1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ঢাকায় বিএনপির সমাবেশ ও একটি অনুসিদ্ধান্ত

ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২

নির্বাচনের আগে আগে বাংলাদেশের রাজনীতিতে উত্তাপ এক-আধটু ছড়াবেই, এর কোনো ব্যতিক্রম কখনোই হয়নি। তারতম্য যা কিছু হয় তা উত্তাপের তীব্রতায়। আমার পর্যবেক্ষণ, বিরোধী দল যখন বুঝে যায় যে নির্বাচনে তাদের প্রাপ্তির খাতায় যোগ হতে যাচ্ছে শুধুই শূন্য, তখন সংগত কারণেই রাজনীতি আর রাজনীতির মাঠে উত্তাপ ছড়ানোয় তারা অনেক বেশি তৎপর থাকে। এ দেশের সর্বশেষ তিনটি জাতীয় নির্বাচনের দিকে ফিরে তাকালেই বিষয়গুলো স্পষ্ট হয়ে যায়।

২০০৯ সালে এ দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সর্বশেষ নির্বাচনটিতে বিএনপির জেতার আশা ছিল ষোলো আনাই। তার কারণও অবশ্য ছিল। বিএনপির দুঃশাসনে অতিষ্ঠ বাংলাদেশকে গণতান্ত্রিক মুক্তির বটিকা গিলিয়ে সে সময়কার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আসল লক্ষ্যটা ছিল মুখে মাইনাস টুর গান গেয়ে তলে তলে মাইনাস ওয়ান নীতি বাস্তবায়ন, অর্থাৎ শেখ হাসিনাকে রাজনীতির মঞ্চ থেকে অপসারণ। সেই কারণেই দুর্নীতির দায়ে প্রত্যাখ্যাত হাওয়া ভবনের নেত্রীর পরিবর্তে তারা জেলে পুরেছিল বঙ্গবন্ধুকন্যাকে। তাঁকে বিদেশে পাঠিয়ে সেখানে পাকাপোক্তভাবে নির্বাসনে দেওয়ার চেষ্টাও সেদিনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার কম করেনি। যদিও জনতার চাপে তারা পরবর্তী সময়ে তাদের অবস্থান পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছিল, তাদের উদ্দেশ্যের অসততায় কোনো পরিবর্তন আসেনি। যে কারণেই বিএনপির প্রত্যাশা ছিল মাঠের বাস্তবতা যাই হোক না কেন, তারা ঠিকই বাজিমাত করে ছাড়বে। সেবার তাদের আশার গুড়ে বালি পড়েছিল। পরের দুটি নির্বাচনে রায়টা কোন দিকে যাচ্ছে তা অবশ্য ‘অন্ধ’ আর ‘কালা’র কাছেও ছিল পরিষ্কার। যে কারণে সে সময়টায় বিএনপিকে নির্বাচনের মাঠে খুঁজে না পাওয়া গেলেও রাস্তায় আগুন সন্ত্রাসে তাদের উৎসাহে কোনো ভাটা ছিল না। ভ্যানচালক থেকে অবুঝ শিশু কিংবা বেবুঝ গবাদি পশু থেকে আর যা কিছু তার কোনো কিছুই সে সময়কার আগুন সন্ত্রাসের লেলিহান থাবা থেকে মুক্তি পায়নি।

ধান ভানতে শিবের এই গীত গাওয়ার উদ্দেশ্য অন্য কিছু না। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বাকি আছে এখনো এক বছরের বেশি সময়। অথচ এখন থেকেই মাঠ উত্তপ্ত করার চেষ্টায় বিএনপির কোনো ত্রুটি দেখা যাচ্ছে না। দেশের একেকটা বিভাগীয় শহরে জনসভার নামে তারা সারা দেশ থেকে নেতাকর্মীদের জড়ো করছে। পানির মতো টাকা খরচ করে দিনের পর দিন এই কর্মীদের খাওয়ানো হচ্ছে। চক্রান্তের ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সংযোজন ১০ ডিসেম্বর। ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করার অনুমতি পাওয়া সত্ত্বেও তারা নয়াপল্টনে জনসভার দাবিতে গোঁ ধরে বসে আছে। যারা এক-আধটু খবরাখবর রাখেন তাঁদের কাছে এ নিয়ে নানা রকম খবর আছে। শোনা যাচ্ছে, তারা আরেকটি শাপলাকাণ্ড ঘটানোর ধান্ধায় আছে। রাজপথে একবার বসতে পারলে সেখান থেকে সরে আসার কোনো ইচ্ছাই তাদের নেই। তাদের না বলে বরং বলা ভালো তাদের সহযোগী জামায়াতি আর অন্য উগ্র ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলোর নেই। রাতের আঁধারে বিএনপি রাজপথের কর্তৃত্ব ছেড়ে দেবে জামায়াতি-হেফাজতিদের হাতে আর তারপর তারা গতবারের চেয়েও মারাত্মক আগুন সন্ত্রাস ঘটিয়ে সরকারের পতন ঘটাবে এমন পরিকল্পনার কথা এখন নগরবাসীর মুখে মুখে।

