশের জন্যই প্রয়োজন। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই লক্ষ্যে চেষ্টা সবসময়ই হয়ে আসছে। সেক্ষেত্রে চলমান বাণিজ্য চুক্তিসহ অন্যান্য সমঝোতাসমূহ যদি যথাযথ বাস্তবায়ন করা যায় তাহলেও এর সুফল পাওয়া যেতে পারে।

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্যেও তারই প্রতিফলন ঘটেছে।ভারত এই মুহূর্তে বুঝতে পেরেছে,বাংলাদেশ-ভারত সুসম্পর্কের সুফল শুধু বাংলাদেশই পাবে এমনটা নয়।উভয়ের উন্নয়নেই সুসম্পর্ক নিয়ামক ভূমিকা পালন করবে।এক্ষেত্রে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্যকেই স্মরণ করতে হয়। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের জন্য ভারত এশিয়ার মধ্যে সবচেয়ে বড় বাজার।স্পষ্ট হয়ে যায়,অগ্রসরমান বাংলাদেশের গতিকে দ্রুততর করতে বাংলাদেশের জন্য ভারতের বাজার গুরুত্বপূর্ণ।এখানে কিন্তু বড় ভাই-ছোট ভাইমূলক কোনো সম্পর্ক থাকছে না।পার্থক্য হচ্ছে-আগে বাংলাদেশের পণ্য বিষয়ে স্বল্প আগ্রহ ছিল এখন বাংলাদেশকে স্বাগত জানানো ভারতের জন্য প্রয়োজন হয়ে পড়েছে।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উন্নয়নমন্ত্রী কিষাণ রেড্ডির সঙ্গে বৈঠক হওয়ার কথা।ভারতীয় উন্নয়নের অংশীদার হিসেবে বাংলাদেশের প্রয়োজনীয়তার গুরুত্ব প্রমাণ করে এই বৈঠকে।শুধু তাই নয় ভারতের এই অঞ্চলের উন্নয়নে বাংলাদেশের চলমান সহযোগিতার বিষয়টিও এক্ষেত্রে স্মরণীয়।এই উপলক্ষে দুই দেশের অভ্যন্তরে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ইতোমধ্যে সম্পন্ন প্রায়।যার সুফল ইতোমধ্যে ওই অঞ্চলের ভারতীয় জনগণ পেতে শুরু করেছে।

বাংলাদেশ ও ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কিত বিভিন্ন সময় সম্পাদিত চুক্তিসমূহের যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে লক্ষ্য অর্জনকে আরও গতিশীল করা সম্ভব।

বাস্তবতা হচ্ছে বিভিন্ন চুক্তি বাস্তবায়নে ভারতের দীর্ঘসূত্রিতা লক্ষ্যণীয়।সেদেশের প্রধানমন্ত্রীর প্রাসঙ্গিক বক্তব্যের সূত্রে বলা যায়-তাদের নতুন করে উপলব্দি হয়েছে।অবশ্য এর কিছু বাস্তবতা আমাদের চোখে পড়েছে ইতোমধ্যে। যেমন তিন বছর আগে ভারতের উত্তরাঞ্চলের প্রদেশগুলোর সুবিধার্থে পণ্য পরিবহনের চুক্তি সম্পন্ন হওয়ার ৩ বছর পর গত আগস্টে প্রথম চালান পণ্য পরিবহন হয় ভারতীয়দের।গত মাসে প্রথম ভারতীয় জাহাজ মংলা বন্দরে প্রবেশ করেছে। আর এই জাহাজটির মাধ্যমে তিন বছর পর তাদের পণ্য পরিবহনের যাত্রা হলো।পরীক্ষামূলক এই জাহাজ থেকে একটি কন্টেইনার কুমিল্লা হয়ে গিয়েছে আসামে অন্যটি সিলেট হয়ে মেঘালয়ে।এরপর অবশ্য স্থলপথে আরও পণ্য গিয়েছে।মংলা বন্দর ব্যবহার করে ভারতীয় পণ্য পরিবহন বৃদ্ধি পেলে দুটি দেশই সুবিধা অর্জন করবে।ভারতীয় উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোতে যেমন তাদের পণ্য সহজভাবে এবং স্বল্প ব্যয়ে পৌঁছাতে পারবে একইসঙ্গে বাংলাদেশও তাদের কাছ থেকে রাজস্ব পাবে।আর এই সমুদ্র বন্দর ব্যবহারের জন্য ভারতের সঙ্গে সম্পাদিত চুক্তিতে চট্টগ্রাম বন্দরের কথাও বলা হয়েছে।কথা হচ্ছে এই পরিকল্পনাটি ভারতীয় পক্ষের সুবিধাই বেশি অর্জিত হওয়ার কথা। কিন্তু সেটিও কার্যকর হতে সময় লেগেছে তিন বছর।অনেকে মনে করেন,বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে দ্রুততার সঙ্গে এটি সম্পন্ন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।যে কারণেই হোক হয়েছে এটাই বড় কথা।

