সম্প্রতি পাকিস্তানে ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে অনাস্থা প্রস্তাব পাস করে ইমরান খানকে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে অপসারণ করা হয়েছে। অ্যাসেম্বলির ৩৪২ জন সদস্যের মধ্যে ইমরান খানের পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ দলের ১৫৫ সদস্য ছিল। পাকিস্তানের সেনা এস্টাবলিশমেন্টের সহায়তায় কয়েকটি ছোটখাটো দলের সঙ্গে কোয়ালিশন করে ২০১৮ সালে ইমরান খান অ্যাসেম্বলিতে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন। ইমরান খান তার ক্ষমতাচ্যুতির জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে সরাসরি অভিযুক্ত করলেও সারা বিশ্বই বুঝতে পেরেছে যে সেনা এস্টাবলিশমেন্টের সঙ্গে তার চলমান বিরোধের কারণেই এ বদল ঘটেছে। ১৯৪৮ সাল থেকেই পাকিস্তানের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার প্রকৃত মালিক ওই দেশের সেনাবাহিনী, গত ৭৪ বছরেও এ বাস্তবতার কোনো পরিবর্তন ঘটেনি। আর পাকিস্তানের অর্থনীতির ক্রমবর্ধমান দুর্দশার পেছনেও অন্যতম কারণ বিশাল এ সেনাবাহিনী পালনের অসহনীয় বোঝা।
পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীতে প্রায় পৌনে সাত লাখ কর্মকর্তা-কর্মচারী-সিপাহি রয়েছে, যার মধ্যে সেনাবাহিনীতেই রয়েছে সাড়ে পাঁচ লাখের বেশি। আধুনিক অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে এত বিশাল একটি সশস্ত্র বাহিনীকে সাজাতে এবং সেটাকে যুদ্ধের জন্য সার্বক্ষণিকভাবে প্রস্তুত রাখতে গিয়ে প্রতি বছর পাকিস্তানের সরকারি বাজেটের অর্ধেকেরও বেশি ব্যয় বরাদ্দ প্রয়োজন হয়ে পড়ে। ফলে বাজেটের অন্যান্য খাতে সরকারি ব্যয় বরাদ্দ প্রয়োজনের তুলনায় নেহাতই অকিঞ্চিত্কর বলা চলে। বিশেষত শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে পাকিস্তান সরকারি ব্যয় বরাদ্দ বাড়াতেই পারছে না প্রতিরক্ষা খাতের চাহিদা মেটাতে গিয়ে। প্রতিরক্ষা খাতে দেশটি জিডিপির ৫ শতাংশ বা তারও বেশি ব্যয় করে যাচ্ছে এবং এ খাতে অপ্রকাশ্য-গোপনীয় ব্যয় বিবেচনায় নিলে অনুপাতটা আরো বেশি হবে। ১৯৪৮ সাল থেকে পাকিস্তানের সেনা এস্টাবলিশমেন্ট যেহেতু ওই দেশটির প্রকৃত শাসনক্ষমতা দখল করে রেখেছে, তাই প্রতিরক্ষা খাতের ব্যয় বরাদ্দ কাটছাঁটের ইস্যুটিকে আলোচনা-সমালোচনায় নিষিদ্ধ বিষয় বিবেচনা করা হয় ওখানে। অদূরভবিষ্যতেও প্রকৃত শাসনক্ষমতা থেকে সেনাবাহিনীকে হটানো পাকিস্তানে দিবাস্বপ্নই থেকে যাবে। দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৌড়ে কেন ক্রমে পিছিয়ে পড়ছে, সে প্রশ্নের জবাব খুঁজতে গিয়ে পাকিস্তানের সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে ওয়াকিবহাল মহল পর্যন্ত ওই দেশের দুর্নীতির প্রকোপ, অর্থনৈতিক কৌশলের দুর্বলতা, নেতৃত্বের অদূরদর্শিতা এবং সরকারগুলোর অযোগ্যতাকে প্রায়ই দায়ী করলেও সামরিক বাহিনীর পেছনে এ মাত্রাতিরিক্ত ও অসহনীয় সরকারি ব্যয়ের ব্যাপারটি সাধারণত এড়িয়ে যায় অথবা প্রকাশ্যে এ ব্যাপারে মন্তব্যকে বিপজ্জনক বিবেচনা করে। ইমরান খানও সযত্নে এ ইস্যু এড়িয়ে যেতেন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যদ্দিন পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ‘সাদা হাতি’ পোষার অসহনীয় বোঝা থেকে নিষ্কৃতি পাবে না, তদ্দিন অনুন্নয়নের দুষ্টচক্র থেকে দেশটির মুক্তি মিলবে না। একই সঙ্গে রাষ্ট্রটিও সেনা এস্টাবলিশমেন্টের ডি-ফেক্টো শাসন থেকে মুক্তি পাবে না।
