1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

জামায়াতের উসকানিতেই হিন্দুদের উপর হামলা

নিজস্ব প্রতিবেদক : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শুক্রবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২২

বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জে হিন্দু যুবকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনায় স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর সমর্থকদের উসকানি ও সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। এ ঘটনায় ১৮ জন গ্রেফতার হলেও উসকানিদাতাদের এখনও গ্রেফতার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলার এই বাহিনী।

পুলিশের দাবি, ঘটনার পর থেকে উসকানিদাতারা পলাতক থাকায় গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। তবে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এলাকার বাসিন্দা এবং ভুক্তভোগী পরিবার জানিয়েছেন, ইসলাম ধর্ম নিয়ে ফেসবুকে অবমাননাকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে সোমবার (১১ এপ্রিল) বিকালে ওই যুবককে নিয়ে স্থানীয় বাজারে সালিশ বৈঠক হয়। সেখানে তার বাবাসহ এলাকার অনেকে উপস্থিত ছিলেন। অপরাধ স্বীকার করলে যুবককে তার বাবা মারধর করেন। পরে উপস্থিত সবার কাছে ক্ষমা চান যুবক ও তার বাবা। তবু তারাবির নামাজের পর তাদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়।

সালিশি বৈঠকে উপস্থিত থাকা নিশানবাড়িয়া ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মিরাজুল ইসলাম মিলন বলেন, ‘এমন কাজ আর করবে না বলে সালিশে মুচলেকা দিয়েছিল যুবক। ক্ষমাও চেয়েছিল বাবা-ছেলে। কিন্তু এর বিরোধিতা করে একটি পক্ষ স্থানীয় বিভিন্ন মসজিদে খবর দেয়। তারাবির নামাজের পর তিন শতাধিক মুসল্লি জড়ো হন। এরপর মিছিল নিয়ে যুবকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর এবং গড়ের গাদায় অগ্নিসংযোগ করা হয়।’

তিনি দাবি করেন, ‘এ ঘটনায় উসকানি দেওয়ার মূলহোতা হলেন যুবলীগ নেতা পরিচয় দেওয়া উজ্জল খান এবং জামায়াত নেতা আমুরবুনিয়া মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক নুর জামান হাওলাদার। মূলত এই দুজনের উসকানিতেই হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়।’

আমুরবুনিয়রা গ্রামের বাসিন্দা আউয়াল মিয়া ও মালেক ফরাজি বলেন, ‘উজ্জল খান এবং নুর জামান হাওলাদার মসজিদের মুসল্লিদের উসকানি দিয়ে ওই বাড়িতে নিয়ে গিয়েছিল। মানুষকে ভুল বুঝিয়ে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে তারা। ঘটনার পর এলাকা থেকে পালিয়েছে দুজন। এখন আমরা আতঙ্কে আছি।’

স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুল মালেক বলেন, ‘ঘটনার দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে কয়েকজন যুবক মোটরসাইকেল নিয়ে ওই যুবককে খুঁজতে এলাকায় এসেছিল। তারা যুবকের বাড়িতেও গিয়েছিল। তাদের সঙ্গে পথিমধ্যে আমার দেখা হয়। তখন তাদের ধমক দিয়ে তাড়িয়ে দেই। এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেছিলাম তাদের।’

তিনি আরও বলেন, ‘পরে খবর নিয়ে জেনেছি, ভয়ে ওই যুবক আত্মগোপনে চলে গেছে। এত কিছুর পরও রাত ১০টার দিকে উজ্জল খান ও নুর জামান হাওলাদারের নেতৃত্বে তিন শতাধিক লোক হঠাৎ মিছিল বের করে। ওই মিছিল থেকে হামলা, ভাঙচুর ও খড়ের গাদায় আগুন দেয় উত্তেজিত জনতা। একটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটে গেলো। যা এর আগে এখানে ঘটেনি।’

বাগেরহাট জেলা পুলিশের মিডিয়া সেলের প্রধান সমন্বয়কারী পুলিশ পরিদর্শক মো. আশরাফুল আলম বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে এ ঘটনায় উজ্জল খান ও জামায়াত নেতা নুর জামান হাওলাদারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা সালিশি বৈঠকের বিরোধিতা করে নিশানবাড়িয়ার গ্রামজুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে। তাদের দুজনকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’

তিনি বলেন, ‘হিন্দু বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় দায়ের হওয়া দুই মামলায় ১৮ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি উজ্জল খান ও নুর জামান হাওলাদারসহ তিন জন পলাতক রয়েছে।’

