1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ফিরে দেখা: পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ

মোহাম্মদ শাহজাহান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০২১

১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর ৯ মাসের যুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদারবাহিনীকে পরাজিত করে বাঙালি বিজয় অর্জন করে। পূর্ব পাকিস্তানের সর্বশেষ গভর্নর ডা. এমএ মালিক, লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আবদুল্লাহ খান নিয়াজী প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক ও সেনাবাহিনীর কমান্ডার। আর মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খান ছিল গভর্নরের উপদেষ্টা। ১৯৭১ পর্যন্ত ৪ বছর এদেশে থাকাকালে সে বেসামরিক প্রশাসনের প্রধানের দায়িত্ব পালন করত।

বর্ষাকাল শুরু হলে মুক্তিযোদ্ধাদের চোরাগোপ্তা হামলায় পাকিস্তানিরা বিভিন্ন স্থানে কুপোকাত হতে থাকে। ৩ ডিসেম্বর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ শুরু হলে ভারতের সৈন্য এবং বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধারা একসঙ্গে পাকিস্তানিদের উপর হামলা চালায়। মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর হামলায় পাকিস্তানিরা বিভিন্ন ফ্রন্টে হারতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তান সামরিক আইন প্রশাসকের জনসংযোগ কর্মকর্তা মেজর সিদ্দিক সালিক তার ‘উইটনেস টু সারেন্ডার’ এবং ফরমান আলী তার ‘হাউ পাকিস্তান গট ডিভাইডেড’ গ্রন্থে কাছ থেকে দেখা তাদের পরাজয় ও আনুষঙ্গিক ঘটনাগুলো লিপিবদ্ধ করেছে।

একাত্তরের যুদ্ধ ছিল জনযুদ্ধ। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কালজয়ী নেতৃত্বে বাংলার অধিকাংশ মানুষই মুক্তিযোদ্ধায় পরিণত হয়। মিত্রবাহিনী যুদ্ধে না এলে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হতো। একসময় পাকিস্তানিরা পরাজিত হতো এটা নিশ্চিত। ওই অবস্থায় হয়তো জানমালের আরও বেশি ক্ষয়ক্ষতি হতো। মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে মিত্রবাহিনী যুক্ত হওয়ার পর বিপর্যস্ত পাকিস্তানিদের পরাজয় ছিল সময়ের ব্যাপার মাত্র। পরাজয় নিশ্চিত জেনে ৭ ডিসেম্বরই গভর্নর মালিকের সঙ্গে বৈঠককালে কান্নায় ভেঙে পড়ে জেনারেল নিয়াজী।

সিদ্দিক সালিক লিখেছে-

‘‘ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের দ্বিতীয় দিনে লাহোর ফ্রন্টের ভুয়া সাফল্যের সংবাদে জেনারেল নিয়াজী খুবই উল্লসিত হয়েছিল। কিন্তু ৭ ডিসেম্বরের মধ্যে ধীরে ধীরে তার মোহমুক্তি ঘটে।”

৭ ডিসেম্বর বাংলাদেশ-ভারত বাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হলেও আসলে ডিসেম্বর থেকেই বাঙালি ও ভারতীয় সৈন্য পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করতে থাকে।

৭ ডিসেম্বরই যশোর ও ঝিনাইদহ যৌথবাহিনীর দখলে চলে আসে। একই দিন কুমিল্লা ও ফেনীর মধ্যবর্তী পাকিস্তানের ৩৯ এডহক ডিভিশনও বিধ্বস্ত হয়ে যায়। এই সময় ঢাকায় বিভিন্ন ফ্রন্ট থেকে পরস্পরবিরোধী খবর আসতে থাকে। একদিকে চিফ অব স্টাফ ব্রিগেডিয়ার বকর সিদ্দিকী নিয়াজীকে রিপোর্ট দিচ্ছে সব সীমান্তে পাকিস্তানিরা বীরের মতো প্রতিরোধ গড়ে তুলছে।

