1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ : বাঙালির আত্মবিশ্বাস ও মর্যাদার প্রতীক

অধ্যাপক ড. আহমেদ আমিনুল ইসলাম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২

স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১৯৭৪ সালের আজকের দিনটিতে অর্থাৎ ২৫ সেপ্টেম্বর তারিখে তিনি জাতিসংঘে প্রথমবারের মতো বাংলায় ভাষণ প্রদান করেন। ১৯৭১ সালে ৩০ লাখ শহিদ আর আড়াই লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত হয় মহান স্বাধীনতা। স্বাধীনতা অর্জন হলেও জাতিসংঘের সদস্য পদ পেতে বাংলাদেশকে প্রায় তিন বছর অপেক্ষা করতে হয়। অর্থাৎ ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত হলেও বাংলাদেশ জাতিসংঘের সদস্য পদ লাভ করে ১৯৭৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর। প্রথমদিকে চীন বাংলাদেশের সদস্য পদের বিষয়ে ভেটো প্রদান করলেও পরবর্তী সময়ে আর ভেটো প্রদান করেনি। ১৭ সেপ্টেম্বর সদস্য পদ পাওয়ায় সর্বস্তরের দেশবাসী আনন্দ উল্লাসে মেতে উঠেছিল। জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানের লক্ষ্যে ২৩ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু নিউইয়র্কের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। নিউইয়র্কে হোটেলে অবস্থানের সময় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারসহ অনেক মান্যগণ্য ব্যক্তি সাক্ষাৎ করেন।

জাতিসংঘ সদস্য পদ লাভের মাত্র নবম দিবসে বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে ভাষণ প্রদান করেন। শুধু ভাষণ প্রদানই নয়- মাতৃভাষা বাংলায় ভাষণ প্রদান করে বৈশ্বিক পরিমণ্ডলে বাঙালির শাশ্বত সংস্কৃতি ও কৃষ্টি কালচারের পরিচয়ও তুলে ধরেন। বাংলা ভাষাকে বিশ্বের সামনে এভাবে আর কোনো নেতা বিশ্বসভায় দাপটের সঙ্গে তুলে ধরেননি। যদিও বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে নোবেল পুরস্কার অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার বিশ্বব্যাপ্ত মর্যাদা এনে দিয়েছিলেন। রবীন্দ্রনাথের পরিচয় করিয়ে দেওয়া বাংলা ভাষাকে, বাংলা ভাষার তেজস্বী শক্তিকে বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘের মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরেছেন।

বঙ্গবন্ধুর ভাষণে বাঙালির বহু শতাব্দীর সংগ্রামের ইতিহাস এবং শোষিত ও বঞ্চিত মানুষের অধিকার আদায়ের দীর্ঘ সংগ্রামের কথা যেমন ব্যক্ত হয়েছে তেমনি বিশ্বব্যাপী অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর তার উদাত্ত আহ্বানও ধ্বনিত হয়েছিল। সে সময় জাতিসংঘে ৬টি ভাষায় ভাষণ দেওয়ার রীতি থাকলেও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলায় ভাষণ প্রদান করেন। সাধারণ অধিবেশনে উপস্থিত বিশ্বনেতৃবর্গ মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে জাতির পিতার বাংলা ভাষণ শোনেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শেষ হওয়া মাত্র নিজ নিজ আসন থেকে ওঠে এসে বিশ্বনেতৃবৃন্দ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে করমর্দন ও আলিঙ্গনের জন্য এগিয়ে আসেন। বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শেষে এক অভূতপূর্ব দৃশ্য তৈরি হয়েছিল।