১০ ডিসেম্বর মানবাধিকার দিবস। এমন একটি তারিখে বিএনপি কেন জনসভাটি করার সিদ্ধান্ত নিল তা নিয়েও বিস্তর কানাঘুষা আছে। মানবাধিকারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে একসময়ে আগুন সন্ত্রাসের মাধ্যমে ক্ষমতা দখলের মোহাবিষ্ট বিএনপি যে এখনো মানবাধিকারের থোড়াই পরোয়া করে তা তাদের এমনি সিদ্ধান্ত থেকেই স্পষ্ট। অবশ্য এর সপক্ষে এর চেয়েও ঢের বেশি বড় প্রমাণ আমাদের সামনেই রয়েছে। একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ফাঁসির দণ্ডে দণ্ডিত খুনি সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরীর কুসন্তান হুম্মাম কাদের চৌধুরীর চট্টগ্রামে বিএনপির সাম্প্রতিক জনসভায় যে আস্ফাালন, বিএনপি যে মানবতা আর মানবাধিকারের কোনো পরোয়াই করে না, সেটা তো এটা থেকেই স্পষ্ট। অবশ্য বিএনপির সোহরাওয়ার্দী উদ্যান-বিমুখতার আরো একটা ব্যাখ্যাও আছে। যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে এই ডিসেম্বরেই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বিজয়ী বাঙালি জাতির বিজয়ের পতাকা উড্ডীন হয়েছিল, সেখান থেকে তাদের তথাকথিত গণতান্ত্রিক বিজয়ের সূচনা হোক এটি আর যাই হোক মেনে নেওয়াটা সাচ্চা বিএনপি নেতাকর্মীদের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয়। তবে দায়িত্বশীল মহলসূত্রে এমন জানা যাচ্ছে যে বিএনপির ১০ ডিসেম্বর প্রীতির আরো একটি কারণ হচ্ছে লবিস্টদের পরামর্শ। কোটি কোটি টাকা খরচ করে দলটি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যে লবিস্টদের নিয়োগ করেছে, শোনা যাচ্ছে তারা তাদের আশ্বস্ত করেছে যে বাংলাদেশ সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান এবং কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আরেক দফা মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসতে যাচ্ছে এই ১০ তারিখেই। আর সে কারণেই ওই দিনটিতেই হবে মহাসমাবেশটির তারিখ নির্ধারণ, যাতে দুয়ে দুয়ে চার করে সরকার তথা দেশকে আরেকটু অস্বস্তিতে ফেলা যায়।

এবার এই অশুভ শক্তিটি গত দুইবারের চেয়ে একটু বেশি আগেই আগামী নির্বাচনে তাদের পরিণতিটা কী হতে যাচ্ছে তা ভালোমতো বুঝে গেছে। আর সে কারণেই এবার মাঠ গরম করায় তাদের প্রস্তুতিটা অন্যবারের চেয়ে অনেক আগে এবং অনেক বেশিও বটে। আজকের বৈশ্বিক বাস্তবতার বিপরীতে গিয়ে দেশকে আরো একবার পাকিস্তান বানানোর বিএনপির এই আরো এক দফা চক্রান্ত একেবারে গোড়াতেই রুখে দেওয়াটা খুবই জরুরি। আজ যখন প্রগতিশীলদের লাগাতার আন্দোলনের মুখে পিছু হটছে মৌলবাদী ইরান সরকার, কিংবা সৌদি মহিলারা বেশি বেশি সংখ্যায় গাড়ি হাঁকিয়ে রাজপথ দাবড়ে বেড়াচ্ছেন বলে ওখানে এখন প্রবাসী গাড়িচালকদের মাথায় হাত, সেখানে ঢাকার সমাবেশকে কেন্দ্র করে বিএনপির সাম্প্রতিক সময়ের তৎপরতা যে নিছক রাজনীতি নয়, বরং এর পেছনে রয়েছে গভীর মৌলবাদী চক্রান্ত, তা বলাই বাহুল্য। আর আমার সহসা এমন অনুসিদ্ধান্তে পৌঁছানোর কারণটাও বলে রাখি, আমরা এ কথা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না যে কোনো কারণ ছাড়াই হঠাৎই জঙ্গিরা সশস্ত্র প্রশিক্ষণ গ্রহণে দারুণ তৎপর হয়ে উঠেছে বান্দরবানের গভীর অরণ্যে, কিংবা জীবন বাজি রেখে প্রকাশ্যে আদালত প্রাঙ্গণ থেকে জঙ্গি ছিনিয়ে নিতে দুঃসাহসী হয়ে উঠছে।

লেখক: ডা. মামুন আল মাহতাব স্বপ্নীল – অধ্যাপক ও ডিভিশন প্রধান, ইন্টারভেনশনাল হেপাটোলজি ডিভিশন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় এবং সদস্যসচিব, সম্প্রীতি বাংলাদেশ। 

 


সর্বশেষ - রাজনীতি