1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

অধিকার আদায়ের নামে অধিকার হননের তৎপরতা

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ২৬ ডিসেম্বর, ২০২৩

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে নির্বাচন প্রচারণাকেন্দ্রিক সংঘাত-সহিংসতা বাড়ছে এই মর্মে সংবাদমাধ্যমে প্রতিদিন খবর মিলছে। নির্বাচনকেন্দ্রিক রাজনৈতিক সংকটের কয়েকটি দিকে আছে। বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটের ফলে দুটো অংশে ভাগ হয়েছে রাজনৈতিক অঙ্গন। একটি অংশ নির্বাচন বর্জন করেছে এবং অপরটি নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে। একদিকে চলছে নির্বাচনী প্রচার এবং অন্যদিকে কথিত ‘অসহযোগ আন্দোলন’। শুধু প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকই নয়, নির্বাচন বর্জনকারী রাজনৈতিক দলের সঙ্গে নানাভাবে সম্পৃক্তরাও নির্বাচন বানচাল করার জন্য তৎপর এ অভিযোগে আছে। সৃষ্ট সংকটে জনগণ পড়েছে বিপাকে। প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে জননিরাপত্তা।

২১ ডিসেম্বর সংবাদমাধ্যমে প্রকাশ, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃতীয় পক্ষ যাতে কেউ কোনো ধরনের সহিংসতা না করতে পারে এবং নির্বাচন অবাধ, শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশন থেকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানান ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান। তিনি এও বলেন, ‘অন্যান্য ভোটে একমুখী সমস্যা থাকে। যে প্রতিদ্বন্দ্বীকারী অর্থাৎ প্রার্থীরা থাকেন তাদের সমর্থকরা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেন। আচরণবিধি মানতে বাধ্য করা হয়েছে। এবারের জাতীয় নির্বাচনে আরেকটি অতিরিক্ত সমস্যা আছে এবং সেটা হলো নাশকতার মাধ্যমে আতঙ্ক ও শঙ্কা সৃষ্টি করা। একটি বা দুটি দলের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে শঙ্কা সৃষ্টি হতে পারে। সেগুলো মোকাবিলা করে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করাই হবে আমাদের কাজ। নাশকতামূলক ঘটনা একটি নয় একাধিক ইতোমধ্যে ঘটেছে। অক্টোবরের ২৮ তারিখ থেকে দেশে জ্বালাও-পোড়াও হচ্ছে। অনেকে আইনের আওতায় এসেছেন বাকিদেরও আইনের আওতায় নিশ্চয়ই আনা হবে। এগুলো যাতে না ঘটে সেই জন্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ব্যাপারে পুলিশও সজাগ রয়েছে।’

