নতুন করে হেফাজতে ইসলামের আরও দুইশ’ নেতার তালিকা তৈরি করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই তালিকা ধরে রাজধানী ঢাকার বাইরেও অভিযান চালানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। জেলা পুলিশের সহায়তা নিয়ে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ-ডিবি এ অভিযান চালাচ্ছে। প্রতিনিয়ত গ্রেফতার, গ্রেফতার আতঙ্কে আত্মগোপনে থাকা ও নজরদারির ভয়ে এরইমধ্যে ভেঙে পড়েছে দলটির শীর্ষ কমান্ড।
ইতোমধ্যে গোয়েন্দা পুলিশের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোকে তালিকা ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তালিকায় থাকা হেফাজতের শীর্ষ নেতাদের ধরতে ডিবির একাধিক দল অভিযানও শুরু করেছে। পুলিশের পাশাপাশি এলিট ফোর্স র্যাবও ঢাকার বাইরের শীর্ষ হেফাজত নেতাদের গ্রেফতারে অভিযান শুরু করেছে।
ঢাকার বাইরেই বেশি
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ডিএমপিতে দায়ের হওয়া মামলার অনেক আসামি ঢাকার বাইরের বিভিন্ন জেলায় রয়েছে। তাদেরও ধরতে অভিযান চলছে। আমাদের গোয়েন্দা পুলিশ তাদের নজরদারি এবং গ্রেফতারের চেষ্টা করছে। একইসঙ্গে কিছু কিছু আসামিকে ধরতে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশকে রিকুইজিশন দিচ্ছি। তারা গ্রেফতার করে আমাদের কাছে পাঠিয়ে দেবে।’
ডিএমপি কমিশনার বলেন, ‘আইন ভঙ্গকারী কারও বিরুদ্ধে আমাদের কোনও ছাড় নেই। মামলার এজাহারভুক্ত আসামি এবং এজাহারে নাম নেই কিন্তু বিশৃঙ্খলায় সম্পৃক্ততা বা উসকানিতে সম্পৃক্ততা পাওয়া যাচ্ছে যাদের, তাদেরও গ্রেফতার করা হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রাজধানী ঢাকাসহ ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামে তাণ্ডব চালানোর অভিযোগে প্রথমে হেফাজতের শীর্ষ ৩০ নেতার একটি তালিকা করা হয়েছিল। ওই তালিকায় ঢাকায় অবস্থান করা নেতাদের নাম ছিল। ওই তালিকা ধরে ইতোমধ্যে ঢাকার কেন্দ্রীয় প্রায় ১৪ জন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এরপর ঢাকাসহ সারা দেশে তাণ্ডবে উসকানি দেওয়া নেতাদের একটি তালিকা করা হয়েছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, নতুন তালিকায় মোট ১৯৪ জনের নাম রয়েছে। এরমধ্যে অর্ধশতাধিক নেতা চট্টগ্রামের। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অন্তত এক ডজন নেতার নাম ওই তালিকায় রয়েছে। এর বাইরে কক্সবাজার, ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জ, হবিগঞ্জ, সিলেট, মানিকগঞ্জ, গাজীপুর, কুমিল্লা, নোয়াখালী ও মুন্সীগঞ্জের একাধিক হেফাজত নেতার নাম রয়েছে।
গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, তালিকায় থাকা ব্যক্তিদের নাম প্রকাশ হলে তারা আত্মগোপনে যেতে পারে।
তালিকার বাইরেও নজরদারি
গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, আগের তালিকা ছাড়াও নতুন করে যাদের তালিকা রয়েছে তাদের প্রায় প্রত্যেকেই বিভিন্ন মামলার আসামি। তবে বেশ কয়েকজন নেতার নাম তালিকায় নেই, যদিও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির নেপথ্যে তাদের প্রত্যক্ষ উসকানি রয়েছে। তারাও নজরদারিতে আছেন।
গোয়েন্দা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের শেষের দিকে বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য স্থাপনের বিরোধিতা থেকে শুরু করে সম্প্রতি মোদিবিরোধী আন্দোলনে যেসব নেতা সক্রিয় রয়েছেন, তারাই মূলত তালিকায় রয়েছেন। তালিকার প্রথমেই হেফাজতের বর্তমান আমির আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরীর নাম রয়েছে। তবে বয়স্ক হওয়ায় সরাসরি তাকে গ্রেফতার করা হবে, নাকি চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করা হবে তা এখনও পরিষ্কার নয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, তালিকায় থাকা ব্যক্তিরা সম্প্রতি হেফাজতের কর্মীদের মাঠে নামিয়ে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করছিলেন। সভা-সেমিনার ও ওয়াজের নামে সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে আসছিলেন। কারণে-অকারণে তারা রাস্তায় নেমে রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টাও করেছিলেন।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘পুলিশের পাশাপাশি র্যাবও হেফাজতের বিভিন্ন মামলার আসামিদের গ্রেফতারে সহায়তা করছে। এরমধ্যে ঢাকার বাইরেরও একাধিক জেলায় অভিযান চালিয়ে হেফাজতের একাধিক নেতাকে গ্রেফতার করেছে র্যাব। অভিযান চলছে।’
ভেঙে পড়েছে শীর্ষ কমান্ড
হেফাজতের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, কয়েক দফা চেষ্টা করেও সরকারের সঙ্গে সমঝোতা করতে না পেরে বেকায়দায় পড়ে গেছে সংগঠনের নেতাকর্মীরা। গ্রেফতার আতঙ্কে শীর্ষনেতা থেকে কর্মীরাও এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। বেশিরভাগ হেফাজত নেতা রাতে নিজের বাড়িতে অবস্থান না করে বিভিন্ন মসজিদ-মাদ্রাসা বা আত্মীয়-স্বজনের বাসায় থাকছেন। এমনকি ইন্টারনেটের মাধ্যমে যোগাযোগের বিভিন্ন অ্যাপস ছাড়া কেউ কারও সঙ্গে কথাও বলছেন না।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক হেফাজত নেতা বলেন, ‘সরকার এত কঠোর অবস্থানে চলে যাবে তারা কল্পনাও করেনি। এখন দলের শীর্ষ কমান্ড পুরোটাই ভেঙে পড়েছে। সবাই গ্রেফতার এড়ানোর চেষ্টায় ব্যস্ত। এই মুহূর্তে কোনও কর্মসূচি দেওয়ারও সাহস পাচ্ছেন না। রমজান মাস ও করোনা মহামারির কারণে ঘোষিত লকডাউনও তাদের বিপদে ফেলেছে।’