1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

উন্নয়নের অনন্য প্রতীক পদ্মা সেতু

ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বুধবার, ২০ জুলাই, ২০২২

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক অনন্য বৈশ্বিক নেত্রী। গত সাড়ে তেরো বছর এবং ইতোপূর্বে পাঁচ বছর শাসনকালে তিনি সুস্পষ্টভাবে প্রমাণ করেছেন যে, মানবহিতৈষী নেতৃত্বগুণে তাঁর সমকক্ষ নেতা এ মুহূর্তে বিশ্বে নেই। তিনি তাঁর পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য উত্তরসূরি। তাঁর বিচক্ষণতা, ধীশক্তি ও সৃজনশীলতার কারণে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে।

দেশী-বিদেশী আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারীরা বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়াকে কখনও দেখতে পারে না। বরং তারা তাদের ব্যক্তিস্বার্থ উদ্ধারের জন্য জাতীয় উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়। এদের সঙ্গে চরম দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থপাচারকারী এবং দারিদ্র্যের সুযোগ নিয়ে যারা সাধারণ জনমানুষকে পিষে মারতে চান, তাদের কোন পার্থক্য নেই।

আসলে কেবল ড. ইউনূসই নয়, খুঁজলে এমন সুবিধাবাদী অর্থনীতিবিদ, শিক্ষক, প্রকৌশলী, চিকিৎসক, আমলাসহ অনেককেই খুঁজে পাওয়া যাবে। তবে ড. ইউনূস যেহেতু আন্তর্জাতিক পরিম-লে একটু বিশেষ সখ্য রেখে চলেন, সেহেতু তার পক্ষে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের ঋণদান বন্ধ করা বেশ সহজসাধ্য হয়েছে। উইকিলিকস থেকে তার পাঠানো ই-মেইলগুলো থেকে সেটি সহজেই প্রতিভাত হয়। আমরা যদিও বিশ্বায়নে বসবাস করি, কিন্তু উপনিবেশ নই। তারপরও ড. ইউনূস চাপ দেন বিশ্বব্যাংক থেকে।

আমাদের বিচক্ষণ প্রধানমন্ত্রী কোন চাপের কাছে নতি স্বীকার করেননি। যখন পদ্মা সেতু নিজস্ব অর্থায়নে করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, তখন তথাকথিত নাগরিকদের মধ্যে যারা নিজেদের আশরাফ মনে করেন, তারা সমালোচনা করেছিলেন। তখন আমি দৈনিক জনকণ্ঠ ও দৈনিক ইত্তেফাকে বিশ্বব্যাংকের ভিত্তিহীন অভিযোগের বিরুদ্ধে কেবল লিখিনি, বরং নিট ফরেন এক্সচেঞ্জের একটি অংশ টোটাল ডমেস্টিক ক্রেডিটে আনয়ন করে তার মাধ্যমে অর্থায়ন করার বিষয়টিও তুলে ধরেছিলাম।

যে অর্থ ছাড় দেয়া হয়নি সেটি কিভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত হলো, সেটি কিন্তু অন্ধ ছাড়া সবার কাছেই দিবালোকের মতো সুস্পষ্ট। যারা বিভিন্ন সময়ে বিশ্বব্যাংক থেকে অর্থায়ন, ট্রেনিং, কনসালটেন্সি অথবা সুবিধা ভোগ করতে চায়, তারা সেদিন বিরোধে লিপ্ত হয়েছিল। এ যেন শুধু একটি সেতু নয়, বরং দেশের অবকাঠামোগত সংস্কার করতে গিয়ে সরকারপ্রধানকে ঘরে-বাইরে মোকাবেলা করতে হয়েছে শত্রুদের। এমনকি বিএনপি নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াও এই সেতু নির্মাণের বিরোধিতা করেছেন। এটি থেকে সহজেই বোঝা যায়, বিএনপি নেত্রী সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া দেশের উন্নয়নকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চান। এতে তার হীন মন-মানসিকতার পরিচয় মেলে এবং দেশের সাধারণ জনমানুষের প্রতি বৈরী মনোভাবের বহির্প্রকাশ ঘটেছে।

