1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

মীর কাসেমের লবিস্ট মামলার তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে চাঞ্চল্যকর তথ্য!

বিশেষ প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০২২

জামায়েতে ইসলামীর যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে ২৫ মিলিয়ন ডলার (২১২ কোটি টাকা) চুক্তিতে লবিস্ট নিয়োগ করেছিলেন মীর কাশেম। কিন্তু সেই মামলা এখনও রয়েছে ডিপফ্রিজে। অথচ এ মামলার যথাযথ তদন্ত হলে বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকাণ্ড ও নেটওয়ার্ক সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জানা সম্ভব হতো।

জামায়াতের মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট নিয়োগের ঘটনায় প্রায় ১১ বছর আগে তদন্ত শুরু করে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ), দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। বাংলাদেশ ব্যাংকের চোখ ফাঁক দিয়ে বাংলাদেশে দায়িত্বরত একটি বিদেশী ব্যাংকের মাধ্যমে যুদ্ধাপরাধীর বিচার ঠেকাতে ২০১০ সালের ১০ মে ৬ মাসের জন্য আমেরিকান কনসালটেন্সি ফার্ম কেসিডি এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটের সঙ্গে চুক্তি করেন মীর কাসেম আলী। এ ছাড়াও জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী ও তার ভাই মীর মাসুম আলী ২০১১ সালে তিন লাখ ১০ হাজার ডলারের বিনিময়ে প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য কেসেডি এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটসকে নিয়োগ করেছিলেন। জামায়েতের বিদেশে লবিস্ট নিয়োগ করে অর্থ পাচারের ঘটনার তদন্তের প্রতিবেদন গত ১১ বছরে এখনও পর্যন্ত আলোর মুখ দেখল না। বিএনপি গত ৫ বছরে ৩৭ লাখ ডলার চুক্তিতে বিদেশী লবিস্ট নিয়োগের ঘটনা এখন তদন্তাধীন।

সূত্র জানায়, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার ঠেকাতে ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্রে লবিস্ট ফার্ম নিয়োগ করেন এ মামলায় অভিযুক্ত মীর কাসেম আলী। ওই ফার্মকে ২৫ মিলিয়ন ডলার (বাংলাদেশী মুদ্রায় ২১২ কোটি টাকা) পরিশোধ করা হয়। মানবতাবিরোধী অপরাধে মীর কাসেমের ফাঁসি কার্যকর করা হয়ে গেছে। কিন্তু এ অর্থের উৎস এখনও জানতে পারেনি বাংলাদেশ ব্যাংক। কে বা কারা অর্থ পরিশোধ করেছে, বাংলাদেশ থেকে কোন প্রক্রিয়ায় পাচার হয়েছে- এসব বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ ব্যাংক শুধু এটুকু জানতে পেরেছে, ২৫ মিলিয়ন ডলার নগদে পরিশোধ করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধী মীর কাসেমের নামে এ অর্থ পরিশোধের ব্যাপারে তদন্তের সার্বিক অগ্রগতি নিয়ে একাধিক বৈঠকও হয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংকে। বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) কর্মকর্তারা বৈঠকে অংশ নেন।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, যুদ্ধাপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী লবিস্ট নিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি কনসালটেন্সি ফার্মের সঙ্গে ২৫ মিলিয়ন ডলারের চুক্তি করেন, যা পরে সিটি ব্যাংক এনএ-এর মাধ্যমে ইলেক্ট্রনিক্স ট্রান্সফার করে চুক্তির অর্থ কেসেডি এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটের হিসাব যার নম্বর সিএমজিআরপিআইএনসি ৩০৭১৭২৪৮ (সুইফ্ট কোড : সিটি ইউএস ৩৩) পাঠানো হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানের অন্যতম উদ্যোক্তা হচ্ছেন মার্কিন সাবেক কংগ্রেসম্যান মার্টি রুশো। তিনি কেসেডি এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।

অনুসন্ধানে পাওয়া নথিতে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা হচ্ছে ৭০০/১৩ স্ট্রিট, ১১ ডব্লিউ, সুইট-৪০০ ওয়াশিংটন ডিসি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রও বাংলাদেশের সরকারের ওপর চাপ প্রয়োগ ও লবিং করাসহ মীর কাসেমের আলীর উদ্দেশ্য সফলের জন্য এই চুক্তি হচ্ছে বলে চুক্তিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। ২০১০ সালের ১০ মে স্বাক্ষরিত এই চুক্তিতে মীর কাসেম আলী এবং লবিস্ট ফার্মের পক্ষে জেনারেল কাউন্সিল জেক্স ক্যামেরুজ স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানিটি ২০১০ সালের ৫ অক্টোবর থেকে গত ৫ এপ্রিল ২০১১ সাল পর্যন্ত এই ৬ মাস মীর কাসেম আলীর উদ্দেশ্য সফল করতে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের উচ্চ পর্যায়ে লবিং করবে। প্রয়োজনে ৬ মাসের জন্য চুক্তির মেয়াদ আরও ২৫ মিলিয়ন ডলার দিয়ে বাড়ানো যাবে বলে চুক্তিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়ও চুক্তির বাইরেও মামলা খরচসহ অন্যান্য খরচের ব্যয় বহন করতে আরও অর্থ দেয়া হবে উপদেশক এই প্রতিষ্ঠানকে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দলের বাংলাদেশে আসার কথা ছিল। তবে প্রতিষ্ঠানটি তখন জানিয়েছিল ২০১১ সালের ১৭ অক্টোবরের আগে এদেশে আসতে পারবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকে না জানিয়ে কনসালটেন্সি বাবদ ২৫ মিলিয়ন পাঠানো হয়েছে সেটা মানি লন্ডারিং অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা। বাংলাদেশ ব্যাংকে না জানিয়ে অর্থ পাঠানো হয়েছে কিনা তা তদন্ত শুরু হয়।

