গত কয়েকদিন ধরে কোটা আন্দোলনের নেতাদের সঙ্গে ছাত্রশিবির ও ছাত্রদলের কয়েকজন নেতার দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। মূলত সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্যের নামে ছাত্রী সংস্থার নেতাকর্মীদের সামনে রেখে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিবিরের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়ার অপচেষ্টার পাশাপাশি ছাত্রদলও একটি অবস্থানে আসতে চাচ্ছে। কোটা নেতাদের মধ্যে নুরু ও সম্প্রতি যুক্ত হওয়া তারেক জিয়া সাইবার ফোর্সের কবীর হোসেন শুভ ছাত্রদলের সঙ্গে লিঁয়াজো করে আসছিলেন। অন্যদিকে সোহরাব ও আতাউল্লাহ, হাবীবুল্লাহ, সুমন ও লুৎফুন্নাহার নীলা ছাত্রশিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতেন। এবার সকল পক্ষ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে আলোচনা করে সারাদেশে সহিংসতা ছড়িয়ে দেয়ার পরিকল্পনা করেছেন।
জানা গেছে, আজ নুরুসহ কয়েকজন লাইভে এসে আগামীকালের সমাবেশে সকলকে যোগ দেয়ার ও ছাত্রলীগের উপর হামলা চালানোর বক্তব্য দিবে। এছাড়া ফেসবুকের সিক্রেট গ্রুপে সারাদেশে সহিংসতা সৃষ্টি করার আহ্বান জানাবে। ককটেল ও হাতবোমাসহ আক্রমণ করার সরঞ্জাম মজুদ ও সাপ্লাই দিতে ছাত্রী সংস্থার সদস্যরা ছাত্রী হলগুলোকে ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছে বলে জানা গেছে।
আগামীকালের থেকে লাগাতার কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে নুরু, সোহরাব, কবীর হোসেন, নীলা, আতাউল্লাহ প্রমুখ কোটা নেতাদের সঙ্গে ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক আকরামুল হাসান, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সাত্তার পাটোয়ারী, শিবিরের সাহিত্য সম্পাদক সালাউদ্দিন আইয়ুবি, দাওয়াহ সম্পাদক শাহ মাহফুজুল হক ও শিক্ষা সম্পাদক রাশেদুল ইসলাম ভিডিও কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেছে।
নুরু ও সোহরাব আন্দোলনকে সহিংস আন্দোলনে পরিণত করার আহ্বান জানালে শিবিরের পক্ষ থেকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে প্রশংসা করা হয়। ছাত্রদল আরো কিছুদিন মিছিল-সমাবেশ করার পর সহিংস আন্দোলনে যাওয়ার পরামর্শ দিলে নুরু ক্ষোভ প্রকাশ করে। পরিশেষে আগামীকাল রোববার থেকে সহিংস আন্দোলনে রূপ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সমাবেশ সকালের পরিবর্তে বিকাল ৩ ঘটিকায় শুরুর সিদ্ধান্ত হয় যেন সন্ধায় পরপর সহিংসতা সৃষ্টি সহজ হয়। ৮ই এপ্রিলের চেয়ে ভয়াবহ তাণ্ডবের মাধ্যমে সারাদেশে সহিংসতা তৈরিই তাদের লক্ষ্য স্থির করা হয়েছে।
জানা গেছে, ককটেল, হাতবোমা ও পেট্রোল বোমা সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে ছাত্রশিবিরের ঢাকা কলেজ শাখা সভাপতি মেহেদি হাসান সানি, সেক্রেটারি আব্দুল্লাহ আল মারুফ, মহানগরী সভাপতি আব্দুল আলিম ও সেক্রেটারি জুবায়ের হোসেন রাজনকে। এজন্য অর্থ সরবরাহ সহ তত্ত্বাবধায়ন করছে শিবিরের সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক। অন্যদিকে ছাত্রদলের পক্ষ থেকে এ দায়িত্ব দেয়া হয়েছে গাজীপুর জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সম্রাট ভূঁইয়া, সাধারণ সম্পাদক ইয়াসিন মোল্লা এবং গাজীপুর মহানগরের সভাপতি মো. জাহাঙ্গীর আলম ও সাধারণ সম্পাদক ইমরান রেজাকে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে ছাত্রী সংস্থার সদস্যদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে ইডেন কলেজ ছাত্রী সংস্থার সাধারণ সম্পাদক লুৎফুন্নাহার নীলা নেতৃত্বে লুবনা ও মৌ প্রমুখের প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় ও অন্যান্য সহযোগিতা নিশ্চিত করার দায়িত্ব পালন করছেন শিবিরের ঢাকা মহানগর সভাপতি শাফিউল আলম ও সেক্রেটারি মাসুম তারিফ।
নুরু মনে করেন সরকারের সঙ্গে সহজ ভাষায় কথা বলে লাভ নেই। আঘাত করে কয়েকটি জেলায় অবরোধ সৃষ্টির জন্য আহ্বান জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দখল করতে পারলে গণঅভ্যুত্থান ঘটানো যাবে। সোহরাব, নীলা ও কবীর হোসেন শুভও এ জাতীয় কর্মসূচি দেয়ার জন্য আরো আগে থেকেই চাপ দিচ্ছে।
সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মনে আগামীকালের সমাবেশ নিয়ে আতঙ্ক বিরাজ করছে। ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক সহ সকলে মনে করেন এদেরকে রুখে দেয়ার এটিই সময়। নৈরাজ্য সৃষ্টির পরিকল্পনা নস্যাৎ করতে আগামীকালের সমাবেশ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নুরু, সোহরাব, নীলাসহ সংশ্লিষ্টদের গ্রেফতার ও তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা উচিত।