বিশেষ প্রতিবেদন | ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম: ভোর থেকে রাত অব্দি জনগণের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করা কোনো রাজনীতিকের প্রসঙ্গ এলে নিঃসন্দেহে বঙ্গবন্ধুর নামই আসবে। আর এর ধারাবাহিকতা রক্ষা করে যিনি সারা বিশ্বে প্রশংসিত হয়ে আসছেন তিনি আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মার্চ থেকে শুরু হওয়া করোনাভাইরাসজনিত দুর্যোগে শেখ হাসিনার নির্দেশে সরকারের পাশাপাশি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগও সারা দেশে ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা চালিয়ে আসছে। এই ত্রাণ কার্যক্রম চালাতে গিয়ে দলটির একাধিক নেতা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মারা গেছেন দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যসহ বেশ কয়েকজন নেতা। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা ঘরে বসে না থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে অভুক্ত মানুষের কাছে খাদ্য পৌঁছে দিয়ে যাচ্ছেন। বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন বিভিন্ন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও চিকিৎসাসামগ্রী।
গত ১৫ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক ভিডিও কনফারেন্সে সারা দেশে ওয়ার্ড পর্যায় পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী এবং ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীদের নিয়ে দ্রুত রিলিফ কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে এই রিলিফ কমিটিকে অসহায় দরিদ্রদের মাঝে ত্রাণ বিতরণে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা ও সমন্বয় করার নির্দেশ দেন তিনি। গণভবন থেকে ওই ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ধানমণ্ডির দলীয় কার্যালয়ে উপস্থিত নেতাদের এ নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ সময় শেখ হাসিনা দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতাদের বিষয়টি জেলা নেতাদের জানিয়ে দেওয়ার জন্যও বলেন। এর পর সারা দেশে কমিটি গঠন করে আওয়ামী লীগ। শুরু হয় ব্যাপক ভিত্তিতে ত্রাণ কার্যক্রম। বিষয়টি গণভবন থেকে সরাসরি মনিটর করেন প্রধানমন্ত্রী।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে যাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে গেছে, সেসব অভাবী, দরিদ্র, অসহায় মানুষের তালিকা তৈরি করে স্থানীয় প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য নির্দেশ দেন দলীয় নেতাদের। তিনি বলেন, প্রশাসন এই তালিকা যাচাই-বাছাই করবে। তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে দল-মত-নির্বিশেষে যারা প্রকৃত অর্থে ত্রাণ পাওয়ার যোগ্য, তারা যেন তালিকায় থাকে সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য বলেন তিনি। কোনো অবস্থাতেই তালিকাতে যেন কোনো দলীয়করণ না হয়, সেদিকে লক্ষ রাখার জন্য নেতাকর্মীদের সতর্কও করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। তিনি দ্রুত ওই তালিকা করার নির্দেশ দিয়ে বলেন, যত তাড়াতাড়ি তালিকা করা হবে, তত তাড়াতাড়ি গরিব মানুষকে ত্রাণ দেওয়া সম্ভব হবে। আমাদের ত্রাণ প্রস্তুত আছে। যত দরকার দেওয়া হবে। এই পরিস্থিতি যত দিন চলবে, যত দিন প্রয়োজন হবে, রিলিফ দেওয়া হবে। সে অনুযায়ী সারা দেশে আওয়ামী লীগের ত্রাণ কার্যক্রম এখনো চলছে।
আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে দলের নেতাকর্মীরা এই দুর্যোগে মানুষের পাশে রয়েছেন। জননেত্রী ত্রাণ কার্যক্রম নিজে মনিটর করছেন।
দলীয় সংসদ সদস্যসহ বিভিন্ন পর্যায়ের জনপ্রতিনিধিরা দলের পক্ষে সারা দেশে এক কোটি ২৫ লাখ আট হাজার ৮১ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা করেছে। পাশাপাশি একই সময় ১০ কোটি ৫২ লাখ ১৮ হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করা হয়। এ ছাড়া পিপিই, চশমা, মাস্ক, সাবান, হ্যান্ড গ্লাভস, ফিনাইল, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, ব্লিচিং পাউডার, স্প্রে মেশিনসহ বিভিন্ন চিকিৎসাসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া ইফতারি-সাহরি ও বিনা মূল্যে সবজি বিতরণ এবং টেলিমেডিসিন, ফ্রি অ্যাম্বুল্যান্স সার্ভিস, লাশ দাফনসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়।
