1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

বঙ্গবন্ধু থেকে বিশ্ববন্ধু : যেভাবে হিমালয় গড়ে উঠে

সম্রাট দেব চৌধুরী : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ১৭ মার্চ, ২০২২

বঙ্গবন্ধু, বাংলার প্রতিটি শিশুও যে নামটির সাথে পরিচিত। যার জীবন কেটেছে তার দূখী মানুষগুলির জন্যে। তাকে বাংলার মানুষ মনেও রেখেছে তাই বাংলার বন্ধু, বঙ্গবন্ধু রুপেই। যদিও হিমালয় যেমন নেপালের কোল থেকে উঠে এসে হয়ে ওঠে সারা বিশ্বের, তেমনি তাঁকেও আপন করে পেতে চেয়েছিলো সমগ্র বিশ্ব। তিনি সেই বজ্রকণ্ঠ, যার উদাত্ত ঘোষণা ছিলো “সমগ্র পৃথিবী আজ দুই ভাগে বিভক্ত, শাসক আর শোষিত, আর আমি শোষিতের পক্ষে”। তাকে বন্ধু রুপে বরণ করে নিয়েছিলো সারা বিশ্বই।

আজ আমি বিশ্ববন্ধুর কথা বলতে চাই। আমি বলতে চাই সেই গণনায়কের কথা, ১০২ বছর আগে মধুমতীর তীর থেকে উঠে আসা যে প্রাণ সময়ের সাথে একাত্ম হয়ে গিয়েছিলো আলমান্দারেস,মেকঙ আর জর্দানের স্রোতে। পৃথিবীর প্রতিটি বঞ্চিত, নিপীড়িত প্রাণের কাছে যিনি হয়ে উঠেছিলেন অনুপ্রেরণার বাতিঘর, যার দেখানো পথ আশা জাগাতো কোটি মানুষের মনে।

ছাপ্পান্ন হাজারের গন্ডী পেরিয়ে যার চর্চায় মুখরিত হতো মধ্য এশিয়া থেকে পূর্ব ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা থেকে উত্তর আফ্রিকা, আমি আজ তার কথাই বলছি।
সহস্রাব্দ প্রাচীন বাঙালির ইতিহাস যখন আত্মগ্লানি আর হীনমন্যতায় ভরা, উত্তর ভারতীয়ের অঙ্কুষ থেকে তুর্কীর তলোয়ার হয়ে মারাঠীর বল্লমে, বৃটিশের বন্দুকে যুগে যুগে বাঙালি যখন নিপীড়িত, শোষিত, লুন্ঠিত তখন প্রতিবারই বাঙালি খুঁজেছে সেই গণনায়ককে, যার তর্জনীর ঈশারায় জীবন মৃত্যু তুচ্ছ জ্ঞান হয়, যার বজ্রকণ্ঠে মোহ মায়ার ভ্রম ছুটে যায়, নিজ অস্তিত্বের রক্ষায় যার বরাভয় ঢাল হয়ে দাঁড়ায়, বজ্র হয়ে ঝরে পড়ে।

শতাব্দীর পর শতাব্দী কৈবর্ত ভীম থেকে বাঘা যতীনে, সুভাষ বসুতে বাঙালি খুঁজেছে সেই গণনায়ককেই।
আজ থেকে ১০২বছর আগে সে যুগপুরুষেরই আবির্ভাব হয়েছিলো মধুমতীর পলিভেজা মাটিতে।
আবির্ভাব হয়েছিলো সেই মহানায়কের, যিনি বাঙালিকে দিয়েছিলেন সমগ্র বিশ্বের বুকে একটি স্বীকৃত, সুপ্রতিষ্ঠিত, সুনির্দিষ্ট স্বাধীন ভূখণ্ড। তাঁর নাম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
১৯২০ সালের ১৭ই মার্চে শেখ লুৎফর রহমানের ঘরে যে শিশুর জন্ম হয়েছিলো শতাব্দীপ্রাচীন ভাঙা ইটের দালানে, একান্ন বছরের মাথায় তিনিই বাঙালিকে দিয়েছিলেন একটি আনকোড়া নতুন বাংলাদেশ।

