1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২৩

বাংলাদেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছিলো বঙ্গবন্ধুর হাত ধরেই। তিনি যখন বাংলাদেশ গঠনের কাজে হাত দিয়েছিলেন তখন বাংলার মাটি ও মানুষ ব্যতীত তাঁর হাতে কোনো সম্পদই ছিলো না। বর্তমান ৪১১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার অর্থনীতির বিপরীতে ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার ছিলো মাত্র ৮ বিলিয়ন ডলার। তখন বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ছিল শূন্য। সঞ্চয় ও বিনিয়োগ ছিল যথাক্রমে জিডিপির মাত্র ৩ শতাংশ এবং ৯ শতাংশ। ফলে টিকে থাকা ও উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে ব্যাপকভাবে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরকরতে হতো। এই প্রাথমিক কাঠামোগত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর সাহসী নেতৃত্বে বাংলাদেশ তার অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের বীরত্বপূর্ণ কৌশলের সূচনা করেছিলো।

বঙ্গবন্ধুর সুচিন্তিত নেতৃত্বে দেশ সঠিক পথেই অগ্রসর হচ্ছিলো। ১৯৭২ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিলো ৯৩ মার্কিন ডলার। ১৯৭৫ সালে তা ২৭৩ ডলারে উন্নীত হয়। বঙ্গবন্ধুর বলিষ্ঠ নেতৃত্বে মাত্র সাড়ে তিন বছরে এই লক্ষণীয় পরিবর্তন সম্ভব হয়েছিলো। বঙ্গবন্ধুকে হারানোর পর অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই উন্নয়নযাত্রা বাধাগ্রস্ত হয়। যার ফলে আমরা দেখতে পাই, ১৯৭৭ সালে মাথাপিছু আয় নেমে দাঁড়ায় ১২৯ মার্কিন ডলারে। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৫ এর সেই আগের অবস্থায় নিয়ে যেতে আমাদের তেরো বছর সময় লেগে গিয়েছিলো।

অতঃপর তাঁরই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের গতি আবারও পুনঃপ্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৯৬ সালের পর ২০০৯ সালে পুনরায় সরকার গঠন করে তিনি দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে নতুন ধারার সূচনা করেন। তাঁর অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন কৌশলের পরিপ্রেক্ষিতে জাতির পিতার স্বপ্নের ‘সমৃদ্ধ ও সমতাভিত্তিক’ বাংলাদেশ হওয়ার পথ সুগম হচ্ছে। বস্তুত, বাংলাদেশের অর্থনীতি সত্যিই অনেক দূর এগিয়েছে। বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির আরেকটি বড় দিক হলো অর্থনৈতিক এই সুবিধাগুলো সামাজিক পিরামিডের নীচের তলার মানুষের কাছেও পৌঁছে যাচ্ছে। বর্তমান সরকারের ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ ক্যাম্পেইনের কল্যাণে মোবাইল আর্থিক পরিষেবা এবং এজেন্ট ব্যাংকিংসহ ডিজিটাল আর্থিক পরিষেবাগুলোর মাধ্যমে গ্রামীণ এলাকায় দৈনিক প্রায় ১৬৫ মিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ অর্থ প্রবাহ সম্ভব হচ্ছে। একই সঙ্গে কৃষি ও ক্ষুদে উদ্যোক্তাদের ঋণ প্রদানেও এই দুটো ডিজিটাল আর্থিক সেবা সক্রিয় হয়ে উঠেছে। এছাড়াও, খাদ্য উৎপাদন সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান চীন, ভারত এবং ভিয়েতনামের চেয়ে ভালো। গত ৫০ বছরে মাথাপিছু আবাদি জমির পরিমাণ ২৮ ডেসিমেল থেকে ১০ ডেসিমেলে নেমে আসলেও খাদ্য উৎপাদন প্রায় ৪.৫ গুণ বেড়েছে। ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে জিডিপির ৫৩ শতাংশ আসতো কৃষি থেকে যা বর্তমানে ১৩ শতাংশ মাত্র। ১৯৭০ সালে যেখানে মাথাপিছু খাদ্য উৎপাদন ছিলো ১৪০ কিলোগ্রাম, বর্তমানে তা ২৪০ কিলোগ্রামের কিছু বেশি। মহামারীর কঠিন সময়েও বৈশ্বিকক্ষুধা সূচকে বাংলাদেশ উন্নতি করেছে। ২০১২ সালের ২৮.৬ পয়েন্টের বিপরীতে ২০২১ সালে সেটি দাঁড়ায় ১৯.১ পয়েন্টে।