অপরদিকে জেলা ও বিভাগীয় সদর থেকে গভর্নরকে জানানো হচ্ছে, বিভিন্ন ফ্রন্টে পাকিস্তানিরা পিছু হটছে এবং সৈন্য প্রত্যাহারের সঙ্গে সঙ্গে বেসামরিক জনগণের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে। পরস্পরবিরোধী খবরে বিভ্রান্ত গভর্নর ডা. মালিক ওইদিন (৭ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় নিয়াজীকে তলব করে।

ডা. মালিক, জেনারেল নিয়াজী ও দুজন সিনিয়র অফিসার গভর্নমেন্ট হাউজের একটি বিলাসবহুল কক্ষে বৈঠকে বসে। সালিকের গ্রন্থে বৈঠকের বিস্তারিত বর্ণনা রয়েছে। সেখানে উপস্থিত ব্যক্তিরা কেউ কোনো কথা বলছিল না। কয়েক মিনিট অন্তর আলাপচারিতাকে নীরবতা গ্রাস করছিল। গভর্নর নিজেই ৪ জনের মধ্যে কথাবার্তা বেশি বলে। সবাই বুঝতে পারছিল, ঢাকার পতন আসন্ন।

গভর্নর মালিক তার বক্তব্যের মাধ্যমে নিয়াজীকে সান্ত্বনা দেয়ার জন্য আন্তরিকভাবে চেষ্টা করে। গভর্নরের সান্ত্বনাসূচক বক্তব্যের সার-সংক্ষেপ ছিল-

“কোনো কোনো সময় ভালো পরিস্থিতি মন্দের জন্য পথ করে দেয়। আবার এর বিপরীতটাও হয়। মানুষের জীবনে ওঠানামা থাকবেই। উত্থান-পতন আসবেই। একইভাবে একজন সমরনায়কের জীবনেও ওঠানামা থাকবে। যশ এক সময় তাকে আচ্ছাদিত করে, আরেক সময় পরাজয় তার মর্যাদাকে ধুলায় মিশিয়ে দেয়।”

ডা. মালিকের বক্তব্যের শেষাংশ উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে জেনারেল নিয়াজীর স্থূলকায় শরীর যেন কেঁপে ওঠে। কান্নায় ভেঙে পড়ে নিয়াজী। দুহাত দিয়ে মুখ ঢেকে সে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। গভর্নর তার স্নেহসিক্ত হাত নিয়াজীর শরীরে বুলিয়ে সান্ত্বনা দেয়ার কণ্ঠে বলে-

“আমি জানি জেনারেল সাহেব, একজন অধিনায়কের জীবনে আকস্মিকভাবেই কঠিন সময় আসতে পারে। মনোবল হারাবেন না। আল্লাহ মহান!”

জেনারেল নিয়াজী ফুঁপিয়ে কাঁদার সময় এক বাঙালি ওয়েটার কফি আর শুকনো খাবারের ট্রে নিয়ে ওই কক্ষে প্রবেশ করে। প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে তাকে কক্ষ থেকে বের করে দেয়া হয়। ওয়েটার বাইরে এসে তার বাঙালি সহকর্মীদের বলে- ‘সাহেবরা ভেতরে কান্নাকাটি করছেন।’

ওয়েটারের ওই বক্তব্য গভর্নরের মিলিটারি সেক্রেটারি শুনে ধমকের সুরে তাদেরকে চুপ করিয়ে দেয়। গভর্নর মালিক প্রকৃত পরিস্থিতি অনুধান করল। কান্নাকাটি থামার পর সে নিয়াজীকে বলে- “অবস্থা যখন খারাপ, অস্ত্র সংবরণের জন্য প্রেসিডেন্টকে খবর প্রেরণের কথা আমি ভাবছি।”

