1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

অনেক তো দিন গেল বৃথা সংশয়ে…

আলী হাবিব : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১০ জুলাই, ২০২৩

আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারিতে একটি জাতীয় নির্বাচন হওয়ার কথা। এই নির্বাচনের দিকে শুধুই যে দেশের মানুষ বা রাজনৈতিক দলগুলো তাকিয়ে আছে, তা নয়। এই নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছে বিশ্বের সেই সব প্রভাবশালী দেশ, যাদের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট নানা বিষয় রয়েছে। উভয় দেশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ইস্যু যেমন থাকতে পারে, তেমনি থাকতে পারে নির্দিষ্ট কোনো দেশের স্বার্থও।

একমুখী নয়, এই স্বার্থ হতে পারে বহুমুখী। আবার এই নির্বাচন সামনে রেখে দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও নানামুখী তৎপরতা দেখা যাচ্ছে। গত সপ্তাহে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের  (ইইউ) রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলির সঙ্গে এক ঘণ্টা রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন বিএনপি মহাসচিব। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন বিষয়েই বৈঠকে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল রবিবার ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে একটি বিশেষজ্ঞ দল ঢাকায় এসেছে। এই দলটি বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সিভিল সোসাইটির সঙ্গে কথা বলবে, আলোচনা করবে। এই সফরের আগে বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূতের বৈঠকটি নিশ্চয়ই গুরুত্বপূর্ণ।

কূটনৈতিক সূত্রের খবর হচ্ছে, বাংলাদেশের বেশ কিছু রাজনৈতিক দল আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য ইইউকে অনুরোধ জানিয়েছে।

গত দুই নির্বাচনে পর্যবেক্ষক পাঠায়নি ইউরোপীয় ইউনিয়ন। ইইউ এই মিশনটি পাঠাচ্ছে একটি সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রক্রিয়া হিসেবে। এই মিশন পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে দেখবে। তারপর সিদ্ধান্ত নেবে আগামী নির্বাচন পর্যবেক্ষণে তারা পর্যবেক্ষক পাঠাবে কি না। অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের পরিবেশ আছে কি না সেটাও নিশ্চয় যাচাই করবে তারা।

এককথায় এটা হচ্ছে ইইউয়ের প্রাক-নির্বাচন অনুসন্ধানী মিশন। ইইউয়ের প্রতিনিধি প্রাক-নির্বাচন অনুসন্ধানী মিশনের ঢাকা অবস্থানকালেই মঙ্গলবার ঢাকায় আসছে মার্কিন প্রতিনিধিদল। এই দলে নেতৃত্ব দেবেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি উজরা জেয়া। প্রতিনিধিদলে থাকবেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়া বিষয়ক ব্যুরোর অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। আরো থাকছেন যুক্তরাষ্ট্রের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা ইউএসএআইডির এশিয়া ব্যুরোর ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অঞ্জলি কৌর। ঢাকা সফরে আসার আগে আন্ডারসেক্রেটারি উজরা জেয়া ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু ওয়াশিংটন ডিসিতে ভারতের রাষ্ট্রদূত তরণজিৎ সিং সান্ধুর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বাংলাদেশ সফরে আসার আগে ভারতের রাষ্ট্রদূত তরণজিৎ সিং সান্ধুর সঙ্গে মার্কিন আন্ডারসেক্রেটারি উজরা জেয়া ও অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লুর বৈঠক কি কোনো বিশেষ ইঙ্গিত দিচ্ছে?

ইঙ্গিত থাকাটা কিন্তু অমূলক নয়। উজরা জেয়া ঢাকা আসবেন দিল্লি হয়ে। দিল্লিতে তিনি ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রার সঙ্গে বৈঠক করবেন। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, বৈঠকে আঞ্চলিক ইস্যুতে বাংলাদেশ পরিস্থিতি, আসন্ন নির্বাচন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক ও স্থিতিশীলতা নিয়ে আলোচনা হতে পারে। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর যে সফরসূচি ঘোষণা করেছে, সে অনুযায়ী উজরা জেয়ার নেতৃত্বাধীন দলটি এখন ভারতে। ঠিক এই সময়ে ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব ও জি২০-র প্রধান সমন্বয়ক হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা সে দেশের এক টেলিভিশনকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, মোদি সরকারের গত ৯ বছরে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তা অপরিবর্তনীয়।

