1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

নীতিমালার কল্যাণে স্বর্ণ ব্যবসায় নতুন দিগন্তে বাংলাদেশ

বানিজ্য প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১ জুলাই, ২০২৩

বাংলাদেশের স্বর্ণের বাজার নিয়ে যে ধোঁয়াশা ছিল, তা দূর হচ্ছে এক নীতিমালার কল্যাণে। বাংলাদেশকে চোরাকারবারির যে বদনাম বয়ে বেড়াতে হতো, নীতিমালা হওয়ায় তাও ঘুচে যাচ্ছে। খাত সংশ্লিষ্টতা বলছেন, স্বর্ণের এই নীতিমালা জুয়েলারি খাতকে অচিরেই দেশের অর্থনীতির একটি বড় ও সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করবে। এরইমধ্যে ব্যবসায়ীরা বৈধ পথে সোনা আমদানি শুরু করেছেন, হচ্ছে রফতানিও।

নীতিমালা জারির পর এই খাতে আসছে নতুন নতুন বিনিয়োগ। দেশে স্বর্ণের পরিশোধনাগার (রিফাইনারি) হচ্ছে। অটোমেটেড ফ্যাক্টরিগুলো জেনারেট হচ্ছে। ইতোমধ্যে বড় আকারের বিনিয়োগের মাধ্যমে বসুন্ধরা গ্রুপ বাংলাদেশে প্রথম স্বর্ণ শোধনাগার প্ল্যান্ট স্থাপন করেছে। এই পরিশোধনাগারে একবার উৎপাদন শুরু হলে চীন, ভারত, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও ইউরোপে বাংলাদেশি স্বর্ণের বিশাল বাজার তৈরি হবে। বাইরে থেকে কাঁচামাল আনা শুরু হলে দেশেই তৈরি হবে স্বর্ণের বার। এই স্বর্ণের বার রফতানি হবে বিশ্ব বাজারে।

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশন (বাজুস) এর সাবেক সভাপতি ড. দিলিপ কুমার রায় বলেন, ‘জুয়েলারি শিল্পটা দিন দিন ধ্বংস হয়ে যাচ্ছিল।  প্রধানমন্ত্রী একটি যুগোপযোগী নীতিমালা দিয়েছেন। সেই স্বর্ণ নীতিমালার কারণে আমরা আশা এবং ভরসা পাচ্ছি। স্বর্ণ নীতিমালার বদৌলতে এই খাতে নতুন নতুন বিনিয়োগ আসা শুরু হয়েছে। বসুন্ধরা গ্রুপ একটি গোল্ড রিফাইনারি ফ্যাক্টরি স্থাপন করেছে। এই ফ্যাক্টরি যত তাড়াতাড়ি চালু হবে, তত দ্রুত আমরা যে কলঙ্কের টিকা নিয়ে আছি যে, জুয়েলারি ব্যবসা মানে চোরাকারবারি, বৈধতা নেই— এগুলো দূর হবে।’ তিনি উল্লেখ করেন, অচিরেই বাংলাদেশের স্বর্ণ ব্যবসায় স্বর্ণযুগ ফিরবে। তিনি বলেন, ‘জুয়েলারি শিল্পে আরও  সহজ নীতিমালা প্রয়োজন। তাহলে গার্মেন্টের চেয়েও বেশি ভ্যালু অ্যাডেড হতে পারে অর্থনীতিতে। পাশাপাশি আগামীর ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে জুয়েলারি শিল্প গড়ে উঠবে।’

উল্লেখ্য, ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর ‘স্বর্ণ নীতিমালা-২০১৮’ এর অনুমোদন দেওয়া হয়। যা ২০২১ সালের অক্টোবরের ২৮ তারিখ সংশোধন করে সরকার। সরকার স্বর্ণ রিফাইনারি কারখানা স্থাপন ও পরিচালনার অনুসরণীয় পদ্ধতিরও অনুমোদন দিয়েছে। এই নীতিমালা অনুযায়ী, অপরিশোধিত সোনা বা আংশিক অপরিশোধিত সোনা আমদানি ও পরিশোধন প্ল্যান্ট স্থাপন করা গেলে শিল্পায়নের এক নতুন দিগন্তে প্রবেশ করবে বাংলাদেশ। বিশ্বের ‘গোল্ড রিফাইনার্সের’ তালিকায় যুক্ত হবে বাংলাদেশের নাম। এ ছাড়া বিনিয়োগ আকর্ষণ ও প্রযুক্তি আহরণসহ দক্ষ জনবলের সৃষ্টি হবে। পাশাপাশি দেশে সোনার চাহিদা পূরণ হবে এবং আমদানি প্রতিস্থাপক হিসেবে কাজ করবে।

বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সহ-সম্পাদক ও ভাইস চেয়ারম্যান মাসুদুর রহমান মাসুদুর রহমান বলেন, ‘এই নীতিমালা হওয়ায় ভবিষ্যতে দেশের অর্থনীতিতে স্বর্ণ খাতের অবদান আরও বাড়বে। পাশাপাশি স্বর্ণালঙ্কার রফতানি বাণিজ্য শুধু বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সহায়তা করবে না, একইসঙ্গে এই খাতে কর্মরত প্রায় ৩ লাখ কারিগরের চাকরির নিরাপত্তাও দেবে।’

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালে  নীতিমালা জারির আগ পর্যন্ত দেশে স্বর্ণ আসতো চোরাই পথে। স্বর্ণ চোরাচালানের বিশাল সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে এ দেশে। এর নেপথ্যে ছিল বিদেশি চোরাচালানকারীরা।

ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিলের তথ্যমতে, হাতে তৈরি অলংকারের প্রায় ৮০ শতাংশ বাংলাদেশ ও ভারতে উৎপাদিত হয়। কিন্তু বিশ্ববাজারে অলংকার রফতানিতে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পাড়ছে না বাংলাদেশ। চাহিদার প্রায় পুরোটাই রফতানি করছে ভারত। ২০২১-২২ অর্থবছরে অলংকার রফতানিতে ভারতে আয় ছিল ৩৯ দশমিক ৩১ বিলিয়ন ডলার। এর মধ্যে শুধু স্বর্ণ থেকে রফতানি আয় হয় ৯ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার। ২০২০ সালে স্বর্ণ রফতানি করে বাংলাদেশ আয় করেছিল ২২ লাখ ২০ হাজার ডলার মাত্র। পুরোটাই রফতানি হয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাতে। ওই বছর স্বর্ণ রফতানির তালিকায় বাংলাদেশ ছিল ১৪৬তম দেশ। দেশের রফতানি পণ্য থেকে আয় করার মধ্যে স্বর্ণের আয়  ছিল ১৮৫তম অবস্থানে। স্বর্ণ আমদানির দিক থেকে বিশ্বে বাংলাদেশ ৩৩তম। ২০২০ সালে বাংলাদেশ ৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলারের স্বর্ণ আমদানি করেছে।

বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘অর্থনীতিতে জুয়েলারি খাত থেকে সরকার রাজস্ব আরও  বেশি পেতে পারে।’

ভারতের গহনা শিল্পের সাফল্য থেকে আমরা শিক্ষা নিতে পারি। জুয়েলারি খাতে প্রযুক্তিগত দক্ষতা, নকশা ও অন্যান্য সুবিধার জন্য বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ দেন তিনি।

এদিকে বাজুসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী বছর থেকেই টার্গেট করে স্বর্ণের গহনা রফতানি করবে বাংলাদেশ। ধাপে ধাপে বছরে ১০ টন স্বর্ণের গহনা রফতানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জুয়েলারি সমিতির সহ-সভাপতি আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমরা আশা করছি, ২০২৩-২৪ অর্থবছর থেকেই রফতানি শুরু করতে পারবো। এটি আমাদের একটি লক্ষ্যমাত্রা।’  তিনি বলেন, ‘বিশ্ববাজারে আমাদের দেশে তৈরি গহনার অনেক চাহিদা রয়েছে, কিন্তু আমরা বাজার ধরতে পারিনি। কারণ, আমাদের দেশে তৈরি গহনার দাম বেশি। এখন আমরা ভালো মানের গহনা তৈরি করবো। এভাবে আমরা এক দিন বিশ্ববাজারেও প্রবেশ করবো স্বর্ণ শিল্প নিয়ে।’

তিনি উল্লেখ করেন, এই বিশ্ববাজার ধরার জন্য বাজুস সভাপতি সায়েম সোবহান আনভীর ব্যাপক উদ্যোগ নিচ্ছেন। বসুন্ধরা গ্রুপ বসুন্ধরা গোল্ড রিফাইনারি কারখানা স্থাপন করেছে। এখানে গোল্ড বার তৈরি এবং রফতানি করা হবে। শুধু তাই নয়, এই বার থেকে গহনা তৈরি করেও রফতানি করা হবে। এর মাধ্যমে দেশের স্বর্ণ শিল্পে বিপ্লব ঘটবে। আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আগামীতে স্বর্ণ শিল্প হবে দেশের রফতানি বাণিজ্যের অন্যতম প্রধান খাত। এ শিল্পে নতুন নতুন কারখানা হবে, ব্যাপক কর্মসংস্থান হবে, বিকাশ ঘটবে স্বর্ণ শিল্পের।’

অবশ্য  ব্যাগেজ রুলসের পরিবর্তে বাণিজ্যিকভাবে স্বর্ণ আমদানিনীতি সহজ করলে সরকারের রাজস্ব বাড়বে বলে মনে করছেন জুয়েলারি খাত-সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, এনবিআরসহ সরকারের অন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ জুয়েলার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বাজুস) সঙ্গে মিলে একটা গাইডলাইন তৈরি করতে পারে। স্বর্ণ যদি রফতানির উদ্দেশ্যে আমদানি করা হয়, তাহলে ২০৩০ সালের মধ্যে স্বর্ণ খাতের মোট টার্নওভার দাঁড়াবে ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘কিউওয়াই রিসার্চ’ তাদের প্রতিবেদনে বলছে, ২০২০ সালে বাংলাদেশে ২৮৫ কোটি ৪০ লাখ মার্কিন ডলার মূল্যের স্বর্ণালঙ্কার, স্বর্ণের বার ও রুপার অলঙ্কার বিক্রি হয়েছে। ২০২২ সাল থেকে এসব পণ্যের বাজার প্রতিবছর গড়ে ১২ দশমিক ১ শতাংশ হারে বাড়ছে। এই হিসাবে ২০৩০ সালে বাংলাদেশে স্বর্ণালঙ্কার, স্বর্ণের বার ও রুপা মিলিয়ে মোট বিক্রির পরিমাণ দাঁড়াবে ২ হাজার ১০৯ কোটি ৬০ কোটি মার্কিন ডলারে।


সর্বশেষ - রাজনীতি