আগামী বছর থেকে সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এজন্য গঠন করা হবে ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি (এনটিএ) নামে একটি এজেন্সি। কোন পদ্ধতিতে এ এজেন্সি গঠন করা হবে সেই মতামত জানাতে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে চিঠি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। চলতি মাসের মধ্যে এ মতামত পাঠাতে বলা হয়েছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, এনটিএ গঠন করা হবে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতামতের আলোকে। এর ভিত্তিতে আগামী বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার আদলে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, গত ৩ এপ্রিল দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিতে একক পরীক্ষা নেওয়া ও ন্যাশনাল টেস্টিং অথরিটি বা এনটিএ গঠন বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে সভার আয়োজন করা হয়। এটি বাস্তবায়নে সভায় একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এর আলোকে ইউজিসির একজন সদস্যের নেতৃত্বে দেশের বড় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতিনিধি, শিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্টদের রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। শিগগির এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের পর আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু করবে কমিটি। এ বিষয়ে মতামত জানাতে গত ৩০ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চিঠি পাঠিয়েছে ইউজিসি। পরবর্তী এক মাসের মধ্যে এ মতামত পাঠাতে উপাচার্যদের অনুরোধ জানানো হয়েছে।
ইউজিসিতে আয়োজিত ওই সভায় শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষ থেকে সব বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে একটি সমন্বিত ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যায়, সে বিষয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। সমন্বিত একটি পরীক্ষা হবে, তবে বছরে সেটি একবার নয়, দুবার ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা যেতে পারে।
শিক্ষামন্ত্রী বলেন, সমন্বিত এ পরীক্ষা কীভাবে হবে, কী পদ্ধতিতে হবে সেগুলো ঠিক করার বিষয় রয়েছে। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে যেভাবে হয় আমাদের এখানেও সেভাবে হবে। আমাদের নতুন করে উদ্ভাবনের কিছু নেই। বিভিন্ন দেশে যেভাবে চলছে সেটি ভালোভাবে চলছে। সেগুলো দেখে আমাদের জন্য যেটা বেশি উপযোগী, যেটিতে কোনো হয়রানি থাকবে না সেই পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে। সেই প্রক্রিয়ার আলোচনা আমরা শুরু করেছি।
জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, জাপান, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে একক ভর্তি পরীক্ষা পদ্ধতি চালু থাকায় আমাদের নতুন করে কিছু উদ্ভাবনের প্রয়োজন হবে না। আমরা কোন পদ্ধতিটি বেছে নেবো সেটি সিদ্ধান্তের বিষয়।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মতামত জানতে ইউজিসি থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। যেহেতু বিষয়টি তাদের জন্য, তাই তাদের (বিশ্ববিদ্যালয়ের) মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে এনটিএ গঠন করা হবে। এটি বাস্তবায়ন হলে অটোমেটিক সব বিশ্ববিদ্যালয় এর আওতায় চলে আসবে। সেক্ষেত্রে কেউ আর আলাদা বা পিছিয়ে থাকার সুযোগ পাবে না।
জানা যায়, এনটিএ করতে ইউজিসির গঠন করা কমিটি সব বিচার-বিশ্লেষণ করে একটি ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির কাজটি এগিয়ে নিয়ে যাবে। এটি বাস্তবায়ন করা হবে আপাতত মেডিকেল কলেজে ভর্তির আলোকে। ভবিষ্যতে এ কমিটির মাধ্যমে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত ইংরেজি ভাষায় বিভিন্ন পরীক্ষা নেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। এ কারণে একটি মানসম্মত কমিটি গঠন করার প্রতি বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
গত বৃহস্পতিবার (৩০ মার্চ) ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান বলেন, এনটিএ কমিটি গঠনে একটি প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। চলতি মাসের মধ্যে এটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। কমিটি গঠনের পর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠানো মতামতকে গুরুত্ব দিয়ে সেভাবে একটি একক ভর্তি পদ্ধতির রূপরেখা প্রণয়ন করা হবে। এটি কার্যকর করা হবে আগামী বছর থেকে।
বাংলাদেশ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য পরিষদের সভাপতি ডুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হাবিবুর রহমান বলেন, দিন দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা বাড়ছে বলে ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে জটিলতা বেড়ে যাচ্ছে। এটি একটি ইউনিক পদ্ধতিতে হলে সেটি সহজ ও ব্যয় কমে যাবে। শিক্ষার্থীদের আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা দিতে হয় বলে তাদের ভোগান্তি ও অধিক অর্থ ব্যয় হচ্ছে। সেটিকে গুরুত্ব দিয়ে একটি শৃঙ্খলায় আনতে একক পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা চালু করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। আমরা এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।
তিনি আরও বলেন, এবছরও গুচ্ছ পদ্ধতিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করা হবে। সেক্ষেত্রে আগে যেসব জটিলতা ও সমস্যা দেখা দিয়েছিল তা সমাধান করা হচ্ছে। এটি আরও পরিবর্তন করা হচ্ছে। জুলাইয়ে গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষা শুরু করা হতে পারে।