1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

গড়াই খনন প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষ

কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল, ২০২২

যে গড়াই নদীতে শুষ্ক মৌসুমে পানি থাকত না, পানির অভাবে হাহাকার পড়ে যেত, যে কারণে মরুময়তার দিকে ধাবিত হচ্ছিল এ অঞ্চল, এমনকি টিউবয়েলগুলোও যে কারণে শুকিয়ে গিয়েছিল; সেই গড়াই নদী খনন করার পর পাল্টে গেছে সব চিত্র। খননের ফলে নদীতে পানিপ্রবাহ বেড়েছে, পাশাপাশি কমে গেছে পানিতে লবণাক্ততার মাত্রাও। তাই নদী খননের সুফল পেতে শুরু করছেন এ অঞ্চলের মানুষ।

কুষ্টিয়া সদর উপজেলার হরিপুর ও মিরপুর উপজেলার তালবাড়িয়া এলাকার পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া পদ্মা নদী থেকে শাখা বের হয়ে গড়াই নদীর উৎপত্তি। কুষ্টিয়া ছাড়াও মাগুরা, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, ফরিদপুর, যশোর ও খুলনা হয়ে সুন্দরবনে গিয়ে পড়েছে নদীটি। দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে নোনা পানির আগ্রাসন রুখতে বড় ভূমিকা রাখে গড়াইয়ের মিঠা পানি। যার ফলে আবহাওয়া, পরিবেশ জীববৈচিত্র্যসহ অত্র অঞ্চলের প্রায় পাঁচ কোটি মানুষের জীবনযাপনে ছন্দ নেমে আসে। গড়াইয়ের মিঠাপানির প্রবাহ সুন্দরবনেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

সুন্দরবনসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় ‘গড়াই নদী খনন প্রকল্প’ হাতে নেয় সরকার। প্রতি বছর বর্ষার পর পদ্মার উৎসমুখে প্রচুর পলি পড়ে পানি প্রবেশ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এ কারণে অক্টোবর-নভেম্বর মাসের দিকে গড়াই নদী শুকিয়ে মরু হওয়ার উপক্রম হয়।

পানি উন্নয়ন বোর্ড ও গড়াই খনন প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের ২১ নভেম্বর থেকে নদী খনন শুরু হয়েছে, যা শেষ হবে চলতি জুনে। এ বছর উৎসমুখ তালবাড়িয়া ও হরিপুর অংশ থেকে শুরু হয়ে খোকসা উপজেলা পর্যন্ত ২৭.৫০ কিলোমিটার নদী খনন করা হবে। বর্তমানে সাতটি ড্রেজার দিয়ে পাঁচটি পয়েন্টে খননকাজ চলছে। গত বুধবার ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত খনন করা হয়েছে প্রায় ২৪ কিলোমিটার। ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮০ লাখ ঘনমিটার পলি ও মাটি অপসারণ করার কথা এ খনন প্রকল্পে। এরই মধ্যে পাউবোর নিজস্ব ড্রেজার দিয়ে ৭০ লাখ ঘনমিটার পলি অপসারণ করা হয়েছে।উৎসমুখ থেকে ৩২০ ফুট চওড়া করে খননকাজ শুরু হয়ে ক্রমান্বয়ে ১২০ মিটারে গিয়ে শেষ হবে। তবে প্রকল্পের বাইরেও কুষ্টিয়ার খোকসা থেকে শুরু করে রাজবাড়ীর পাংশা পর্যন্ত অতিরিক্ত আরো ৮.৫ কিলোমিটার আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে খননকাজ চলছে, যার প্রস্তাবিত ব্যয় ৪০ কোটি টাকা বলে জানান পানি উন্নায়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রইচ উদ্দীন। লক্ষ্যমাত্রা ২৪.৬০ লাখ ঘনমিটার ধরা হয়েছে। ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত ১৮.৫০ লাখ ঘন মিটার কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান পানি উন্নায়ন বোর্ডের এসইডি অপূর্ব কুমার দাস।

