1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

রাজনৈতিক কর্মসূচি ও জনভোগান্তি

আলী হাবিব : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ২৪ জুলাই, ২০২৩

গত দুটি সপ্তাহ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন বিশেষ আলোচিত ছিল নানা কারণে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি প্রতিনিধিদল অতি সম্প্রতি ঢাকা সফর করে গেল। প্রায় একই সময়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা সফরে আসে। গত সপ্তাহের শেষ দিনে যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুক বৈঠক করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে।

উভয় বৈঠকের আলোচনার বিষয় ছিল আগামী নির্বাচন।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকারবিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি আজরা জেয়ার নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের একটি মার্কিন প্রতিনিধিদলে ছিলেন দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। গত বছর মার্চে এবং চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়েও তিনি একবার ঢাকা সফর করে গেছেন। জানুয়ারিতে ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে তিনি পরিষ্কার বাংলায় বলেছিলেন, ‘আমি এখানে (বাংলাদেশে) এসেছি দুই দেশের বন্ধুত্বকে শক্তিশালী করতে, যখন বর্তমান বিশ্ব শান্তি ও ন্যায়বিচারের জন্য সংগ্রাম করে চলেছে।

জানুয়ারিতে ডোনাল্ড লু ঢাকা সফর করে যাওয়ার কিছুদিন পর বাংলাদেশ বিষয়ে মার্কিন ভিসানীতি ঘোষিত হয়। এই ঘটনাটি বাংলাদেশের সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মনে এক ধরনের আশার সঞ্চার করে। আজরা জেয়া যে দলের নেতৃত্বে ছিলেন, সেই দলেও এবার ডোনাল্ড লু ছিলেন। স্বাভাবিকভাবেই বিরোধী রাজনৈতিক পক্ষ ধরে নিয়েছিল ভিসানীতির চেয়েও বড় কোনো ঘোষণা আসতে যাচ্ছে।

কিন্তু দেখা গেল, তেমন কিছুই হলো না। সফর শেষে ফিরে যাওয়ার আগে আজরা জেয়া যা বলে গেলেন, তাতে এটা স্পষ্ট হয়ে গেছে যে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার সমর্থন করছে না। তিনি যাওয়ার আগে বলে যান, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। যুক্তরাষ্ট্রের মূল আগ্রহ অবাধ এবং সুষ্ঠু নির্বাচন, সেটা দলীয় বা তত্ত্বাবধায়ক, যার অধীনেই হোক। তারা চাইছে নির্বাচন অবাধ এবং সুষ্ঠু হোক।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের ধারণা, ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার আগে সংবাদ সম্মেলনে আজরা জেয়া যে বিষয়টি পরিষ্কার করে দিয়ে গেছেন সেটি হচ্ছে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো আপত্তি নেই। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করে, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ধারণার প্রতি সরাসরি সমর্থন দেওয়া নৈতিক বা রাজনৈতিক, কোনোভাবেই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ বিশ্বের কোনো প্রতিষ্ঠিত গণতান্ত্রিক দেশেই এ ব্যবস্থা চালু নেই, কখনো ছিল না।কয়েক বছর ধরেই বলা হচ্ছে, বাংলাদেশ এশিয়ার অর্থনীতির ইমার্জিং টাইগার বা উদীয়মান বাঘ। ২০১৭ সালে যুক্তরাজ্যভিত্তিক খ্যাতনামা গবেষণা সংস্থা ক্যাপিটাল ইকোনমিকস ‘বাংলাদেশ : দ্য নেক্সট এশিয়ান টাইগার’ শিরোনামের প্রতিবেদন করে। সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে একই সময়ে প্রভাবশালী সংবাদমাধ্যম বিজনেস ইনসাইডার তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, “মানুষ যখন ‘এশিয়ান টাইগার’ নিয়ে আলোচনা করে, তখন তারা স্বাভাবিকভাবেই হংকং, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়া ও তাইওয়ানকেই বোঝায়। গত শতকের ষাটের দশক থেকে নব্বইয়ের দশক পর্যন্ত এই চারটি দেশের দ্রুত অর্থনৈতিক বিকাশ ঘটে। কিন্তু এখন আরো একটি দেশ রয়েছে, যার নাম মনে আসা উচিত : বাংলাদেশ।” এরপর দুই বছরের কভিড পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতি অনেকটাই অস্থিরতার মধ্যে পড়ে। তার ঢেউ এসে লাগে বাংলাদেশেও। কভিড থেকে উত্তরণের পথে পা রাখতেই রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। বাংলাদেশ এখন সব অর্থেই গ্লোবাল ভিলেজের অংশ। পরিবর্তিত বৈশ্বিক পরিস্থিতির প্রভাব বাংলাদেশেও পড়বে, এটাই স্বাভাবিক।