দুদক সূত্রে জানা গেছে, একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী লবিস্ট নিয়োগের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের একটি কনসালটেন্সি ফার্মের সঙ্গে ২৫ মিলিয়ন (২ কোটি ৫০ লাখ) ডলারের চুক্তি করেছেন। বাংলাদেশী মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ২১২ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের চোখ ফাঁকি দিয়ে একটি বিদেশী ব্যাংকের মাধ্যমে চুক্তির অর্থ পাঠিয়েছেন জামায়াত নেতা মীর কাসেম আলী। এটা বড় ধরনের অর্থ পাচার (মানি লন্ডারিং)। দুদকের উপ-পরিচালক নূর হোসেন খান মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগটি বর্তমানে অনুসন্ধান করেছেন। আইন মন্ত্রণালয় দুদককে চিঠি দিয়ে মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য অনুরোধ করে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিয়ে মীর কাসেম আলীকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। মানি লন্ডারিংয়ের বিষয়ে মীর কাসেম আলীর বিরুদ্ধে দুদকের হাতে যেসব তথ্য-উপাত্ত রয়েছে, তার ভিত্তিতেই কারাগারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করার সময়ে কারাগারে মীর কাসেম দুদকের কর্মকর্তার কাছে নিজেকে নির্দোষ দাবি করেন এবং লবিস্ট নিয়োগের জন্য অবৈধ পন্থায় অর্থ পাচার করেননি বলে জানান। তবে দুদকের কাছে লবিস্ট নিয়োগের ক্ষেত্রে যেসব কাগজপত্র রয়েছে, তার সঙ্গে মীর কাসেমের বক্তব্যের গড়মিল পাওয়া যায়। যুক্তরাষ্ট্রের কলাম্বিয়া অঙ্গরাজ্যের আইন অনুযায়ী ফার্মটির সঙ্গে চুক্তি সম্পন্ন হয়। চুক্তিনামায় ফার্মটির পক্ষে স্বাক্ষর করেন এ্যান্ডারজে ক্যামেরুজ এবং লবিস্ট নিয়োগকারীর পক্ষে মীর কাসেম আলী।

গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্রের আইনী সহায়তা প্রতিষ্ঠান কেসেডি এ্যান্ড এ্যাসোসিয়েটসকে ২৫ মিলিয়ন ডলারে নিয়োগের তথ্য পায় সরকার। এ বিষয়ে ২০১০ সালের ৬ অক্টোবর ওয়াশিংটনে দু’পক্ষের মধ্যে চুক্তি হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন মীর কাসেম আলী। আর কেসেডির পক্ষে সই করেন এ্যান্ড্রিও জে ক্যামিরস নামের একজন ব্যক্তি। ২০১২ সালের মাঝামাঝি চুক্তির বিষয়টি দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানতে পারে। বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে ২০২০ সালের ডিসেম্বরে এ বিষয়ে তথ্য চেয়ে বিএফআইইউতে চিঠি দেয় দুদক। যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পরিশোধের বিষয়টি বিএফআইইউ নিশ্চিত হয়েছে। লবিস্ট ফার্মকে ওই অর্থ নগদে পরিশোধ করা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ থেকে হুন্ডির মাধ্যমে এ অর্থ পাঠানো হয়েছিল, নাকি যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কেউ পরিশোধ করেছিল- তা নিশ্চিত হতে পারেনি।

বিএফআইইউর একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, মীর কাসেম আলীর অর্থ পরিশোধের বিষয়ে আরও তদন্ত অব্যাহত আছে। তদন্তে অগ্রগতি হলে তার তথ্য দুদকসহ অন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অবহিত করা হবে।
বিএনপি গত ৫ বছরে বিদেশী লবিস্ট ফার্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ব্লু স্টার স্ট্র্যাটেজি, একিন গ্যাম্প, টনি ক্যাডম্যান, র‌্যাসকি পার্টনারের সঙ্গে চুক্তি করে ৩৭ লাখ ডলার দেয়ার ঘটনা নিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। বিএনপির নয়া পল্টনের অফিসের নাম, ঠিকানা ব্যবহার করে বিদেশে এই বিপুল অঙ্কের টাকা পাঠানো হয়েছে, যা তদন্তের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক ও নির্বাচন কমিশনে অভিযোগ করা হয়েছে। তদন্ত সম্পন্ন হলে বিএনপি-জামায়াতের বিদেশে লবিস্ট নিয়োগের মাধ্যমে বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশ বিরোধী কর্মকা-ের ফিরিস্তি উঠে আসবে, যাতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা যাবে।


সর্বশেষ - রাজনীতি