1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

নতুন ‘সাইবার নিরাপত্তা আইনে’ যা থাকছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ৮ আগস্ট, ২০২৩

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-ডিএসএ পরিবর্তন করে তার জায়গায় ভিন্ন একটি আইন আনার সিদ্ধান্তে অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা। এই নতুন আইনটির নামকরণ করা হয়েছে সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বেশ কয়েকটি ধারায় পরিবর্তন এনে এই আইনটি করা হচ্ছে।

নতুন আইনে মোট ধারা ৬০টি। এটি আগামী সেপ্টেম্বরে সংসদে বিল আকারে পাসের জন্য উত্থাপন করা হবে। সেখানে এটি অনুমোদিত হবে বলেও আশার কথা জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী।

নতুন এই আইনের বিষয়ে অনুমোদনের পর ঢাকায় এক সংবাদ সম্মেলনে আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার রোধ করার জন্য এই আইনের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘’সাংবাদিকদের একটা কথা ছিল, ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট থাকলে একটা মানসিক চাপের মধ্যে থাকতে হয়। সেটাকেও আমরা ধর্তব্যের মধ্যে নিয়েছি এবং সেই কারণে এই পরিবর্তনগুলো আনা হয়েছে।”

তবে আগের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিলের যে খবর জানা গিয়েছিল সেটি সত্য নয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, “পরিবর্তন করা হয়েছে(ডিএসএ), বাতিল করা হয়নি। নামটা নতুন করে দেয়া হয়েছে, কিছু ধারা পরিবর্তন করা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “পরিবর্তনটা এতটাই করা হয়েছে, সেখানে যাতে কোন দ্বিধা তৈরি না হয়, সেজন্য ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট নাম রহিত করে তার পরিবর্তে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট করা হয়েছে। ব্যাপারটা হচ্ছে, আইনের পরিবর্তন আনা হয়েছে, নামে পরিবর্তন আনা হয়েছে, অনেক জায়গায় সাজার পরিমাণ বেশি ছিল, সেটা কমানো হয়েছে, যেখানে উপধারা দিয়ে পুনরায় অপরাধ করলে সাজা ডবল হয়ে যেতো, সেটা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করা হয়েছে। কোন সংশয় যাতে তৈরি না হয়, সেই কারণে রহিতকরণ ও হেফাজত করণের বিধান রেখে সাইবার নিরাপত্তা আইন করছি।‘’

তবে ডিএসএ-এর অধীনে যেসব মামলা করা হয়েছিল সেগুলো চলবে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী। কিন্তু মামলার কার্যক্রম সাইবার নিরাপত্তা আইন অনুযায়ী হবে।

যেসব ধারায় পরিবর্তন আসছে

সাইবার নিরাপত্তা আইনে যেসব ধারায় পরিবর্তন আনা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ২১ ধারা।

এই ধারা অনুযায়ী, যদি কোন ব্যক্তি ডিজিটাল মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, জাতির পিতা, জাতীয় সংগীত বা জাতীয় পতাকার বিরুদ্ধে কোনো রকম প্রোপাগান্ডা ও প্রচারণা চালায় বা তাতে মদদ দেয় তাহলে সেটি অপরাধ বলে গণ্য হতো এবং এর জন্য ১০ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান ছিল।

এই একই অপরাধ কেউ দ্বিতীয়বার করলে তার সাজা দ্বিগুণ করার বিধান ছিল। আর বারবার একই অপরাধের ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা তিন কোটি টাকা জরিমানার বিধান ছিল।

এই ধারাটিতে পরিবর্তন এনে সাজার মেয়াদ ৭ বছর করা হয়েছে। আর দ্বিতীয়বার একই অপরাধ করলেও সাজা দ্বিগুণ হবে না।

পরোয়ানা ছাড়া গ্রেফতার থাকছে

ডিএসএ এর ৪৩ ধারা অনুযায়ী, যদি কোনো পুলিশ কর্মকর্তা মনে করেন যে, কোনো স্থানে এই আইনের অধীনে কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়েছে বা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তাহলে সাক্ষ্য প্রমাণাদি হারানো, নষ্ট হওয়া, মুছে ফেলা, পরিবর্তন হওয়ার বা করার সম্ভাবনা রয়েছে তাহলে তার, কোন পরোয়ানা ছাড়াই সেখানে তল্লাসি, সরঞ্জাম জব্দ, দেহ তল্লাসি, এবং পরোয়ানা ছাড়াই গ্রেফতারের এখতিয়ার রয়েছে।