দুর্যোগকালীন আওয়ামী লীগ এবং সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন রংপুর বিভাগে ১১ লাখ ৩৮ হাজার ৬৭৮ পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। এ সময় রংপুর বিভাগে দুস্থ মানুষের মাঝে ৫৭ লাখ ৩২ হাজার টাকা বিতরণ করা হয়। রাজশাহী বিভাগে খাদ্য সহায়তাপ্রাপ্ত পরিবারের সংখ্যা ১১ লাখ ৬৬ হাজার ৯৯০ এবং নগদ অর্থ বিতরণ করা হয় এক কোটি পাঁচ লাখ ১০ হাজার টাকা। খুলনা বিভাগে ১১ লাখ ৮৬ হাজার ৯৬৭ পরিবারের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হয়। আর এক কোটি ২২ লাখ ২৬ হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা করা হয়। বরিশাল বিভাগে সাত লাখ ৩২ হাজার ৫৫৬ পরিবারের মাঝে খাদ্য বিতরণ করা হয়। সহায়তা দেওয়া হয় এক কোটি ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা। ঢাকা বিভাগে ৪১ লাখ ৮৩ হাজার ৫৬৮ পরিবারকে খাদ্য সরবরাহ করা হয়। এই বিভাগে চার কোটি ২০ লাখ ৩০ হাজার টাকা অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করে আওয়ামী লীগ। ময়মনসিংহ বিভাগে চার লাখ ২৬ হাজার ১২৫ পরিবারের মাঝে খাদ্য বিতরণ এবং ৩৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়। সিলেট বিভাগে পাঁচ লাখ ৮০ হাজার ৭৮৭ পরিবারের মধ্যে খাদ্য বিতরণ এবং ৩৮ লাখ ৪৫ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হয়। চট্টগ্রাম বিভাগে ৩০ লাখ ৯২ হাজার ৪১০ পরিবারের মাঝে খাদ্য বিতরণ এবং এক কোটি ৫৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা নগদ অর্থ সহায়তা করা হয়।
একইসঙ্গে দরিদ্র মানুষকে ত্রাণ সহযোগিতার পাশাপাশি জীবিকা ও অর্থনীতি বাঁচাতে নানান পদক্ষেপ নিয়েছেন শেখ হাসিনা। করোনা সংকট মোকাবিলায় দ্রুত বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়ায় দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক অঙ্গণেও প্রশংসিত হচ্ছেন শেখ হাসিনা।
করোনা মোকাবিলায় সঠিক পদক্ষেপ না নেওয়ায় এবং অযৌক্তিক ভ্রান্ত মন্তব্য করে যেখানে কঠোর সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছেন বিভিন্ন দেশের কিছু কিছু রাজনৈতিক নেতা ও দেশপ্রধান ও রাষ্ট্র নায়করা। সেখানে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবশালী ফোর্বস ম্যাগাজিনসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করা হয়েছে।
২৪ এপ্রিল এক আর্টিকেলে করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব মোকাবিলায় শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে বিখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস। একইসঙ্গে প্রশংসা করা হয়েছে তার বলিষ্ঠ নেতৃত্বেরও।
শেখ হাসিনার গৃহীত পদক্ষেপের বিষয়ে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশে ১৬১ (১৬ কোটির বেশি) মিলিয়ন মানুষের বাস। দেশটির প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দক্ষতার সঙ্গে সংকট মোকাবিলা করা তার জন্য নতুন কিছু নয়। এরই ধারাবাহিকতায় করোনা মোকাবিলায়ও তিনি নিয়েছেন দ্রুত পদক্ষেপ। যার প্রশংসা করেছে ওয়ার্ল্ড ইকোনোমিক ফোরামও।
করোনা: অর্থনীতি ও জীবন বাঁচাতে শেখ হাসিনার নেওয়া যত পদক্ষেপ:
• দেশে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে সব শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা এবং পাবলিক পরীক্ষা স্থগিত করে সরকার।
• অনলাইন, টেলিভিশনের শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা।
• করোনা ভাইরাসের সংক্রমণরোধে গত ২৬ মার্চ থেকে ৩০ মে অবধি সাধারণ ছুটি ঘোষণা।
• চিকিৎসাকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসনসহ করোনা যুদ্ধে ফ্রন্ট লাইন যোদ্ধাদের জন্য পিপিই-মাস্কসহ স্বাস্থ্য সুরক্ষাসামগ্রী নিশ্চিত করা।
