1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সামরিক বাহিনী ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১

ড. এস এম জাহাঙ্গীর আলম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ২০ জুন, ২০২২

গোটা বিশ্বেই এখন সামরিক বাহিনী স্যাটেলাইট ব্যবহার করেছে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশের পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। বর্তমান সময়ে যোগাযোগে সামরিক বাহিনীর জন্য স্যাটেলাইটের ব্যবহার অপরিহার্যও বটে। যেহেতু স্যাটেলাইট হলো আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থার অন্যতম মাধ্যম। উন্নত বিশ্বের দিকে তাকালে দেখা যায়, সামরিক বাহিনীর অন্যতম যোগাযোগ ব্যবস্থা হলো স্যাটেলাইট। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী (সেনা, নৌ, বিমান এবং ডিজিএফআই) বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ব্যবহারের উদ্যোগ নিয়েছে এবং বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোম্পানি লিঃ এর সঙ্গে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেছে। এর আওতায় বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর তিনটি ট্রান্সপন্ডার ব্যবহার করে আধুনিক, নিরাপদ ও উন্নত টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করবে। দেশীয় স্যাটেলাইট ব্যবহার করার মাধ্যমে সামরিক দফতরসমূহ টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থায় অর্জন করবে স্বনির্ভরতা। প্রাথমিকভাবে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের সমন্বয়ে তিন বাহিনীর (সেনা, নৌ ও বিমান) এবং ডিজিএফআই বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এর ১টি সি-ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার (৩৬ মেগাহার্জ), ২টি কে-ইউ ব্যান্ড ট্রান্সপন্ডার (৭২ মেগাহার্জ) ডেডিকেটেড ব্যবহার করবে। এ ছাড়া ব্যান্ডউইথ কমানো বা বাড়ানোর ব্যবস্থাসহ ব্যবহার অনুসারে ব্যান্ডউইথের মূল্য পরিশোধের ব্যবস্থা রয়েছে। প্রাথমিক মেয়াদে ২০২২ থেকে ২০২৮ (ছয়) বছর এবং স্বাভাবিক মেয়াদ বাড়ানোর সুবিধা রয়েছে। সশস্ত্র বাহিনী বছরে ১৬ কোটি টাকা বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোঃ লিঃ’কে পরিশোধ করবে।

স্যাটেলাইট ব্যবহার সশন্ত্র বাহিনীর জন্য খুবই গুরুত্ব বহন করে। আধুনিক বিশ্বের যেসব দেশ মহাকাশে স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে, সেসব দেশে সশস্ত্র বাহিনী স্যাটেলাইট ব্যবহার করছে। কোন কোন দেশ সশন্ত্র বাহিনীর জন্য পৃথক স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে এবং সেগুলোর নাম দেয়া হয়েছে ‘সামরিক স্যাটেলাইট’। সামরিক স্যাটেলাইট কি কাজে লাগে বা কেনই বা জরুরী? প্রত্যেক স্যাটেলাইটে থাকে সোলার সেল এবং শক্তি জমা রাখার জন্য ব্যাটারি। এর পাওয়ার সিস্টেম প্রসেসকে পৃথিবী থেকে সবসময় মনিটর করা হয়। স্যাটেলাইটে একটি অনবোর্ড কম্পিউটার থাকে, যা একে নিয়ন্ত্রণ এবং বিভিন্ন সিস্টেমকে মনিটর করে। স্যাটেলাইটের আরেকটি মৌলিক বৈশিষ্ট্য হলো এর রেডিও সিস্টেম ও এ্যান্টেনা। আর্থ অবজারভেশন স্যাটেলাইট পৃথিবীর পৃষ্ঠ নিরীক্ষণ ও পৃথিবী পৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশের ছবি তুলতে ব্যবহার করা হয়। যে কারণে স্যাটেলাইট সামরিক উদ্দেশ্যেও ব্যবহার করা হয়। এর মূল কাজ হচ্ছে নিউক্লিয়ার মনিটরিং, রাডার ইমেজিং, ফটোগ্রাফি ও শত্রুর গতিবিধ পর্যবেক্ষণ। এছাড়াও আবহাওয়ার খবরাখবর তো আছেই।

