1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড : অপপ্রচার বন্ধ হোক

নিশাত বিজয় : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর, ২০২১

অভিজিৎ রায়ের হত্যাকারীদের ধরিয়ে দিতে আমেরিকান সরকার ৫০ লক্ষ ডলার ঘোষণা করেছে। এই সংক্রান্ত খবর নিয়ে প্রবাসী ব্লগার ওমর ফারুক লুক্সের লম্বা একটি স্ট্যাটাস চোখে পড়েছে।

তার স্ট্যাটাস নিয়ে কথা বলার আগে অভিজিৎ দা আর আমার পরিচয়ের কিছু কথা বলি। ২০১০ সালে যখন কলেজে ইন্টার পড়ি তখন বোর্ডের বৃত্তির টাকা নিয়ে ঢাকায় বইমেলায় এসেছিলাম বই কিনতে৷ হঠাৎ চোখে পড়লো ‘আলো হাতে চলিয়াছে আঁধারের যাত্রী’ বইটি।

বইটির পৃষ্ঠা উল্টাতে গিয়ে যেন নিজেকে খুঁজে পেলাম। বইমেলাতেই অর্ধেক পড়ে ফেললাম, বাকিটা পড়ার জন্যে কিনে নিলাম। লেখক-অভিজিৎ রায়।

পরে একই লেখকের ‘মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে’ বইটিও কিনলাম। সে থেকে যে কতবার বই দুটি পড়েছি তার ইয়াত্তা নেই।

২০১১ সাল থেকে ব্লগে টুকটাক লেখালেখির কারণে অভিজিৎ দা’কে আরও ভাল করে চিনলাম। ২০১২ সালে অভিদা’কে ফেসবুকে রিকোয়েস্ট পাঠালে দাদা একসেপ্ট করলেন(ফেসবুকে কোন মৃত মানুষকে আর লিস্টে রাখি না, শুধু দাদাকে ছাড়া- দাদা আমার কাছে চির তরুণ, শক্তির উৎস)। সেই থেকে টুকটাক কথা হয়।

দাদা যেদিন হত্যার শিকার হলেন তার পরদিনও তাঁর বইমেলায় আসার কথা ছিল, সেদিন আমার সাথে তার দেখা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সে দেখা আর কোনদিন হবে না।

দাদার মৃত্যুর দিন ২৬ ফেব্রুয়ারিতে আমি ছিলাম ঢাবির এফ রহমান হলে৷ হঠাৎ শুনলাম টিএসসিতে একজনকে কুপিয়েছে, শুনেই মনটা ভারি হয়ে উঠলো। কারণ তার আগে থেকেই গণজাগরণের সহযোদ্ধা রাজীব দা, দ্বীপদা’কে হারিয়েছিলাম।

শুনে হল থেকে বেরিয়ে টিএসসি আসতেই শুনি কোন এক লেখককে কুপিয়েছে, তার ঘন্টাখানেক পরে শুনি মানুষটি অভিজিৎ রায়। যেন আকাশ থেকে পড়লাম। দাদা মারা গেলেন সে রাতেই।

হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল টিএসসির সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গেট দিয়ে দাদা বের হয়ে যখন ঢাবি লাইব্রেরি গেটের উল্টো দিকে আসেন সেখানে। হত্যাকারীরা জায়গাটি বেছে নেওয়ার কারণ হচ্ছে চারুকলা আর টিএসসির মাঝামাঝি এই স্থানটাতে কোন পুলিশ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের জমায়েত নেই কারণ এখানে কোন দোকান নেই। সুপরিকল্পিতভাবেই এই প্ল্যানিং’টা করা হয়েছিল বলেই আমার ধারণা।

এখন, ওমর ফারুক লুক্সের স্ট্যাটাসের কয়েকটি দিক নিয়ে আলোচনা করবো।

প্রথমত, সে বলেছিল জিয়া নামে কারও এগজিস্টেন্স নেই, সরকারের কাল্পনিক আবিষ্কার।

অথচ জিয়া হচ্ছে সেনাবাহিনীর বহিস্কৃত মেজর যে কিনা অভ্যুত্থানের দায়ে জড়িত ছিল কিন্তু পালিয়ে যেতে সক্ষম হয় তার অতি মেধার কারণে। পরে সে জেএমবি পুনর্গঠন করে।

দ্বিতীয়ত, সরকার নিজেই অভিজিৎ রায়কে হত্যা করেছে।

সরকার কেন অভিজিৎ রায়কে হত্যা করবে? অভিজিৎ রায় হত্যায় সরকারের কোন উপকার আছে ক্ষতি ছাড়া? দেশ জঙ্গি রাষ্ট্র হলেই বরং আমেরিকার মতো সাম্রাজ্যবাদীদের সুবিধা হয়, কি সুবিধা হয় সেটা লুক্স নিজেই বলেছে আমেরিকা নাকি খেলাধুলা করবে এবার অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড নিয়ে আ’লীগ সরকারের সাথে। শব্দচয়নই বলে দেয় লুক্স খুবই খুশি আমেরিকা খেলাধুলা করবে বলে, লুক্স যেন বসেই আছে অনেকদিন ধরে কবে খেলা শুরু হবে?