যাদের বিরুদ্ধে কল্পিত অভিযোগ তথ্য-উপাত্তবিহীনভাবে বিশ্বব্যাংক প্রতিস্থাপন করেছিল, তাদের কাছে বিশ্বব্যাংকের ক্ষমা চাওয়া উচিত এখন। এমনকি কানাডার আদালতেও এ মিথ্যা অভিযোগের মামলা খারিজ হয়ে গিয়েছিল। অথচ তাদের মিথ্যার কারণে তৎকালীন যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের মঙ্গল সাধনের জন্য সর্বোচ্চ প্রয়াস নিয়েছেন। কোভিডকালীন এবং কোভিড উত্তর তার অনন্যসাধারণ ভূমিকায় সাধারণ মানুষ সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্থবিরতা দ্রুত কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে। কোভিড নিয়েই বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে বসবাস করতে হবে। এ জন্যই সর্বোচ্চ সতর্কতার সঙ্গে আমাদের চলাফেরা করা দরকার। সরকার কোভিড ম্যানেজমেন্টে সতর্কতা ও পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়েছে অবশ্যই।

তবে যারা তার প্রকৃত অনুসারী তাদের সত্যিকার অর্থে মেধা-মনন ও বিদ্যা জগতে এবং অন্তর্লীন সত্তায় বঙ্গবন্ধুর আদর্শ এবং প্রধানমন্ত্রীর বিচক্ষণতাকে ধারণ করতে হবে। শেখ হাসিনা একজন গণতান্ত্রিক নেত্রী, যিনি দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছেন। তিনি ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধ, মানবতাবোধ এবং ন্যায়বিচারের একজন দক্ষ কা-ারি। তবে তার চিন্তা-ভাবনা এবং চেতনাকে কাজে লাগাতে আরও অধিকসংখ্যক দক্ষ লোক যাতে একযোগে সততার সঙ্গে কাজ করে, সে জন্য ব্যাপক প্রয়াস নিতে হবে।

বাংলার জনগণের কাছে তার রয়েছে আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা। জনগণ চায় তিনি আবারও প্রধানমন্ত্রী হোন। যখন নেত্রী বলেন, ‘আমার চাওয়া-পাওয়ার কিছু নেই’, তখন জনগণ অনুভব করেন কত গভীরভাবে জনমানুষকে তিনি ভালবেসে থাকেন। বিশ্বের বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যায় যে, তিনি বিশ্বের অন্যতম শ্রেষ্ঠ নারী নেত্রী। তাঁর আমলে নারী শিক্ষা ও উন্নয়নের ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। পাশাপাশি উদ্যোক্তা ও কর্মবাজারে নারীদের প্রবেশের হার অধিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

পিতা-মাতাসহ আত্মীয়স্বজনদের মর্মান্তিক মৃত্যুর কারণে তাঁকে ও তাঁর ছোট বোন শেখ রেহানাকে নির্বাসিত জীবন বেছে নিতে হয়েছিল। ১৯৮১ সালে যখন ভারতে নির্বাসিত ছিলেন তখন তিনি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতি হন। ১৯৭৫ সালের যে ট্র্যাজিক ঘটনা মোশতাক-জিয়া-চাষী গং ঘটায়, তা বাঙালী জীবনে এক অসহায়ত্বের নিদারুণ ব্যথা-বেদনা। আমার পিতা প্রয়াত সাহিত্য সমালোচক-গবেষক-শিক্ষাবিদ এবং অনুবাদক প্রফেসর মোবাশ্বের আলী ১৫ আগস্ট ১৯৭৫-এর ঘটনার পর বঙ্গবন্ধু ও তাঁর পরিবারের জন্য বাগিচাগাঁওয়ের বাসায় মিলাদের আয়োজন করলে নানামুখী সমস্যার সম্মুখীন হন। তবে শিক্ষক হওয়া এবং তদন্তকারী কর্মকর্তার ছেলেমেয়েরা কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্র-ছাত্রী বিধায় সে যাত্রায় বেঁচে যান তিনি।

