সাঈদী কে বাঁচাতে তার আইনজীবীরা যে নোংরামির আশ্রয় নিয়েছিল,আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল আদালতে বার বার প্রমাণ করার চেষ্টা করতে চেয়েছে যে, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে সংঘটিত অপরাধে দোষী যে ব্যাক্তির কথা বলা হচ্ছে সেই ব্যাক্তি অর্থাৎ দেলু শিকদার আর কাঠগড়ায় দাঁড়ানো ব্যাক্তি দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, এক ব্যাক্তি নয়। সাঈদী আদালত কে এও বলেছিল যে তার শিক্ষাগত যোগ্যতার যত সার্টিফিকেট আছে, সেগুলো খতিয়ে দেখা হলে যে নাম টা পাওয়া যাবে সেটা হল দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী, দেলু শিকদার নয়। তাই যাকে বার বার দেলু শিকদার বলে অভিহিত করা হচ্ছে সেই ব্যাক্তি আর সে সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাক্তি।
এরকম যখন একটা গুঞ্জন ওঠা শুরু করে, সাঈদী আর দেলু শিকদার এক ব্যাক্তি নয়, তখন এডুকেশন ডট নেট এই জালিয়াতির আসল সত্য প্রকাশ করে। সাঈদীর বয়স ও নামের জালিয়াতির সকল পর্দা ফাঁস করে দেয়। তাদের একটি সুদীর্ঘ অনুসন্ধানী রিপোর্ট পুরো বিষয়টার উপর চাঞ্চল্যকর তথ্য ফাঁস করে এবং বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ও তথ্যবহুল। সকল প্রমাণ হাতে নিয়েই সাঈদীর সকল চক্রান্ত কে নাকচ করে দেয়।
রিপোর্ট অনুযায়ী, বলা হয়েছিল আমরা যাকে আজকে দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী নামে জানি, এই ব্যাক্তি তার ভাষ্য ও সার্টিফিকেট অনুযায়ী সে দাখিলা পাশ করে ১৯৫৭ সালে দারুস সুন্নাহ শশীনা মাদ্রাসা থেকে। আর ১৯৬০ সালে বরই পাড়া মাদ্রাসা থেকে আলিম পাশ করে। দাখিলা আর আলিম পরীক্ষার প্রশংসা পত্রে সে নাম দেয় আবু নাঈম মোঃ দেলোয়ার হোসাইন।
এই সুত্রে যদি আমরা একটু যোগ বিয়োগ করি বোঝার সুবিধার্থে দেখবেন সেখানে, সাঈদী জন্মতারিখ হিসেবে ০১-০১-১৯৪৫ ব্যাবহার করে। তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়ায় ঠিক এমন, হিসাব করে দেখা যায় যে, সাঈদী তার জন্মের ১২ বছরের মধ্যেই দাখিলা পাশ করে, যা কোন ভাবেই সম্ভব নয় এবং বিষয়টি অত্যন্ত অবিশ্বাস্য। জন্মের ১২ বছরের মধ্যে কি দাখিলা পাশ করা আদৌতে সম্ভব? আপনারা কি বলেন?