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে সংঘাত-সহিংসতার শঙ্কা বিষয়ে আমাদের তুলনায় বেশি তথ্য থাকে। তথ্য যাচাই-বাছাইয়ের পরিপ্রেক্ষিতে তারা বিভিন্ন আগাম পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বানচালের জন্য নির্বাচন বর্জনকারীরা নাশকতার যে পথ অনুসরণ করছে তা প্রতিরোধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ভোটের দিন পর্যন্ত মনোযোগ আরও গভীর করতে হবে। জনদুর্ভোগ বাড়ে কিংবা সম্পদহানি ঘটে এমন কোনো কর্মকাণ্ড যেন না ঘটে, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপর থাকতে হবে সবসময়। নির্বাচনের যে কদিন বাকি রয়েছে এই কদিনে নাশকতা, গুপ্তহত্যা, রেললাইন উপড়ে ফেলার মতো ঘটনা আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে, বিদ্যমান পরিস্থিতি সেই ইঙ্গিতই দেয়। তবে তা যেন না হয়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তৎপরতা আরও বাড়াতে হবে। অর্থাৎ সর্বক্ষণ শ্যেন দৃষ্টি রাখতে হবে। আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এথন যথেষ্ট প্রযুক্তিগত সক্ষমতা রয়েছে। প্রযুক্তি ও আধুনিক কৌশলের সমন্বয়ে জননিরাপত্তা প্রশ্নমুক্ত করা দুরূহ নয়। তবে এ কথাও বলা জরুরি, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা বলে আদতে কিছু নেই। তারপরও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে তাদের সক্ষমতার পূর্ণ প্রকাশ ঘটাতে হবে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে ও নেতৃত্বে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমের অর্জিত আমাদের স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধপর্বে এ দেশেরই একটি অংশ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে নানাভাবে সহযোগিতা করে। তাদের সহযোগিতায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা পরিচালনা করেছে, ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে। এরা ছিল সংখ্যায় কম। কিন্তু তাদের সহযোগিতা পাওয়ায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ধ্বংসযজ্ঞ চালাতে পেরেছিল। যারা পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করেছে তারা কিন্তু এ দেশেরই মানুষ। এদের সংখ্যা খুব বেশি নয়। কিন্তু তারা সম্মিলিতভাবে যে ক্ষতি করেছে তা অপূরণীয়। রাজাকার, আলবদর, আলশামস নামক বাহিনী গড়ে তারা দেশের সূর্যসন্তানদের হত্যায় একাত্তরে ধাপে ধাপে নেতৃত্ব দিয়েছে। স্বাধীনতার পরও এই গুটিকয়েক লোকই দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নানাভাবে অস্থিতিশীল করে তুলে। তারা হারিয়ে যায়নি। যখনই দেশে রাজনৈতিক সংকট প্রকট হয়ে ওঠে, তখনই তারা সক্রিয় হয়ে ওঠে। এমনই মানসিকতার লক্ষণ ফের রাজনৈতিক অঙ্গনে দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে। নির্বাচন বর্জনকারী রাজনৈতিক দলগুলো ভোট প্রতিহত করার ঘোষণা দিয়েছে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক রাষ্ট্র কাঠামোয় ভোট প্রতিহতের ঘোষণা অসাংবিধানিক ও জনস্বার্থের পরিপন্থি। ভোটাধিকার নাগরিকের সাংবিধানিক অধিকার। ভোট দেওয়ার অধিকার জনগণের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেওয়ার অধিকার কারও নেই। কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ না নিলে তা তাদের দলীয় সিদ্ধান্ত। কিন্তু তাই বলে জনগণের ভোটাধিকার প্রয়োগে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির কোনো অধিকার তাদের নেই।

নির্বাচন বর্জনকারী রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনে জনসমর্থন আদায় করে জয়ী হতে পারবে না বলেই নির্বাচন বর্জন করেছেÑ এই বক্তব্য অমূলক বলে উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। ক্ষমতায় আসার জন্য তারা ভিন্ন রাজনৈতিক কৌশল অবলম্বন করছে। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য তারা গণপরিবহনে আগুন, রেললাইন উপড়ে ফেলা, ফিশপ্লেট খুলে ফেলার মতো নাশকতার আশ্রয় নিচ্ছে। দেশের সিংহভাগ মানুষ শান্তিপ্রিয়। তারা নাশকতা অতীতেও সমর্থন করেনি এবং আগামীতেও করবে এমনটি প্রত্যাশা করা যায় না। একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধপর্বে আমি নিজে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছি। ২৫ মার্চের আগে বাঙালির অবিসংবাদিত নেতার ঘোষণায় পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ অসহযোগ আন্দোলনে সাড়া দিয়েছিল। তখন বঙ্গবন্ধুর ঘোষণায় অনেকেই পাকিস্তান সরকারকে সহযোগিতা বন্ধ করে দেয়। সেই প্রেক্ষাপটের সঙ্গে বর্তমানের রাজনৈতিক সংকটের প্রেক্ষাপটকে মিলিয়ে ফেললে ভুল করা হবে। গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক শাসনব্যবস্থায় জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণই এমন রাজনৈতিক নির্দেশনা সফল করতে ভূমিকা রাখে। কিন্তু নির্বাচন বর্জনকারীরা আন্দোলনের যে পথ অনুসরণ করছে, তা কোনোভাবেই নিয়মতান্ত্রিক নয় এবং এর ফলে তাদের জনবিচ্ছিন্নতা বাড়ছে। আর এজন্যই তারা দিশেহারা হয়ে পথ ধরেছে আরও বৈরিতার। নাশকতার মাত্রা বাড়লে জনগণই এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। আমাদের অভিজ্ঞতা তা-ই বলে। ২০১৩ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলন ও অধিকার আদায়ের নামে কী ভয়াবহতা সৃষ্টি করেছিল বিএনপি-জামায়াত জোট তা বিস্মৃত হওয়ার নয়। কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপট ভিন্ন এবং এর ফলে আন্দোলনকারীরা সহিংস রাজনৈতিক কর্মসূচির মাধ্যমে খুব বেশি এগোতে পারবেন, তা মনে হয় না।

