ডা. মো. ছায়েদুল হক
ডায়াবেটিসে চোখের সমস্যায় রক্তে উচ্চমাত্রার সুগার রক্তনালির জন্য ক্ষতিকর। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলে রক্তনালির গায়ে এক ধরনের পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়। বিশেষ করে সূক্ষ্ম রক্তনালি দুর্বল ও সরু হয়ে স্বাভাবিক রক্তসঞ্চালনের জন্য অনুপযোগী হয়ে পড়ে। এতে কোষে অক্সিজেন স্বল্পতা দেখা দিয়ে থাকে। এ অবস্থার নাম ইস্কেমিয়া। এতে দুই ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে।
প্রথমত, অক্সিজেনবঞ্চিত কোষগুলো ক্রমান্বয়ে নিস্তেজ হয়ে নষ্ট হয়ে যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, কোষ রক্ষায় বিকল্প হিসেবে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নতুন রক্তনালি তৈরি হতে পারে। কিন্তু এই রক্তনালিগুলো খুবই ভঙ্গুর। ফলে খুব সহজে এগুলো থেকে রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে যায়। এভাবে আমাদের চোখের পেছনে অবস্থিত রেটিনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, যাকে বলে ডায়াবেটিক রেটিনোপ্যাথি। যাদের ৩০ বছর বয়সের আগেই ডায়াবেটিস শনাক্ত হয়েছে, তারা রেটিনোপ্যাথির ঝুঁকিতে বেশি থাকেন।
অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে রেটিনোপ্যাথির ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। উচ্চ রক্তচাপ, হৃদযন্ত্রের সমস্যা ও হাইপার লিপিডেমিয়া বা কলেস্টেরোলের উচ্চমাত্রা রেটিনোপ্যাথির ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। কিডনিতে সমস্যাও রেটিনোপ্যাথির ঝুঁকির মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। নারীদের গর্ভাবস্থার প্রথম চারমাসে এ ঝুঁকি বেশি থাকে। এ ছাড়া স্থূলতা, ধূমপান ও রক্তশূন্যতা রেটিনোপ্যাথি বাড়িয়ে দেয়।
রেটিনোপ্যাথির কুপ্রভাব : প্রাথমিক অবস্থায় অক্সিজেন-স্বল্পতার কারণে রক্তনালির গায়ে যে ভঙ্গুরতা দেখা দেয়, তাতে রক্তনালি থেকে প্লাজমা বের হয়ে রেটিনার কোষে জমতে থাকে। এ ছাড়া স্বল্পমাত্রায় রক্তক্ষরণের মতো ঘটনা ঘটতে থাকে। ফলে দৃষ্টিশক্তি ক্রমে কমে যায়।
চিকিৎসা : রেটিনোপ্যাথি ঠেকানোর প্রধানতম উপায় হলো- ডায়াবেটিস ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। ব্যায়ামের অভ্যাস করা। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখা। কিডনির সমস্যার প্রতিকারে ব্যবস্থা নেওয়া। ধূমপান পরিহার করা। রেটিনোপ্যাথি হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া রোগীর জন্য জরুরি।
লেখক : চক্ষুরোগ বিশেষজ্ঞ ও সার্জন