রিপোর্ট থেকে আরও জানা যায় যে, সাঈদী তার আলিম আর দাখিল পরীক্ষার সার্টিফিকেট এ উল্লেখিত নামটা পরিবর্তন করতে চেয়েছে ২০০৮ সালে নভেম্বরের ৫ তারিখ। তাহলে দাখিল পাশের ৫১ বছর আর আলিম পাশের ৪৮ বছর পর সে নামটা পরিবর্তন করে। পরিবর্তিত নাম হয় দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী।
আপনারা একটা বিষয় জেনে থাকবেন, যদি নাম পরিবর্তন করতে হয় তাহলে নাম পরিবর্তন সংক্রান্ত আইন যা বলে, তা হল, যদি প্রশংসা পত্রে/ সার্টিফিকেটে নামে ভুল থাকলে তা পাশ করার ২ বছরের মধ্যে পরিবর্তন করতে হবে। এখন প্রশ্ন আসতেই পারে, সাঈদী কি করে পাশ করার ৫১ বছর পর নাম পরিবর্তন করল? আদালত তাকে এই একই প্রশ্ন করেছিলো। সাঈদী এই প্রশ্নের কোন উত্তর কোনভাবেই দিতে পারে নাই।
উল্লেখ্য, ওই সময়ে নাম আর বয়স সংশোধন সংক্রান্ত কমিটির সদস্যরা ছিল মাদ্রাসা বোর্ডের চেয়ারম্যান, অধ্যাপক মোঃ ইউসুফ (বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত আছেন)। আর রেজিস্ট্রেশনে জিনি ছিলেন সে অধ্যাপক হাফিজুর রহমান,( তিনিও বর্তমানে অবসর প্রাপ্ত), সাবেক নিয়ন্ত্রক আর বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুর নূর। নাম গুলো বলার গুরুত্বপূর্ণ একটি কারন হল, এই বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ আব্দুর নূর ২০০৩ সালে এই যুদ্ধাপরাধী সাঈদীর সুপারিশে পদোন্নতি লাভ করে। আশা করি এবার বিষয়টা আপনাদের কাছে পরিস্কার হয়েছে, যে কি সুকৌশলে এই নরঘাতক সাঈদী তার নাম আর বয়স জালিয়াতির কাজটা করেছিলো।
দৈনিক সংগ্রাম এ দেয়া সাঈদীর বিজ্ঞাপন যেখানে এফিডিবিট এ সাঈদীর বয়স ০১=০১-১৯৪৫ দেখানো হয়েছে।
বিজ্ঞাপনে যা লেখা হয়েছে পুরোটাই ছিল এরকমঃ
‘আমি দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদী জন্ম তাং ০১-০১-১৯৪৫ ইং পিতা মাওলানা ইউসুফ সাঈদী বাড়ি নং ৯১৪ শহীদবাগ ঢাকা। আমি জন্মসূত্রে বাংলাদেশের নাগরিক ও স্থায়ী বাসিন্দা। আমি পূর্ব পাকিস্তান মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড বর্তমানে বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডর অধীনে আলিম ও দাখিল পাস করি, দাখিল পাসের সন ১৯৫৭ ১ম বিভাগ রোল নং ৩৯২০ কেন্দ্র সারসিন । দাখিল পরীক্ষায় ভুলবশত: আমার নাম দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদীর পরিবর্তে আবু নাঈম মোহাম্মদ দেলাওয়ার হুসাইন লিপিবদ্ধ হয়েছে। আলিম পাসের সন ১৯৬০ সাল রোল নং ১৭৬০ কেন্দ্র খুলনা বিভাগ ৩য়। আলিম পরীক্ষায় ভুলবশত: আমার নাম দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদীর পরিবর্তে আবু নাঈম মোহাম্মদ দেলাওয়ার হুসাইন লিপিবদ্ধ হয়েছে।প্রকৃতপক্ষে আমার শুদ্ধ ও সঠিক নাম হবে দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদী । এ ব্যাপারে আমি অদ্য ৫/১১/২০০৮ ইং নোটারী পাবলিক ঢাকা এর সম্মুখে উপস্থিত হয়ে আমার নাম সংশোধনের বিষয়ে হলফ করলাম। দেলাওয়ার হুসাইন সাঈদী, পিতা মাওলানা ইউসুফ সাঈদী, বাড়ি নং ৯১৪ শহীদবাগ, ঢাকা। সংগ্রাম পি-৭২১২/০৮’
এখানে একটু লক্ষ্য করে দেখুন, সাঈদী কিন্তু ২০০৮ সালের ৫ নভেম্বর শুধু বয়স পরিবর্তন করে।