নির্বাচন প্রচারকেন্দ্রিক আইনশৃঙ্খলা অবনতিজনিত পরিস্থিতি অর্থাৎ সংঘাত-সহিংসতা ক্রমেই বাড়ছে এবং এজন্যও চক্রান্তের যে অভিযোগ রয়েছে তাও হয়তো অমূলক নয়। সংবাদমাধ্যমে নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্রিক সংঘাত-সহিংসতায় হতাহতের যে চিত্র উঠে আসছে তা কোনোভাবেই স্বস্তির নয়। এই প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের নিয়ামক শক্তি নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচনকালীন কমিশনের সহযোগী শক্তি সরকারকে নির্মোহ অবস্থান থেকে পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই। আমরা দেখছি, আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগেরই স্বতন্ত্র প্রার্থীদের কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা বেশি ঘটছে। একটি বিষয় সচেতন মানুষমাত্রই অজানা নয়, আচরণবিধি লঙ্ঘনজনিত কারণ থেকেই সংঘাত-সহিংসতার ঘটনা ঘটে। বিএনপিসহ সমমনা কয়েকটি দল বিভিন্ন দাবি উত্থাপন করে আগেই নির্বাচন বর্জন করেছে এবং অস্থিতিশীলতার ছায়া বিস্তৃত করছে। রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে নির্বাচনে যে রাজনৈতিক দলগুলো অংশ নিচ্ছে তাদের মনোনীত ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং ভোটারদের অর্থাৎ সার্বিকভাবে জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার ব্যাপারে কঠোর অবস্থান নিতে হবে। আইনশৃঙ্খলাজনিত পরিস্থিতি যদি ক্রমাগত নিম্নগামী হতে থাকে এবং নির্বাচনী প্রচারকেন্দ্রিক সংঘাত-সহিংসতার ছায়া বিস্তৃত হতে থাকে, তাহলে প্রশ্নমুক্ত নির্বাচন দুরূহ হয়ে পড়বে। আমরা জানি, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকটের ওপর দেশি-বিদেশি নানা মহলের বিশেষ পর্যবেক্ষণ রয়েছে। এমতাবস্থায় নির্বাচন প্রশ্নমুক্ত করার লক্ষ্যে সর্বাগ্রে সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করার তাগিদই আসে। আমরা প্রত্যাশা করব নির্বাচন কমিশন ও সরকার যথাযথভাবে এ ব্যাপারে মনোযোগ গভীর করার পাশাপাশি কার্যকর পদক্ষেপ যথাসম্ভব দ্রুত নিশ্চিত করবে।

নির্বাচন কমিশনের সামনে রয়েছে অনেক চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে জননিরাপত্তার বিষয়টি মুখ্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে নির্বাচন ঘিরে সারা দেশে যে উদ্দীপনা বিরাজ করছে তাতে সঙ্গত কারণেই আমাদের প্রত্যাশা, আন্দোলনকারীরা তাদের সহিংস রাজনৈতিক কৌশল প্রয়োগে শেষ পর্যন্ত সফল হবেন না। রাজনৈতিক অনাচার দূর করতে হবে স্বচ্ছ রাজনৈতিক অপকর্মকাণ্ডের মধ্য দিয়েই। জননিরাপত্তার বিঘ্ন ঘটায় এমন কোনো কর্মসূচি রাজনৈতিক কর্মসূচি হিসেবে স্বীকৃতি পেতে পারে না। অহিংস রাজনীতিই হলো গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক সংস্কৃতি আর এই রাজনীতির কেন্দ্রে থাকে জনগণ। মোট কথা জনগণের নিরাপত্তায় কোনো ছাড় নয়।

লেখক: মোহাম্মদ আলী শিকদার – অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল ও নিরাপত্তা-বিশ্লেষক।


সর্বশেষ - রাজনীতি