কয়েক মুহূর্ত চুপ থেকে নিয়াজী মাথা নিচু করে ক্ষীণকণ্ঠে জবাব দেয়- ‘আমি মানব’। বৈঠকের পর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানকে গভর্নর একটি বার্তা পাঠায়। যদিও ওই বার্তা আমলে নেয়নি প্রেসিডেন্ট। বৈঠকের পর নিয়াজী সেনাসদরে গিয়ে পরবর্তী ৩ রাত নিষ্ক্রিয় থাকে। ৭, ৮ ও ৯ ডিসেম্বর নিয়াজীর উপর বড্ড ভারী হয়ে চাপ। এসময় পাকিস্তানের সব ডিভিশন তাদের শক্তি প্রায় হারিয়ে ফেলে।

নিয়াজীর ফুর্তিভাব নিঃশেষিত হয়ে গিয়েছিল। কারো সঙ্গে তেমন কথা বলত না। তার চোখে নিদ্রাহীনতার চিহ্ন স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এসময় ৮ থেকে ৯ ডিসেম্বর রাতে সালিক যায় নিয়াজীর কক্ষে। সংক্ষিপ্ত কথা বলার সময় প্রায় বিপর্যস্ত নিয়াজী বলে ওঠে- ‘সালিক তোমার ভাগ্যকে ধন্যবাদ যে, তুমি আজকে একজন জেনারেল নও।’ এই কথাতেই তার বুকের তীব্র যন্ত্রণা স্পষ্ট হয়ে যায়।

জেনারেল নিয়াজী ৭ ডিসেম্বর থেকে ৩ দিন নীরবে-নিভৃতে অবস্থান করার সময় বিবিসি খবর দেয়, সৈন্যদের বিপজ্জনক অবস্থার মধ্যে রেখে নিয়াজী আকাশপথে পশ্চিম পাকিস্তানে চলে গেছে। ১০ ডিসেম্বর নিয়াজী ঢাকার হোটেল ইন্টারকনে গিয়ে বলে- “বিবিসির লোকটি কোথায়? আমি এখনও পূর্ব পাকিস্তানেই আছি।”

মিত্রবাহিনী যখন ডিসেম্বরের শুরুতে মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে যোগ দিল, এরপর পাকিস্তানিদের আর টিকে থাকার কোনো সুযোগ ছিল না। সারা দেশেই শত্রুবাহিনী মার খেতে শুরু করে। ৭ ডিসেম্বর দাউদকান্দি থেকে পাকিস্তানিদের পালানোর দৃশ্য অনেকেই দেখেছে। আগের দিন কুমিল্লা মুক্ত হয়। মুক্তি ও মিত্রবাহিনী দাউদকান্দির দিকে শত্রুদের ধাওয়া করে। ঢাকা-চট্টগ্রাম সড়কে অজস্র মানুষ বিজয়ী বাহিনীর সঙ্গে মিলিত হয়। শেষ বিকেলে পাকিস্তানিরা লঞ্চে করে ঢাকার দিকে রওনা করে।

পাকিস্তানের দালালদের ৩ বাড়িতে ক্ষুব্ধ জনতা আগুন লাগিয়ে দেয়। ৭ ডিসেম্বর জেনারেল নিয়াজীর সঙ্গে বৈঠকের পর থেকেই গভর্নর ডা. মালিক যুদ্ধবিরতির জন্য প্রাণপণ চেষ্টা করতে থাকে। ৯ ডিসেম্বর প্রথমে গভর্নর মালিক ও পরে নিয়াজী প্রেসিডেন্টের কাছে বার্তায় বলে- ‘পরিস্থিতি মারাত্মক সংকটপূর্ণ। যত বিলম্ব হবে, ততই রক্তক্ষয় হবে’।