উপরে আমি বয়স জালিয়াতির কথাও বলেছিলাম। তাই এবার যে বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করব, সাঈদীর বয়স জালিয়াতি। বিজ্ঞাপনে যেহেতু সাঈদী লিখেছিল ১৯৪৫ সাল, একটা বিষয় আমাদের কোনভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যাবে না তা হল, সাঈদী কি করে ১২ বছর বয়সে দাখিলা পাশ করে? এই ধুরন্দর শয়তান, যেন কেউ ধরতেই না পারে তাই চালাকি করে সে বয়স পরিবর্তন করে ২০০৫ সালের ৮ নভেম্বর। কিন্তু বাংলায় একটা প্রবাদ আছে, চোরের ১০ দিন গৃহস্তের ১ দিন। কারন চতুর সাইদী এইখানেও আইন ভেঙ্গে বসে আছে। মিথ্যা ঢাকতে গেলে যা হয়। বয়স সংক্রান্ত এফিডেবিট এর ক্ষেত্রে, এফিডেবিট করতে হয় যে বয়স পরিবর্তন করতে চান তার পিতা/ মাতার যদি জীবিত থাকেন। সাঈদীর মা ২০০৮ সালে জীবিত থাকতেও এই দেইল্লা রাজাকার নিজেই স্বাক্ষর করে এফিডেবিটে যা সম্পূর্ণ ভাবে অবৈধ এবং ভিত্তিহীন। নিচের ছবিটিতে লক্ষ্য করুন, সেখানে সাঈদীর করা স্বাক্ষর দেখতে পাবেন।
আরও একটা প্রমাণ দিচ্ছি দেখুন, সাঈদী ২০০৮ এর নভেম্বর এর ৮ তারিখে স্বাক্ষরের স্থানে লিখেছে ‘দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী’ কিন্তু নির্বাচনের প্রত্যয়ন পত্রে নাম পরিবর্তনের মাত্র ২২ দিনের ভেতরে নিজের স্বাক্ষর পরিবর্তন করে, মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী। অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটা বিষয় খেয়াল করুন নিচের ছবিতে। সাঈদীর সকল সার্টিফিকেট এ জন্ম সাল ১৯৪৫ লেখা হলেও, নির্বাচনের সময় জন্ম সাল হয়ে যায় ১৯৪০ সাল।
এর পরের বিষয় সাঈদীর শিক্ষাগত যোগ্যতা থেকে পর্দা তুলবো। সর্বসাকুল্যে সাঈদীর পড়াশোনার দৌড় আলিম পাশ পর্যন্ত। কিন্তু এই বদমাইশ নামের আগে ঠিকই আল্লামা লাগিয়ে বসিয়ে আছে। আপনি যদি গাধা না হয়ে থাকেন, সবার মনে প্রশ্ন আসবেই, সাঈদী কি তার নামের আগে আল্লামা লিখতে পারে? ২০০৮ সালের নির্বাচনের প্রত্যয়ন পত্রে নিজেই লিখেছে তার সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা হল আলিম পাশ। মানে ইন্টারমিডিয়েট সমতুল্য। যে মানুষ এর সর্বোচ্চ শিক্ষাগত যোগ্যতা মাত্র আমিল পাশ তাহলে কোন যুক্তিতে এই রাজাকার নামের আগে আল্লামা লেখে? এই কথা কিন্তু সাঈদীর বিরুদ্ধে আসা রায়ের ৮ নম্বর পাতায় উল্লেখ রয়েছে। রায়ে উল্লেখ করা অংশ আর নির্বাচনের প্রত্যয়ন পত্রের ছবি দেয়া হল। মিলিয়ে দেখুন।
এবার অর্থের মিথ্যা হিসাবের ব্যাপারে একটু বলি। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সাঈদী নির্বাচন কমিশনে যে আয় হিসাব দেখিয়েছে আর নিজের আয় ব্যয় এর হিসাবের সঙ্গে কোনই মিল নাই। বাংলা লিক্স এর প্রকাশ করা সাঈদীর ফাঁস হয়ে যাওয়া ফোনালাপ এর সঙ্গে কিছুই মিল পাওয়া যায় না। আয়কর এর কাগজ অনুযায়ী সাঈদীর ব্যাঙ্কে জমা টাকার যে পরিমান্দেখান হয়েছিল টাকার অঙ্কটি ছিল ৬ লক্ষ্য ৯ হাজার আটশ চার টাকা। কিন্তু বাংলা লিক্স এর ফাঁস হওয়া ফোনালাপ যেখানে সাঈদী তার আইনজীবী কে আব্দুর রাজ্জাকের সাথে কথা বলেছে, উল্লেখ করেছে ব্যাংকে কয়েকশো কোটি টাকা আছে সেটা সুচতুর এই ধান্দাবাজ নির্বাচনের সময় এড়িয়ে গেছে। নির্বাচনের সময় দাখিল কৃত কাগজ পত্রে নিত সম্পত্তির পরিমান দেখিয়েছে সব মিলিয়ে মাত্র ৮০ লক্ষ্য পনের হাজার সাতশো সোত্তুর টাকা সেখানে মাত্র কয়েক বছরের মধ্যে কি করে এত বিপুল অর্থের মালিক হয়েছে? আর কি করেই বা ব্যাংকে কয়েকশো কোটি টাকা এলো?