1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বিএনপি-জামাতের দিকভ্রান্ত আন্দোলন

ডেস্ক রিপোর্ট : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২ নভেম্বর, ২০২৩

২০২১ সালে র‍্যাব ও তার ছয় কর্মকর্তার উপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়। এরপর ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র সম্মেলনে বাংলাদেশকে আমন্ত্রণ না জানানোয় অনেকে ধারণা করেন যে, মার্কিন প্রশাসন আওয়ামী লীগ সরকারের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এই অবস্থাকে সুযোগে হিসেবে নিয়ে জামায়াত-বিএনপি জোট নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পুরনো দাবী সামনে নিয়ে আসে। শুরুতে জামায়াতে ইসলামী, বিএনপি এবং নাম সর্বস্ব আরও গোটা তিরিশেক দল তত্ত্বাবধায়ক সরকার ইস্যুতে একত্রিত হয়ে সারা দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘোষণা করতে থাকে। যদিও তারা জোটবদ্ধ হয় তবে কর্মসূচি পালন করতে থাকে আলাদা আলাদা। এই পদ্ধতির তারা নাম দিয়েছেন ‘যুগপৎ আন্দোলন’। এর ফলে বিএনপি অন্যদের থেকে নিজেদের আলাদা করে দেখানোর সুযোগ পেয়েছে; ২০১৮ সালের মত বিএনপিকে ছাড়িয়ে জোটের অন্যান্য নেতারা বড় হয়ে ওঠেনি। জোট গঠনের সঙ্গে বিএনপি রাজনৈতিক কর্মসূচি দিতে শুরু করে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল বিভাগীয় শহরগুলোতে বিএনপির সমাবেশ। ১০ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকে বিভিন্ন দফা সম্বলিত দুই/তিন সেট দাবি তারা পেশ করেন; সেখানে জাতীয় সংসদ থেকে পদত্যাগ করার ঘোষণা দেন বিএনপি’র ছয় সংসদ সদস্য। ১০ ডিসেম্বরের আগে ঘোষণা করা হয় যে, লন্ডনে পলাতক তারেক জিয়া চলে আসছেন; ১০ ডিসেম্বর থেকে দেশ পরিচালনা করবেন খালেদা জিয়া।

গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর ‘মায়ের ডাক’ নামের একটি সংগঠনের উদ্যোক্তার বাড়িতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস অতিথি হয়ে গেলে আওয়ামী লীগের বিপক্ষে মার্কিন সরকারের অবস্থান সম্পর্কে জামায়াত-বিএনপি’র ধারণা আরও শক্তিশালী হয়। তাদের এই ধারণা উস্কে দেয় প্রথম আলো, দ্যা ডেইলি স্টার, বিবিসি বাংলা, ডিডব্লিউ, মানবজমিনসহ আরও কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম এবং টেলিভিশন চ্যানেল। রাজনীতি ও অর্থনীতি সম্পর্কে সত্য-মিথ্যা মিশিয়ে তারা সংবাদ ও মতামত পরিবেশন করতে থাকে। কোভিড-১৯ এবং ইউক্রেনযুদ্ধের অভিঘাতে শ্রীলংকায় অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হলে একদল অর্থনীতিবিদ ইনিয়ে-বিনিয়ে বলতে থাকেন যে, আমাদের অবস্থাও ওরকম; কিছু দিনের মধ্যে ঋণ পরিশোধ করার ক্ষমতা থাকবে না; যেকোন সময় দেউলিয়া হয় যাবে বাংলাদেশ। জামায়াত-বিএনপি জোটের নেতা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও তথাকথিত অর্থনীতিবিদদের অমন মন্তব্য লুফে নেন; বিভ্রান্ত করেন তার নেতা, কর্মী, সমর্থকদের। জামায়াত-বিএনপি সমর্থক ও কর্মীরা কেউ দেশে এবং কেউ বিদেশ থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে বিভিন্ন গুজব সৃষ্টি করে ছড়িয়ে দিতে থাকে। এই গুজবগুলো তাদের উৎসাহ উদ্দীপনা ধরে রাখতে সাহায্য করে।

