1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

জনশুমারি : পরিকল্পিত উন্নয়নে সঠিক তথ্য দিন

ড. মো. আমিনুল হক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১৬ জুন, ২০২২

বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী জনশুমারি ও গৃহগণনা উদ্বোধন করেন। যদিও মঙ্গলবার রাত ১২টায় ভাসমান ও ছিন্নমূল মানুষের তথ্য সংগ্রহের মধ্য দিয়ে এবারের জনশুমারি ও গৃহগণনার কাজ শুরু হয়েছে। ২১ জুন পর্যন্ত চলা এ সময়কে ‘শুমারি সপ্তাহ’ ঘোষণা করা হয়েছে। এটি দেশের ষষ্ঠ জনশুমারি। এর আগে দেশে পাঁচটি জনশুমারি হয়েছে, যা আদমশুমারি নামে পরিচিত। পরিসংখ্যান আইন ২০১৩ অনুযায়ী ‘আদমশুমারি’কে ‘জনশুমারি’ নামকরণ করা হয়। জাতিসংঘের সংজ্ঞামতে, একটি দেশ বা সীমানাবেষ্টিত অঞ্চলের সব ব্যক্তির জনতাত্ত্বিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক তথ্য সংগ্রহ, সংকলন ও প্রকাশের সার্বিক প্রক্রিয়াকে জনশুমারি বলে। ১০ বছর পরপর, অর্থাৎ ২০২১ সালে এ শুমারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও করোনার কারণে হতে পারেনি।
এবারের জনশুমারি অন্য বছরের তুলনায় অনন্য। কারণ, এটি পরিচালিত হবে ডিজিটাল ডিভাইস ট্যাবলেট ব্যবহার করে। যা কম্পিউটার অ্যাসিস্টেড পারসোনাল ইন্টারভিউইং (সিএপিআই) পদ্ধতি নামে বহুল পরিচিত। আগের মতো শুমারি শুরু করতে প্রশ্নপত্র ছাপানো, বাঁধাই, রাবার, পেন্সিল, শার্পনার ক্রয়পূর্বক প্রতিটি উপজেলায় পরিবহন ও তথ্য সংগ্রহকারীদের মধ্যে বিতরণের মতো জটিল, শ্রম ও সময়নির্ভর প্রক্রিয়াগুলো একেবারেই নেই। শুমারি চলাকালে গণনাকারীদের বৃত্ত ভরাটে ভুল করা, কাটাকাটির কোনো বিষয় নেই। শুমারি-পরবর্তী প্রশ্নপত্র সংগ্রহ, জেলা-উপজেলাভিত্তিক সংরক্ষণ, উপজেলা থেকে জেলা হয়ে ঢাকায় পাঠানোর যে বিশাল কর্মযজ্ঞ; তা নেই। দুই-আড়াই বছর ধরে ওইসব প্রশ্নপত্র কম্পিউটারে এন্ট্রি, ভুল সংশোধন ও সম্পাদনের কোনো ঝামেলা নেই। এসব পর্ব তথ্য সংগ্রহের সময় ডিজিটাল যন্ত্রের মাধ্যমেই সম্পন্ন করা হবে। দুই-আড়াই বছরের কাজ অল্প সময়েই সম্পাদিত হবে। কাগজনির্ভর শুমারি থেকে এ যেন কাগজবিহীন এক শুমারি।

ডিজিটাল ডিভাইস ট্যাবলেট ব্যবহারের ফলে প্রত্যেক গণনাকারী কেন্দ্রীয় সার্ভারে সংযুক্ত থাকবেন। কে কোথায় কোন অঞ্চলে অবস্থান করছেন ও কোন বাড়িতে তথ্য সংগ্রহ করছেন, তা জানা যাবে। তথ্য সংগ্রহকারী তাঁর নির্দিষ্ট অঞ্চলের বাইরে গেলে ওই ডিভাইস কাজ করবে না। প্রশ্নের মধ্যে যুক্তি দেওয়া আছে। ফলে গণনাকারী নির্দিষ্ট প্রশ্নের সঠিক এবং উত্তর প্রদান না করা পর্যন্ত অন্য প্রশ্নে যেতে পারবেন না। ডিভাইস তাঁকে অনুমতি দেবে না। যেমন, একজনের বয়স ৭ বছর। ওই বাচ্চার শিক্ষাগত যোগ্যতার ঘর খালি রাখা যাবে না। আবার তাকে ভুল করে এমএ পাস বা বিবাহিতও বলা যাবে না। এ ভুল করতে চাইলে ডিভাইস বাধা দেবে। প্রশ্নমালা প্রণয়ন কমিটির সদস্য হিসেবে এসব বিষয় সতর্কতার সঙ্গে বিবেচনা করা হয়েছে। দেশের জনসংখ্যাবিষয়ক বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, উন্নয়নকর্মী, নীতিনির্ধারক ও গবেষকরা যেভাবে, যেসব যুক্তি দিয়ে শুমারির প্রশ্নমালা তৈরি করেছেন, সেই যুক্তি ডিভাইসে দেওয়া আছে এবং ডিভাইস তার একবিন্দু ব্যত্যয় করবে না। তথ্য সংগ্রহে এ এক অনন্য তদারকির সুবিধা ব্যবহার করা হচ্ছে এ শুমারিতে। সংগৃহীত তথ্যের প্রাথমিক ফলাফল পাওয়া যাবে মাত্র তিন মাসে, যা আগে পেতে সময় লাগত দুই-তিন বছর।