সামরিক একনায়কতন্ত্রের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার বীরোচিত লড়াই দেশে-বিদেশে প্রশংসিত হয়েছে। তিনি অসীম সাহসিকতার সঙ্গে ১৯৮১ সালের ১৭ মে নির্বাসন থেকে দেশে ফিরে এসে সাহসিকতা ও বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সব প্রতিকূল পরিবেশের বিরুদ্ধে লড়াই করে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা বিচক্ষণতার সঙ্গে ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত প্রথম মেয়াদে যথেষ্ট পারঙ্গমতার পরিচয় দিয়ে জনগণের মন জয় করেন। কুচক্রীমহলের ষড়যন্ত্রের কারণে ২০০১ সালে নির্বাচনে পরাস্ত হন তিনি। যখন জনগণের অধিকার হরণ করে নেয়া হয়েছিল, তখন তিনি অবিরত সামনে থেকেছেন আন্দোলন-সংগ্রামে। নানাভাবে তাঁকে সত্য বলার জন্য, ন্যায়ের পক্ষে থাকার জন্য, জনমানুষের মঙ্গল যাচনার জন্য বারবার মৃত্যুর মুখোমুখি হতে হয়েছে। এমনকি ২১ আগস্ট ২০০৪ সালের গ্রেনেড হামলা করে বাঙালীর শেষ ভরসার স্থলকে চিরতরে ধ্বংস করে দেয়ার অপপ্রয়াসে কুখ্যাত তারেক রহমানসহ দুষ্কৃতকারী, হীনচক্রান্তকারীরা চরম আঘাত হেনেছিল। যেহেতু তিনি সর্বদাই ন্যায়ের পথে ছিলেন, সেহেতু আল্লাহ তাঁকে মানুষের খেদমত করতে বাঁচিয়ে রেখেছিলেন। তিনি থেমে থাকেননি। এমনকি সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারও তাকে দাবিয়ে রাখতে পারেনি।

১১ ডিসেম্বর, ২০০৮ সালে তিনি ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। ২০০৯ থেকে অদ্যাবধি দেশের মানুষের হিতসাধনে ব্যস্ত আছেন। পদ্মা সেতু তাঁর অনেক প্রয়োজনীয় ও কল্যাণমুখী কর্মকা-ের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ। এ জন্য অবশ্য মিথ্যা কলঙ্কের তিলক তাঁর ললাটে পরিয়ে দিতে ব্যর্থ অপপ্রয়াস খালেদা জিয়া, ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বিশ্বব্যাংক এবং এদেশের একশ্রেণীর তাঁবেদার বুদ্ধিজীবী করেছিল। তার জন্য সৈয়দ আবুল হোসেনের মতো ব্যক্তিকে বলী হতে হয়েছিল। জেলে যেতে হয়েছিল যোগাযোগ সচিবকে। এমনকি অর্থ উপদেষ্টা মশিউর রহমানকেও বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছিল।

দেশের দক্ষিণাঞ্চল বা পদ্মা নদীর তীরবর্তী মানুষ সব সময় অবহেলিত ছিলেন। আঞ্চলিক বৈষম্য পদ্মা সেতু নির্মাণের ফলে দূরীভূত হয়েছে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের পাশাপাশি ঢাকার সঙ্গে যে যোগাযোগ ব্যবস্থা সরকার গ্রহণ করেছে, সেখানে ভ্রমণ ও বিনোদন এলাকা, চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং এয়ারপোর্টও গড়ে তোলা দরকার। অর্থনীতির উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী ভারসাম্যপূর্ণ নীতি গ্রহণ করেছেন। বর্তমানে পদ্মা সড়কপথ চালুর পর রেলসংযোগ চালু হলে সেটি আরও ফলপ্রসূ হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে পদ্মা সেতুর এই যে অবদান তা যেমন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, তেমনি গ্রামকে স্মার্ট শহর বানানোর অঙ্গীকার পূরণ করবে। বিদেশ থেকে পর্যটকরাও যাতে আসতে পারেন, সেজন্য বেসরকারী উদ্যোক্তাদেরও কাজ করতে হবে। পদ্মা সেতু সংশ্লিষ্ট জেলাসমূহে একের পর এক কাজ করে যেতে হবে।

কুমিল্লায় একটি এয়ারপোর্ট আবার চালু করা দরকার, যেটি খুনী জিয়ার আমলে বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এয়ারপোর্ট চালু হলে কুমিল্লার ওপর চাপ কম পড়বে। আরেকটি অনুরোধ, কুমিল্লাকে বিভাগে রূপান্তরিত করা হোক। অন্যদিকে যেহেতু আজ আমরা তাঁর যোগ্য নেতৃত্বে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে স্নাতক ২০২৬ সাল নাগাদ হতে যাচ্ছি, সেহেতু জিডিপির দশ শতাংশ সরাসরি কর্মসংস্থানের জন্য ব্যয় করা হোক।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দূরদর্শীসম্পন্ন গণতান্ত্রিকমনা একজন ব্যক্তি, যিনি মানুষের কল্যাণকে সব সময় হৃদয়ে-চিন্তা-চেতনায় ধারণ করেন। দেশের উন্নয়ন-অগ্রগতিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে স্থান দেন। অসীম সাহসী একজন বৈশ্বিক নেত্রী তিনি।

 

লেখক : ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী – শিক্ষাবিদ ও অর্থনীতিবিদ।


সর্বশেষ - রাজনীতি