একান্ন বছরের এই যাত্রা কেমন ছিলো? অঙ্ক করতে বসলে দেখা যায় এই যাত্রার এগারোটি বছর কেটেছে শোষকের কারাগারে। যাত্রার শুরুটি মাত্র আঠারো বছর বয়সে ফরিদপুরের সাব জেলে, যাত্রার শেষ পাকিস্তানের মিয়াওয়ালী কারাগারের কনডেম সেলে।
তিনি সেই বিরলতম মানুষ, যিনি নিজের জন্যে খোদা কবরটির পাশ দিয়ে হেঁটে ফিরেছেন নিজের হাতে গড়া স্বাধীন একটি দেশে।
মাঝের পথ বিভীষিকার, রক্তের, কান্নার। ছেলে হারা মায়ের বুকফাটা রোনাজারির, মা হারা সন্তানের নির্বাক চাহনির।
একটি মুজিব একদিনে গড়ে ওঠে না, কেউ একদিনে হতে পারে না সারা বাংলার বন্ধু। ব্রিটিশের ডিভাইড এন্ড রুলের ঘোলা জলে যার প্রথম জেল যাপন ভিন্ন ধর্মাবলম্বীদের ষড়যন্ত্রে, তিনিই মায়ের মতো সহিষ্ণুতায় ঘোষণা করেন “আমি স্বপ্ন দেখি অসাম্প্রদায়িক বাংলার।” তেতাল্লিশের দূর্ভিক্ষে রাস্তায় রাস্তায় বহু কষ্টে সংগৃহীত অল্পমাত্র খাবার নিয়ে ক্ষুধিতের মুখে মুখে যোগাতে গিয়ে মা হারা দুধের শিশুর নির্বাক চাহনী দেখেছেন যে মুজিব, তিনি তাই গড়ে উঠেছেন ভিন্ন সত্ত্বা হয়ে। তাকে ঘরে ফেরাতে পারেনি তাই দু বছরের সন্তানের গলা জড়িয়ে ধরা আবদার, “বাবা, বালি চলো”। কান্না গিলে কারাগারের শিকের ওপার থেকে মুজিব তাই বলেছেন ” বাবা, তুমি তোমার মায়ের বাড়ি যাও, আমি আমার বাড়িতে থাকি। মাঝে মাঝে আমায় দেখে যেও।”