সব মিলিয়ে এ বছর ৩৬ কিলোমিটারের বেশি খননকাজ করা হবে, যা নদীর পানিপ্রবাহে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে। চার বছর মেয়াদি প্রকল্পটির কাজ শেষ হচ্ছে এবার।

নদী ঘুরে দেখা গেছে, উৎসমুখে একটি ড্রেজার দিয়ে নদী খনন করা হচ্ছে। বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে শুধু চর। তবে অন্যবার চর পড়ে পানিপ্রবাহ বন্ধ থাকলেও এবার তা হয়নি। ইনটেক চ্যানেল থেকে শুরু করে লাহিনী গড়াই রেলসেতু পর্যন্ত এই নদীর বুকে চারটি চর পড়ত, এবার এসব এলাকায় চর পড়ে পানির গতি বন্ধ হয়নি। এর মধ্যে জুগিয়া, ঘোড়াঘাট ও কয়া এলাকায় পানির প্রবাহ আগের তুলনায় বেড়েছে। খুবই আশার কথা এটি।

গড়াই নদী খনন প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী তাজমীর হোসেন বলেন, খননের ফলে শুস্ক মৌসুমে সার্বিক পানি প্রবাহের যে ধারা, সেটি গত দুই বছরের তুলনায় অনেক বেড়েছে। নোনাপানির আগ্রাসন কমেছে। যেখানে নদীর বড়াদিয়া পয়েন্টে ২০১৯ সালের এপ্রিলে নোনা পানির মাত্রা ৯.৪০ পয়েন্ট, সেখানে ২০২০ সালের জুন মাসে কমে দাঁড়ায় ০.৬০ পয়েন্ট। চাপাইলঘাট পয়েন্টে ৪.৬০ পয়েন্ট থেকে কমে ১.৬০ পয়েন্ট, রূপসা পয়েন্টে ১৮.৬০ থেকে কমে ১৫.৮০ পয়েন্ট, মংলা পয়েন্টে ১৮.৯০ থেকে কমে ১৩.৬০ ও সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্টে ২৭.৫০ থেকে কমে ২৩.৬০ পয়েন্ট এসে দাঁড়িয়েছে। এতে করে সুন্দরবনে মিঠাপানির প্রবাহ আগের তুলনায় বেড়েছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

এ বিষয়ে কুষ্টিয়ার পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজার বিভাগের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী আলী আফরোজ জানান, গড়াই খননের কারণে কুষ্টিয়াসহ অত্র অঞ্চলের মানুষ সুফল পাচ্ছেন। দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদীর পানিতে লবণাক্ততা কমছে। এ ধারা অব্যাহত থাকা দরকার।

গড়াইয়ে নিয়মিত মাছ ধরে বসির উদ্দিন, আলমগীর ও তাদের দল। তারা জানান, এখন সারা বছরই নদীতে পানি থাকছে। তাই মাছের পরিমাণও বেড়েছে।

গবেষক ও বিশিষ্ট পানিবিদ গৌতম কুমার রায় বলেন, পরিবেশ গতভাবে গড়াই নদী গুরুত্বপূর্ণ। এই নদীর সাথে সুন্দরবনের একটি নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে। বেশ কয়েক বছর আগে গড়াই শুকিয়ে চর পড়ে গিয়েছিল। সেই অবস্থা থেকে ফিরে এসেছে নদীটি। এখন পানির লবণাক্ততা কমেছে, এটা ভালো দিক।সবমিলে গড়াই নদী খনন করায় সুফল পাচ্ছে কুষ্টিয়াসহ অত্র অঞ্চলের মানুষ। জনগণের জানমালের উন্নতির কথা চিন্তা করে এ খনন যেন সম্পন্ন হয় সে দাবি এলাকাবাসীর।


সর্বশেষ - রাজনীতি