1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

স্বাস্থ্যসেবা ও নিরাপদ মাতৃত্ব

ডা. শারমিন মিজান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ২৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৩

পরিবারের প্রাপ্তবয়স্ক নারী সদস্যের মা হওয়ার সংবাদটি পরিবারের সবার কাছে অত্যন্ত আনন্দের খবর। তবে শহরে বাস করা দরিদ্র মানুষ কিছুটা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন এ কথা ভেবে যে, তারা কীভাবে গর্ভবতীর যত্ন নেবেন এবং কোথায় সন্তান প্রসব করাবেন। এদিকে প্রসূতির পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠরা তাদের অভিজ্ঞতা থেকে প্রথাগত পদ্ধতিতে গর্ভকালীন পরিচর্যা করতে চাইবেন। তারা প্রসূতির শারীরিক অবস্থা বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে পরীক্ষার দরকার আছে সেটাই হয়তো মানতে চাইবেন না। এমনকি তারা হয়তো অর্থ সাশ্রয়সহ নানাবিধ কারণে বাড়িতেই সন্তান প্রসব করাতে চাইবেন এবং গর্ভকালীন ও প্রসবকালীন জটিলতায় মাতৃত্ব নিরাপদ করতে কোনো বিশেষজ্ঞের কাছে নিতেও সময় পাবেন না। তবে সরকারের দিক থেকে বিভিন্ন ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার কারণে এ অবস্থাতে পরিবর্তন আসছে।

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার আগে এই অঞ্চলে প্রতি লাখ জীবিত শিশু জন্মে মাতৃমৃত্যুর হার ছিল প্রায় ৬০০, যা কমে বর্তমানে ১৬৫ হয়েছে। এটি নিঃসন্দেহে একটি বড় অর্জন। তবে আরও বেশি অর্জনের সুযোগ আছে। যে কারণে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসজিডি) ২০৩০ সালের মধ্যে মাতৃমৃত্যু হার ৭০-এ কমিয়ে আনতে সরকার নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আমরা জানি, প্রতিটি গর্ভ ঝুঁকিপূর্ণ। তাই প্রসূতি মায়ের সঠিক যত্ন নেওয়ার মাধ্যমে সুস্থ শিশু ও সুস্থ মা সব পরিবারের কাছেই কাঙ্ক্ষিত।

পরিসংখ্যান থেকে দেখা যায়, মাতৃমৃত্যুর ৩১ শতাংশ হয়ে থাকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে, ২৪ শতাংশ হয় খিঁচুনির কারণে এবং ৩ শতাংশ হয় বাধাগ্রস্ত বা বিলম্বিত প্রসবের কারণে এবং প্রসব-পরবর্তী জটিলতার কারণে সন্তান জন্মদানের ৪৫ দিনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মা মারা যান। সংবাদমাধ্যমসহ বিভিন্নভাবে আমরা জানতে পারি অনেক প্রসূতি মা রক্তশূন্যতা, ডায়াবেটিস, থাইরয়েড, সংক্রমণ, উচ্চরক্তচাপ, প্রসবকালীন জটিলতাসহ বেশ কিছু স্বাস্থ্যঝুঁকিতে থাকেন। এমন ধরনের সমস্যাগুলোর সমাধান প্রাথমিক পর্যায়েই করা সম্ভব যদি একজন গর্ভবতী গর্ভধারণের শুরু থেকে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে গিয়ে যথাযথ পরামর্শ ও সেবা নেন। কিন্তু বিলম্বে সেবা গ্রহণের সিদ্ধান্ত, হাসপাতালে পৌঁছানো ও সেবা প্রদানে বিলম্বসহ নানাবিধ কারণে মায়ের গর্ভধারণ অনিরাপদ হয়ে ওঠে। তাই বিশেষজ্ঞদের কথা মেনে গর্ভধারণের শুরু থেকে প্রসূতির স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা হলে তার প্রসব অনেকাংশে নিরাপদ করা সম্ভব।

