বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তী নায়ক রাজ রাজ্জাক সন্ধ্যা ৬ টা ১৩ মিনিটে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
জানা গেছে, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া অভিনেতা রাজ্জাক কয়েক বছর ধরে নিউমোনিয়াসহ বার্ধক্যজনিত বেশ কিছু জটিলতায় ভুগছিলেন তিনি। হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, বাসায় কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পর ৫টা ২০ মিনিটে হাসপাতালে আনা হয় নায়ক রাজ রাজ্জাককে। কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। কর্তব্যরত চিকিৎসকদের প্রায় ১ ঘন্টার চেষ্টায়ও ফেরানো সম্ভব হয়নি এ কিংবদন্তীকে। শেষ পর্যন্ত সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটের দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
শক্তিমান এ অভিনেতার মৃত্যুতে সারাদেশে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। রাজ্জাকের মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।
বাংলা চলচ্চিত্রকে সমৃদ্ধ করতে যাদের অবদান অপরিসীম তাদের অগ্রভাগে রয়েছেন বাংলা চলচ্চিত্রের উজ্জলতম নক্ষত্র নায়ক রাজ রাজ্জাক। পরিচালনা করেছিলেন ১৬ টি চলচ্চিত্র। জীবন থেকে নেয়া, আবির্ভাব, নীল আকাশের নিচে; কালজয়ী এমন অসংখ্য চলচ্চিত্রসহ জীবনের পুরোটা সময়ে অসাধারণ অভিনয় নৈপুণ্যে স্থান নিয়েছেন বাংলার সকল মানুষের হৃদয়ে।
নায়ক রাজ রাজ্জাক ১৯৪২ সালের ২৩ জানুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার টালিগঞ্জে। সপ্তম শ্রেণিতে পড়ার সময় মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের জন্য তার শিক্ষক রবীন্দ্রনাথ চক্রবর্তী তাকে বেছে নেন নায়ক অর্থাৎ কেন্দ্রীয় চরিত্রে। কলকাতায় দাঙ্গার পর ১৯৬৪ সালে শরণার্থী হিসেবে বাংলাদেশে আসেন রাজ্জাক। তৎকালীন পাকিস্তান টেলিভিশনে ‘ঘরোয়া’ নামের ধারাবাহিক নাটকের মাধ্যমে অভিনয়ের শুরু। নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে তিনি আব্দুল জব্বার খানের সাথে সহকারী পরিচালক হিসেবে কাজ করার সুযোগ পান। সালাউদ্দিন প্রোডাকশন্সের তেরো নাম্বার ফেকু ওস্তাগড় লেন চলচ্চিত্রে ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করে সবার কাছে নিজ মেধার পরিচয় দেন রাজ্জাক। তারপর আর ফিরে তাকাতে হয়নি।
পরবর্তীতে কার বউ, ডাক বাবু, আখেরী স্টেশন-সহ আরও বেশ ‘টি ছবিতে ছোট ছোট চরিত্রে অভিনয়ও করে ফেলেন। পরে বেহুলা চলচ্চিত্রে তিনি নায়ক হিসেবে ঢালিউডে উপস্থিত হন সদর্পে। তিনি প্রায় ৩০০টি বাংলা ও উর্দু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। পরিচালনা করেছেন প্রায় ১৬টি চলচ্চিত্র।
এছাড়া রাজ্জাকের অভিনীত পরিচালিত ছবি ১৮ টি। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি ছবি হচ্ছেঃ- অনন্ত প্রেম, মৌ চোর, বদনাম, আমি বাঁচতে চাই, কোটি টাকার ফকির, মন দিয়েছি তোমাকে এবং উত্তর ফাল্গুনী। তার নির্মিত সর্বশেষ ছবি হচ্ছে আয়না কাহিনী।
১৯৯০ সাল পর্যন্ত বেশ দাপটের সাথেই ঢালিউডে সেরা নায়ক হয়ে অভিনয় করেন রাজ্জাক। ‘কি যে করি’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১১ সালের জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনি আজীবন সম্মাননা অর্জন করেছেন। এই পর্যন্ত তিনি ছয়বার জাতীয় সম্মাননা লাভ করেন। এছাড়াও, রাজ্জাক জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের শুভেচ্ছা দূত হিসেবে কাজ করছেন।