সাংবাদিক জামাল খাশোগিকে হত্যা করা ‘মারাত্মক ভুল’ বলে মন্তব্য করে সৌদি আরব বলেছে, এ হত্যাকাণ্ডে যে টিম জড়িত ছিল তাদের ব্যাপারে কিছুই জানতেন না যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এমনকি খাশোগির মরদেহ কোথায় রয়েছে সে বিষয়েও অবগত নয় দেশটি।
রোববার মার্কিন সংবাদমাধ্যম ফক্স নিউজকে দেয়া একটি বিশেষ সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক খাশোগির হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী আদেল আল জুবায়ের।
এ হত্যাকাণ্ডে সৌদি যুবরাজের সম্পৃক্ততা অস্বীকার করে তিনি বলেন, ‘অপারেশন সম্পর্কে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের কিছুই জানা ছিল না। এমনকি গোয়েন্দা সংস্থার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাও বিষয়টি জানতেন না।’
তিনি আরও বলেন, ‘তাকে (খাশোগি) তুরস্কের সৌদি কনস্যুলেটের ভেতরে হত্যা করা হয়েছে। তবে তাকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছে, সে বিষয়ে আমাদের বিস্তারিত জানা নেই। আমরা এ-ও জানি না তার মরদেহ এখন কোথায় আছে।’
‘তবে আমরা এ ঘটনার সত্য উদঘাটন করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আমরা আরও প্রতিজ্ঞ যারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে’-যোগ করেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
আল জুবায়েরই প্রথম কোনো জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা যিনি এ হত্যাকাণ্ড নিয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরলেন। এর আগে প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সাংবাদিক খাশোগির হত্যাকাণ্ডের বিষয়টি অস্বীকার করে আসছিল সৌদি। শনিবার প্রথম বিষয়টি স্বীকার করে নেয় দেশটি।
সাক্ষাৎকারে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ হত্যাকাণ্ডকে ‘বড় এবং মারাত্মক ভুল’ বলে মন্তব্য করেন এবং খাশোগির পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন।
তিনি বলেন, ‘যার এ হত্যাকাণ্ডে অংশ নিয়েছেন তারা তাদের ওপর অর্পিত ক্ষমতা বহির্ভুত কাজ করেছেন। এবং তারা তার (খাশোগি) কাছের কেউ ছিল না। এটা এমনই একটা অপারেশন ছিল যেখানে শুধু অসৎ প্রকৃতির লোকই অংশ নিয়েছেন।’
এ হত্যাকাণ্ডকে ঘরে সৌদি-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়েও কথা বলেন সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও সৌদির দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক ঐতিহাসিক ও কৌশলগত। ….আমি বিশ্বাস করি যখন তদন্ত শেষ হবে, সত্য বেরিয়ে আসবে, লোকজন জানতে পারবে আসলে এ ঘটনায় কারা জড়িত ছিল এবং দেখবে এসব ব্যক্তিকে শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে এবং এ ধরনের ঘটনার যেন পুনরাবৃত্তি না হয় সেজন্য আইন করা হয়েছে, তখন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আবারও পালে হাওয়া লাগবে।’
৫৯ বছর বয়সী খাশোগির নিখোঁজের দুই সপ্তাহ পর্যন্ত চুপ থাকলেও শনিবার সৌদি আরবের পাবলিক প্রসিকিউটরের কার্যালয় থেকে এক বিবৃতি দেয়া হয়। এতে বলা হয়, কনস্যুলেটের ভেতরে কয়েকজনের মধ্যে তর্ক-বিতর্ক থেকে মারামারি শুরু হয়। আর এতে প্রাণ যায় খাশোগির।
তুরস্কের সরকারি কর্মকর্তাদের ধারণা, খাশোগির মরদেহ টুকরো টুকরো করা হয়েছে। তবে এক সৌদি কর্মকর্তা রয়টার্সকে বলেছেন, সাংবাদিক খাশোগিকে হত্যার পর তার মরদেহ একটি গর্তের মধ্যে ফেলে দেয়া হয় এবং সেখান থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য স্থানীয় এক কর্মচারীকে দায়িত্ব দেয়া হয়।
কিন্তু খাশোগিকে নির্যাতনের পর শিরশ্ছেদ করা হয়েছে বলে যে অভিযোগ উঠেছে সে ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হলে ওই কর্মকর্তা বলেন, প্রাথমিক তদন্তে সে ধরনের কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।