1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ফিরে দেখা : উগ্র বামদের হাতে খুন হন আ’লীগের ১১ এমপি

eb-editor : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১৩ নভেম্বর, ২০২১

রেজাউল করিম

বাংলাদেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষা করে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং পুনর্গঠনের কাজ অব্যাহত রাখা আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য এক বিরাট চ্যালেঞ্জ ছিল। তখন রাষ্ট্রটি ছিল নড়েবড়ে। রাষ্ট্রটির শিকড় তখনো গভীরে প্রবেশ করতে পারেনি। কিন্তু সন্ত্রাসের শিকড় ছিল অনেক গভীরে। তাদের হাতে অস্ত্র ছিল। অনেক মুক্তিযোদ্ধাও অস্ত্র জমা দেয়নি। দেশে শুরু হয় নানামুখী তৎপরতা। চীনপন্থি উগ্র বামগোষ্ঠী, নকশাল বাহিনী, সর্বহারা এবং জাসদ শ্রেণিশত্রু খতমের নামে দেশের রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিশেষ করে আওয়ামী লীগের শত শত নেতা-কর্মীকে হত্যা, থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ করে অস্ত্র লুট, ব্যাংক লুট, পাটের গুদামে আগুন, হাট-বাজারে হামলা করে জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে থাকে। এদের হাত থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরাও রেহাই পায়নি। এরা নির্বাচিত স্থানীয় নেতা ছাড়াও আওয়ামী লীগের ১১ জন সংসদ সদস্যকে হত্যা করে যাদের কেউ কেউ ১৯৭০ সালে বা ১৯৭৩ সালে বা উভয় সময়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

১. আবদুল গফুর, খুলনা : বামপন্থি সন্ত্রাসীদের হাতে প্রথম যে সংসদ সদস্য খুন হন তিনি হলেন খুলনার আবদুল গফুর। তিনি ১৯৭০ সালে খুলনার পাইকগাছা ও আশাশুনি আসনে মুসলিম লীগের প্রখ্যাত নেতা খান এ সবুর খানকে পরাজিত করে আওয়ামী লীগের হয়ে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বাংলাদেশের গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। দেশ স্বাধীনের পরে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে তিনি দেশ পুনর্গঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করেন। ১৯৭২ সালের ৬ জুন তিনি বিভিন্ন বাঁধ, বেড়িবাঁধ, খাল খনন ও রাস্তাঘাটের উন্নয়ন পরিদর্শন করে সন্ধ্যার দিকে নৌকাযোগে পাইকগাছায় ফিরছিলেন। পথিমধ্যে সাহাপাড়ায় পৌঁছলে ওঁৎ পেতে থাকা সন্তাসীরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। সঙ্গে তাঁর দুই সঙ্গী মারা যায়। তারা হলেন- চাঁদখালীর সিরাজ/রিয়াজ ও হড্ডার কামাল।

২. সওগাতুল আলম সগীর, পিরোজপুর : তিনি ১৯৭০ সালে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থেকে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। ১৯৭৩ সালের ৩ জানুয়ারি তিনি রাত নয়টার দিকে বাসায় ফিরছিলেন। পথিমধ্যে কে এম লতিফ হাই স্কুলের গেটের সন্নিকটে ওঁৎ পেতে থাকা বামপন্থি সর্বহারা সন্ত্রাসীরা তার গতিরোধ করে দাঁড়ায় এবং গুলি করে হত্যা করে। এ কাজে অর্থায়ন করেছিলেন ইঞ্জিনিয়ার আবদুল জব্বার হাওলাদার, যিনি মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েছেন। আবদুল জব্বার ছিলেন মঠবাড়িয়া থানার শান্তি কমিটির সভাপতি। তিনি ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে এরশাদের জাতীয় পার্টির এমপি ছিলেন। সওগাতুল আলম সগীর হত্যাকাণ্ডের বিচার কার্যক্রম চলছিলো, কিন্তু ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর তা বন্ধ হয়ে যায়।

৩. নুরুল হক হাওলাদার, শরীয়তপুর : ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচনে শরীয়তপুরের নড়িয়ায় তিনি এমপি নির্বাচিত হন। মাত্র আড়াই মাস পরে ১৯৭৩ সালের ৩০ মে রাত ৮.০০টার সময় তিনি নিজ বাড়িতে আততায়ীর গুলিতে নিহত হন।