এরই মধ্যে এসে পড়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে, ততই উত্তপ্ত হচ্ছে রাজনীতির মাঠ। দেশের সাধারণ মানুষ, নাগরিক সমাজের পাশাপাশি এখন আন্তর্জাতিক পরিসরেও বাংলাদেশের নির্বাচন বেশ সাড়া ফেলেছে। গত দেড় দশকে বাংলাদেশে যখনই কোনো সাধারণ নির্বাচন এসেছে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তখনই দৃষ্টি রেখেছে বাংলাদেশের দিকে। এর পেছনের একমাত্র কারণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ‘মোড়লগিরি’—এমনটি মনে করার কোনো কারণ নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিনিয়োগ রয়েছে বাংলাদেশে। তারা সবাই চায় তাদের বিনিয়োগের নিরাপত্তা। বিশেষ করে ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে ও পরে বাংলাদেশে যে পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল, তাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আশঙ্কা অমূলক নয়।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের বাংলাদেশে অবস্থানকালে গত ১২ জুলাই ঢাকায় দুই দল শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করে। এই সমাবেশের পুরো কৃতিত্ব যায় সরকারের পক্ষে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, দুটি সমাবেশকে মার্কিন প্রতিনিধিদলের সামনে সরকার ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করতে পেরেছে। দেখিয়েছে যে দেশে কার্যকর গণতন্ত্র এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে বলেই তাদের জনসভাস্থলের সামান্য দূরে আরেকটি জনসভা থেকে তাদের সরকারের পদত্যাগের দাবিতে নির্বিঘ্নে সমাবেশ করা গেছে। আজরা জেয়ার কথায়ও সেটি প্রতিধ্বনিত হয়েছে। তিনি বলেছেন, ‘বিশাল জনসভা দেখেছি। স্বস্তির বিষয়টি হচ্ছে, কোনো রকম সহিংসতা ছাড়াই সেটা হয়েছে। আমরা যেমনটা দেখতে চাই, এটা তার সূচনা।’

উভয় দলের ১২ তারিখের সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হলেও ১৮ ও ১৯ জুলাইয়ের পদযাত্রা ও শান্তি সমাবেশ শান্তিপূর্ণ হয়নি। এসব সমাবেশ থেকে আওয়ামী লীগ জানিয়ে দিয়েছে, ‘সংবিধান থেকে একচুলও নড়বে না সরকার। সংসদ বিলুপ্তি হবে না এবং শেখ হাসিনা পদত্যাগ করবেন না। প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করবে।’ অন্যদিকে বিএনপির অবস্থানও পরিষ্কার। তারা মনে করছে, ‘এক দফার আন্দোলনের শুরুটা প্রত্যাশার চেয়ে ভালো হয়েছে। নেতাকর্মীরা সাহস নিয়ে মাঠে নেমেছেন।’ আর তাই ধারাবাহিকভাবে আরো শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলন তুঙ্গে নিতে চায় তারা।