উল্লেখ্য, এই সূচকের সংখ্যা কমলে তার মান বাড়ে। মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির সুফল সমাজের সকল স্তরে সমানভাবে হয়তো পৌঁছায়নি। তবু ২০১০ থেকে ২০২২-এর মধ্যে দারিদ্র্য হার ৩১.৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৮.৭ শতাংশে আনা গেছে। এ সময়ে অতিদারিদ্র্য ১৭.৬ শতাংশ থেকে কমে ৫.৬ শতাংশ হয়েছে। করোনা মহামারীর নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে বাংলাদেশ শক্তিশালী প্রবৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এই যাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং বাংলাদেশকে প্রবৃদ্ধির অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যেতে আমাদের নীচের সম্ভাবনাময় ক্ষেত্রগুলোতে আরও বেশি নীতি মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন।

[১] অবকাঠামো উন্নয়নে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। ভবিষ্যৎ হবে তথ্যপ্রযুক্তি এবং ই-কমার্সনির্ভর। সুতরাং আমাদের ডিজিটাল অবকাঠামোতে আরও বেশি বিনিয়োগ করতে হবে। [২] অন্তভুুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি অর্জনে বেসরকারি খাতকে আরও বেশি সম্পৃক্ত করতে হবে। দুর্ভাগ্যবশত, অবকাঠামোগত বিনিয়োগে বেসরকারি খাতের অংশগ্রহণ জিডিপির মাত্র ১.১ শতাংশ।এই হার আরও বাড়াতে হবে। [৩] বাংলাদেশের রপ্তানি-নেতৃত্বাধীন প্রবৃদ্ধি অন্তত আগামী এক-দুইদশক টিকে থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মধ্যম আয়ের বাংলাদেশ গড়তে আমাদের শুধু প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা হিসেবে সস্তা শ্রমের উপর নির্ভর থাকলে চলবে না। [৪] উন্নয়নশীল দেশে উন্নীত হওয়ার চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় অনুকূল বাণিজ্য চুক্তি ও বৈদেশিক বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে কার্যকর অর্থনৈতিক কূটনীতি নিশ্চিত করতে হবে। বেশি বেশি মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করার জন্য তৎপর থাকতে হবে। [৫] কৃষির আধুনিকায়ন ও যান্ত্রিকীকরণ অব্যাহত রাখতে হবে। এক্ষেত্রে দেশীয় চাষাবাদ পদ্ধতি এবং আবাদি জমির সার্বিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে যথোপযুক্ত যন্ত্রের উদ্ভাবন করতে হবে।

[৬] পরিকল্পিত ও আধুনিক নগরায়ন টেকসই অগ্রগতি নিশ্চিত করতে পারে। সেজন্য আমাদের প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রগুলোকে পরিকল্পিত মিনি শহরে রূপান্তরে মনোযোগী হতে হবে। [৭] আঞ্চলিক বাণিজ্য সংযোগস্থল হিসেবে বাংলাদেশের সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে। স্থানীয়, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক মূল্য শৃঙ্খলে অধিকতর সংযোজন ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। [৭] যুবসমাজসহ সকল অংশীজনের সক্রিয়অংশগ্রহণের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায়বাংলাদেশকে আরও মনোযোগী হতে হবে। [৮] আর্থিক নীতি সংস্কার করা আবশ্যক। কর-জিডিপি অনুপাত ১০ শতাংশের নিচে রয়েগেছে যা সমকক্ষ অন্যান্য দেশের তুলনায়অনেক নিচে। এটি অবশ্যই ২০ শতাংশে পৌঁছাতে হবে যার জন্য ডিজিটাইজেশন এবং স্বচ্ছ পরিচালন প্রক্রিয়াকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। [৯] এসব কিছু বাস্তবায়নের জন্য দরকার হবে ন্যায়-নীতি সম্পন্ন সম্মত, দুর্নীতিমুক্ত, এবং জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থা।

উপরোক্ত নীতিগত পরামর্শের অধিকাংশই বাস্তবায়ন এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির উচ্চতর সীমায় যাওয়ার সমস্ত সম্ভাবনা বাংলাদেশের রয়েছে। গত ৫২ বছরে বাংলাদেশ অবিশ্বাস্য উন্নয়ন যাত্রা সম্পন্ন করেছে। আগামী ৫০ বছরে বাংলাদেশকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে এই ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।

লেখক: অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান – ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিরেটাস অধ্যাপক এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর।


সর্বশেষ - রাজনীতি