৪. মোতাহার উদ্দিন আহমেদ মাস্টার, ভোলা : তিনি ১৯৭০ সালে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের ১১৪ নং আসন এবং বাকেরগঞ্জ ৩, বর্তমানে ভোলা ৩, লালমোহন ও চরফ্যাশন থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৭৪ সালের ১০ জানুয়ারি সন্ত্রাসীরা তাঁকে আম গাছের সঙ্গে বেঁধে গুলি করে হত্যা করে।

৫. গাজী ফজলুর রহমান, নরসিংদী-মনোহরদী : তিনি ছিলেন তৎকালীন ঢাকা-২২ আসনের ১৯৭৩ সালের নরসিংদীর মনোহরদী এলাকা থেকে নির্বাচিত এমপি। তিনি হাতিরদিয়া সাদত আলী উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি। বিদ্যালয়ে সভাপতির দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় ১৯৭৪ সালের ১৬ মার্চ সর্বহারা সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।

৬. এডভোকেট ইমান আলী, ময়মনসিংহ : তিনি ছিলেন ময়মনসিংহ আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ এবং ময়মনসিংহ সদর আসনের এমপি। তাঁর গ্রামের বাড়ি ছিল ময়মনসিংহ শহরতলীর চুরখাই। ১৯৭৪ সালের সালের ৩০ জুলাই তিনি চুরখাই থেকে রিক্সায় করে স্ত্রী সন্তানসহ শহরের মৃত্যুঞ্জয় রোডের ভাড়া বাসায় যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে শিকারিকান্দায় সিরাজ শিকদারের সর্বহারা পার্টির সন্ত্রাসীরা রাস্তা অবরোধ করে দাঁড়ায় এবং স্ত্রী সন্তানদের চোখের সামনে তাঁকে রিক্সা থেকে নামিয়ে গুলি করে হত্যা করে। তারপরে তারা সিরাজ শিকদারের নামে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে দুইভাগে বিভক্ত হয়ে এক গ্রুপ ত্রিশালের কানহরের দিকে, আরেক গ্রুপ পশ্চিমে ভরেয়ার দিকে চলে যায়। শহীদ ইমান আলীর রক্তমাখা শার্ট নিয়ে তাঁর স্ত্রী গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর কাছে। বঙ্গবন্ধু ইমান আলীকে খুবই স্নেহ করতেন। তিনি আবেগাপ্লুত কণ্ঠে বলেছিলেন, “একদিন অবশ্যই এ হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। যারা আমাদের স্বাধীনতা ধ্বংস করার জন্য আমার কাছের লোকদের হত্যা করছে, তাদের বিচার হবেই হবে।” কিন্তু আজও সে হত্যাকাণ্ডের বিচার হয়নি।

৭. গোলাম কিবরিয়া, কুষ্টিয়া : তিনি ছিলেন কুষ্টিয়া জেলার খোকসা-কুমারখালী থেকে ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে আওয়ামী লীগের টিকিটে নির্বাচিত সংসদ সদস্য। ১৯৭৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর তারিখের সকালে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী থানার সামনে কোরবানির ঈদের জামাত। হাজার হাজার মানুষ জামাতে দাঁড়িয়েছে ঈদের নামাজ পড়ার জন্য। সে জামাতে নামাজ পড়ার জন্য সংসদ সদস্য জনাব গোলাম কিবরিয়া দাঁড়িয়েছেন। নামাজ শুরু হবে সেই মূহুর্তে জাসদের গণবাহিনীর কর্মীরা ব্রাশ ফায়ার করে সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া এবং মোহাম্মদ আলী নামের এক ইউনিয়ন চেয়ারম্যানকে হত্যা করে।

৮. আবদুল খালেক, নেত্রকোনা : তিনি ছিলেন নেত্রকোনা ১ আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের এমপি এবং নেত্রকোনা মহকুমা আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি। তিনি নেত্রকোনার মদন-খালিয়াজুরি থেকে ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি মুক্তারপুর মাঠে ১৯৭৫ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি এগজিবিশন উদ্বোধন করে রাত ১২.০০টার দিকে বাসায় ফিরছিলেন। পথে ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে।

৯. আবদুল মুকিম, ঝালকাঠি : তিনি ১৯৭৩ সালে ঝালকাঠি ও নলছিটি থেকে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৩ সালে সিরাজ শিকদারের সর্বহারা গ্রুপ তাঁকে গুলি করে হত্যা করে।

