1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

প্রভিডেন্ট ফান্ডের উপর কর কমাবে এনবিআর

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২৩

সমালোচনার মুখে বেসরকারি কর্মচারী কল্যাণ তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর কর কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এটি ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে ১২ দশমিক ৫ শতাংশ কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হচ্ছে। এরই মধ্যে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এ সংক্রান্ত বিধিবিধানের সারসংক্ষেপ অনুমোদন করেছেন। শিগগির এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি হতে পারে। এনবিআর সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের আয়ের ওপর কর ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ করে এনবিআর। গত জুন মাসে পাস হওয়ায় নতুন আয়কর আইনে ট্রাস্ট ও তহবিলকে (প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি ফান্ড) কোম্পানি হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা হয়। ফলে বেসরকারি প্রভিডেন্ড ফান্ডকে নিরীক্ষিত হিসাব বিবরণীসহ রিটার্ন দাখিল এবং ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে করপোরেট কর দেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা তৈরি হয়। যদিও সরকারি চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড করের আওতামুক্ত রেখে প্রজ্ঞাপন জারি করে এনবিআর। এ অবস্থায় নতুন আইনটি বৈষম্যমূলক বলে অভিযোগ ওঠে।

পুরোনো আয়কর আইনে সরকারি ও বেসরকারি উভয় প্রভিডেন্ট ফান্ড করের আওতামুক্ত ছিল। অর্থাৎ সরকারি বা বেসরকারি কোনো খাতের প্রভিডেন্ট ফান্ড ও গ্র্যাচুইটি ফান্ডের জন্য আগে কোনো আয়কর দিতে হতো না। তবে নতুন আইনে সরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ড করের আওতামুক্ত রাখা আর বেসরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ড করভুক্ত করার বিষয়টি নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে এরই মধ্যে তীব্র সমালোচনা তৈরি হয়েছে।

এ নিয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর চন্দন আজিজ নামের সাবেক এক ব্যাংক কর্মকর্তার একটি ফেসবুক পোস্ট ভাইরাল হয়েছে। তিনি সেখানে লিখেছেন, ‘মার্কেন্টাইল ব্যাংকে ১২ বছর কাজ করেছি আমি। মনে আছে, প্রভিডেন্ট ফান্ডের শেষ বছরের আয় হিসেবে ৮৭ হাজার টাকা পেয়েছিলাম। এই কালো আয়কর আইন বহাল থাকলে শুধু শেষ বছরে আমাকে এই ৮৭ হাজার টাকার ওপর কর দিতে হতো ২৪ হাজার টাকা।’ অসংখ্য মানুষ তার এ পোস্টটিতে প্রতিক্রিয়া জানান এবং পোস্টটি শেয়ার করেন।

জনশুমারি মোতাবেক, বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যা ১৬ কোটি। যেখানে ব্যক্তিগত কর দেয় ২৮ লাখ মানুষ; যা মোট জনসংখ্যার ২ শতাংশেরও কম।

সম্প্রতি অর্থমন্ত্রীর অনুমোদনের জন্য এনবিআরের তৈরি করা সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্য তহবিল ও গ্র্যাচুইটি বা আনুতোষিক তহবিল গঠনের মাধ্যমে চাকরিজীবীদের সঞ্চয়ে উৎসাহিত এবং তাদের আর্থিক নিরাপত্তার ক্ষেত্র তৈরি করা হয়, যা দেশের মোট সঞ্চয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে এ ধরনের তহবিলসমূহের আয়ের ওপর করহার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ হারে আরোপিত হলে তহবিলসমূহের সুবিধাভোগী বেসরকারি চাকরিজীবীদের ওপর অতিরিক্ত করভার লাঘব হবে। এ বিষয়ে অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রীর অনুমোদন প্রত্যাশা করে এনবিআর।

এতে আরও বলা হয়, আয়কর আইন, ২০২৩ (২০২৩ সালের ১২ নম্বর আইন) এর ধারা ১০২ অনুযায়ী, স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিল, অনুমোদিত আনুতোষিক তহবিল, অনুমোদিত বার্ধক্য তহবিল ও পেনশন তহবিলের অর্থ সঞ্চয়ী আমানত খাতে বিনিয়োগের সুদ বা মুনাফার ওপর ৫ শতাংশ হারে উৎসে কর কর্তনের বিধান রয়েছে। এছাড়াও আয়কর আইন, ২০২৩ এর ধারা ১০৫ মোতাবেক, অনুমোদিত বার্ধক্য তহবিল বা পেনশন তহবিল বা গ্র্যাচুইটি তহবিল বা স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিল বা শ্রমিক স্বার্থ অংশগ্রহণ তহবিলের অর্থে কেনা সঞ্চয়পত্রের ওপর প্রাপ্ত মুনাফা প্রদানকালে ১০ শতাংশ হারে কর কর্তন করতে হবে।

এনবিআরের সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, অর্থ আইন, ২০২৩ এর অনুচ্ছেদ ‘খ’ এর দফা ৪ অনুযায়ী, তহবিলের আয়ের ওপর ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ হারে কর প্রযোজ্য হবে। তবে সব প্রকার আয় ও প্রাপ্তি এবং প্রত্যেক একক লেনদেনে পাঁচ লাখ টাকার বেশি ও বার্ষিক সর্বমোট ৩৬ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে সব প্রকার ব্যয় ও বিনিয়োগ ব্যাংক ট্রান্সফারের মাধ্যমে সম্পন্ন করতে ব্যর্থ হলে করহার ওই আয়ের ৩০ শতাংশ হবে। অর্থাৎ অনুমোদিত ভবিষ্য, আনুতোষিক, বার্ধক্য এবং পেনশন তহবিলের লেনদেন সম্পূর্ণরূপে আনুষ্ঠানিক মাধ্যমে সংঘটিত হওয়ায় এ ধরনের তহবিল থেকে উদ্ভূত আয়ের ওপর করের হার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ প্রযোজ্য হবে।