মুজিবের দীর্ঘ পথযাত্রায় যেটুকু সুযোগ তিনি পেয়েছেন নিয়মতান্ত্রিক ভাবে কাজ করার, প্রাতিষ্ঠানিক যেটুকু সুযোগ তিনি পেয়েছেন তাতেই সোনা ফলিয়েছেন। গড়েছেন নতুন ইতিহাস। পাকিস্তান আমলে মাত্র এক বছরেরও কম সময়ের জন্যে মন্ত্রীত্ব পালনের সময়েও শত প্রতিকুলতার মধ্যে রেখেছেন বহু অবদান, বীজ বপন করেছেন কৃষিপ্রধান এই দেশের প্রথম ও সবচেয়ে বড় গো প্রজনন কেন্দ্রের। এক ছরের জন্যে পাকিস্তান চা বোর্ডের দায়িত্ব পেয়েই ভেঙেছেন শতাব্দী প্রাচীন বৈষম্যের জাল। হ্যা, আধুনিক দাসপ্রথার ক্রীতদাস, দক্ষিণ ভারত থেকে বৃটিশের তুলে আনা কালো মানিক চা শ্রমিকেরা প্রথম মজুরিবৃদ্ধি পায় বঙ্গবন্ধুর সময়েই৷ বাংলার, মূলত সিলেট অঞ্চলের প্রতিটি চা বাগানে আজও মুজিবের স্থান তাই দেবতুল্য। আজও চা শ্রমিকেরা, সে চা শ্রমিকদের চতুর্থ প্রজন্ম, বঙ্গবন্ধুর নাম উচ্চারণে কপালে ঠেকায় হাত, গর্বিত কণ্ঠে বলে আমরা মানুষ দেখি না, মার্কা দেখি, মুজিবের মার্কা নৌকা, ভোট নৌকায় পড়বে, কে দাঁড়াবে তা জানার দরকার নেই আমাদের।”
বঙ্গবন্ধুকে কেনার চেষ্টা করেছিলো পশ্চিমের শাসকেরা, না পেরে চেষ্টা করেছিলো ভাঙার। রাষ্ট্রীয় বন্দীশালায় সেই চেষ্টার কোনো ত্রুটিই তারা রাখেনি। যে প্রক্রিয়ায় মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে চিরতরে মহাকালের অতলে হারিয়ে গেলেন তারই সহযোদ্ধা, তার হাতে গড়া সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সহপ্রতিষ্ঠাতা শামসুল হক। মরদেহের সন্ধানটিও যার পাওয়া যায়নি বহু যুগ।
বঙ্গবন্ধুকেও একই ভাবে ভেঙে দেওয়ার চেষ্টায় কোনো কসুর রাখেনি পশ্চিমারা। প্রতিক্রিয়ায় তিনি শুধু বঙ্গমাতাকে বলেছিলেন “যদি পাগল হয়ে যাই তবে আমায় পাগলাগারদে দিয়ো না। জেলখানার পাগলাগারদের পাশেই রাখা হতো তাকে, দেখে দেখে জানতেন জালিম শোষকের প্রশাসন কী আচরণ করে রাষ্ট্রের আমানত সেই হতভাগাদের সাথে।

সব চেষ্টায় ব্যর্থ জান্তা সরকার বঙ্গবন্ধুকে চিরতরে শেষ করার জন্যে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলায় ক্যাঙারু ট্রায়াল করে তাকে ঝোলাতে চেয়েছিলো ফাঁসিতে। হ্যা, জেলের তালা “ভেঙেই” ছিনিয়ে এনেছিলো সেদিন বাঙালি তার প্রাণের নেতাকে। শেখসাব সেদিন হয়ে উঠেছিলেন অগ্নিগর্ভ সময়ের সন্তান, বাঙালির চেতনার অগ্নিময় বিচ্ছুরণ, তিনি হয়ে উঠেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
কালের স্রোতের উত্থান পতনে সুচিন্তিত ও সুবিন্যস্ত পদক্ষেপে বঙ্গবন্ধু এগিয়ে গিয়েছিলেন একাত্তরের পথে।
তার দূরদর্শিতা ও যোগ্যতার প্রমাণ সত্তরের নির্বাচন।
তার দৃঢ়তা আর অসীম সাহসিকতার প্রমাণ একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চের প্রতিটি মুহুর্ত।
আর তিনি বিশ্বরাজনীতির কিংবদন্তি তার সাতই মার্চের অমর কথামালায়।

একটি মুহুর্ত একজন কবিকে দেয় কবিত্বের স্বীকৃতি। একটি মুহুর্তের মাঝে বন্দী হয় সময়, অচল হয় বিশ্বরুপ। তেমনি একটি মুহুর্তের জন্ম তিনি দিয়েছেন সাতই মার্চ উনিশশো একাত্তরে। তেমনি একটি মুহুর্তে শতাব্দীর বঞ্চিত, পরাধীন জাতি জানতে পেরেছে “সাত কোটি মানুষেরে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না।”
সেদিনই বাঙালি জেনে গেছে “এ বারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এ বারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।”
রেসকোর্স ময়দান আর গেটিসবার্গ সেদিন মিলেমিশে এক হয়েছিলো। বিশ্বের সর্বত্র চিরন্তন মানবতার আকাঙ্ক্ষা এক, এক প্রতিটি প্রানের শ্বাশত আহ্বান। তাই সেদিন থেকে বিশ্বের কাছে সাতই মার্চ আরেক গেটিসবার্গ, গেটিসবার্গ আরেক সাতই মার্চ।