ট্রানজিট সুবিধার বিষয়ে বাংলাবান্ধা হয়ে ভূটানের সঙ্গে বাংলাদেশের কানেক্টিভিটি সুবিধাটিও বিবেচনায় এসেছে। অন্যদিকে বাংলাদেশের সাথে নেপালের সরাসরি সীমান্ত না থাকায় বাংলাদেশ বাংলাবান্ধ সীমান্ত থেকে ভারতের জলপাইগুঁড়ির ফুলবাড়ি হয়ে স্থলপথে নেপালের কাঁকরভিটা যেতে মাত্র ১ ঘণ্টার মতো সময় লাগে।এক্ষেত্রে ভারতীয় পদক্ষেপ বাংলাদেশকে পাল্টা সুবিধা দেয়ার বিষয়টি বন্ধুত্বের পরিচায়ক।রেলে ভারতের পণ্য বাংলাদেশে প্রবেশ করছে,সমহারে বাংলাদেশের পণ্যও সেই রেলে করেই ভারতে যেতে পারে।

বাংলাদেশ ও ভারত শুধু প্রাকৃতিকভাবে ঘনিষ্ঠই নয়,দুই দেশের সম্পর্ক উন্নয়ন দুটি দেশের অগ্রগতি তথা দুটি দেশের উন্নত দেশ হওয়ার মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নেও ভূমিকা রাখবে।তেল ও জ্বালানি সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশকে ভারত সহযোগিতার বিষয়টি এখন বাস্তবায়নের পথে।স্বল্পমেয়াদী পরিকল্পনা হিসেবে ভারতের আমদানিকৃত জ্বালানি তেল বাংলাদেশে বিক্রয়ের প্রস্তাবটিও বাস্তবায়নের পথে।করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিণতিতে জ্বালানি তেলের যে সংকটে পড়েছে বাংলাদেশ।ভারত থেকে তেল আমদানির সুযোগ সেই সংকট মোকাবিলায় ভূমিকা রাখবে।অন্যদিকে ভারতেরও মুনাফার বিষয় আছে।
তারপরও কথা থেকে যায়, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নের যেমন চেষ্টা আছে। এক্ষেত্রে দুটি দেশই যে এটা চায় এটা যেমন সত্য।অন্যদিকে দুটি দেশের মানুষের মধ্যে আস্থা অনাস্থার বিষয়টিও কিন্তু উড়িয়ে দেয়া যায় না। ভারতের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আসার কারণে বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে আস্থা বাড়বে এমন সম্ভাবনার কথা বলা হয়েছিল।বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পরও একই আশাবাদ কেউ কেউ করেছিলেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে-দুই দেশের মানুষের মধ্যেই একটি শ্রেণি আছে যারা নেতিবাচক মানসিকতা পোষণ করেন। তারা কিন্তু দুই প্রধানমন্ত্রীর সফর-পাল্টা সফরের পরও তাদের ভাবগতিতে খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।

রাজনৈতিক আবহ এর পেছনে মূল ভূমিকা পালন করছে।বাংলাদেশের সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী গোষ্ঠী নিজের নিরাপত্তার কথা না ভেবে নিজের দেশের উন্নয়ন চিন্তাকে আবেগ এবং আদর্শিক চিন্তার কথা ভেবে ভারত বিরোধিতায় লেগে থাকে।বিভিন্ন কারণে দীর্ঘদিন ধরে তাদের এই চেতনা জনগণের মধ্যে ছড়িয়ে দেয়ারও চেষ্টা চলে।বাংলাদেশের এই সম্প্রদায় ভারতের অভ্যন্তরে অস্থিতিশীলতাকে নিজেদের বিজয় হিসেবে মনে করে।যে কারণে উলফাদের প্রশিক্ষণ ও সহযোগিতাকে তাদের দায়িত্ব মনে করতেও কুণ্ঠিত হয় না।বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার পথে ভারতের অভ্যন্তরীণ শান্তি শৃংখলাও যে একটি ফ্যাক্টর সেটা ভাবতে চায় না তারা।তারাই রটিয়ে বেড়ায় ৭টি সমঝোতা/চুক্তি সম্পাদন হয়েছে এগুলো তেমন গুরুত্বপূর্ণ নয়। এমনকি তারা এমনও বলে এসব কাজ করার জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর মতো গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বকে ভারতে যাওয়ার প্রয়োজন পড়ে না।

রাজনৈতিক একটি গোষ্ঠী আবার এমনও বলতে শুরু করেছে,বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতকে শুধু দিতেই গিয়েছে আনতে পারেনি কিছুই।তারা ভাবতে নারাজ দ্বিপাক্ষিক স্বার্থ রক্ষা না হলে কোনো চুক্তি সমঝোতাই কার্যকর হয় না স্থায়ী হওয়ার প্রসঙ্গটিও দূরের।তারা বুঝতে চায় না প্রতিবেশি দেশ হিসেবে ভারতকে যেমন আমাদের বন্ধু হিসেবে পেতে হবে,তেমনি ভারতের উন্নয়ন পরিপন্থি গোষ্ঠীকেও ভাবতে হবে,বাংলাদেশ ছোট হলেও ভারতের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে বাংলাদেশের ভূমিকাও অনেক।

আর দুটি দেশের দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা সমাধানই শুধু নয় এগিয়ে যাওয়ার প্রয়োজনেও শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদেরকে আলোচনায় বসতে হবে। বৈরীভাব সৃষ্টি করে কখনো এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না।

লেখক : মোস্তফা হোসেইন – সাংবাদিক ও মুক্তিযুদ্ধ গবেষক। 


সর্বশেষ - রাজনীতি