বরগুনার বেতাগীর হাট-বাজারে দেশীয় প্রজাতির শিং, কই, মাগুর, শোল, বোয়াল, খলিসাসহ বিভিন্ন মাছের চাহিদা বেড়েছে। বিলুপ্তপ্রায় প্রজাতির মাছ খাবার টেবিলে আবার ফিরে আসছে। চাষাবাদ ও জলাশয়ে অভয়াশ্রম প্রতিষ্ঠার ফলে চাহিদা ও কদর বাড়ছে।
পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৎস্য বিভাগের গবেষক ড. লোকমান হোসেন বলেন, দেশীয় প্রজাতির মাছ সংরক্ষণ ও পুনরুদ্ধারে বর্তমানে মৎস্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা কেন্দ্র এসব মাছ সংরক্ষণ ও উন্নয়নে কাজ করছে।
বাংলাদেশে বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজাতির সংখ্যা ৬৪টি। উচ্চ ফলনশীল ধান উৎপাদনে কীটনাশকের ব্যবহার ও অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয় শুকিয়ে যাওয়া এসব মাছ বিলুপ্তির মূল কারণ।
গবেষকরা বলেছেন, বর্তমানে অনেকটাই সহজলভ্য হয়েছে একসময়ের বিপন্ন প্রজাতির পাবদা, গুলশা, টেংরা, মেনি, চিতল ও ফলি মাছ।
গবেষকদের দাবি, বিলুপ্ত প্রজাতির মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করায় পোনা প্রাপ্তি সহজতর হয়েছে।
অনেকে চাষাবাদেও আগ্রহী হয়ে উঠছেন। গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে উদ্ভাবিত প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখন দেশের শতাধিক হ্যাচারিতে দেশি প্রজাতির মাছের পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। পরে এদের চাষ হচ্ছে। যুবকদের এ পেশায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেয়েছে।
বেতাগী পৌর শহরের ৩ নম্বর ওয়ার্ডে দেশীয় প্রজাতির মৎস্যচাষি সুকদেব হাওলাদার বলেন, দেশীয় প্রজাতির শিং, কই, খলিশা, পাবদা, পুঁটি, রুই, কাতলা মাছের চাহিদা বেড়েছে। এসব মাছ স্থানীয় মানুষের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করা হচ্ছে।
বেতাগী পৌর শহরের বাজারসহ ইউনিয়নগুলোতে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ পাওয়া যাচ্ছে। দামও আগের তুলনায় অনেকটা কম। বছর দুয়েক আগেও পাবদা মাছ এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হলেও এখন তা ৫০০ টাকার নিচে নেমে এসেছে।
বিএফআরআই সূত্র জানায়, প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত ২০ প্রজাতির বিলুপ্তপ্রায় মাছের প্রজনন ও চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করেছে। এগুলো হচ্ছে- পাবদা, গুলশা, টেংরা, মেনি, ফলি, চিতল, গুতুম, বালাচাটা, গুজি, আইড়, কুচিয়া, খলিশা, গনিয়া, কালবাউস, ভাগনা, মহাশোল ও দেশি পুঁটি।
এ ছাড়াও বর্তমানে বাংলাদেশে বিভিন্ন গবেষণা ইনস্টিটিউটে রানি মাছ, কাকিলা, গজার, শাল বাইন, বৈরালী, আঙ্গুস ও খোকসা মাছ এবং উপকূলীয় এলাকার কাইন মাগুর (কাউন) মাছের প্রজনন ও চাষের কৌশল উদ্ভাবনে গবেষণা চলছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সমাপ্তি সাহা বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অভ্যন্তরীণ উন্মুক্ত জলাশয় সংকুচিত হয়ে যাওয়ায় দেশীয় মাছের প্রজনন ও বিচরণক্ষেত্র হ্রাস পেয়েছে। এ কারণে প্রাকৃতিক জলাধার বিল, হাওর, খাল-বিল ও নদ-নদীতে এসব মাছের পরিমাণ কমে গেছে।