পাকিস্তান ২০২২ সালে এসে অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের চেয়ে অনেকখানি পিছিয়ে পড়েছে, অথচ ১৯৭১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তারা বেশির ভাগ অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশের চেয়ে অগ্রগামী ছিল। ১৯৭১ সালে মাথাপিছু জিডিপির বিচারে পশ্চিম পাকিস্তান পূর্ব পাকিস্তান থেকে ৭০ শতাংশ এগিয়ে ছিল, কিন্তু ২০২১ সালের জুনে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিএনআই বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৫৯১ ডলারে। আর সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী পাকিস্তানের মাথাপিছু জিএনআই মাত্র ১ হাজার ৫৪৭ ডলার। ১৯৪৭ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত ২৪ বছর ধরে পশ্চিম পাকিস্তানিরা তদানীন্তন পূর্ব বাংলা/পূর্ব পাকিস্তানকে নিজেদের অভ্যন্তরীণ উপনিবেশ হিসেবে শোষণ ও লুণ্ঠন করেছে এবং অপরিসীম বঞ্চনার শিকার করেছে। সেজন্য ১৯৪৭ সালে যদিও পূর্ব বাংলা অর্থনৈতিকভাবে পাঞ্জাব, সিন্ধু, উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশ এবং বেলুচিস্তানের তুলনায় বেশ খানিকটা এগিয়ে ছিল কিন্তু ২৪ বছরের ওই নব্য ঔপনিবেশিক পর্বের শেষে এসে পাঞ্জাব ও করাচি অঞ্চল পূর্ব পাকিস্তানের চেয়ে অনেকখানি সমৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। নিচের আলোচনা থেকে এ শোষণ, লুণ্ঠন, বঞ্চনা ও পুঁজি পাচারের চিত্রটা কিঞ্চিৎ পাওয়া যাবে।
বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করা নিয়ে ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের শাসকদের সঙ্গে বাঙালিদের প্রথম প্রকাশ্য বিরোধটা শুরু হলেও এর আগেই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রত্যেকটা অর্থনৈতিক নীতিতে পূর্ব বাংলার ন্যায্য হিস্যা না দেয়ার সংঘবদ্ধ প্রয়াসটা দৃষ্টিকটুভাবে ধরা পড়ে যাচ্ছিল বারবার। ১৯৪৭ সালের অক্টোবর থেকে শুরু হয়ে যাওয়া প্রথম কাশ্মীর যুদ্ধের জন্য পাকিস্তানের সশস্ত্র বাহিনীকে আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হওয়ার প্রয়োজনকে অগ্রাধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছিল প্রথম থেকেই। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল রাজধানী করাচিতে সরকারের দপ্তরগুলোর ইমারত নির্মাণ, সাজ-সরঞ্জাম সংগ্রহ ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা স্থাপনের জরুরি প্রয়োজন এবং মোহাজেরদের পুনর্বাসনের জন্য বিপুল ব্যয়ের ইস্যুগুলো। এভাবে যে বঞ্চনার সুপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ও নীতি বাস্তবায়ন শুরু হলো, তা শেষ হয়নি পাকিস্তানের পুরো ২৪ বছরে। পাকিস্তানের প্রথম আদমশুমারি হয় ১৯৫১ সালে। ওই আদমশুমারিতে পাকিস্তানের জনসংখ্যা নির্ণীত হয় ৭ দশমিক ৫৮ কোটি, যার মধ্যে ৪ দশমিক ২০ কোটি ছিল পূর্ব বাংলার জনসংখ্যা, মানে ৫৫ দশমিক ৪১ শতাংশ (১৯৫৫ সালে পূর্ব বাংলার পরিবর্তিত নাম হয় পূর্ব পাকিস্তান)। ওই জনসংখ্যার আনুপাতিক ন্যায্য হিস্যা কোনো ব্যাপারেই পূর্ব পাকিস্তান ২৪ বছরে কখনই পায়নি, এমনকি অর্ধেকও পায়নি। নিচের তথ্যগুলো দেখুন—