সাতই মার্চের হাত ধরে ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে স্নাত দিগন্তে স্বাধীনতার যে সূর্য উঠেছিলো, তার প্রথম কিরণে সিক্ত হওয়ার সুযোগও জোটেনি বঙ্গবন্ধুর। মিয়াওয়ালীর বন্দী তখনো জানেন না তার কপালে কী বরাদ্দ। ইয়াহিয়া চেয়েছিলো ব্যাকডেটে সাইন বসিয়ে ফাঁসি দিতে। ভুট্টোর কাছে একটি প্রস্তাবই রেখেছিলো কেবল,” ক্ষমতা হস্তান্তর করছি, শুধু মুজিবকে ঝোলাতে দাও। আমি ব্যাকডেটে সাইন বসাবো।” ভুট্টো শুধু বলেছিলো “আমার এক লক্ষ সৈং এখনো ওই দেশে যুদ্ধবন্দী। শেখ মুজিবের কিছু হলে একজনও পাকিস্তানে জীবিত ফেরত আসবে না। তার প্রতিক্রিয়া এখানেও পড়বে। সুতরাং এটা সম্ভব নয়”।
বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন কিছুটা নিয়মতান্ত্রিকতায় বাঁধা ছিলো। যার ফলে তাকে ব্রিটেন হয়ে ভারত, তারপর স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরতে হয়। ব্রিটেন যাওয়ার পথে সেদিনের যাত্রা বিরতি ছিলো সাইপ্রাসে। কিষাণ মজুরের বাংলাদেশে নব্বই ভাগ লোক যে দেশে নাম কখনো শুনেনি সেই দেশে। সেই রাস্তায় সেদিন যে জনসমাবেশ ঘটেছিলো তা আজও অবাক করে আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকদের। সম্পূর্ণ অচেনা, অজানা একটি মানুষ, ভূরাজনৈতিক কোনো যোগসূত্র যার সাথে নেই সাইপ্রাসের গণমানুষের, তাঁর জন্যে কেনো সেই ঢল? জবাব কোনো ব্যাখ্যা বা বিশ্লেষণে আবদ্ধ করা যায়নি আজও, তবে কারণটা সবারই জানে। শোষণের বিরুদ্ধে মানবতার শ্বাশত আহ্বান এক হয় সারা বিশ্বে, মহাসাগরগামী স্রোতধারার মতোই প্রবাহমান মানব চেতনা, সারা বিশ্বকে গাঁথে একই সুতোয়, সব কালে, সব যুগে। দিল্লীতে লাখো জনতার ভালোবাসায় সিক্ত হয়ে স্বদেশ প্রত্যাবর্তিত নেতা যখন হাল ধরলেন তখন দেশের প্রতিটি রাস্তা, প্রতিটি স্থাপনা ছিলো বিধ্বস্ত।

সারা বিশ্বকে ডাকলেন নেতা, মানুষের প্রয়োজনে ডাকলেন মানুষকে। জানুয়ারি থেকে এপ্রিল, ১৯৭২ সময়সীমার মাঝেই বঙ্গবন্ধুর কূটনৈতিক নৈপুণ্যে বাংলাদেশের সাথে ভারত, সোভিয়েত, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্থাপন হয়। এ সময়ের মধ্যেই বাংলাদেশ আরও অর্ধশতাধিক রাষ্ট্রের স্বীকৃতি অর্জন করে।পেতে শুরু করে কমনওয়েলথ, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ব্যাংকসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার সদস্যপদ।
সত্তরের বিশ্বব্যবস্থায় বঙ্গবন্ধু ছিলেন এমন একজন বিশ্ব নেতা, যিনি সব সময়ই শোষিতদের পক্ষে কথা বলতেন। তিনি সে, যাঁকে কিউবার গেরিলা বিপ্লবী মতো হানায়ক ফিডেল ক্যাস্ট্রো তুলনা করেছেন হিমালয়ের সঙ্গে।