বাংলাদেশের নির্বাচনকে সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করতে সহায়তা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র মে মাসে একটি ভিসানীতি ঘোষণা করে। এতে বলা হয় যে, যারা নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করবে তাদের উপর ভিসা নিষেধাজ্ঞা দেয়া হবে। এ নীতি, সরকার, সরকারি দল, বিরোধীদল, সংবাদকর্মীসহ সকলের উপর আরোপযোগ্য হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি ঘোষণা জামায়াত-বিএনপিকে আরও চাঙ্গা করে। নেতা, কর্মী, সমর্থকেরা বুঝে নেন যে এতে তারা নয়, ক্ষতিগ্রস্ত হবে সরকার ও সরকারি দলের লোকজন। তাদের এই বুঝে নেওয়ার পেছনে কোনো যুক্তি আছে তা কখনোই বুঝতে পারিনি। বরং দেখেছি যে এর ফলে তাদের আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবে। বস্তুত হয়েছেও তাই। ২৮ অক্টোবরের আগে ঢাকার প্রবেশ মুখে অবস্থান গ্রহণের মাধ্যমে ঢাকা অচল করার কর্মসূচি ব্যতীত আর কোন সহিংস কর্মসূচি তারা দিতে পারেননি। ২৮ অক্টোবর সমাবেশকে কেন্দ্র করে জামায়াত-বিএনপি যে তাণ্ডব চালায় তার প্রতিক্রিয়ায় কয়েক ঘণ্টার মধ্যে মার্কিন প্রশাসন পুলিশ হত্যা, হাসপাতালে হামলা এবং সাংবাদিক নির্যাতনের নিন্দা জানায় এবং ভিসানীতি প্রয়োগ করার কথা ব্যক্ত করে। আমেরিকা, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘের কর্তাব্যক্তিদের নির্বাচনকেন্দ্রিক বেশ কয়েক দফা ঢাকা সফর বিরোধীদের গুজব নির্ভর আন্দোলনে ঘি ঢালে। অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করা বন্ধ করে দেবে এমন গুজবও গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে চালানো হয়েছে কয়েকবার।

বছর খানেকের বেশি সময় ধরে চলা জামায়াত-বিএনপির সরকার পতনের আন্দোলন শুধুই গুজব এবং প্রত্যাশা ভিত্তিক; বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে তারা আন্দোলনের কৌশল নির্ধারণ করেননি। তারা যতগুলো গুজব ছড়িয়েছে তার প্রতিটি ভুল বা মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়েছে। তাদের সমাবেশগুলোতে শুধু তাদের নেতা-কর্মীদেরই দেখা যায়। তাদের আন্দোলনের সঙ্গে সাধারণের কোন যোগ নেই। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবী সাধারণ মানুষের চাওয়ায় পরিণত হয়নি। ওরকম সরকারের অধীনে অতীতে অনুষ্ঠিত কোন নির্বাচনই সম্পূর্ণ গ্রহণযোগ্য হয়নি। কোনটা সূক্ষ্ম, কোনটা স্থূল কারচুপি এবং পক্ষপাতিত্বের অভিযোগে অভিযুক্ত। তাছাড়া এ রকম সরকার গণতান্ত্রিক রীতিনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক। পৃথিবীর কোন গণতান্ত্রিক দেশে এমন সরকারের অস্তিত্ব নেই। যার ফলে পশ্চিমা মোড়লেরা এই দাবীর প্রতি সমর্থন দিতে পারেনি। তারা শুধু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন পর্যন্ত কথা বলছেন। আওয়ামী লীগ সরকারও সে ইস্যুতে একমত। তারাও বারবার দেশি-বিদেশি বিভিন্ন ফোরামে অংশগ্রহণমূলক এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করছেন। যুক্তিসঙ্গত কারণেই আওয়ামী লীগ এবং সাম্রাজ্যবাদী শক্তির কেউই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের প্রশ্নে একমত হতে পারছে না। জনগণও এই দাবীতে তাদের কোন লাভ-ক্ষতি দেখছে না। তারা বরং আওয়ামী লীগের অভাবনীয় অর্থনৈতিক অর্জনকে বড় করে দেখছে। চীন, রাশিয়া, ভারত বর্তমান সরকারের সঙ্গে তাদের দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে লেনদেন করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। সে কথা তারা প্রকাশ্যেই বলেছে কয়েক বার।

বছর খানেকের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে চালিয়ে আসা জামায়াত-বিএনপির আন্দোলন থৈ পাচ্ছিল না। শুধু সমাবেশ, রোড মার্চ, হাঁটাহাঁটি করে যে দাবী আদায় করা যাবে না তা বুঝে উঠছিল সকলেই। জামায়াত-বিএনপি জোটের মধ্যে অহিংস আন্দোলন নিয়ে দ্বিধা বিভক্তি চরমে পৌঁছানোর খবর এসেছে গণমাধ্যমগুলোতে। একদল চাচ্ছিল অহিংস আন্দোলন, আরেক দল হরতাল, ভাংচুর, জ্বালাও-পোড়াও। বিএনপি নেতারা মুখে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বললেও তাদের কর্মীরা সকলে যে একমত ছিল না তার প্রমাণ মেলে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশে। কাকরাইল প্রান্তে সমাবেশ শুরু হওয়ার অনেক আগেই বেলা এগারোটার দিকে একদল বিএনপি কর্মী সহিংসতা শুরু করে। গাজীপুর থেকে আসা আওয়ামী লীগ কর্মী-সমর্থকদের বাস ও পিক-আপে আক্রমণ করে তারা তাদের দিন শুরু করে। এরপর একে একে প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা; পুলিশবক্স, অডিট ভবন, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউট, পুলিশ হাসপাতাল জ্বালিয়ে দেয়া; পিটিয়ে আহত করা হয় ২১ জন সাংবাদিককে; পুলিশ সদস্য পিটিয়ে ও কুপিয়ে হত্যা করাসহ ব্যাপক তাণ্ডব চালায় জামায়াত ও বিএনপি কর্মীরা; পণ্ড হয় বিএনপির মহাসমাবেশ; ঘোষণা দেয়া হয় একদিনের হরতালের। হরতালের ঘোষণা কার্যকর করার জন্য রাতে আবারও চালানো হয় নাশকতা; আগুন দেয়া হয় বাসে; জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় বাসের ভেতর ঘুমন্ত হেলপারকে; জামায়াত-বিএনপি ফিরে পায় তাদের পুরনো ঐতিহ্য – অগ্নি-সন্ত্রাস।

