1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বাঙালির ঈদ প্রত্যাশা

প্রণবকান্তি দেব : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ৩ মে, ২০২২

চারদিকে আনন্দে জোয়ার তুলে এমন শতরঙা ঈদ বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর আর কোথাও আসে কি না জানা নেই। বাড়ি, নাড়ি কিংবা শিকড়ে ফেরার এমন তোলপাড় করা আবেগ নিয়ে ঈদ উৎসবের উন্মাদনা বোধহয় বাঙালি ছাড়া আর কাউকে ছুঁয়ে যায় না। প্রায় ১ লাখ ৫০ হাজার বর্গকিলেমিটারজুড়ে ছড়িয়ে যায় যে উৎসবের ঢেউ, মিলনোন্মুখ মানুষের সে অবাধ, অগাধ খুশির জোয়ারে কিছু সময়ের জন্য গোটা দেশই হয়ে ওঠে ‘আনন্দ ময়দান’।

ঈদকে কেন্দ্র করে শহর থেকে শুরু করে গ্রাম পর্যন্ত চলে নানা আয়োজন। ‘ঈদে বাড়ি ফেরা’ নিয়ে কত ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটে যায়, কত মিলন-বিরহ স্মৃতি জমা হয় উৎসবকে ঘিরে। ঈদের চাঁদ দেখার আনন্দ-উত্তেজনা হার মানায় অন্যসব কিছুকে। নতুন পোশাক, পিঠাপুলির সঙ্গে সময়ের বিবর্তনে যুক্ত হয়েছে আরও কত কী!

গত দুটি বছর করোনার জন্য কিছুটা ম্লান ছিল ঈদ উৎসব। এবার তাই নতুন ব্যঞ্জনায় সমস্ত ভয়, আতংক আর দুঃসময়কে পেছনে ফেলে উদযাপনের তাগিদ। সামাজিক দূরত্ব শুনে শুনে কান ঝালাপালা হওয়া দিনগুলো ভুলে এবার তাই মিলনের ডাক মায়া পরবশ সময়ে। এবারের ঈদ তাই অনেকটা রোমাঞ্চকাতর। নিরুদ্বেগ আনন্দের পুনরাবর্তনে দুঃখদীর্ণ সময়কে জয় করার মতো।

এতদাঞ্চলে ঈদ উদযাপন শুধু মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যেই থেমে থাকে না। উৎসবের আনন্দ নানা ভঙ্গিমায় ছড়িয়ে যায় ধর্ম, গোত্র নির্বিশেষে সবার মাঝে। মৈত্রী আর ভ্রাতৃত্ববোধ এখানে বড় হয়ে দাঁড়ায় তখন। জাতি হিসেবে আমাদের অনেক এগিয়ে যাওয়ার গল্প যেমন আছে, তেমনি আছে সংকটের দীর্ঘ তালিকাও। ঈদের মতোন সর্বত্র আনন্দের ঢেউ তোলা এমন উৎসব আমাদের মনে করিয়ে দেয়, মানুষ মূলত মিলনপ্রত্যাশী।

এবারের ঈদকে ঘিরে কিছু প্রত্যাশার কথা বলি। প্রথমেই আশা রাখি, প্রযুক্তি-আসক্ত এই সময়ে ঈদে যেন আমরা বুকে বুক মেলাই বাস্তবে, কোলাকুলি করে ভুলে যাই ভেতরের সব খেদ। এরপর আশা রাখি, ঈদে বাড়িযাত্রা এবং ফেরা যেন নির্বিঘ্ন হয়।

সড়কে যেন কোনো প্রাণ না ঝরে, নৌপরিবহনগুলো যেন কারণ না হয়ে দাঁড়ায় কোনো কান্নার। যেতে যেতে পথে পথে মানুষের ভোগান্তির চিত্র যেন দেখা না যায়। আত্মীয়-পরিজন মিলে কাঙ্ক্ষিত আনন্দ যেন ভাগ করে নেয়া যায়। মা-বাবা কিংবা প্রিয়জনের বুকে যেন নেমে আসে এক ফালি প্রশান্তি।

তৃতীয়ত আশা করি, ঈদকে ঘিরে বোনা সব শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা যেন পূর্ণ হয়। তা যেমন- রাজনীতিক-উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, ধনাঢ্য ব্যবসায়ী-শিল্পী, সাহিত্য সম্পাদকের তেমনি দিনমজুর, রিকশাওয়ালাসহ খেটে খাওয়া সব মানুষের। এদেখা গেছে যে, উৎসব এলেই বাঙালির হৃদয়টা কেমন যেন বড় হয়ে যায়।

সবাই ভাগাভাগি করে নিতে চায় উৎসবের আনন্দকে। বৈশাখের দাবদাহে পোড়া দুপুরে সড়কের আশেপাশে বাক্স-পেটরা নিয়ে বসে আছেন যে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কিংবা সবাই গেছে ‘শপিং মলে’ বলে দীর্ঘশ্বাস তোলা সবজিওয়ালা, লেইস-ফিতাওয়ালা তাদেরও স্বপ্ন পূরণ হোক। স্বপ্ন পূরণ হোক বঞ্চিত, দুখী মানুষেরও।

আমি চাই, পত্রিকার ঈদ সংখ্যাগুলোও পাক পাঠকের মনে ঠাঁই। সৃষ্টির লক্ষ্যগামিতা একটি স্বতঃস্ফূর্ত বিষয়। একটি উপলক্ষকে ঘিরে সৃজনশীল মন বহু ধারায় বিচরণ করতে পারে। জীবনের প্রাত্যহিকতার বিপরীতে তখন নতুন অরূপভিসারী হয়ে ওঠে মন। ঈদ তেমনি এক চিত্তশুদ্ধির প্রসন্ন উৎসব। তাই প্রত্যাশা রাখি ঈদকে কেন্দ্র করে সব সৃষ্টিশীলতার জয় হোক।

ঈদকে ঘিরে প্রত্যাশা থাকুক, কোথাও যেন কোনো অপরাধ না ঘটে, দুর্ঘটনা না ঘটে, জানমালের কোনো ক্ষতি যেন না হয় কোনোভাবে।

ঈদে স্বজন-পরিজন নিয়ে ঘুরে বেড়ানো একটি চিরচেনা রীতি। এ আনন্দও ছুঁয়ে যাক সবাইকে। শিশু আর বয়োবৃদ্ধদের প্রতি যেন থাকে বিশেষ নজর। ভ্রমণে বইও থাকতে পারে হাতে। অন্যদিকে, পর্যটন, বিনোদন কেন্দ্রগুলো ব্যবহারে যেন আমরা সতর্ক হই, পরিবেশবান্ধব হই। কেননা চারপাশটা তো আমাদেরই। গাছ-পাখি, জল সবই আমাদের বন্ধু।

ঈদের প্রার্থনায় যেন রাখি দেশটাকে। দুর্নীতিমুক্ত একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের স্বপ্নটা যেন পূরণ হয় খুব তাড়াতাড়ি। এক পৃথিবী কল্যাণ যেন নেমে আসে দেশের মাটিতে। ঈদের আনন্দ ছুঁয়ে যাক সবাইকে।

লেখক : প্রণবকান্তি দেব – সহকারী অধ্যাপক, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।


সর্বশেষ - রাজনীতি