একটা দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য ওই দেশের জনগণের তথ্য খুবই জরুরি। শুমারি পরিপালিত হয় কতগুলো বৃহৎ উদ্দেশ্য সামনে রেখে। যেমন- দেশের প্রতিটি খানা ও খানার সদস্যদের গণনা করে মোট জনসংখ্যা নিরূপণ করে; দেশের মোট বাসগৃহের সংখ্যা জানা; দেশের সার্বিক উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য তথ্য সংগ্রহ; নির্বাচনী এলাকা নির্ধারণে তথ্য সংগ্রহ; জাতীয় সম্পদের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে তথ্য সংগ্রহ করা। দেশের সাংবিধানিক ও মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণে এ শুমারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার উন্নয়নের যে রূপকল্প গ্রহণ করেছে; এর সঠিক গতিপথে এ শুমারি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। কোন খাতে বরাদ্দে বেশি বা কম গুরুত্ব দিতে হবে তা নিরূপণ খুবই সহজ হবে। সংসদ সদস্যরা তাঁদের নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক জনসংখ্যা, খানার সংখ্যা, খানার কাঠামোর ধরন, পানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহ, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড, যুব জনগোষ্ঠীর সংখ্যা, বৈদেশিক রেমিট্যান্স প্রবাহসহ সব ধরনের আর্থসামাজিক বৈশিষ্ট্য জানতে পারবেন এবং নির্বাচনী এলাকাভিত্তিক সঠিক উন্নয়ন প্রকল্প নির্ধারণে সক্ষম হবেন। একইভাবে উপজেলা ও জেলা পর্যায়ের প্রশাসকরা উন্নয়নের প্রয়োজনে এ তথ্য ব্যবহার করতে পারবেন।

জনশুমারিতে তথ্য দিন, পরিকল্পিত উন্নয়নে অংশ নিন- এ স্লোগানে সচেতনতা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে সরকার। জনশুমারি বর্তমানের জন্য তো বটেই; ভবিষ্যতের জন্যও অত্যন্ত জরুরি। সবাই যাতে সঠিক তথ্য দেয়, সে জন্য মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি জরুরি ছিল। আমাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ সর্বক্ষেত্রে জনশুমারির তথ্য কাজে লাগবে।

ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’র সিদ্ধান্ত অনন্য এবং বাংলাদেশের সব বিভাগ, মন্ত্রণালয়ের আগামী দিনের তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে এক মাইলফলক ও অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বলে বিবেচিত হবে। তথ্য সংগ্রহ, সংকলন ও দ্রুত ফলাফল প্রকাশের ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা হলো। জাতিকে সর্বোত্তম তথ্য উপহার দেওয়ার একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ হয়ে থাকবে এ জনশুমারি।তবে ডিজিটাল ডিভাইসের মাধ্যমে পরিচালিত এ ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’ হয়তো বাংলাদেশের শেষ ‘জনশুমারি ও গৃহগণনা’। আশা করি, ২০৩১ সালের আগেই বাংলাদেশে প্রতিটি গৃহ বা খানার ইউনিক নম্বর হবে এবং প্রতিটি পরিবার তার প্রতিদিনের জন্ম-মৃত্যুসহ সব তথ্য নিজেই প্রদান করবে।

লেখক : ড. মো. আমিনুল হক – অধ্যাপক, পপুলেশন সায়েন্সেস বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - রাজনীতি