বরগুনার অধিকাংশ মানুষের জীবন মাছের ওপর নির্ভরশীল। এর মধ্যে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষ করে বিভিন্ন উপজেলায় লাভবান হচ্ছেন চাষিরা। স্থানীয় বেকার যুবক ও ভূমিহীন মৎস্যজীবীরাও নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছচাষে আগ্রহী হচ্ছেন।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় ও স্থানীয় মাছচাষি সূত্রে জানা যায়, মাছচাষের নতুন এ পদ্ধতি দেখে স্থানীয় বেকার যুবকরা নিজ উদ্যোগে নদীতে ভাসমান খাঁচায় মাছচাষ করতে শুরু করেছেন। এরইমধ্যে জেলাজুড়ে নদীর পানিতে ভাসমান খাঁচায় মাছচাষ করে সফলতা পেয়েছেন অনেক মাছচাষি।
নদীর পানিতে লোহার পাইপ, বাঁশ, ড্রাম ও চারদিকে জাল দিয়ে তৈরি করা হয় ভাসমান খাঁচা। বরগুনার পায়রা ও বিষখালীর শাখা নদী, খাল ও বিলের পানিতে এ পদ্ধতিতে মাছচাষ করছেন অনেক চাষি।
সম্প্রতি জেলেদের ঝুঁকি কমাতে ও আয়ের উৎস বাড়াতে বরগুনার ছয় উপজেলায় শুরু হয়েছে খাঁচায় মাছচাষ পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে নতুন করে স্বপ্ন দেখছেন এ অঞ্চলের মাছচাষিরা। সেইসঙ্গে তৈরি হয়েছে নতুন সম্ভাবনা। এতে একদিকে যেমন উৎপাদিত হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের সুস্বাদু মাছ, পাশাপাশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে অনেকের।
বরগুনা জেলা মৎস্য বিভাগের হিসাব অনুযায়ী, জেলায় ব্যক্তিগত উদ্যোগে খাঁচায় মাছ চাষ করছেন দেড় শতাধিক জেলে। তুলনামূলক খরচ কম ও লাভ বেশি হওয়ায় এ পদ্ধতিতে তেলাপিয়া, পাবদা, পাঙ্গাশ, রুইসহ বিভিন্ন ধরনের মাছ চাষ করছেন তারা।
সদরের গৌরিচন্না ইউনিয়নের গৌরিচন্না খালে ভাসমান খাঁচায় মাছ চাষকারী ওয়ালিউল ইসলামের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার পরামর্শে তিনি গত বছরের নভেম্বর মাসে ১৮টি খাঁচা দিয়ে এ পদ্ধতিতে মাছচাষ শুরু করেন। এতে তার খরচ হয়েছে ৯ লাখ টাকা। আর ৮ মাসে তিনি মাছ বিক্রি করেছেন প্রায় ৪ লাখ টাকার। ভবিষ্যতে তার খাঁচার সংখ্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা আছে।
বামনা উপজেলার মোতালেব হোসেন বলেন, চাকরি না থাকায় বেকার বসেছিলাম দুই বছর। ইউটিউব দেখে খাঁচায় মাছ চাষের সিদ্ধান্ত নিই। পরে প্রশিক্ষণ নিয়ে মাছচাষ শুরু করি। আশা করছি সব খরচ বাদ দিয়ে প্রতিটি খাঁচা থেকে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা লাভ হবে।
বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা বিশ্বজিৎ কুমার দেব জানান, পুকুরের তুলনায় খাঁচায় মাছচাষ করলে একদিকে যেমন খাবার সাশ্রয় হয় অন্যদিকে মাছের বৃদ্ধিও হয় প্রায় দেড়গুণ। এরইমধ্যে এলাকার মানুষজনের মধ্যে এ পদ্ধতি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা প্রশিক্ষণ নিতে চাচ্ছে। আমরাও তাদের সর্বাত্মক সহায়তা করছি।
দেশীয় প্রজাতির মাছ এবং শামুখ সংরক্ষণ প্রকল্পের মাধ্যমে বরগুনা জেলার সম্ভাবনাময় নদী ও খালে মাছচাষ এবং খাঁচায় মাছচাষে চাষিদের পরামর্শ দিয়ে উদ্বুদ্ধ করা হবে। স্বল্প পুঁজি দিয়েই এ পদ্ধতিতে মাছচাষ করা যায় বলেও জানান তিনি।