২৯ অক্টোবরের দেশজুড়ে ডাকা হরতাল চলাকালে দুই/একটা ঝটিকা মিছিল ছাড়া রাজপথে দেখা যায়নি জামায়াত-বিএনপির কোন নেতা- কর্মীকে। সারা দেশের সকল রাজপথ রয়েছে সম্পূর্ণভাবে আওয়ামী লীগের নিয়ন্ত্রণে। জামায়াত-বিএনপি ঢাকায় তিনটি এবং ঢাকার বাইরে দুটি বাস পুড়িয়েছে। তাদের প্রধান নেতা পুলিশ হেফাজতে, অন্য নেতারা পলাতক, কয়েকশ আটক। মির্জা ফখরুলের মুক্তি দাবীর সঙ্গে ৩১ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি ঘোষণা করা ছাড়া সারাদিনে তাদের আর কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দেখা যায়নি। ঝটিকা মিছিল করে, অগ্নি-সন্ত্রাস চালিয়ে ১৩, ১৪, ১৫ সালে নির্বাচন বানচাল এবং সরকার পতনের চেষ্টা করে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। গণআন্দোলন এভাবে হয় না। অতীতে কোন দেশে, কখনো, কেউ এভাবে আন্দোলন করে সফল হয়নি। গণআন্দোলন হয় গণজাগরণের মাধ্যমে যা সম্পূর্ণ অনুপস্থিত। ঝটিকা আক্রমণ গেরিলা যুদ্ধের টেকনিক। গেরিলা টেকনিক ব্যবহার করে তারা দেশের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হবে। বাংলাদেশের মত একটা দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে গেরিলা যুদ্ধের মাধ্যমে পরাস্ত করে সরকার দখল করা দুঃস্বপ্ন মাত্র। জামায়াত এবং তাদের জঙ্গি অঙ্গসংগঠনগুলোর অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ অনেক আগেই রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়া হয়েছে। সামনের তিন দিনের অবরোধ কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার জন্যেও তাদের ঝটিকা আক্রমণের কৌশল নিতে হবে, অন্য কোন পথ এখন আর খোলা নেই। গেরিলা যুদ্ধ শুরু করায় তারা এখন তথাকথিত সুশীল সমাজ এবং বিদেশি বন্ধুদের সমর্থন পাবার পথও বন্ধ করে দিয়েছে। সন্ত্রাসীদের কেউ সমর্থন দিতে পারে না। জামায়াত-বিএনপি এখন ‘আউট ল’ হিসেবে বিবেচিত হবে।

নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি সময়ে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করার কথা রয়েছে। জামায়াত-বিএনপিকে তাদের দাবী আদায় করতে হলে এর আগেই সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা করে বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করতে হবে। এমন কাজ করতে সরকার কেন বাধ্য হবে? সরকার বাধ্য হওয়ার মত কোন লক্ষণ নেই। লক্ষণ তৈরি করতে হলে দেশকে অচল করতে হবে। এমন শক্তির প্রদর্শন তারা অতীতে করতে পারেনি, এখন পারবে তেমন কোন কারণ দেখা যাচ্ছে না। তাদের সামনে পথ এখন একটাই – ঝটিকা আক্রমণ বন্ধ করে আওয়ামী লীগ সরকারের সহযোগিতায় এবং নির্বাচন কমিশনের আয়োজনে অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে আগামী দিনে রাজনীতিতে সক্রিয় থাকার পথ খোলা রাখা। অন্যথায় তাদের পরিণতি মুসলিম লীগ কিংবা নকশালবাড়ি আন্দোলনের মত হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।

লেখক: সাব্বির আহমেদ – চার্টার্ড একাউন্ট্যান্ট, নিবন্ধ লেখক এবং টেলিভিশন টকশো আলোচক।


সর্বশেষ - রাজনীতি