হেফাজত নেতা মামুনুল হককে অবরুদ্ধ করার ইস্যুতে সোনারগাঁয়ের কয়েকজন সরকারদলীয় নেতাকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিল হেফাজতের একটি গ্রুপ। সেই পরিকল্পনায় সোনারগাঁ যুবলীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম নান্নু, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ সভাপতি সোহাগ রনি, সোনারগাঁ ছাত্রলীগের সদস্য ও জার্নালিস্ট ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক রাকিবুল হাসানকে টার্গেট করা হয়েছিল।
এই পরিকল্পনার প্রাথমিক অংশ হিসেবে হেফাজতের হামলার শিকার হয়েছিলেন সোনারগাঁয়ের সাংবাদিক হাবিবুর রহমানও।
ওই তিন নেতাকে হত্যা করতে ইতোমধ্যেই হেফাজতের কয়েকজন তাদের ফেসবুকের মাধ্যমে নিজেদের গ্রুপ পোস্টে বার্তাও ছড়িয়ে দিয়েছিলেন বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তারা।
পুলিশ জানিয়েছে, ছাত্রলীগের নেতা সোহাগ রনিকে হত্যার করতে নিজেদের মধ্যে পরিকল্পনার কথোপকথনের অডিও রেকর্ডও হাতে এসেছে তাদের। সুনির্দিষ্ট এসব প্রমাণের ভিত্তিতে গ্রেফতার করা হয়েছে এই পরিকল্পনার মূল হোতা হেফাজতে ইসলামের নেতা খালেদ সাইফুল্লাহ সাইফ, হেফাজতে ইসলামের কর্মী কাজি সমির ও তাবলীগ জামাতের সদস্য আব্দুল অহিদকে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) একাধিক টিম অভিযান চালিয়ে শুক্রবার বিভিন্ন এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করে।
এদিকে জেলা পুলিশের একজন কর্মকর্তা বিস্ময় প্রকাশ করে জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে একজন তাবলীগ জামাতের সদস্যও আছেন যা আমাদের ভাবিয়ে তুলেছে। কারণ হেফাজতের নীতিগত আদর্শের সঙ্গে তাবলীগ জামাতের আকাশ-পাতাল ফারাক রয়েছে।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে রয়েল রিসোর্টে হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা মামুনুল হককে তার কথিত স্ত্রীসহ অবরুদ্ধ করার ঘটনার সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লাইভ ভিডিও করেছিলেন যুবলীগ নেতা রফিকুল ইসলাম নান্নু, সোহাগ রনিসহ সেখানে উপস্থিত অনেকেই। ওই ঘটনার মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যে কয়েক হাজার হেফাজতের নেতাকর্মীরা রিসোর্টটিতে তাণ্ডব চালিয়ে পুলিশের জিম্মায় থাকা মামুনুলকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
ব্যাপক ভাংচুর থেকে রক্ষা পায়নি সোনারগাঁ উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়, যুবলীগ নেতা নান্নু ও ছাত্রলীগ নেতা রনির বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানও। যদিও এসব ঘটনায় দায়েরকৃত পৃথক ৪টি মামলায় এজাহারভুক্ত ১২ আসামিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
জেলা পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, মামুনুল হকের অবরুদ্ধ হওয়ার ঘটনার পর হেফাজতের মূল টার্গেটে পরিণত হন সোনারগাঁয়ের জনপ্রিয় ছাত্র নেতা সোহাগ রনি। মামুনুল হকের কথিত স্ত্রী ঝরনার ছবির সঙ্গে রনির ছবি জুড়ে দিয়ে তাকে ছাত্রলীগ নেতার স্ত্রী বানিয়ে প্রোপাগান্ডাও চালানো হয়। এই অপকর্ম থেকে রক্ষা পাননি যুবলীগ নেতা নান্নুও।
ওই সূত্র জানান, হেফাজতের এই সাইবার অপরাধের সঙ্গে যুক্ত তাদের বিশাল সাইবার সেলের সদস্যরা। এসব কাণ্ড ঘটিয়ে তারা রনি ও নান্নুর বিরুদ্ধ জনরোষ সৃষ্টি ও হেফাজতের কর্মীদের খেপিয়ে তুলতে চেয়েছিল যা হত্যা পরিকল্পনার অংশ বলেই মনে হচ্ছে।
জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আলমগীর হোসেন জানিয়েছেন, যে তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তারা সোনারগাঁয়ের সরকারদলীয় নেতা সোহাগ রনিকে হত্যার পরিকল্পনায় জড়িত ছিল। আমাদের হাতে একাধিক তথ্য প্রমাণ ও অডিও রেকর্ড এসেছে। তবে তদন্তের খাতিরে এখন কিছু বলা যাবে না।
এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম জানিয়েছেন, আমরা প্রতিটি ঘটনা অত্যন্ত সুচারুভাবে তদন্ত করছি। গোয়েন্দা তৎপরতা চালাচ্ছি। এসব ঘটনায় যারাই জড়িত তাদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে।