1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

আওয়ামী লীগের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ কী ব্যবসায়ীরা?

অধ্যাপক ড. আহমেদ আমিনুল ইসলাম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১০ জুন, ২০২২

জাতীয় নির্বাচন সমানে রেখে বিভিন্ন দেশেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যেমন হিসাব-নিকাশ ও চিন্তা-ভাবনা শুরু হয় তেমনি ব্যবসায়ী মহলেও শুরু হয় অনুপরূপ তৎপরতা। বাংলাদেশেও সেই প্রবণতা আছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সেই প্রবণতা যেন একটু বেশি পরিমাণেই দেখা যাচ্ছে বিশেষ করে ব্যবসায়ী মহলে। তার প্রমাণ আমরা বাজারের হাল-হকিকত দেখে বুঝতে পারছি। হাল-আমলে বিশ্বের অনেক দেশে করপোরেট কোম্পানিগুলো নির্বাচনে ব্যাপক প্রভাবকের ভূমিকা রাখে। অর্থাৎ জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সংশ্লিষ্ট দেশের ব্যবসায়ী মহল তাদরে তৎপরতা কিংবা অপতৎপরতা দেখাতে নানা কৌশল অবলম্বন করেন। পুনরাবৃত্তির মতো শোনালেও আমরা দেখি কোনো কোনো দেশে ব্যবসায়ীরাই জাতীয় নির্বাচনের নিয়ামক শক্তি হিসেবে কাজ করেন।

নিবাচনকে কেন্দ্র করে ব্যবসায়ের কাছে রাজনীতি অনেক সময় হার মেনে নেয়। মোদ্দাকথা ব্যবসায়ীদের হিসাব-নিকাশ ও চিন্তা-ভাবনার বাইরে রাজনৈতিক শক্তির সক্রিয়তা প্রদর্শনের তেজ যেন দিনদিন কমেই যাচ্ছে! একে নিয়তিই বলি আর অদৃষ্ট, এর থেকে মুক্তি পাওয়া দুষ্কর। করপোরেট বিশ্বে রাজনীতি কতটা স্বতন্ত্র, স্বয়ংসম্পূর্ণ কিংবা স্বতস্ফূর্ত তা নিয়ে গবেষণারও অন্ত নেই। বাংলাদেশে এ বিষয়ে গবেষণা কম হলেও ভবিষ্যতে হয়তো আমাদেরকেও অনুরূপ গবেষণায় সময় ব্যয় করতে হবে।

আওয়ামী লীগের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এখন আর কোনো রাজনৈতিক দল নয়, বড় চ্যালেঞ্জ ব্যবসায়ীরা। বাংলাদেশের বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন শ্রেণির ব্যবসায়ীরাই আওয়ামী লীগ তথা সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ। সরকার ব্যবসায়ী শ্রেণিকে আগামী নির্বাচনের পূর্বপর্যন্ত কতটা মোকাবিলা করতে পারে তাও হয়তো আমাদের দেখতে হবে। রাজনৈতিক ডামাঢোল যতটুকু বাজবার শঙ্কা তাও ব্যবসায়ীদের নানারূপ কারসাজির ওপরই নির্ভর করছে। বাংলাদেশকে শ্রীলংকার সাথে তুলনা করে পেছন থেকে ব্যবসায়ীরাই রাজনৈতিক আন্দোলন কিংবা রাজনৈতিক অঙ্গণকে পরোক্ষভাবে গরম করায় মনোনিবেশ করেছেন বলে আপাতদৃষ্টে মনে হচ্ছে। তা না হলে ছোট, বড়, মাঝারি সব আকৃতির ব্যবসায়ীরাই বাজারকে নানাভাবে অসহনীয় মাত্রায় কেনই বা অস্থির করে তুলবেন? বাংলাদেশ যদি শ্রীলংকার ন্যায় পরিণতি বরণ করে তবে তাদের পোয়াবারো হওয়ার সম্ভাবনাই ব্যাপক! তাই কি তাদের নানা অপকৌশলের শিকারে পরিণত এ দেশের সাধারণ মানুষ? তাই কি তারা সরকারকেও বিব্রত করছে প্রায়শই?

নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি প্রসঙ্গে আমরা রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধকে বারবার সামনে আনি। কিন্তু দেশের ভেতরকার কালোবাজারি, মজুদদারদের প্রসঙ্গ ঠিক মতো জনসমক্ষে আনতে পারছি না। আমরা তো এখনো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির পশ্চাতে সক্রিয় ‘সিন্ডিকেট’কেই শনাক্ত করতে পারিনি! অথচ বারংবার বহুল কথিত, বহুল চির্চিত, বহুল ব্যবহৃত ‘সিন্ডিকেট’ শব্দটি ভোক্তাদের নিকট এক ভয়ংকর আতংকের শব্দ হিসেবে পরিচিত হয়ে ইঠেছে। সম্প্রতি আমরা দেখতে পাচ্ছি দেশের সুপ্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা, যাদের সুনাম কেবল জাতীয় নয় আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিস্তৃত তারাও বাজারকে অস্থির করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছেন। বিপুল পরিমাণ চাল অনৈতকিভাবে মজুদের জন্য সাম্প্রতিককালে সরকার স্কয়ার গ্রুপের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। মহামান্য উচ্চ আদালত থেকে প্রতিষ্ঠানটির কর্ণধার অঞ্জন চৌধুরি ইতোমধ্যে ‘আগাম জামিন’ও নিয়েছেন। এই ভেবে আমরা আরো বেশি আতংকগ্রস্থ হই যে, তার এবং তার প্রতিষ্ঠানের মতো স্বনামধন্য, দেশে-বিদেশে বহুল পরিচিত ব্যবসায়ী এবং প্রতিষ্ঠান যদি অনৈতিক কর্মকাণ্ডে জড়িত হয়ে পড়ে তখন আমাদের হতাশা বোধের শেষ থাকে না। হতাশ হই, দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি, সে দীর্ঘশ্বাস অনেক গভীর! স্কয়ার তো মাত্র একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এ রকম আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান যদি অনুরূপ অনৈতিক কর্মকাণ্ডে আশ্রয় নিয়ে চালসহ অন্যান্য খাদ্যসামগ্রী মজুদে মনোযোগী হয়ে পড়ে তবে আমাদের বাজার একেবারে যে খাদ্যশূন্য হয়ে পড়বে তা নিশ্চিত। এটিই বাজারের সম্ভাব্য পরিণতি! আর দুর্ভাগ্যবশত বাজার যদি এমন হয়ে যায় তবে কী বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হবে তা কল্পনাও করা যায় না! বড়জোড় ব্যথিতচিত্তে শ্রীলংকার দিকে তাকিয়ে সঙ্গী লাভের (!) সুখটাই পাওয়া যাবে মাত্র! কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ব্যবসায়ীরা (এবং গুটি কতক রাজনীতিবিদ) বারবার আমাদের সামনে শ্রীলংকার পরিণতি হাজিরের চেষ্টা করেন। জাতি দেউলিয়া হলে ব্যবসায়ী এবং কিছু রাজনৈতিক নেতাদেরই লাভবান হওয়ার সুযোগ সৃষ্টি হবে! কিন্তু আমরা দৃঢ়তার সাথে বিশ্বাস করি জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ততটা উন্মূল নয় ততটা অদূরদর্শীও নয়। কোথাও কোনো কারসাজি চলছে!

দুঃখজনক যে, এসব ব্যবসায়ীর ও তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রভাব, প্রতিপত্তি, বিত্ত, বৈভব এতটাই সুদূর ও বিপুল যে, সাধারণের পক্ষে এমনকি সাধারণ মানের গণমাধ্যমের পক্ষে তাদের বিরুদ্ধে বিন্দুমাত্র ‘খবর’ প্রকাশেরও নেই! প্রভাবশালীদের প্রতি ভীতিমিশ্রিত এই সমীহ একটি জাতীয় সমস্যা। রাজনৈতিক কোনো সমস্যা বা সংকট রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা সম্ভব। কিন্তু শক্তিধর ব্যবসায়ীদের ব্যবসায়িক বুদ্ধি ও ব্যবসায়িক ষড়যন্ত্র মোকাবিলা কঠিন। স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানসমূহের এমন বিরূপ আচরণ তথা ব্যবসায়ী সমাজকে মোকাবিলায় সরকার দক্ষতার পরিচয় দেবে আশা করি। নির্বাচনপূর্বকালে সরকারকে আবার কৌশলীও হতে হবে। সব পক্ষের চাওয়া-পাওয়ার মধ্যে একটা সমন্বয়সেতুও তৈরি করতে হবে। তবে, সাধারণের কথাই সরকারকে চিন্তার সর্বাগ্রে ও সর্বোর্দ্ধে রাখতে হবে। এককালের ‘গরিবের দল’ হিসেবে পরিচিত আওয়ামী লীগকে কৌশলর মাধ্যমেই এগোতে হবে। আমরা কথায় কথায় যে কোনো শ্রেণি পেশা বর্ণ বা গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে নির্বিচারে কড়া সমালোচনা করতে পারি। কিন্তু সরকার সহসাই কোনো পক্ষে তার অবস্থান স্পষ্ট করতে পারে না, উচিতও নয়। সরকার সব পক্ষের জন্য সমান আচরণ প্রদর্শন করবে এটাই শাশ্বত বিধি। সরকারকে সব পক্ষের মন, মেজাজ, মর্জি, মতামত শুনে ধীরে-সুস্থে চলতে হয়। কিন্তু সাম্প্রতিককালে ব্যবসায়ীদের নানারূপ কর্মকাণ্ডে আমাদের মনে এই একটি সন্দেহই ঘনীভূত করে তুলেছে যে, তারা নিজেদের ব্যবসায়িক লাভালাভের চেয়ে রাজনৈতিক কোনো দূরভিসন্ধির আশ্রয়ও নিয়ে থাকতে পারেন! তারা সরকারকে নানাভাবে ব্যতিব্যস্ত করে তুলছেন সরকারের মসৃণ পথচলাকে কণ্টকিত করে তুলছেন। তাদের অনেক কর্মকাণ্ডে সরকার কিছুটা হলেও বিব্রতকর অবস্থায় পড়ছে। তাদের অনেক কর্মকাণ্ডে সরকারের কিছুটা হতাশাবোধও রয়েছে। ব্যবসায়ীদের সক্রিয় সিন্ডিকেটের কারণেই বাজার অস্থির হয়। সেই অস্থিরতাকে কেন্দ্র করে বিরোধী পক্ষ নানা প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে নিজেদের পক্ষে জনমত তৈরির প্রয়াস চালায়। বর্তমান সরকারের নানাবিধ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে থেকে সাধারণের দৃষ্টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার বিভিন্ন অপপ্রয়াস চালাতেও তারা ব্যাপক তৎপর। ফলে, জননেত্রী শেখ হাসিনার দায়িত্বকালীন বড় বড় উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর সফলতা সাধারণের কাছে যথার্থরূপে পৌঁছাতে পারছে না। নানা উসিলায় প্রথমত ব্যবসায়ীদের একটি গোষ্ঠী এবং দ্বিতীয়ত বিএনপি ও তার সমমনা দলগুলো সরকারকে ব্যতিব্যস্ত রাখার অপচেষ্টায় মগ্ন আছে বলে আমাদের মনে হচ্ছে। আমাদের এই ‘মনে হওয়া’ ভুল হলেই আমরা খুশি হবো। ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা অনৈতিক কর্মকাণ্ডে লিপ্ত আছেন তাদের কাছে আমাদের বিনীত নিবেদন, আমাদের সন্দেহ, অনুমান, ভ্রান্তি ও বিভ্রান্তি ঘুচিয়ে দেবেন। এ কথা তো সত্যিই যে, বাংলাদেশকে অনেক পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়।

টানা প্রায় আড়াই বছর করোনা মহামারির তাণ্ডব শেষে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধের প্রভাব বিশ্ব বাজারকেও অস্থির করে তুলেছে। সেই অস্থির বিশ্ব বাজার থেকে বাংলাদেশকেও উচ্চমূল্যে পণ্য আমদানি করতে হয়। তার ধারাবাহিকতায় কিছু কিছু পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির প্রবণতাকে আমরা স্বাভাবিক বলে মেনে নিই। কিন্তু তাই বলে চালের মৌসুমে চালের সংকটকে আমরা মেনে নিতে পারি না। চালের বর্তমান মূল্য কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত নয়। কৃষি মন্ত্রণালয় বলছে উৎপাদন প্রচুর, খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে মজুদও প্রচুর। তাহলে সরকারকে সাধারণের কাছে বৈরীরূপে কারা প্রতিপন্নের প্রয়াস পাচ্ছেন তা খতিয়ে দেখা দরকার।
জননেত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় তার বক্তৃতায় জনগণকে মিতব্যয়ী হওয়ার পরামর্শ দেন। পরামর্শ দেন অপচয় রোধের। তিনি উৎপাদন বৃদ্ধির বিষয়েও আমাদেরকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, আমরা যেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি না রাখি। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হলে তার প্রভাবে আমাদের দেশের সংকটও তীব্র হবে, সে সংকট হবে নানামুখী। এরকম পরিস্থিতিতে আমাদের সতর্ক ও সচেতন থাকার বিকল্পও নেই। মহামারি ও যুদ্ধের ডামাঢোলের মধ্যে ব্যবসায়ীরা যদি অসৎ পন্থা অবলম্বন করেন তাহলে জাতির জন্য তা বিপর্যয়ই ডেকে আনবে। বাংলাদেশের ব্যবসায়ী সমাজ মানবিক ও সামাজিক ন্যায়বোধ এবং মূল্যবোধ ভুলে গিয়ে কেবল যদি লাভের পেছনে ছুটেন তবে দেশের সাধারণ মানুষকে ত্রাহি অবস্থা থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। বর্তমান সময়ে সব শ্রেণির ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে আমরা দায়িত্বশীল আচরণ আশা করি। ব্যবসায়ী সম্প্রদায় দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করলে রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধকে অনেক দূরের ঘটনা মনে হবে। আবার তাদেরই লাভ ও লোভি মানসিকতায় সেই যুদ্ধ আমাদের ঘরের বলেই প্রতিভাত হয়ে উঠতে পারে! আমাদের দেশের ব্যবসায়ীরা সাধারণের প্রত্যাশা মাথায় রেখেই নিজেদের লাভালাভ নিয়েও চিন্তিত হবেন।

প্রসঙ্গত আমরা ব্যবসায়ীদেরকে লোকসান দেওয়ার কথা বলছি না। বলছি মহামারি ও যুদ্ধের উসিলায় সাধারণকে যেন কোনোভাবেই জিম্মি করা না হয়। মানবিক ব্যবসায় প্রতিষ্ঠা করতে পারলেই সবার মনে শান্তি বিরাজ করবে। আমরা দেখেছি জননেত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়-বান্ধব সরকারি প্রণোদনা নিয়ে সব সময়ই তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। তাই ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মনে রাখা জরুরি, আওয়ামী লীগ বা সরকারের ‘চ্যালেঞ্জ’ হিসেবে নিজেদের পরিচিত করবেন না। আপনাদের বিপদে-সম্পদে জননেত্রী শেখ হাসিনা যেমন পাশ দাঁড়ান তেমনি তার পাশেও আপনাদের অবস্থানটি স্পষ্ট করুন। বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ায় শেখ হাসিনার বিপ্রতীপ চ্যালেঞ্জ না হয়ে পাশে থাকুন, সাথে থাকুন।

লেখক : আহমেদ আমিনুল ইসলাম, অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ - রাজনীতি