আমাদের বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ ভূস্থির। এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ৩৬ হাজার কিলোমিটার উচ্চতায় স্থির থেকে পৃথিবীর সঙ্গে যোগাযোগের কাজ করছে। আমাদের প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের কৃত্রিম স্যাটেলাইট তৈরি করা হয়েছে। যেমন- পৃথিবী পর্যবেক্ষণ, আবহাওয়ার খবর নেয়া ও নির্ণয় ইত্যাদি। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ তৈরি হয়েছে যোগাযোগ ও টিভি-বেতার সহায়তার উদ্দেশ্যে। যোগাযোগ বা তথ্য আদান-প্রদান হয় বিভিন্ন মাপের বিদ্যুত-চুম্বক তরঙ্গ দিয়ে। এই তরঙ্গ প্রেরণে বা গ্রহণের জন্য এ্যান্টেনার প্রয়োজন। তাই এই স্যাটেলাইট ভূপৃষ্ঠের গ্রাউন্ড স্টেশনের দিকে তাক করে স্থাপন করা হয়। এজন্য থাকে ডিস আকৃতির কত এ্যান্টেনা। ভূপৃষ্ঠের গ্রাউন্ড এ্যান্টেনাগুলোও উপগ্রহের দিকে তাক করা থাকে। যেহেতু তরঙ্গ বিভিন্ন মাপের হয়, আবার বিভিন্ন ধরনের তথ্য বহন করে, তাই এ্যান্টেনার সঙ্গে যুক্ত থাকতে হয় ট্রান্সসিভার যন্ত্র, তরঙ্গের বিচ্যুতি দূর করার জন্য ফিস্টার, তথ্যে নিরাপত্তার জন্য এনত্রিুপ্টার-ডেক্রিপ্টার, দুর্বল সিগন্যালকে শক্তিশালী করার জন্য পাওয়ার এ্যামপ্লিফায়ার ইত্যাদি। এই সবটা পরিচালিত হয় জটিল সব ইলেকট্রনিক যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যার দিয়ে। স্যাটেলাইটের যোগাযোগের এই যন্ত্রপাতি ও সফটওয়্যারের সমন্বয়কে বলা হয় ট্রান্সপন্ডার। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ এ ধরনের উচ্চগতির ৪০টি আলাদা ট্রান্সপন্ডার রয়েছে। এর মধ্যে ২৬টি কেইউ ব্যান্ডের আর ১৪টি সি ব্যান্ডের। এই ট্রান্সপন্ডার দিয়ে বাংলাদেশসহ আমাদের আশপাশের দেশগুলো বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১-এর টেলিকমিউনিকেশন সেবা পাবে এবং পাচ্ছেও।

প্রতিবেশী চীন, রাশিয়া, ভারতসহ অন্যান্য দেশ মহাকাশে সামরিক স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। জাপান বেশ আগেই সামরিক স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে। দেশটির সর্ব দক্ষিণাঞ্চলীয় দ্বীপপুঞ্জের ঘাঁটি থেকে এই স্যাটেলাইট পাঠানো হয়। চীন সীমান্তবর্তী গ্যাসসমৃদ্ধ দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে চীন-জাপানের মধ্যে দ্বৈরথ চলছে। জাপানের দাবি, চীন মাঝেমধ্যেই এসব এলাকায় যুদ্ধ জাহাজ পাঠিয়ে সার্বিক পরিবেশ উত্তপ্ত করে। চীনের ওপর নজরদারি বাড়াতেই এই স্যাটেলাইট ব্যবহার করা হচ্ছে। আবার চীনও সামরিক স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে মহাকাশে। তারাও জাপানের ওপর নজরদারি করছে। ভারত ২০২০ সালে মহাকাশে পাঠিয়েছে সামরিক স্যাটেলাইট। এটা বড় সাফল্য বলে ভারতের দাবি- কমিউনিকেশন স্যাটেলাইট ‘সিএমএম-০১’ নামক উৎক্ষেপণ করে। ভারত এর আগেও সামরিক স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। রাশিয়া মার্কিন নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে একাধিক সামরিক স্যাটেলাইট পাঠিয়েছে মহাকাশে। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্র একাধিক সামরিক স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে। ইরানের সামরিক স্যাটেলাইট আছে মহাকাশে। অর্থাৎ বিশ্বের অধিকাংশ দেশেই সামরিক স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে, পাঠাচ্ছে। কেউ বা সামরিক স্যাটেলাইট পাঠাচ্ছে সামরিক কাজে, আবার কেউ বা পাঠাচ্ছে শান্তির জন্য। আবহাওয়ার পূর্বাভাস, টেলিমেডিসিন, ই-লার্নিং, ই-রিসাচ, ভিডিও কনফারেন্স, প্রতিরক্ষা ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায় স্যাটেলাইটের মাধ্যমে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছে বাংলাদেশের জন্য। প্রতিবেশী দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কার মতো দেশেরও নিজস্ব স্যাটেলাইট আছে। নেপাল, মিয়ানমার, ভুটানসহ অন্যান্য দেশেও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট সেবা দিতে পারছে। এতে ৫০ থেকে ৬০ মিলিয়ন ডলার আয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। প্রাথমিক সুবিধা শুধু বাংলাদেশ এবং প্রতিবেশী দেশগুলোকে দেয়া সম্ভব হলেও পরে এর পরিসর বিস্তৃতি ঘটবে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর ও পূর্ব আফ্রিকার দেশগুলোর কাছে স্যাটেলাইট ভাড়া অথবা বিক্রি করতে পারবে বাংলাদেশ। এটি একটি বড় সাফল্য অবশ্যই।

লেখক : ড. এস এম জাহাঙ্গীর আলম – বীর মুক্তিযোদ্ধা, সাবেক কর কমিশনার ও পরিচালক, বাংলাদেশ স্যাটেলাইট কোঃ লিঃ। 


সর্বশেষ - রাজনীতি