প্রসঙ্গান্তরে যাওয়া যাক। সরকার পতনের এক দফার আন্দোলনের ঘোষণা শিগগিরই আসছে বলে অনেক দিন থেকেই বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে। এমন কথাও শোনা গেছে, ঈদের পরে তাদের আন্দোলন আরো জোরদার ও বেগবান হবে। কিন্তু সেই বেগে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে এসব সফর, বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সফরটি গুরুত্বের সঙ্গে দেখতে চাইছে বিএনপি। তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছে। তারা ধারণা করছে, পশ্চিমা রাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের এবারের সফর বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভালো প্রভাব ফেলতে পারে। আর তাই মার্কিন ভিসানীতি চালু হওয়ার পর থেকে চূড়ান্ত আন্দোলনের পথনকশা তৈরি করছিল দলটি, সেটি বাস্তবায়নে না গিয়ে তারা যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলের সফরটি পর্যবেক্ষণ করতে চাইছে। বিএনপির ধারণা, এই সফরের পর আন্দোলনের গতি বাড়াতে পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনতে হতে পারে। বিএনপি মনে করছে, আগামী সংসদ নির্বাচনের কয়েক মাস আগে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদলের সফর কৌশলগত দিক থেকে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পশ্চিমা দেশগুলো কী ধরনের কৌশল ঠিক করে তার ওপর ভিত্তি করে পথনকশা চূড়ান্ত করবে বিএনপি।

প্রশ্ন হচ্ছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বা ইউরোপীয় ইউনিয়ন কি বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার পথ পরিষ্কার করে দেবে বা পথনকশা তৈরি করে দেবে? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে একটু পেছন ফিরে তাকাতে হবে। গত মাসের শেষার্ধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরে যান। তাঁর ওই সফরের আগে ভারতের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভালের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভানের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকে অজিত দোভাল বলেছিলেন, প্রতিবেশীদের ব্যাপারে অন্য দেশের এমন কোনো উদ্যোগ নেওয়া উচিত হবে না, যা ভারতের জাতীয় স্বার্থে নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। নরেন্দ্র মোদির মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এক প্রশ্নের জবাবে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখ্য উপমুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র তার স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় ও ক্ষেত্রসমূহে যুক্ত হতে ও পদক্ষেপ নিতে দ্বিধা করবে না।’

ইউরোপীয় ইউনিয়ন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশকে কিভাবে দেখা হচ্ছে? গত মাসে ইভান স্টিফেনসহ ইউরোপীয় পার্লামেন্টের ছয় সদস্য ইইউয়ের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিবিষয়ক হাইরিপ্রেজেন্টেটিভ জোসেফ বোরেলকে একটি চিঠি লেখেন। ওই চিঠিতে বাংলাদেশে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের উদ্যোগ নিতে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানো হয়। এর জবাবে জোসেফ বোরেল চিঠি দিয়ে ইভান স্টিফেনকে জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সব দলকে নির্বাচনে অংশ নিতে উৎসাহ দিচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। তিনি তাঁর চিঠিতে এটাও উল্লেখ করেছেন যে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সহিংসতার কোনো স্থান নেই। পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, সহিংসতা এড়ানো উচিত। জোসেফ বোরেল কি ২০১৩-১৪ সালের নির্বাচনপূর্ব ও পরবর্তী সহিংসতার ঘটনা মনে করিয়ে দিতে চেয়েছেন?

ঢাকা সফরে আসার আগে ওয়াশিংটনে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মানবাধিকার, গণতন্ত্র ও বেসামরিক জনগণের নিরাপত্তাবিষয়ক আন্ডারসেক্রেটারি উজরা জেয়া। ছবি প্রকাশ করে এক টুইট বার্তায় তিনি ওই বৈঠকের কথা উল্লেখ করেছেন। লিখেছেন, ‘আমি আমাদের জোরালো অংশীদারি আরো গভীর করতে উন্মুখ হয়ে আছি।’

ইউরোপীয় ইউনিয়নের মিশন ঢাকায় অবস্থান করছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধিদলও আসছে। উভয় পক্ষের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এখন অনেকটাই পরিষ্কার। এই লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য যে বিএনপি পর্যবেক্ষণ করছে না বা করেনি তা নয়। খুব স্বাভাবিকভাবেই তাদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা দেখা দেওয়ার কথা, বিশেষ করে বেসামরিক নিরাপত্তা, গণতন্ত্র ও মানবাধিকার বিষয়ক মার্কিন আন্ডারসেক্রেটারি উজরা জেয়ার বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অংশীদারি আরো নিবিড় করার আগ্রহ তাদের হতাশা বাড়িয়ে দেবে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, উজরা জেয়ার বাংলাদেশ সফর কেবলই নির্বাচনকেন্দ্রিক নয়, অন্তত পাঁচটি ইস্যুতে কথা বলবে মার্কিন প্রতিনিধিদল। তাহলে বিএনপির নির্বাচনকেন্দ্রিক এক দফা আন্দোলনের কী হবে? গত মাসে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মার্কিন প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফরের পর আন্দোলনের গতি বদলাতে পারে।

অনেক তো দিন গেল বৃথা সংশয়ে। প্রশ্ন হচ্ছে, এখন গতিপথ খুঁজে পাবে তো বিএনপি ও সমমনা দলগুলো?

লেখক: আলী হাবিব – সাংবাদিক, ছড়াকার।

সুত্র: কালের কন্ঠ


সর্বশেষ - রাজনীতি