১০. আমিনউদ্দিন আহমদ (মাস্টার), ফরিদপুর : তিনি ১৯৭০ সালে ফরিদপুরের নগরকান্দা থেকে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক আইন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশের গণপরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি ফরিদপুর শহর থেকে মোটর সাইকেলযোগে তাঁর নিজ থানা নগরকান্দা যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে বাখুন্ডা রেলক্রসিং এর নিকট ওঁৎ পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা মোটরবাইক থামিয়ে গুলি করে (৪ ডিসেম্বর, ১৯৭৪)। হেলিকপ্টারযোগে তাঁকে ঢাকা নেয়া হয়, কিন্তু ৫ ডিসেম্বর, ১৯৭৪ তিনি মারা যান। তাঁর সঙ্গে নগরকান্দা থানার ওসিও ছিলেন। তারও গুলি লাগে। কিছুদিন পর তিনিও মারা যান। কথিত আছে যে, এ হত্যার পেছনে ওবায়দুর রহমানের হাত ছিল। যে ওবায়দুর রহমান বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বেইমানি করে খন্দকার মোস্তাকের সঙ্গে হাত মেলান এবং ৩ নভেম্বর, ১৯৭৫ জাতীয় চার নেতার জেলহত্যাকাণ্ডে অভিযোগে অভিযুক্ত হন।

১১. কাজী হেদায়েত হোসেন, রাজবাড়ী : তিনি ছিলেন ফরিদপুর জেলার তৎকালীন গোয়ালন্দ মহকুমা (বর্তমানে রাজবাড়ী জেলা) আওয়ামী লীগের সেক্রেটারি। তিনি ১৯৭০ সালের নির্বাচনে গোয়ালন্দ থেকে প্রাদেশিক পরিষদের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি ছিলেন স্বাধীন বাংলাদেশের গণপরিষদের সদস্য। বঙ্গবন্ধুর হত্যার তিন দিনের মাথায় ১৮ আগস্ট জাসদের গণবাহিনী তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। তিনি রাজবাড়ী কলেজ রোড সংলগ্ন নিজ ইটভাটা থেকে রিক্সাযোগে রাজবাড়ী শহরের দিকে ফিরছিলেন। কলেজ রোড এলাকায় ওতপেতে থাকা গণবাহিনীর সন্ত্রাসীরা দিনে-দুপুরে গুলি করে তাঁকে হত্যা করে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন ঠিকাদার আবদুস শুকুর মোল্লা (বাদশা মিয়া)। সন্ত্রাসীদের গুলিতে শুকুর মোল্লাও নিহত হন।

আমি উক্ত নিহতদের তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যদের জিজ্ঞাসা করেছি এ ব্যাপারে আপনারা কি কোনও মামলা করেছিলেন? উত্তর পেয়েছি ‘না’। তারা জানিয়েছেন, তখন মামলা করার মত পরিবেশ ছিল না, তারা ছিল আতঙ্কগ্রস্ত ও নিরাপত্তাহীন। ভয়ে কেউ মামলা করতে পারেনি। মামলা করলে না জানি তাদের পুরো পরিবারকে ধ্বংস করে দেয় ঘাতকেরা!

বাংলাদেশের অনেক জায়গায় দিনের বেলায় সরকারি প্রশাসন থাকলেও রাতের বেলায় তা গণবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যেত। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, সাতক্ষীরা, রাজবাড়ি, মাদারীপুর, টাঙ্গাইল, সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া, রংপুর প্রভৃতি জেলায় গণবাহিনীর কার্যক্রম ছিল দৃশ্যমান। এ সময় এরা কিছু এলাকায় ধনী কৃষকদের ধানের গোলা লুট করে তা গরিব-দুস্থদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছে। জোতদারদের নিকট থেকে জমি উদ্ধার করে তা ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে বিলিয়ে দিয়েছে। আবার এরা অনেক ব্যাংক ডাকাতি করেছে, ট্রেজারি লুট করেছে, থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি আক্রমণ করে অস্ত্র ছিনিয়ে নিয়েছে। আনোয়ার উল আলমের ‘রক্ষীবাহিনীর সত্য-মিথ্যা’ গ্রন্থ থেকে জানা যায় যে, এরা ১৯৭২ সালে ২৯ জন, ১৯৭৩ সালে ৭৭ জন, ১৯৭৪ সালে ৫২ জন এবং ১৯৭৫ সালের জুলাই পর্যন্ত ৪৪ জন ছাত্রনেতা, শ্রমিকনেতা, জনপ্রতিধি, মুক্তিযোদ্ধা, পুলিশ ও রক্ষীবাহিনীর সদস্যকে হত্যা করে।