নিরাপদ মাতৃত্বের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগুলো হলো, স্থানীয় পর্যায়ে (পাড়া বা মহল্লা) দক্ষ চিকিৎসক এবং মিডওয়াইফারির মাধ্যমে প্রসব-পূর্ব মাতৃসেবা, নিরাপদ প্রসবসেবা এবং প্রসব-পরবর্তী স্বাস্থ্যসেবা, ঝুঁকিপূর্ণ গর্ভপাত প্রতিরোধ সেবা এবং নবজাতকের সেবার ব্যবস্থা, বিশেষায়িত হাসপাতালে সুপারিশের বা রেফারেল সুবিধার বিস্তৃতি এবং যোগাযোগ বা রোগী পরিবহন ব্যবস্থা উন্নতকরণ। উপরোক্ত চাহিদার প্রায় সবকিছুর ব্যবস্থাই আছে রংধনু-চিহ্নিত নগর মাতৃসদন ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে।

উল্লেখ্য, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের অধীন স্থানীয় সরকার বিভাগের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এবং এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক ও অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীদের সহায়তায় আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্টের (ইউপিএইচসিএসডিপি) দ্বিতীয় পর্যায় চলমান আছে। প্রকল্পটির আওতায় ১১টি সিটি করপোরেশন এবং ১৩টি পৌরসভা এলাকায় ৩৮টি মাতৃসদন, ১৫০টি নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং ৩০০টি স্যাটেলাইট ক্লিনিকের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট শহরবাসী, বিশেষ করে দরিদ্র জনগোষ্ঠী, মা ও শিশুদের স্বল্পমূল্যে উন্নত প্রাথমিক চিকিৎসা এবং রোগ প্রতিরোধী সেবা দেওয়া হচ্ছে। এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে প্রয়োজনীয় প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা এবং দিনের ২৪ ঘণ্টায় জরুরি অ্যাম্বুলেন্স সুবিধা পাওয়া যায়। এখানে অতি দরিদ্রদের চিকিৎসা সেবা বিনামূল্যে দেওয়া হয়। আশার কথা, নিরাপদ মাতৃসেবার পরিধি বিস্তৃত করতে মাতৃসদনের সংখ্যা ৩৮টি থেকে ৪৫টিতে উন্নীতকরণে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই সম্পন্ন হয়েছে।

সন্তান প্রসবের আগে একজন মাকে কমপক্ষে চারবার দক্ষ চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চেকআপ করানো উচিত। অথচ পরিসংখ্যান থেকে জানা যায় যে, দেশে বর্তমানে ৬৪ শতাংশ প্রসূতি মা সন্তান প্রসবের আগে মাত্র একবার চিকিৎসকের কাছে চেকআপ করান। চিকিৎসায় বিলম্বের কারণে অনেকের অকাল গর্ভপাত হয় এবং অনেক ক্ষেত্রে তারা ব্যয়বহুল সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান প্রসবে বাধ্য হন।

এ পরিস্থিতি মাতৃত্বকে নিরাপদ করার স্বার্থেই বদলাতে হবে। আর তাই যেখানে নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্র আছে সেখানে গর্ভকালীন সময়ে চেকআপ করানোসহ প্রসব ও প্রসব-পরবর্তী সেবা নিতে হবে। এ জন্য পরিবারের নারী সদস্যের মা হওয়ার সুসংবাদ পাওয়া মাত্র নিকটস্থ রংধনু-চিহ্নিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে সেখানকার সেবাগুলো সম্পর্কে জানতে হবে এবং সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া সুলভ ও ক্ষেত্র বিশেষে বিনামূল্যে দেওয়া হয় স্বাস্থ্যসেবা নিতে হবে। আর এভাবেই আমরা একজন গর্ভবতী মাকে জটিলতামুক্ত রাখতে পারি এবং মা সুস্থ সবল থাকলেই সুন্দরভাবে সুস্থ সন্তান জন্ম দিতে পারেন।

লেখক: ডা. শারমিন মিজান – উপ-প্রকল্প পরিচালক (সার্ভিস ডেলিভারি), আরবান প্রাইমারি হেলথ কেয়ার সার্ভিসেস ডেলিভারি প্রজেক্ট-দ্বিতীয় পর্যায়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়।


সর্বশেষ - রাজনীতি