#প্রাথমিক পর্যায়ে পাকিস্তানের রফতানি আয়ের ৭৫-৭৭ শতাংশই আসত পূর্ব বাংলার রফতানি পণ্য থেকে। ১৯৫০ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত কোরিয়া যুদ্ধ এবং প্রথম ভিয়েতনাম যুদ্ধের কারণে পূর্ব বাংলার পাট রফতানি আয়ে একটা জোয়ার সৃষ্টি হওয়ায় ওই অনুপাত ৮০-৮৫ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছিল। অথচ ওই রফতানি আয়ের প্রায় পুরোটাই ১৯৪৭-৪৮ অর্থবছর থেকে কেন্দ্রীয় সরকার দখলে নিতে শুরু করেছিল। ষাটের দশকে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলন যখন জোরদার হতে শুরু করেছিল, তখন বৈদেশিক রফতানি আয়ের একটা ক্রমবর্ধমান অংশ পূর্ব পকিস্তানে বরাদ্দ করা হলেও ১৯৪৭-১৯৭১ এ ২৪ বছরের শেষে এসেও কখনই বছরে রফতানি আয়ের এক-পঞ্চমাংশও পূর্ব পাকিস্তান নিজেদের ভাগে পায়নি। এ ২৪ বছরের গড় বার্ষিক হিস্যা ছিল মাত্র ১৮ শতাংশ।
# ইঙ্গ-মার্কিন বলয়ে অবস্থান গ্রহণের কারণে পাকিস্তান জন্মের পর থেকেই বিভিন্ন দাতা দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছ থেকে বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান পাওয়ার ব্যাপারে অগ্রাধিকার পেয়েছিল। ২৪ বছরে ওই ‘বৈদেশিক সাহায্যে’র মাত্র ১৭ শতাংশ পেয়েছিল পূর্ব পাকিস্তান। এটা ওসব দাতা দেশ ও সংস্থার হিসাব অনুযায়ীই প্রমাণিত হয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর ওই ১৭ শতাংশ ঋণের দায়ভার বাংলাদেশ গ্রহণ করার পরই কেবল ওসব দাতারা নতুন করে বাংলাদেশকে ঋণ ও অনুদান দিতে রাজি হয়েছিল।
#পূর্ব পাকিস্তান থেকে ২৪ বছরে পাকিস্তানের ব্যাংকগুলো যে পরিমাণ আমানত সংগ্রহ করেছিল, তার মাত্র ৮ শতাংশ বাংলাদেশের ঋণগ্রহীতারা পেয়েছেন, বাকি ৯২ শতাংশই পাকিস্তানের সরকার ও শিল্পপতি-ব্যবসায়ীরা কব্জা করে নিয়েছেন।
#ওই ২৪ বছরে পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের সরকারি বাজেটের মাত্র ২৮ শতাংশ পূর্ব পাকিস্তানে ব্যয়িত হয়েছিল, বাকি ৭২ শতাংশ ব্যয় করা হয়েছে তদানীন্তন পশ্চিম পাকিস্তানে।
#১৯৭০ সাল পর্যন্ত বাস্তবায়িত পাকিস্তানের তিনটি পঞ্চবার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার ব্যয় বরাদ্দের মাত্র ২৯ শতাংশ ব্যয় করা হয়েছে পূর্ব পাকিস্তানে।
#পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা বাহিনীগুলোয় পূর্ব পাকিস্তানিদের অনুপাত কখনই ৭ শতাংশ অতিক্রম করেনি। অফিসারদের মধ্যে বাঙালিদের অনুপাত, এমনকি ৫ শতাংশেও পৌঁছেনি ১৯৭১ সাল পর্যন্ত।
# ১৯৭০ সালে খোদ পূর্ব পাকিস্তানে অবস্থিত ব্যক্তি খাতের শিল্প-কারখানার মাত্র ১১ শতাংশের মালিক ছিল বাঙালিরা, বাকি ৮৯ শতাংশের মালিক ছিল হয় পশ্চিম পাকিস্তানিরা নয়তো অবাঙালিরা। পশ্চিম পাকিস্তানে অবস্থিত একটি শিল্প-কারখানার মালিকও বাঙালি ছিল না।
#মুক্তিযুদ্ধের সময় ডিসেম্বরে যখন পাকিস্তানের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল তখন পূর্ব পাকিস্তানের প্রায় সব ব্যাংকের ভল্ট খালি করে অর্থ পাচার করে দেয়া হয়েছিল পাকিস্তানে। এমনকি স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের রিজার্ভের সব সোনাদানা ও বৈদেশিক মুদ্রা পাচার করে দেয়া হয়েছিল পাকিস্তানে।
# ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের সিভিল প্রশাসনে বাঙালি ছিল মাত্র ১৬ শতাংশ, আর বাকি ৮৪ শতাংশই ছিল পশ্চিম পাকিস্তানি ও অবাঙালিরা।
#যখন ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে সর্বাত্মক যুদ্ধ শুরু হয়ে গিয়েছিল তখন পূর্ব পাকিস্তানে থাকা নৌবাহিনীর জাহাজ, বিমান বাহিনীর উড়োজাহাজ ও হেলিকপ্টারের একাংশ এবং পিআইএর বেশ কয়েকটি উড়োজাহাজ বার্মার সহায়তায় পাকিস্তানে নিয়ে যেতে পেরেছিল পাকিস্তান সরকার।
