1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটিয়ে প্রশংসায় হাবিপ্রবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩

উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফোটাতে সফল হলো হাবিপ্রবি
দিনাজপুরে হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (হাবিপ্রবি) জেনেটিক্স অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের গবেষণাগারে ইনকিউবেটরে উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানো হয়েছে।

দেড়মাস আগে ইনকিউবেটরে ১৯টি ডিম বসানো হয়েছিল। সেখান থেকে গত মঙ্গলবার (১১ জুলাই) মাত্র একটি ডিম থেকে বাচ্চা ফুটেছে। বাচ্চাটির ওজন ৯৪৮ গ্রাম।

বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও গবেষকের দাবি দেশে প্রথমবারের মত ইনকিউবেটরে উটপাখির ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে সফল হয়েছে হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয়। এ নিয়ে খুশি শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীসহ সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, আড়াই বছর ধরে উটপাখির বংশবৃদ্ধি, বাণিজ্যিকভাবে উটপাখির চাষ করে দেশে প্রোটিনের জোগান দেওয়া বিষয়ে গবেষণা করছেন হাবিপ্রবির জেনেটিক্স অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগ। তিন দফায় প্রায় অর্ধ শতাধিক ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর চেষ্টার দীর্ঘ অপেক্ষার পরে সফলতা পেয়ে চোখে-মুখে আনন্দের ছাপ বিশ্ববিদ্যালয়ের পিএইচডি গবেষক তৌহিদুল ইসলামের।

উটপাখির বৈজ্ঞানিক নাম Struthio Camelus। এর জন্মস্থান আফ্রিকা অঞ্চলে। পাখি জগতের সকল প্রজাতির মধ্যে উটপাখি বৃহত্তম। অনেক বছর আগে উত্তর আফ্রিকা, সাহারার দক্ষিণাঞ্চল, পূর্ব আফ্রিকা, দক্ষিণ আফ্রিকার উডল্যান্ড এবং এশিয়া মাইনর উটপাখির আবাসস্থল হলেও বর্তমানে দক্ষিণ-পশ্চিম আফ্রিকার মরুভূমি অঞ্চলে এর বসবাস। মরুভূমির উষ্ণ আবহাওয়ায় উটপাখির উৎপত্তি হওয়ায় প্রচণ্ড গরম সহ্য করার ক্ষমতা যেমন আছে তেমনি বৃষ্টি ও শীতপ্রধান এলাকাতেও উটপাখি সহজেই খাপ খাইয়ে চলতে পারে। উটপাখির একটি ডিমের ওজন ১-২ কেজি পর্যন্ত হয়। প্রাপ্তবয়স্ক উটপাখির ওজন ৮০-১৫০ কেজি এবং উচ্চতা ১ দশমিক ৮ থেকে ২ দশমিক ৮ মিটার। সাধারণত ঘাস, লতাপাতা, ফলমূল, শস্যদানা, ছোট ছোট পোকামাকড় এদের প্রধান খাদ্য। অন্যান্য প্রাণীর মাংসের তুলনায় এর চর্বি ও কোলেস্টেরল কম থাকে এবং সুস্বাদু হয়। সাধারণত আড়াই বছর বয়সে স্ত্রী পাখি ডিম দেওয়া শুরু করে। মার্চ-সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডিম দেওয়ার সময়কাল। মৌসুমে একেকটি উটপাখি ৬০-৮০টি পর্যন্ত ডিম দেয়। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে সময় লাগে ৪০-৪২দিন।