এটি অপরিবর্তিত রাখার যুক্তি হিসেবে আইনমন্ত্রী বলেন, সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রে, এসব অপরাধ যেসব সরঞ্জাম ব্যবহার করে করা হয় সেটা জব্দ না করলে প্রমাণ নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সেকারণে এটি অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

কিছু অপরাধ জামিনযোগ্য হচ্ছে

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ২৮,২৯,৩০ ধারাগুলো বাতিলের বিষয়ে নানা সময়ে আহ্বানও জানানো হয়েছে। এই ধারাগুলো বাতিল করা না হলেও সেগুলোতে সংশোধন আনা হয়েছে বলে জানান আইনমন্ত্রী।

তিনি বলেন, “আমরা সবসময়ই বলেছি যে বাতিল করা যাবে না। এগুলো সংশোধন করা হবে এবং সেটাই করা হয়েছে।”

ডিএসএ-র ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করা বা উস্কানি দেয়ার জন্য ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ বা প্রচার করে, যা ধর্মীয় অনুভূতি বা ধর্মীয় মূল্যবোধের উপর আঘাত করে, তাহলে তা অপরাধ হবে। এই অপরাধের ক্ষেত্রে পাঁচ বছর কারাদণ্ড, বা দশ লাখ টাকা জরিমানার বিধান ছিল। একই অপরাধ বার বার করলে সাজা ও জরিমানার মেয়াদ দ্বিগুণ হওয়ার বিধান ছিল।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানান, এই ধারায় সাজা কমানো হয়েছে। এটা আগে ছিল অ-জামিনযোগ্য। এটা জামিন-যোগ্য করা হয়েছে।

ডিএসএ এর ২৯ ধারায় বলা হয়েছে যে, যদি কোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে মানহানিকর তথ্য প্রকাশ বা প্রচার করেন, তাহলে তিনি তিন বছরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন বা পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা করা হবে। এছাড়া একই অপরাধ বারবার পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা ১০ লাখ টাকা জরিমানার বিধান ছিল।

এই ধারায় পরিবর্তন এনে কারাদণ্ডের যে সাজা ছিল সেটাকে সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত করা হয়েছে। এখানে শাস্তি হবে শুধু জরিমানা। আর জরিমানা অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড হতে পারে।

আইনমন্ত্রী বলেন, সর্বোচ্চ জরিমানা ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত করা হবে।

তিনি বলেন, দেওয়ানি আইনে কেউ মানহানির জন্য মামলা করলে ক্ষতিপূরণ চাওয়ার কোন সীমা নাই। তিনি চাইলে ১০০ কোটি টাকাও ক্ষতিপূরণ চাইতে পারেন। তবে সেটা কমিয়ে সর্বোচ্চ আদায় যোগ্য জরিমানার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ লাখ টাকা। তবে কত টাকা জরিমানা করা হবে তা নির্ধারণ করবে আদালত।

মানহানির মামলায় এখন যেহেতু কোন কারাদণ্ড নাই, তাই এই ধারায় কাউকে গ্রেফতারও করা যাবে না বলে জানান আইনমন্ত্রী।

আসছে হ্যাকিং সম্পর্কিত ধারা

ডিএসএ’র ৩১ ধারায় এর আগে উল্লেখ করা হয়েছিল যে, যদি কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইট বা ডিজিটাল মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন বা করান, যা বিভিন্ন শ্রেণি বা সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে বা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে বা অস্থিরতা বা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে অথবা আইন-শৃঙ্খলার অবনতি ঘটায় তাহলে সেটি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এক্ষেত্রে সর্বোচ্চ শাস্তি ছিল ৭ বছর এবং পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা। একাধিক বার একই অপরাধ করলে সাজা বেড়ে ১০ বছর এবং জরিমানা ১০ লাখ টাকা করার বিধান ছিল।

এই ধারায় পরির্বতন এনে সাজার সময়-সীমা কমানো হয়েছে। আগে সাত বছরের কারাদণ্ডের পরিবর্তে এটা কমিয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে। বার বার একই অপরাধ করলে সাজা বাড়ানোর বিষয়টি বাতিল করা হয়েছে।

