1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

ফরিদপুরে পারিবারিক পুষ্টি বাগানে শত শত নারীর স্বাবলম্বী

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৬ অক্টোবর, ২০২৩

লাল শাক, পুঁইশাক ও বেগুনের লাল-সবুজ-বেগুনি আভায় রঙিন হয়ে উঠেছে বাড়ির আঙিনা। মাচায় ঝুলছে লাউ, বরবটি আর শিম। সবজির প্রয়োজনে এখন আর যেতে হয় না বাজারে। গৃহস্থালি কাজের পাশাপাশি বাড়ির আঙিনায় নারীরা গড়ে তুলেছেন পারিবারিক ‘পুষ্টি বাগান’। এসব বাগানের সবজি দিয়ে নিজেদের পুষ্টিচাহিদা মিটিয়ে আবার বাজারেও বিক্রি করছেন তারা। চলুন শোনা যাক, এভাবে পারিবারিক বাগান করে স্বাবলম্বী হওয়া নারীদের গল্প।

মুজিব জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ফরিদপুরে স্থানীয় কৃষি বিভাগের সহায়তায় বাড়ির আঙিনা ও পরিত্যক্ত জায়গায় গড়ে তোলা হয়েছে অনেক ‘পুষ্টি বাগান’। এসব বাগান এখন শাক-সবজিতে ভরপুর। এরই মধ্যে এ জেলার তিন শতাধিক নারী স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন সবজির চাষাবাদ করে।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে নানা আপৎকালীন সময়ে দেশে সবজি উৎপাদনে যাতে কোনো প্রভাব না পড়ে সে লক্ষ্যে নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে নির্দেশনা মেনে দেশের খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা ধরে রাখতে প্রতি ইঞ্চি কৃষি জমির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার চেষ্টা চলছে। এরই অংশ হিসেবে সারা দেশের মতো ফরিদপুরেও বসতবাড়ির আঙিনাসহ পতিত জমিতে করা হয়েছে শত শত পারিবারিক পুষ্টি বাগান।

কৃষি বিভাগের সহায়তায় বাড়ির আঙিনায় পরিত্যক্ত জায়গায় চাষাবাদ করা হচ্ছে লাউ, আদা, মরিচ, লালশাক, কলমিশাক, পুঁইশাক, বরবটি ও বেগুনসহ বিভিন্ন ধরনের শাক-সবজি। কোন রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে নিজেরাই জৈব সার তৈরি করে এ সবজি চাষাবাদে ব্যবহার করছেন। এতে করে উৎপাদিত সবজির পুষ্টিগুণ থাকছে, সঙ্গে খরচও কম হচ্ছে।

বাড়ির আঙিনায় সবজি চাষাবাদ করে নিজেদের পরিবারের সদস্যদের পুষ্টিচাহিদা মিটিয়ে, উৎপাদিত সবজি বিভিন্ন বাজারে বিক্রি করছেন তারা। জৈব সার দিয়ে উৎপাদিত এসব সবজির চাহিদাও বেশি। বাজারে নেয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বিক্রি হয়ে যায়। সংসারের কাজের ফাঁকে এ সবজি চাষাবাদ করছেন নারীরা।

জেলার সদর উপজেলার গৃহবধূ শারমিন আক্তার বলেন, বাড়ির আশপাশে ও আঙিনায় বিভিন্ন ধরনের সবজির চাষাবাদ করেছি। ওই জায়গাগুলো আগে পরিত্যক্ত পড়ে থাকতো। এখন সবজির আবাদ করেছি। উৎপাদিত সবজি নিজেরাও খাচ্ছি, আবার বিক্রিও করছি।

তিনি আরও বলেন, এ বছর লাউ, বেগুন, লালশাক, পুঁইশাকও বরবটিসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করেছি। প্রায় ৫০ হাজার টাকার সবজি বিক্রি করেছি। সংসারের কাজের পাশাপাশি সবজি আবাদ করে লাভবান হয়েছি।

আরেক গৃহবধূ সালমা বেগম বলেন, লাউ বিক্রি করে ৩০ হাজার টাকা আয় করেছি। আগে তো সংসারের কাজ সেরে বাড়িতে বসেই থাকতে হতো। সবজি আবাদ করে সময়ও কেটে যায়; আবার রোজগারও হচ্ছে। আগে ১০০, ২০০ টাকার জন্য স্বামীর দিকে চেয়ে থাকতে হতো; কিন্তু এখন নিজের হাত খরচের টাকা নিজেই রোজগার করছি। স্বামীর ওপর চাপ কমে গেছে। এ টাকা দিয়ে ছেলে-মেয়েদের পোশাক ও লেখাপড়ার খরচও চলছে।

তিনি আরও বলেন, ‘মাঠে গিয়ে চাষাবাদ করলে অনেকেই অনেক কথা বলে। কিন্তু বাড়ির পাশে ফেলে রাখা জমিতে চাষাবাদ করলে কেউ কিছু দেখে না, বলেও না। আমাদের এলাকার প্রায় তিন শতাধিক গৃহবধূ বাড়িতে সবজি আবাদ করে নিজের খরচ নিজেরাই জোগাড় করছেন।’

গৃহবধূ ছাবিনা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে গেছে। তেমন কোনো কাজ নেই। বাড়িতে বসেই থাকা লাগে। স্বামীর সঙ্গে পরামর্শ করে বাড়ির আঙিনায় বিভিন্ন সবজির আবাদ করেছি। নিজেদের জন্য কোনো সবজি বাজার থেকে কেনা লাগে না, বরং বাজারে বিক্রি করছি। এ সবজি বাজারে নিয়ে গেলে চাহিদাও বেশি।’

তিনি আরও বলেন, নিজেদের বাড়িতেই গোবর দিয়ে জৈব সার তৈরি করে সবজির আবাদে ব্যবহার করে থাকি। এ কারণে উৎপাদন খরচও অনেক কম। এছাড়া কৃষি অফিস থেকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে। সঙ্গে বীজ ও সারও দিয়েছে। মাঝে মধ্যেই অফিস থেকে কর্মকর্তারা এসে পরামর্শ দিয়ে যান।

সদর উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আনোয়ার হোসেন বলেন, জেলা সদরে ৩৭২টি বাড়ির আঙিনায় গড়ে তোলা হয়েছে এ পুষ্টি বাগান। যেসব গৃহবধূ এসব বাগান করেছেন কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রশিক্ষণের পাশাপাশি বিভিন্ন সবজির বীজ ও সার দেয়া হয়েছে। প্রতি সপ্তাহেই উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তারা বাগান পরিদর্শনে এসে পরামর্শ দিয়ে যান। প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে স্বামী-স্ত্রী দুজনকেই, যাতে দুজনে মিলে সবজি বাগান করতে পারে।

কৃষি অফিসার আরও বলেন, সবজি উৎপাদনে জৈব সার ব্যবহার করা হয়। এ সার তৈরিরও প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। জৈব সার নিজেরাই তৈরি করে সবজি আবাদে ব্যবহার করায় খরচও কম হচ্ছে। নিজেদের পরিবারে সবজির চাহিদা মেটানোর পর বিক্রি করে অনেকেই স্বাবলম্বী হয়েছেন।


সর্বশেষ - রাজনীতি