অবশেষে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান বাস্তবতার ভিত্তিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য গভর্নর মালিককে সর্বময় ক্ষমতা দিয়ে একটি টেলিগ্রাম পাঠায়। একই সঙ্গে সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ, জেনারেল আবদুল হামিদ নিয়াজীর কাছে পাঠানো বার্তায় যুদ্ধবিরতিসহ সব বিষয়ে গভর্নরের সিদ্ধান্ত মেনে নিতে নির্দেশ দেয়।

১০ ডিসেম্বর ভোরে আসা ওই বার্তায় জেনারেল হামিদ নিয়াজীকে উপদেশ দেয়- সর্বোচ্চপর্যায়ে যুদ্ধোপকরণ ধ্বংস করে ফেলার জন্য, যাতে সেগুলো শত্রুর হাতে না পড়ে। গভর্নর যুদ্ধবিরতির ব্যাপারে প্রথমে ঢাকায় অবস্থানরত জাতিসংঘের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মি. পল মার্ক হেনরির শরণাপন্ন হয়। যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব জাতিসংঘের কাছে যেতেই কয়েকটি প্রধান বিদেশি বেতার কেন্দ্র এর বিষয়বস্তু প্রকাশ করে দেয়। এতে পাকিস্তানের অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।

সারা দেশে মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর বিজয়রথ দুর্বার গতিতে এগিয়ে চলছিল। ১০ ডিসেম্বর দেয়ালের লিখন এমনই পরিষ্কার হয়ে গেল যে, মেজর জেনারেল জামশেদকে ঢাকার রক্ষক হিসেবে কার্যক্রম হাতে নিতে হয় এবং আরও অন্তরালে অনেকটা স্বেচ্ছায় নির্বাসনে চলে যায় নিয়াজী। ১২ ডিসেম্বর চাঁদপুর থেকে পালানোর সময় মেজর জেনারেল রহিম আহত হয়। সেদিনই জেনারেল নিয়াজী, জেনারেল ফরমান আলী ও চিফ সেক্রেটারি মুজাফফর হোসেন প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানোর জন্য একটি বার্তা তৈরি করে।

এতে নিরপরাধ মানুষের জীবন রক্ষার জন্য সম্ভাব্য সব কিছু করতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের প্রতি অনুরোধ জানানো হয়। খসড়াটি গভর্নরকে দেখিয়ে ওইদিন সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্টের কাছে পাঠানো হয়। ১৪ ডিসেম্বর বেলা ১১:১৫ মিনিটে তিনটি ভারতীয় মিগ বিমানের হামলায় ঢাকায় গভর্নমেন্ট হাউজের প্রধান হলের ভারী ছাদ ভেঙে পড়ে। দিনটি ছিল পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সর্বশেষ দিন

প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক বার্তায় নিয়াজীকে বলে- “আপনি এখন যুদ্ধ বন্ধসহ সশস্ত্র বাহিনীর সব সদস্য, সব পশ্চিম পাকিস্তানি এবং সব অনুগত ব্যক্তির জীবন রক্ষার জন্য যাবতীয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারেন।”

১৪ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান সময় বিকেল সাড়ে ৩টায় পিন্ডির এই টেলিগ্রাম ঢাকায় আসে। প্রকারান্তরে এটাই ছিল নিয়াজীর প্রতি ইয়াহিয়ার পক্ষ থেকে আত্মসমর্পণের আদেশ।

প্রেসিডেন্টের গ্রিন সিগন্যালের পর জেনারেল নিয়াজী ১৪ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় যুদ্ধবিরতির জন্য মধ্যস্থ হিসেবে প্রথমে চৈনিক ও রুশ কূটনীতিকদের কথা ভাবে। পরে গভর্নরের উপদেষ্টা জেনারেল রাও ফরমান আলীকে নিয়ে নিয়াজী ঢাকাস্থ মার্কিন কনসাল স্পিভাকের অফিসে গিয়ে তাকে ভারতীয়দের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির শর্ত নিয়ে আলোচনা করার অনুরোধ জানান। স্পিভাক বলেন, আমি আপনার হয়ে আলাপ-আলোচনা করতে পারি না। আপনি চাইলে একটা বার্তা তৈরি করে দিতে পারি।