যেভাবে ঘটনার সূত্রপাত

সরেজমিনে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, আমুরবুনিয়া গ্রামে ১১০ পরিবারের বসবাস। এর মধ্যে ৫৪টি হিন্দু পরিবার। বাকিগুলো মুসলিম পরিবার। এর মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারটি ছিল এক কৃষকের। চার ছেলেমেয়ে নিয়ে ৩০ বছর ধরে এখানে বসবাস করছেন। ৪০ বছর ধরে একসঙ্গে এসব পরিবার বসবাস করে এলেও কখনও ধর্ম নিয়ে বিরোধে জড়ায়নি কেউ। হঠাৎ কেন গ্রামজুড়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলো, তার উত্তর খুঁজে পাচ্ছেন না ওই যুবকের মা-বাবা।

পুলিশ পরিদর্শক আশরাফুল আলম বলেন, ‘ওই যুবক তিন বছর ধরে ভারতে ছিল। সেখানে রাজমিস্ত্রির কাজ করতো। এক সপ্তাহ আগে ভারত থেকে বাড়িতে আসে। ভারতে থাকার সময় ধর্ম নিয়ে ফেসবুকে বিতর্কিত একটি পোস্ট দেয়। ওই পোস্ট নিয়ে সোমবার বিকাল ৪টার দিকে স্থানীয় জিউধারা বাজারে সালিশ বৈঠক হয়। বৈঠকে যুবক ও তার বাবা ক্ষমা চায়। এ ধরনের কাজ আর করবে না এবং কিছুদিন যুবক এলাকায় থাকবে না বলেও অঙ্গীকার করে। এরপর সন্ধ্যায় কয়েকশ মুসল্লি যুবকের বাড়িতে জড়ো হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে যুবককে হেফাজতে নেয়। রাতে তারাবির নামাজের পর তার বাড়িতে হামলা চালানো হয়।’

ওই যুবকের মা বলেন, ‘পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য ছেলেকে পুলিশের হাতে তুলে দিই। এরপর কিছুটা নিশ্চিন্তে ছিলাম যে, আপাতত আর কিছু হবে না। কিন্তু রাতে কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে আমাদের বাড়িতে হামলা চালানো হয়। বাড়িঘরে আগুন দিয়ে চলে যায় তারা। ছেলে এবং ছেলের বাবা সালিশে ক্ষমা চেয়ে মুচলেকা দেওয়ার পরও কয়েকজন বিরোধিতা করেছিল। তারাই পরে লোকজন নিয়ে এসে হামলা চালিয়েছিল বলে আমার মনে হয়।’

তবে এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে রাজি হননি ওই যুবকের বাবা। ঘটনার পর থেকে তিনি আতঙ্কিত রয়েছেন। কারও সঙ্গে কোনও কথাবার্তা বলছেন না।

৮ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য মিরাজুল ইসলাম মিলন ও স্থানীয় বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি বিপুল সরকার বলেছেন, ‘হামলার নেতৃত্বে থাকা আলেব খানের ছেলে উজ্জল খান ৮ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বলে নিজেকে পরিচয় দেন। পাশাপাশি নুর জামান হাওলাদার আমুরবুনিয়া মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও জামায়াতের রাজনীতি করেন।’

তবে মোড়েলগঞ্জ উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক মোজাম্মেল হক বলেন, ‘যুবলীগের কোনও কমিটিতে উজ্জল খানের পদ নেই। নাশকতাকারী কোনও দলের নেতা কিংবা কর্মী হতে পারে না। বিগত দিনে উজ্জল যুবলীগের সভাপতি পরিচয় দিলেও সেটি আমার জানা নেই।’

মোড়েলগঞ্জ উপজেলা জামায়াতের আমির মো. শাহাদাৎ হোসেন বলেন, ‘নুর জামান হাওলাদার আমাদের দলের কেউ না। এর দায় আমরা নেবো না। অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।’

সোমবার উপজেলার আমুরবুনিয়া গ্রামে ‘ইসলাম ধর্ম’ নিয়ে ফেসবুকে অবমাননাকর পোস্ট দেওয়ার অভিযোগে হিন্দু যুবকের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।

বাগেরহাটের পুলিশ সুপার কে এম আরিফুল হক বলেন, ‘সেদিন যে ঘটনা ঘটলো তা জঘন্যতম এবং দুঃখজনক। এ ঘটনায় দুইটি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুরের অভিযোগে একটি মামলা করেছেন ওই যুবকের বাবা। এই মামলায় ২০ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৮০-৯০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার এজাহারভুক্ত ১৭ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। অপরদিকে, আমরবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার হাওলাদার বাদী হয়ে ওই যুবককে আসামি করে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে আরেকটি মামলা করেছেন। দুই মামলায় ওই যুবকসহ ১৮ জনকে গ্রেফতার করে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঘটনার উসকানিদাতাসহ বাকি আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।’


সর্বশেষ - রাজনীতি