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের অনেকে মনে করেন, রাষ্ট্রের প্রধান বিরোধী দলগুলোর কাছে গ্রহণযোগ্য হলেই সেই নির্বাচন আন্তর্জাতিক মহলের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। নাগরিক সমাজের একটি অংশ থেকে আগে বলা হতো অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কথা। সেটা কী করে সম্ভব হবে? তাঁরা মনে করেন, বিরোধী রাজনৈতিক দল (বিশেষ করে বিএনপি) নির্বাচনে অংশ নিলেই সেটি অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য। পাঁচ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর দেখা গেল, বিএনপি অংশ না নিলেও নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য হচ্ছে। তখন নাগরিক সমাজের একটি অংশ থেকে বলা হলো, নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হতে হবে। এখন সেই অবস্থান থেকেও সরে এসে বলা হচ্ছে, ‘নির্বাচন হলো বিকল্প থেকে বেছে নেওয়ার ক্ষমতা, অধিকার ও সুযোগ। যেখানে বিকল্প থাকে না, সেখানে নির্বাচনও হয় না। কয়েকজন প্রার্থী থাকা মানেই বিকল্প নয়, বিকল্প হতে হবে যথার্থ।’ প্রশ্ন হচ্ছে, এই যথার্থ বিকল্প খুঁজে বের করার দায়ও কি আওয়ামী লীগের? ‘যথার্থ বিকল্পরা’ নির্বাচনে না এলে কি নির্বাচন হবে না?

এসব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার পাশাপাশি আরো একটি বড় প্রশ্ন হচ্ছে, পরিস্থিতি-পরিবেশ কি ভবিষ্যতে শান্তিপূর্ণ থাকবে? কারণ শোভাযাত্রা-পদযাত্রা থেকে রাজপথে সৃষ্ট উত্তাপ বেশ কয়েক স্থানে সংঘাতে রূপ নিয়েছে। হতাহতের ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক দলগুলো স্বস্তি পেলেও এই দুদিনের কর্মসূচি সাধারণ মানুষের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হয়েছে, সেই প্রশ্নটা কিন্তু থেকে যাচ্ছে। কারণ দুদিনই জনভোগান্তি ছিল চরমে। সড়কজুড়ে রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে বিপদে পড়ে ঢাকার কর্মজীবী মানুষ। সড়কে গণপরিবহনের ভয়াবহ সংকট ছিল। সাধারণ মানুষকে হেঁটে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে হয়েছে। জরুরি পরিবহন বন্ধ ছিল। অনেক কষ্ট করে রোগীদের হাসপাতালে নিতে হয়েছে।

গত ১৭ জুলাই অনুষ্ঠিত হয়েছে ঢাকা-১৭ আসনের উপনির্বাচন। এই উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী আশরাফুল হোসেন আলম ভোটকেন্দ্রের বাইরে মারধরের শিকার হয়েছেন।

অনেকের মতে, গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ ও সরকার একাকার হয়ে গেছে। দলের কর্মীরা ভিন্নমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল নয়। বিপরীতে প্রশ্ন আসতে পারে, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল কারা। কারা ভিন্নমতকে শ্রদ্ধার সঙ্গে দেখে? বিরোধী রাজনীতি ধ্বংস করার জন্য গ্রেনেড হামলার মতো ঘটনাও তো এ দেশে ঘটেছে।

২৭ জুলাই রাজধানীতে মহাসমাবেশ ডেকেছে বিএনপি। এই কর্মসূচি সমাবেশেই শেষ হবে তো? একই দিন পাল্টা কর্মসূচি হিসেবে ‘তারুণ্যের জয়যাত্রা’ ব্যানারে সমাবেশ করবে যুবলীগ। স্বাভাবিকভাবেই এই দিনটি ঘিরে জনমনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহলের একটি অংশের ধারণা, সমাবেশের পাল্টা সমাবেশ, মিছিলের বিপরীতে মিছিল—আজকের দিনে কোনো গ্রহণযোগ্য রাজনৈতিক বিকল্প হতে পারে না। জনভোগান্তির কারণ হয় এমন কর্মসূচি আজকের দিনে কতটা গ্রহণযোগ্য?

সাধারণ মানুষ কোনো ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড দেখতে চায় না। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা থেকে হতাহতের ঘটনা ঘটুক—এটা কোনো অবস্থায়ই কাঙ্ক্ষিত নয়। কাজেই সব দলকেই দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হবে। নিশ্চিত করতে হবে সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ।

লেখক: আলী হাবিব – সাংবাদিক, ছড়াকার।

সূত্র: কালের কন্ঠ


সর্বশেষ - রাজনীতি