সেখানে আরও বলা হয়েছে, প্রভিডেন্ট ফান্ড বা ভবিষ্য তহবিল ও গ্র্যাচুইটি বা আনুতোষিক তহবিল গঠনের মাধ্যমে চাকরিজীবীদের সঞ্চয়ে উৎসাহিত এবং আর্থিক নিরাপত্তার ক্ষেত্র তৈরি করা হয়, যা দেশের মোট সঞ্চয় বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে এ ধরনের তহবিলসমূহের আয়ের ওপর করহার ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশ করা হলে তহবিলসমূহের সুবিধাভোগী বেসরকারি চাকরিজীবীদের ওপর অতিরিক্ত করের ভার কমবে।

ব্যক্তিগত প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আয়ান আহমেদ নামের এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, আইন যদি করতে হয় তা সরকারি এবং বেসরকারি উভয়ক্ষেত্রের চাকরিজীবীর জন্য সমানভাবে করতে হবে। অন্যথায় সেটি হবে আইনের নামে প্রহসন। সর্বোপরি এনবিআরের এই অদূরদর্শী ও বৈষম্যমূলক আইন অবিলম্বে বাতিল করা উচিত। প্রভিডেন্ট ফান্ড করমুক্ত থাকুক। কারণ, এটি একজন চাকরিজীবীর সারাজীবনের গচ্ছিত শেষবেলার পাথেয়।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো তৌফিকুল ইসলাম খান বলেন, বেসরকারি খাতের কর্মীদের সামাজিক সুরক্ষা কম। কারণ, প্রভিডেন্ট ফান্ডসহ তহবিল থেকে খুব কমই সামাজিক সুরক্ষা পাওয়া যায়। শুধু বেসরকারি চাকরিজীবীদের ক্ষেত্রে কর আরোপের ফলে বৈষম্য বাড়বে। বেসরকারি ও সরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডের মধ্যে কর আরোপের ক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য রাখা ঠিক হবে না।

জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, চাপ বা সমালোচনা নয়, বাস্তবতার নিরিখে এটি সংশোধন করতে হচ্ছে। কর আদায় বাড়াতে গেলে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিতে হয়। কিন্তু এখন যে হারে মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে, সেখানে এই জমা টাকা বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর থেকে কর কমিয়ে হলেও মানুষকে কিছুটা স্বস্তি দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।

সরকারি চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ড কর দিতে হয় না, এটি অনেকে বৈষম্যমূলক বলে সমালোচনা করছেন। এ প্রসঙ্গে ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকারি চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে সরকার নিয়োগদাতা হিসেবে কোনো টাকা দেয় না। বেসরকারি চাকরিজীবীদের প্রভিডেন্ট ফান্ডে নিয়োগদাতাও সমপরিমাণ টাকা জমা দেন। এছাড়া সরকারি চাকরিজীবীদের টাকার হিসাবের স্বচ্ছতা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। কিন্তু বেসরকারি চাকরিজীবীদের টাকার হিসাবে অনেক ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা মেলে না।

যদিও এই যুক্তি মানছেন না এনবিআরের সাবেক সদস্য (আয়কর নীতি) ড. সৈয়দ আমিনুল করিম। একই সঙ্গে বেসরকারি প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর সাড়ে ২৭ শতাংশ কর আরোপকেও গ্রহণযোগ্য মনে করেন না তিনি।

ড. করিম বলেন, এক দেশে দুই আইন হতে পারে না। এমন বৈষম্য করা অনুচিত। যদি প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর কর আরোপ করতেই হয় তাহলে সরকারি-বেসরকারি দুই পক্ষকেই এর আওতায় আনতে হবে। নতুন আইনের সিদ্ধান্তটি মৌলিক অধিকারের পরিপন্থি। এছাড়া করহার কমিয়ে ১৫ শতাংশ করাও অযৌক্তিক।

তিনি বলেন, নতুন আয়কর আইনে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সঞ্চয়পত্র ও জমিসহ আরও অনেক বিষয় সংশোধন করতে হয়েছে। আমার কাছে মনে হয় এ আইন প্রণয়ন করতে গিয়ে কোনো ইমপ্যাক্ট অ্যানালাইসিস (প্রভাব বিশ্লেষণ) করা হয়নি।

এদিকে, প্রভিডেন্ট ফান্ডের ওপর কর হার কমাতে এরই মধ্যে এনবিআরে আবেদন করেছে একাধিক প্রতিষ্ঠান। এসব আবেদনে বলা হয়েছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবীদের জন্য গঠিত তহবিলের আয়ের ওপর অতিরিক্ত কর আরোপ হলে এ ধরনের তহবিল গঠনে কোম্পানিগুলো নিরুৎসাহিত হবে। অতিরিক্ত কর সংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চাপ বাড়াবে। সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের সুযোগ-সুবিধার বৈষম্য বাড়বে এবং এতে দেশের সঞ্চয়ে বিরূপ প্রভাব পড়বে।


সর্বশেষ - রাজনীতি