এছাড়া, এরা দেশে অনেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড ঘটায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্যাপ্টেন (অব) মনসুর আলী ১৯৭৪ সালের ১ ফেব্রুয়ারি জাতীয় সংসদকে জানান, “১৯৭৩ সালে দেশে ১৮৯৬টি হত্যাকাণ্ড ঘটে। ১৯৭২ ও ১৯৭৩ সালে সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা দেশে ৫৪টি থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি লুট করে অস্ত্র ও গোলাবারুদ নিয়ে যায়।” সদ্য জন্ম নেয়া বাংলাদেশ রাষ্ট্রটি ছিল খুবই কাঁচা। দেশটি ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত, শক্ত ভিতের ওপর তখনো দাঁড়াতে পারেনি। পক্ষান্তরে, সন্ত্রাসীরা ছিল শক্তিশালী এবং তাদের কাছে অস্ত্র ও সমাজতান্ত্রিক বৈপ্লবিক মন্ত্র ছিল। অনেকেই মুক্তিযুদ্ধের সময় হাতে পাওয়া অস্ত্র জমা দেননি। পুলিশের পক্ষে থানা, পুলিশ ফাঁড়ি এবং জনগণের জানমাল রক্ষা করা ছিল খুবই কঠিন কাজ। দেশের আইন-শৃঙ্খলাকে স্বাভাবিককরণের লক্ষ্যে জাতীয় রক্ষীবাহিনী গঠন করা হয়। গণবাহিনী, সর্বহারা সন্ত্রাসীদের হামলা থেকে জানমাল রক্ষা করতে ১৫০টি থানায় রক্ষীবাহিনী মোতায়েন করা হয় (২৪ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৩)।

জাসদের গণবাহিনী, সর্বহারা পার্টি, পূর্ব বাংলা কম্যুনিস্ট পার্টি এদের কার্যকলাপে দেশে একটা বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি হয় যা বঙ্গবন্ধু ও তাঁর সরকারের জনপ্রিয়তার হ্রাস ঘটায় এবং বঙ্গবন্ধুর হত্যার ক্ষেত্র প্রস্তুত করে দেয়। কেননা এরা যেকোনো উপায়ে বঙ্গবন্ধুকে উচ্ছেদ করতে বদ্ধপরিকর ছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পরও জাসদ ক্ষান্ত হয়নি। বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী লীগের নাম নিশানা যাতে না থাকে সে পদক্ষেপ তারা হাতে নেয়। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর কেন্দ্রীয় কারাগারে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করা হলে খালেদ মোশারফ ও কর্নেল সাফায়েত জামিল খুনি খন্দকার মোস্তাককে পদত্যাগে বাধ্য করে প্রধান বিচারপতি এ এস এম সায়েমকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব অর্পন করেন। জিয়াউর রহমান পদত্যাগ করে হন বন্দি, খালেদ মোশারফ হন প্রধান সেনাপতি। তারা দেশে সাংবিধানিক ধারা ফিরিয়ে আনতে চেয়েছিলেন। খালেদ মোশারফকে জাসদের সহ্য হলো না। জাসদ খালেদ মোশারফকে মনে করত আওয়ামী লীগার ও ভারতপন্থি। তখন সেনাবাহিনীর মধ্যে জাসদের অনেক সমর্থক ছিল।

১৯৭৫ সালের ৭ নাভেম্বর কর্নেল তাহের তার বিপ্লবী সৈনিক সংস্থাকে নিয়ে বিপ্লব ঘটিয়ে তখনকার ক্ষমতার অধিকারী ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশারফ ও তার দুই সহযোগী কর্নেল নাজমুল হুদা ও লে. কর্নেল হায়দারকে গুলি হত্যা করে। কর্নেল জামিল তখনো বঙ্গভবনে অবস্থান করছিলেন। জাসদ সমর্থক প্রায় ১৫০ জন জোয়ান ও জাসদের কিছু সিভিল সমর্থক অভ্যুত্থানকারীদের খুঁজতে ঝড়ের বেগে বঙ্গভবনে ঢুকে পড়ে। কর্নেল সাফায়েত জামিল পালিয়ে প্রাণ রক্ষা করেন। তবে পালাবার সময় তার একটি পা ভেঙ্গে যায়। জাসদ অভ্যুত্থানকারীদের হত্যা করে ও বিতাড়িত করে জিয়াকে বন্দিত্ব থেকে মুক্ত করে ক্ষমতাসীন করেন। এসব করতে যিনি মুখ্য ভূমিকা পালন করেছিলেন তিনি হলেন কর্নেল আবু তাহের।

লেখক•সহযোগী অধ্যাপক, ইতিহাস বিভাগ, সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ, ফরিদপুর। ই-মেইল- rejaulkarim1975@gmail.com


সর্বশেষ - রাজনীতি