৩২ ধারায় সরকারি গোপনীয়তা ভঙ্গের অপরাধের শাস্তি আগে ছিল ১৪ বছর, সেটি কমিয়ে ৭ বছর করা হয়েছে। বারবার এই অপরাধ করলে সাজা বাড়ার বিধান বাতিল করা হয়েছে।

৩৩ ধারা সম্পূর্ণ বিলুপ্ত করে হ্যাকিং সম্পর্কিত অপরাধ নামে নতুন ধারা প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এই অপরাধের শাস্তি অনধিক ১৪ বছরের কারাদণ্ড বা এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে।

হ্যাকিং হচ্ছে, কম্পিউটার তথ্য ভাণ্ডারের কোন তথ্য বিনাশ, বাতিল বা পরিবর্তন বা তার মূল্য বা উপযোগিতা কমানো বা অন্য কোন ভাবে ক্ষতিসাধন বা নিজ মালিকানা বা দখল বিহীন কোন কম্পিউটার, সার্ভার, নেটওয়ার্ক বা অন্য কোন ইলেকট্রনিক সিস্টেমে অবৈধভাবে প্রবেশের মাধ্যমে তার ক্ষতিসাধন হবে হ্যাকিং।

ডিএসএ এর ৩৩ ধারায় বলা হয়েছিল যে, যদি কোনো ব্যক্তি কম্পিউটার বা ডিজিটাল সিস্টেমে বে-আইনিভাবে প্রবেশ করে সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা সংবিধিবদ্ধ সংস্থা বা কোনো আর্থিক বা বাণিজ্যিক সংস্থার কোনো তথ্য-উপাত্তের কোনো ধরণের সংযোজন বা বিয়োজন, স্থানান্তর বা স্থানান্তরের উদ্দেশ্যে সংরক্ষণ করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে তা অপরাধ বলে ধরা হবে।

আইসিটি আইন থেকে সাইবার নিরাপত্তা আইন

তথ্যপ্রযুক্তি সংক্রান্ত অপরাধ নিয়ে ২০০৬ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইন প্রণয়ন করা হয়। যেটি আইসিটি আইন হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠে।

সেই আইনে বলা হয়, বাংলাদেশে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির আইনগত বৈধতা ও নিরাপত্তা দেয়া এবং আনুষঙ্গিক বিষয়াদি সম্পর্কে বিধান প্রণয়ন করার জন্য আইনটি প্রণয়ন করা হয়েছে।

২০১৬ সালে এই আইনটি সংশোধন করে আরো কঠোর করা হয়। এই আইনের অধীনে বিভিন্ন অপরাধের ক্ষেত্রে শাস্তি বাড়ানো হয়।

আইসিটি আইনের ৫৭ ধারায় বলা হয়েছিল যে, ‘কোনো ব্যক্তি যদি ইচ্ছাকৃতভাবে ওয়েবসাইটে বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে এমন কিছু প্রকাশ বা সম্প্রচার করেন, যা মিথ্যা ও অশ্লীল বা সংশ্লিষ্ট অবস্থা বিবেচনায় কেউ পড়লে, দেখলে বা শুনলে নীতিভ্রষ্ট বা অসৎ হতে উদ্বুদ্ধ হতে পারেন অথবা যার দ্বারা মানহানি ঘটে, আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে বা ঘটার আশঙ্কা সৃষ্টি হয়, রাষ্ট্র ও ব্যক্তির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করে বা করতে পারে বা এ ধরনের তথ্যের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তি বা সংগঠনের বিরুদ্ধে উসকানি দেয়া হয়, তাহলে এ কাজ অপরাধ বলে গণ্য হবে’।

এই অপরাধে সর্বোচ্চ ১৪ বছর কারাদণ্ড এবং সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ড দেওয়ার বিধান ছিল।

এই আইনের ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামের একটি নতুন আইনের খসড়া অনুমোদন করে মন্ত্রিসভা।

একই বছরের সেপ্টেম্বরে এটি খসড়াটি সংসদে আইন হিসেবে পাস হয়।

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন নামে নতুন এই আইনে তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৪, ৫৫, ৫৬, ৫৭ ও ৬৬ ধারা বাতিল করে তার পরিবর্তে এসব ধারার অপরাধের প্রকৃতি অনুযায়ী শাস্তির বিধান রাখা হয়।


সর্বশেষ - রাজনীতি