• টেস্টিং কিট আমদানি, দেশের বিভিন্ন স্থানে ল্যাব স্থাপনসহ পরীক্ষার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করা।
• করোনা মোকাবিলার ফ্রন্টলাইন যোদ্ধাদের জন্য ৫-১০ লাখ টাকার স্বাস্থ্যবিমা এবং এর ৫ গুণ জীবন বিমা ঘোষণা।
• ২ হাজার ডাক্তার ও ৫ হজার ৫৪ জন নার্স নিয়োগ। আরও ৫ হাজার স্বাস্থ্য টেকনোলজিস্ট নিয়োগ দেওয়া হবে।
• স্বাস্থ্য বিষয়ক পরামর্শের জন্য ৩টি হটলাইন (১৬২৬৩; ৩৩৩ ও ১০৬৫৫) চালু।
• করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিভাগ, জেলা, উপজেলা এমনকি ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠন।
• ভিডিও কনফারেন্সিংয়ে সংযুক্ত হয়ে জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলা এবং প্রয়োজনীয় দিক-নির্দেশনা দেওয়া।
• প্রধানমন্ত্রী সঙ্কট মোকাবিলায় ১ এপ্রিল ৩১টি, ১৬ এপ্রিল ১০টি, ২০ এপ্রিল ১৩টি এবং ২৭ এপ্রিল ১০টি নির্দেশনা দেন।
• করোনা পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে চাঙা রাখতে ১৯টি প্যাকেজে ১ লাখ ৩ হাজার ১১৭ কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা। যা জিডিপির ৩.৭ শতাংশ।
• ভাতা কর্মসূচির আওতা বৃদ্ধি ৮১১ কোটি টাকার, গৃহহীন মানুষের জন্য ঘর তৈরির জন্য ২ হাজার ১৩০ কোটি টাকা।
• বোরো ধান/চাল ক্রয়ের কার্যক্রম (অতিরিক্ত ২ লাখ টন) ৮৬০ কোটি টাকার এবং কৃষিতে যান্ত্রিকীকরণ ২০০ কোটি টাকা।
• ভিজিডি, ভিজিএফ, ১০ টাকায় খাদ্য সহায়তা ও অন্য সহায়তা প্রাপ্ত প্রায় ৭৬ লাখ পরিবার বাদ দিয়ে অবশিষ্ট প্রায় ৫০ লাখ করোনায় ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের মধ্যে মুজিববর্ষ উপলক্ষে মে/২০২০ মাসে এককালীন ২৫শ টাকা হারে মোট ১২শ ৫০ কোটি টাকা নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।
• স্নাতক ও সমমান পর্যায়ের ২০১৯ সালের ২ লাখ ৯ হাজার ৬৭৪ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে উপবৃত্তি বাবদ ১০২ কোটি ৭৪ লাখ ২ হাজার ৬শ টাকা এবং টিউশন ফি বাবদ ৮ কোটি ৬৬ লাখ ৪১ হাজার ২০০ টাকা বিতরণ।
• প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষা সহায়তা ট্রাস্টের কার্যক্রম আরও সম্প্রসারিত করে জুলাই ২০২০ থেকে দেশের ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে স্নাতক পর্যায়ের দরিদ্র ও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের উপবৃত্তি দেওয়া হবে।
• ৫০ লাখ মানুষের জন্য রেশন কার্ড করা আছে যারা ১০ টাকায় চাল পান। নতুন আরও ৫০ লাখ রেশনকার্ড দেওয়ার ব্যবস্থা। এতে প্রায় ৫ কোটি মানুষ উপকৃত হবেন।
• কৃষি মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে কৃষকদের জন্য আউশ ধানের বীজ ও সার বিনামূল্যে পৌঁছানোর উদ্যোগ।
• বোরো মৌসুমে ৮ লাখ মেট্রিক টন ধান, ১০ লাখ মেট্রিক টন চাল, ২ লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন আতপ এবং ৮০ হাজার মেট্রিক টন গমসহ সর্বমোট ২১ লাখ মেট্রিক টন খাদ্যশস্য সংগ্রহের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
• কৃষি যান্ত্রীকিকরণে অঞ্চলভেদে উপকরণ ক্রয়ের জন্য ৭০ শতাংশ পর্যন্ত সরকারি ভর্তুকি দেওয়া হচ্ছে।
• ৬৪ জেলার ত্রাণ কার্যক্রমের সমন্বয় সাধনের জন্য ৬৪ জন সচিবকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
• ত্রাণ বিতরণে অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ। অভিযুক্ত জনপ্রতিনিধিদের বহিষ্কার করা হয়েছে।
• ২৮ জুন পর্যন্ত সারাদেশে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে দুই লাখ ১১ হাজার ১৭ মেট্রিক টন এবং বিতরণ করা হয়েছে এক লাখ ৮৮ হাজার ২৪ মেট্রিক টন। এতে উপকারভোগী পরিবারের সংখ্যা এক কোটি ৬২ লাখ ৯৫ হাজার ৯০৪ এবং উপকারভোগী লোকসংখ্যা সাত কোটি ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৯৫ জন।
• শিশুখাদ্যসহ অন্যান্য সামগ্রী ক্রয়ের জন্য নগদ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে প্রায় ১২৩ কোটি টাকা।
• করোনা ভাইরাস পরিস্থিতির মধ্যে রমজান উপলক্ষে কওমি মাদ্রাসাগুলোকে ১৬ কোটি ৯৪ লাখ টাকা, মসজিদগুলোর জন্য ১২২ কোটি ২ লাখ ১৫ হাজার টাকা অর্থ সহায়তা।