সরকার কি এতোই বোকা যে নিজের পায়ে নিজে কুড়াল মারবে অভিজিৎ রায়কে মেরে? যেখানে অভিজিৎ দার পিতা অজয় রায় শেখ হাসিনার শিক্ষক এবং শেখ হাসিনা নিজে সেদিন অজয় রায়কে ফোন দিয়ে সমবেদনা জানিয়েছেন।

তৃতীয়ত,
অভিজিৎ হত্যাকাণ্ডকে নাকি সরকার, শেখ হাসিনা, সজিব ওয়াজেদ জয় লেজিটিমেসি দেওয়ার চেষ্টা করেছে, কিন্তু সেটি কবে কোথায়?

তখন আমি নিজে সরাসরি ছাত্রলীগের পদধারী কর্মী। অভিজিৎ দা হত্যাকাণ্ডের পরে একাধিক মানববন্ধনে শাহবাগে দাঁড়িয়েছি হত্যার বিরুদ্ধে। কই কোনদিন দল থেকে আমাকে দাঁড়াতে বারণ করেনি তো। অথচ রাস্তায় এই ওমর ফারুক লুক্সকে পায়নি, তারা ইউরোপে বসে বিচার চেয়ে বিপ্লব করেছে, আর আজও করে যাচ্ছে।

চতুর্থত,
আমেরিকা নাকি খুবই অখুশি এবং বিপ্লবী হয়ে উঠেছে অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়াতে। অথচ অভিজিৎ রায় মারা গিয়েছেন ২০১৫ সালে, আর এখন ২০২১ সাল। ৬ বছর লাগলে আমেরিকার জেগে উঠতে? নাকি বাংলাদেশ আমেরিকার সামরিক জোট কোয়াডে যোগ না দেওয়াতেই হঠাৎ করেই অভিজিৎ প্রেম জেগে উঠেছে?

পশ্চমত,
হত্যাকাণ্ডের পরপরই নাকি এফবিআই এসে বলেছে হত্যায় ৫০ জন জড়িত। অথচ এফবিআই সেসময় এ কথা কোথায় বলেছে? দেশি-বিদেশি কোন গণমাধ্যমেই তখন আসেনি। এই কথা ৬ বছর পরে কি লুক্সকে এফবিআই ফোন করে বলেছে?

সবশেষে লুক্স বলেছে আ’লীগ সরকারের দিন শেষ, তার স্ট্যাটাসের মূল বিষয় অভিজিৎ রায় নয় বরং আওয়ামীলীগের দিন শেষ। অথচ লুক্সের মতো ইউরোপবাসীর জানা নেই যে বাংলাদেশ এখন তলাবিহীন ঝুড়ি না যে মোড়লরা চাইলেই বাংলাদেশ সরকার ফেলে দিতে পারে ইচ্ছে হলেই। আওয়ামী লীগ সরকার বড় কথা নয় উন্নয়নশীল বাংলাদেশের ভিত্তি এখন কতটা মজবুত এটা বোঝার ক্ষমতা নেই সেইসব পরজীবীদের যারা বিদেশি রাষ্ট্রের গুণগান করে আর নিজ দেশকে আফগান-ইরাকের মতো ধ্বংস্বস্তুপ হওয়ার স্বপ্ন দেখে। এসব কেবল স্বপ্নই, বাংলাদেশ টিকে থাকবে তার স্বমহিমায়।

আর অভিজিৎ রায়কেও বাংলার বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ আজীবন স্মরণে রাখবে, একদিন অভিজিৎ দার নামে হল হবে, বিজ্ঞান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। মানুষ ধর্মান্ধতা থেকে মুক্ত হবে এবং অবশ্যই লুক্সের মতো সাম্রাজ্যবাদী আর উপনিবেশবাদী দালালদের বাঙালী সঠিক চেনা ও জানার মাধ্যমে পরিপূর্ণ জ্ঞানও অর্জন করবে।

জয় বাংলা। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

লেখক: নিশাত বিজয় – সাংবাদিক ও সাবেক ছাত্রনেতা।


সর্বশেষ - রাজনীতি