আমরা মনে করি, জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ দেওয়ার মধ্য দিয়েই প্রকৃতপক্ষে সেদিন থেকে বাংলা ভাষা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও অর্জন করে। একইসাথে আমরা বলতে পারি বাঙালির কৃষ্টি কালচার ও সংস্কার সংস্কৃতিও ২৫ সেপ্টেম্বর ১৯৭৪ সাল থেকে আন্তর্জাতিকভাবে বিকাশের সুযোগ লাভ করে। প্রথামত জাতিসংঘে প্রদানের জন্য বঙ্গবন্ধুর একটি ভাষণ লিখে দেন তৎকালীন পররাষ্ট্র সচিব ফখরুদ্দীন আহমদ এবং সে সময়কার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চপদস্থকর্মর্কা ফরুক আহমদ চৌধুরী। সেই লিখিত ভাষণটি পাঠ করে বঙ্গবন্ধু তাদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন, ‘ভালোই তো তোমাদের ফরেন সার্ভিসের বক্তৃতা! কিন্তু তোমরা যে আসল কথাই লিখনি। দেশে বন্যা হয়ে গেল। দুর্ভিক্ষ হতে যাচ্ছে, সেই কথাটি তো আমি জাতিসংঘে বলবার চাই। বাংলাদেশের সমস্যার কথা বিশ্ববাসী আমার মুখ থেকেই শুনুক। তোমাদের সংশয় কেন?’ তখন সাঁটলিপিকার রোজারিওকে ডাকা হয়। অদূরে সোফা দেখিয়ে ফারুক চৌধুরীকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘ওখানে বসে আসন্ন খাদ্যাভাব সম্বন্ধে একটি লাইন তুমি আমার বক্তৃতায় জুড়ে দাও।’ ফারুক চৌধুরীর ‘স্মরণে বঙ্গবন্ধু’ বই থেকে জানা যায় যে, সফরের আগে পররাষ্ট্র সচিব একদিন বলেন, জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ প্রণয়নে সে সময়ের তথ্য প্রতিমন্ত্রী তাহের উদ্দিন ঠাকুর খুবই আগ্রহ দেখিয়েছিলেন। তিনি আগে ইত্তেফাকের সাংবাদিক ছিলেন। তার ধারণা ছিল বাংলা ভাষায় তার খুব দখল আছে। জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধু বাংলায় ভাষণ দেবেন এটি জানার পর তাহের ঠাকুর বাংলায় ভাষণের একটি খসড়া রচনা করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে পেশ করেছিলেন। পরে জানা যায় তাহের ঠাকুরের সেই খসড়াও বঙ্গবন্ধুর পছন্দ হয়নি। ১৯৭৪ সালে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় প্রদত্ত সেই ভাষণের ইংরেজি অনুবাদ পাঠ করেছিলেন ফারুক চৌধুরী। বিশ্ব ফোরামে বঙ্গবন্ধু একদিকে বাংলা ভাষণ দিচ্ছেন, সঙ্গে সঙ্গে তা ইংরেজি ভাষায় অনুবাদ করেছেন ফারুক চৌধুরী। এজন্য নিউইয়র্কে বঙ্গবন্ধু যে হোটেলে অবস্থান করছিলেন তার কক্ষে বঙ্গবন্ধু ও ফারুক চৌধুরী উভয়ে অন্তত কয়েকবার রিহের্সালও করেছিলেন বলে জানা যায।

অবশেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ আসে, আসে ২৫ সেপ্টেম্বর। সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সভাপতিসহ উপস্থিত বিশ্বনেতৃবৃন্দকে সম্বোধনের পর জাতিসংঘকে বঙ্গবন্ধু ‘মানব জাতির পার্লামেন্ট’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তিনি তার ভাষণে বলেন, ‘বাংলাদেশের সাড়ে ৭ কোটি মানুষ পরিচিতি লাভ করায় আপনাদের মধ্যে যে গভীর সন্তোষের ভাব লক্ষ করেছি আমিও তার অংশীদার। বাঙালি জাতির জন্য এটা এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। কারণ তার আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার অর্জনের সংগ্রাম আজ বিরাট সাফল্য দ্বারা চিহ্নিত। একটি স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে মুক্ত ও সম্মানজনক জীবনযাপনের অধিকার অর্জনের জন্য বাঙালি জাতি বহু শতাব্দী ধরে সংগ্রাম চালিয়ে এসেছে। তারা চেয়েছে বিশ্বের সকল জাতির সঙ্গে শান্তি ও সৌহার্দ্যের মধ্যে বসবাস করতে। জাতিসংঘ সনদে যে মহান আদর্শের কথা বলা হয়েছে, তা আমাদের জনগণেরও আদর্শ। এবং এই আদর্শের জন্য তারা চরম ত্যাগ স্বীকার করেছে। এমন এক বিশ্বব্যবস্থা গঠনে বাঙালি জাতি উৎসর্গীকৃত যে-ব্যবস্থায় সকল মানুষের শান্তি ও ন্যায় বিচার লাভের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে। এবং আমি জানি আমাদের প্রতিজ্ঞা গ্রহণের মধ্যে আমাদের লাখো শহিদের বিদেহী আত্মার তৃপ্তি নিহিত রয়েছে। সম্প্রতি গোটা বিশ্বে যে অর্থনৈতিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে একটি ন্যায়সঙ্গত ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে তোলার কাজে আমাদের আরও তড়িৎ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। এ বছরের গোড়ার দিকে অনুষ্ঠিত এই পরিষদের বিশেষ অধিবেশনে বিশ্বের বর্তমান গুরুতর অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে আলোচনা হয়েছে। আমি এমন একটি দেশের পক্ষ থেকে কথা বলছি যে দেশটি বর্তমানে অর্থনৈতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় শীর্ষস্থানে রয়েছে। এই ক্ষতি কতটা গুরুতর আমি সে সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করতে চাই। যুদ্ধের ধ্বংস-স্তূপের ওপরেই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছিল। তারপর থেকে একের পর এক প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের আমরা সম্মুখীন হয়েছি। সর্বশেষ এবারের নজিরবিহীন বন্যা। সাম্প্রতকি বন্যার বিপর্যয় কাটিয়ে উঠার উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের প্রতি সাহায্যেরও হাত বাড়িয়ে দেওয়ার ব্যাপারে সক্রিয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আমরা জাতিসংঘ, সংশ্লিষ্ট সংস্থাসমূহ এবং সেক্রেটারি জেনারেলের প্রতি কৃতজ্ঞ।’

বাংলাদেশের সমস্যা নিয়ে আলোচনার অবতারণা করলেও বঙ্গবন্ধুর সমগ্র ভাষণে আমরা বিশ্ব মানবতার প্রতি সংশ্লিষ্ট সকলের সামগ্রিক অংশগ্রহণের আহ্বান শুনতে পাই। তার সেই আহ্বানের মধ্য দিয়েই তিনি বাঙালির স্বাধীনতার স্থপতি হয়েও বিশ্বব্যাপী ক্ষুধা, দারিদ্রপীড়িত ও বঞ্চিত মানুষের পক্ষে অবস্থান নেয়ায় তিনি বিশ্বনেতার অনন্য উচ্চতায় আসীন হয়েছেন। কেননা বঙ্গবন্ধুই ১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘে তার প্রথম ও শেষ ভাষণে আগামী দিনের বৈশ্বিক প্রতিবন্ধকতাসমূহ বিশেষভাবে উল্লেখ করে বলেছিলেন, ‘আজিকার দিনে বিশ্বের জাতিসমূহ কোন পথ বেছে নিবে তা নিয়া সংকটে পড়েছে। এই পথ বেছে নেওয়ার বিবেচনার ওপর নির্ভর করবে আমরা সামগ্রিক ধ্বংস, ভীতি এবং আণবিক যুদ্ধের হুমকি নিয়ে এবং ক্ষুধা, বেকার ও দারিদ্র্যের কষাঘাতে মানবিক দুর্গতিকে বিপুলভাবে বাড়িয়ে তলে এগিয়ে যাব অথবা আমরা এমন এক বিশ্ব গড়ে তোলার পথে এগিয়ে যাব যে-বিশ্বে মানুষের সৃজনশীলতা এবং আমাদের বিজ্ঞান ও কারিগরি অগ্রগতি আণবিক যুদ্ধের হুমকিমুক্ত উজ্জ্বলতর ভবিষ্যতের রূপায়ণ সম্ভব করে তলিবে এবং যে কারিগরি বিদ্যা ও সম্পদের পারস্পরিক অংশীদারিত্বের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে সুন্দর জীবন গড়ে তোলার অবস্থা সৃষ্টি করবে। যে অর্থনৈতিক উত্তেজনা সম্প্রতি সমগ্র বিশ্বকে নাড়া দিয়েছে তা একটি ন্যায়সঙ্গত আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা গড়ে তুলে জরুরিভাবে মোকাবিলা করতে হবে।’

বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় বাাংলাদেশের অঙ্গীকার ব্যক্ত করে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় আমাদের অঙ্গীকার প্রমাণের জন্য উপমহাদেশে আপোষ মীমাংসার পদ্ধতিকে আমরা জোরদার করেছি।’ পাকিস্তানের সঙ্গে স্বাভাবিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায়ও তিনি তার ভাষণে বলেছিলেন, ‘আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, বাংলাদেশের অভ্যুদয় বস্তুতপক্ষে এই উপমহাদেশে শান্তির কাঠামো এবং স্থায়িত্ব প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অবদান রাখবে।’ বঙ্গবন্ধু তার ভাষণ শেষ করেছিলেন এই বলে যে, ‘জনাব সভাপতি, মানুষের অজেয় শক্তির প্রতি বিশ্বাস, মানুষের অসম্ভবকে সম্ভব করার ক্ষমতা এবং অজেয়কে জয় করার শক্তির প্রতি অকুণ্ঠ বিশ্বাস রেখে আমি আমার বক্তব্য শেষ করিতেছি। আমরা দুঃখ ভোগ করতে পারি, কিন্তু মরব না। টিকে থাকার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে জনগণের দৃঢ়তাই চরম শক্তি, আমাদের স্বনির্ভরতা।’ বঙ্গবন্ধুর বাংলায় প্রদত্ত ঐতিহাসিক ভাষণের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জনপ্রিয় ‘ডেলিগেট বুলেটিন’ বঙ্গবন্ধুকে ‘কিংবদন্তির নায়ক মুজিব’ বলে শিরোনামে খবর প্রকাশ করে। সেখানে প্রকাশিত হয়েছিল ‘অতীতের অনগ্রসারতা, যুদ্ধের ধ্বংসলীলা, প্রাকৃতিক বিপর্যয় ও প্রতিকূল বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ভয়াবহ ফলশ্রুতি হিসেবে যে অসুবিধাজনক অবস্থার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ অগ্রসর হচ্ছে তা বাংলাদেশের নেতা মুজিব তার বক্তব্যে বিশেষ গুরুত্বসহ তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন।’

জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বিশ্লেষণ করলে আমরা উপলব্ধি করতে পারি যে, ন্যায়সঙ্গত কথা বলতে তিনি শক্তিধর রাষ্ট্রসমূহের চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা গুরুত্ব দেননি। এমনকি বাংলাদেশ সম্পর্কে হেনরি কিসিঞ্জারের ব্যঙ্গাত্মক Bangladesh is an international basket case বক্তব্যের জবাবও তিনি ওয়াশিংটনে বসেই সাংবাদিক সম্মেলনেই দিয়ে এসেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, কেউ কেউ বাংলাদেশকে international basket case বলে উপহাস করে। কিন্তু বাংলাদেশ international basket case নয়। দু’শ বছর ধরে বাংলাদেশের সম্পদ লুট করা হয়েছে। বাংলাদেশের সম্পদে শ্রীবৃদ্ধি করা হয়েছে লন্ডন, ডান্ডি, ম্যানচেস্টার, করাচি, ইসলামাবাদের। [..] আমাদের অফুরন্ত সম্পদ রয়েছে। একদিন আমরা দেখাবো বাংলাদেশ নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছে।’

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সৃষ্ট বলিষ্ঠতার সংস্কৃতির পথ ধরে বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনাও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে বিগত বেশ কয়েক বছর যাবৎ বাংলায় ভাষণ দিয়ে আসছেন। বাংলায় ভাষণ প্রদানের মাধ্যমে একদিকে বাঙালির কৃষ্টি-কালচার, সংস্কার-সংস্কৃতির যেমন প্রসার ঘটে তেমনি বাঙালির আত্ম-মর্যাদাবোধও গ্রগাঢ় ভিত্তি লাভ করে। জাতি হিসেবে আমাদেরকে আত্মবিশ্বাসীও করে তোলে। আর সেই আত্মবিশ্বাসের দৃপ্ততায় আমরা বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে বাংলাদেশকে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্পর্ধা অর্জনে সক্ষমতালাভের অভিলাষী দেখতে পাই। এর মধ্য দিয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের ভবিষ্যৎবাণীর বাস্তবায়নের ইংগিতই যেন ফুুটে ওঠে।

লেখক : ড. আহমেদ আমিনুল ইসলাম – অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় 


সর্বশেষ - রাজনীতি