ভারতের সেনাবাহিনীর চিফ অব স্টাফ শ্যাম মানেকশর কাছে পাঠাতে যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয় শর্ত দিয়ে পূর্ণ পৃষ্ঠার একটি বার্তা তৈরি করা হলো। স্পিভাক জানান, ২০ মিনিটের মধ্যেই এটি পাঠিয়ে দেয়া হবে। নিয়াজী ও ফরমান আলী চলে এসে বার্তার জবাবের প্রতীক্ষায় থাকে। স্পিভাক বার্তাটি মানেকশকে না পাঠিয়ে ওয়াশিংটনে পাঠিয়ে দেন।

জেনারেল ফরমান তার লেখা অনূদিত ‘বাংলাদেশের জন্ম’ (ইউপিএল, ১৯৯৬) গ্রন্থে লিখেছেন-

‘‘১৬ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর জেনারেল নাগরা জেনারেল নিয়াজীর কাছে একটি চিরকুট পাঠান। চিরকুটে নাগরা লিখেছেন- ‘প্রিয় আবদুল্লাহ, আমি এখন মিরপুর সেতুর কাছে। আপনার প্রতিনিধি পাঠান।’ নিয়াজী অন্য কয়েকজন জেনারেলের সঙ্গে পরামর্শ করে নাগরাকে অভ্যর্থনা জানাতে জেনারেল জামশেদকে পাঠায়। জামশেদ নাগরার নির্বিঘ্ন আগমনের জন্য তার সৈন্যদের আদেশ দেয়। ভারতের জেনারেল নাগরা কয়েকজন সৈন্য নিয়ে গৌরবের শিরোপা ধারণ করে ঢাকায় ঢোকে। প্রকৃতপক্ষে এটাই ছিল ঢাকার পতন ও পাকিস্তানিদের আত্মসমর্পণ।

মেজর সালিক লিখেছেন- ‘ঢাকার পতন হলো নীরবে, একজন হৃদরোগীর মতো।’ ভারতের মেজর জেনারেল জ্যাকব আত্মসমর্পণের দলিল নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন। জেনারেল ফরমান আত্মসমর্পণ-দলিলের ‘ভারত-বাংলাদেশ যৌথ কমান্ড’ সংবলিত ধারাটির ব্যাপারে আপত্তি জানালে জ্যাকব বলেন- ‘কিন্তু বিষয়টি দিল্লি থেকে এভাবেই এসেছে।’ বিকালের শুরুতেই নিয়াজী বিমানবন্দরে গিয়ে ভারতীয় পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরাকে অভ্যর্থনা জানায়।

অরোরার স্ত্রীও সঙ্গে এসেছিলেন। নিয়াজী তাকে সামরিক কায়দায় স্যালুট দিয়ে করমর্দন করে। সিদ্দিক সালিক আরও লিখেছে- “প্রায় ১০ লাখ বাঙালি এবং কয়েক কুড়ি বিদেশি সংবাদপত্র ও সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের সামনে জেনারেল অরোরা ও জেনারেল নিয়াজী আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন।”

সহায়ক:

* ভাষান্তর: মাসুদুল হক, উইটনেস টু সারেন্ডার, (নিয়াজীর আত্মসমর্পণের দলিল); সাহিত্য প্রকাশ, ১৯৮৮ ও ২০০৭।

* ভাষান্তর: শাহ আহমদ রেজা, (রাও ফরমান আলী খান- হাউ পাকিস্তান গট ডিভাইডেড, বাংলাদেশের জন্ম); ইউপিএল, ১৯৯৬ ও

১৫ ডিসেম্বর ২০২১।

লেখক: মোহাম্মদ শাহজাহান, মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক গবেষক, সিনিয়র সাংবাদিক।


সর্বশেষ - রাজনীতি