#পাকিস্তানের তিনটা রাজধানী—করাচি, রাওয়ালপিন্ডি ও ইসলামাবাদ—নির্মাণ ব্যয়ের সিংহভাগই বহন করেছিল বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছর ২০২১ সালে প্রায় সব গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ও সামাজিক সূচকে পাকিস্তানকে অনেক পেছনে ফেলে দিয়েছে। তুলনাটা দেখুন—
#মাথাপিছু জিডিপিতে বাংলাদেশ পাকিস্তানের তুলনায় ৬০ শতাংশ এগিয়ে গেছে।
# বাংলাদেশের রফতানি আয় পাকিস্তানের দ্বিগুণেরও বেশি, ২০২১-২২ অর্থবছরে তা ৫০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।
#বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২০২১ সালের আগস্টে ৪৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে গিয়েছিল, কিঞ্চিৎ হ্রাস পেয়ে ২০২২ সালের এপ্রিলে রিজার্ভ ৪৪ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়ালেও সেটা পাকিস্তানের দ্বিগুণেরও বেশি।
#বাংলাদেশের জনগণের গড় আয়ু ৭২ দশমিক ৮ বছর, পাকিস্তানের ৬৬ বছর।
# বাংলাদেশের জনগণের সাক্ষরতার হার ৭৬ শতাংশ, আর পাকিস্তানের ৫৯ শতাংশ।
#মানব উন্নয়ন সূচকের কান্ট্রি র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থান ১৩৩ নম্বরে, আর পাকিস্তানের অবস্থান ১৪৭ নম্বরে।
#বাংলাদেশের মোট জিডিপি ৪১৬ বিলিয়ন ডলার, আর পাকিস্তানের ২৬৬ বিলিয়ন ডলার।
# বাংলাদেশের জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক ২ শতাংশ, আর পাকিস্তানের ২ দশমিক ১ শতাংশ। ফলে পাকিস্তানের জনসংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২ কোটিতে, আর বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটির মতো। বাংলাদেশের টোটাল ফার্টিলিটি রেট কমে বর্তমানে ২ দশমিক ১ হয়ে গেছে, অথচ পাকিস্তানে তা এখনো ৩ দশমিক ৫ রয়ে গেছে। এর মানে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা আর দ্রুত না বাড়লেও পাকিস্তানে অনেক দ্রুত হারে জনসংখ্যা বৃদ্ধি পেতে থাকবে আরো বহুদিন।
#বাংলাদেশের ৮৯-৯০ টাকায় ১ ডলার পাওয়া যায়, চলমান রাজনৈতিক সংকটের কারণে পাকিস্তানে এখন ১ ডলার কিনতে ১৯০ রুপি লাগে। অথচ ২০০৭ সাল পর্যন্ত রুপির বৈদেশিক মান টাকার তুলনায় ৮ শতাংশ বেশি ছিল।
#বাংলাদেশের মোট বৈদেশিক ঋণ জিডিপির ১৭ দশমিক ৫ শতাংশ, অথচ পাকিস্তানে তা জিডিপির ৪৭ শতাংশ। প্রতি বছর পাকিস্তানের লেনদেনের ভারসাম্যের কারেন্ট অ্যাকাউন্টের ঘাটতি মেটাতে বৈদেশিক ঋণের প্রয়োজন হচ্ছে। উপরন্তু, সরকারি বাজেটের ক্রমবর্ধমান বিরাট অংশ তাদেরকে বৈদেশিক ঋণের সুদ ও আসল পরিশোধে বরাদ্দ করতে হচ্ছে।
# বাংলাদেশের নারীদের ৩৬ শতাংশ বাড়ির আঙিনার বাইরে কর্মরত, পাকিস্তানে এ অনুপাত মাত্র ১৪ শতাংশ।
#বাংলাদেশের শিশুমৃত্যুর হার হাজারে ২১, আর পাকিস্তানের ৫৯।
# বাংলাদেশের শতভাগ জনগণ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে, অথচ পাকিস্তানের ৭৩ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ পাচ্ছে।
উপরের তথ্য-উপাত্তগুলো সাক্ষ্য দিচ্ছে, পাকিস্তান অর্থনৈতিক উন্নয়নের দৌড়ে আর কখনই বাংলাদেশের নাগাল পাবে না বলে বিশ্বাস। বাংলাদেশ যদি দুর্নীতি ও পুঁজি পাচার দমন করতে পারে, তাহলে পাকিস্তানের চেয়ে আরো এগিয়ে যাবে। বিশেষত পৌনে সাত লাখ কর্মকর্তা-সিপাহির সশস্ত্র বাহিনীর বোঝা যদ্দিন পাকিস্তানকে বইতে হবে তদ্দিন ক্রমাগতভাবে পিছিয়ে যাওয়াই পাকিস্তানের নিয়তি।
লেখক: ড. মইনুল ইসলাম – একুশে পদকপ্রাপ্ত অর্থনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক, অর্থনীতি বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।