পিএইচডি গবেষক খন্দকার তৌহিদুল ইসলাম পোল্ট্রি বিজ্ঞান বিষয়ে স্নাতকোত্তর শেষ করেছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হতে। ২০২১ সালে ‘প্রোডাক্টিভ এন্ড রিপ্রোডাক্টিভ পাওয়ার সেন্স অব অস্ট্রিস ইন বাংলাদেশ’ বিষয়ে গবেষণায় আগ্রহী হন। তবে খন্দকার তৌহিদুলের গবেষণার দ্বার উন্মোচন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক্স অ্যান্ড অ্যানিমেল ব্রিডিং বিভাগের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল গাফফার মিঞা (বর্তমানে রাজশাহী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য)। ২০১৫ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে ২১টি উটপাখির বাচ্চা এনে প্রথমে বাসায় পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেটেরিনারি ভবন সংলগ্ন এক বিঘাজমিতে খামার স্থাপন করে গবেষণা শুরু করেন। সেই ১৮দিন বয়সী ২১টি বাচ্চা বড় হয়ে ডিম দিয়েছে। সর্বশেষ ডিম থেকে বাচ্চা ফুটাতে সফল হলো।

এ বিষয়ে অনুভূতি জানতে চাইলে মোবাইল ফোনে আব্দুল গাফফার মিঞা বলেন, মঙ্গলবার বিভাগের এক শিক্ষক ফোন করে জানান, ‘স্যার আপনি উটপাখির বাচ্চার বাবা হয়েছেন’। কথাটা শুনে চোখে পানি চলে আসছে। একজন গবেষকের জন্য এ যে কত বড় আনন্দের তা বলে বোঝানো যাবে না। সাফারি পার্কে উটপাখির দেওয়া ডিম থেকে প্রাকৃতিকভাবে বাচ্চা ফুটিয়েও কিন্তু বাঁচানো যায়নি। নরসিংদীতে একটি ‍ফার্মেও সফল হওয়া যায়নি। প্রথমবারের মত হাজী দানেশ বিশ্ববিদ্যালয় ইনকিউবেটরে বাচ্চা ফুটাতে সফল হয়েছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশে উটপাখির বংশ বিস্তারে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন হলো। একটি উটপাখির বাচ্চা আমদানিতে খরচ হতো ৪০-৫০ হাজার টাকা। আমরা এই সফলতা ধরে রাখতে পারলে ১০-১৫ হাজার টাকায় এক একটি বাচ্চা আগ্রহী খামারিদের দিতে পারব।

বাংলাদেশে প্রাকৃতিক আবহাওয়ায় উটপাখির টিকে থাকা ও প্রজনন বৃদ্ধি করার বিষয়ে আব্দুল গাফফারের গবেষণা আজও চলছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোলাহল পরিবেশে গবেষণা বাধাগ্রস্ত হওয়া ও শিক্ষার্থীদের গবেষণায় ব্যাঘাত ঘটা থেকে ২০২১ সালে খামারি ও ব্যবসায়ী সুলতান ইফতেখার ওয়ালীর সাথে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়। এরপর উটপাখিগুলো তার খামারে লালনপালন হতে থাকে। ওই খামারে উৎপাদিত ডিম থেকেই বাচ্চা ফুটানো হয়েছে।

খামারের স্বত্বাধিকারী সুলতান ইফতেখার ওয়ালী বলেন, উটপাখিসহ বিলুপ্তপ্রায় নানা পশুপাখি আমার খামারে রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী-গবেষক তাদের গবেষণা কাজে খামারে আসছেন। ভালোই লাগে আমার। খামারে এখন ১৪টি উটপাখি রয়েছে। পাখি ডিম পারলেই আমি গবেষণাগারে পাঠানোর ব্যবস্থা করি।

বিশ্ববিদ্যালয় ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্স অনুষদের ডিন উটপাখি গবেষণার সুপারভাইজার উম্মে সালমা বলেন, ‘উটপাখি হচ্ছে প্রোটিনের একটি অন্যতম সোর্স। দেশে প্রোটিনের জোগান দিতে প্রথমবারের মত উটপাখির বংশ বিস্তারে আমরা সফলতা পেয়েছি। এটি শুধু বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সারাদেশের গবেষণা খাতের সফলতা। এটি অব্যাহত থাকলে স্বল্প খরচে খামারিদের আমরা বাচ্চা সরবরাহ করতে পারব এবং বাণিজ্যিকভাবে লাভবান হব একইসাথে প্রোটিনের চাহিদার জোগান দেওয়া সম্ভব হবে।


সর্বশেষ - রাজনীতি

নির্বাচিত