বঙ্গবন্ধু আফ্রিকায় বর্ণবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন; তিনিমধ্য এশিয়া থেকে আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকায় বৈদেশিক শাসনের অবসান চেয়েছেন। তিনি যেমন ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন, তেমনি গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত সাইপ্রাস সরকারকে উৎখাতের নিন্দাও করেছেন। বঙ্গবন্ধু সেই নেতা যিনি সত্তরের বিশ্বে নব্য ঐপনিবেশিকতার বিরুদ্ধে ডেভিডের মতো লড়তে থাকা ভিয়েতনামের অস্থায়ী বিপ্লবী সরকারকেও স্বীকৃতি দিয়েছেন নিঃশঙ্ক উদাত্ত হৃদয়ে। বইসরায়েলের আগ্রাসনের প্রতিবাদ জানিয়েছেন। ভগ্ন, ধ্বংসস্তুপে পিরিণত হওয়া দেশ থেকেও সংহতির বার্তা নিয়ে, হৃদয়েই উষ্ণ স্পর্শ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর প্রেরিত চা গিয়েছে মিশরে, সিরিয়ায়। আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে আহতদের চিকিৎসাসেবা দেওয়ার জন্য বঙ্গবন্ধু মিসর ও সিরিয়ায় পাঠিয়েছেন চিকিৎসকদল।

জোটনিরপেক্ষ নীতি অবলম্বন করে বঙ্গবন্ধুর শান্তি ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান গ্রহণ বাংলাদেশকে বিশ্ব সভায় একটি ন্যায়ানুগ দেশের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করে। বঙ্গবন্ধু সেই নেতা যিনি বলেছিলেন, ‘পৃথিবীর বৃহত্তম শক্তি যে অর্থ ব্যয় করে মানুষ মারার অস্ত্র তৈরি করছে, সেই অর্থ গরিব দেশগুলোকে সাহায্য দিলে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে।’
এমনই এক প্রেক্ষিতে ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর “বিশ্ব শান্তি পরিষদের” প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সভায় বাঙালির মুক্তি আন্দোলন ও বিশ্বশান্তিতে অবদান রাখায় বঙ্গবন্ধুকে জুলিও কুরি শান্তি পদক প্রদানে তার নাম প্রস্তাব করেন পরিষদের তৎকালীন মহাসচিব রমেশ চন্দ্র। বিশ্বের ১৪০টি দেশের প্রতিনিধির উপস্থিতিতে বাঙালির জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রদানের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।এ সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে ১৯৭৩ সালের মে মাসে ঢাকায় দুদিনের এক সম্মেলন আয়োজন করে বিশ্ব শান্তি পরিষদ। বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে পরিষদের প্রতিনিধিরা এতে অংশ নেন। সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন ২৩ মে জাতীয় সংসদের উত্তর প্লাজায় আন্তর্জাতিক কূটনীতিকদের সমাবেশে পরিষদের তৎকালীন মহাসচিব রমেশ চন্দ্র বঙ্গবন্ধুকে ‘জুলিও কুরি’ শান্তি পদক প্রদান করেন। এ সময় রমেশ চন্দ্র বলেন, ‘শেখ মুজিব শুধু বঙ্গবন্ধু নন, আজ থেকে তিনি বিশ্ববন্ধুও বটে।’

হ্যা, সত্যিই তাই। যার কন্ঠ কখনো পক্ষপাতিত্ব করেনি, মজলুমের পক্ষে দাঁড়াতে নিজের যৎসামান্য নিয়েও এগিয়ে যেতে যে নেতা দ্বিধা করেননি, ফিলিস্তিনের গৃহহারার কান্না থেকে আফ্রিকার কালো মানিকের স্বেদবিন্দুর সবটুকুকেই যে মানুষটি আপন করে অনুভব করেছেন, যাঁকে আপন করে ভালোবেসেছে বিশ্বের প্রতিটি মুক্তিকামী প্রাণ, যার জন্যে বাংলার পাতার বাঁশী থেকে এমেরিকান গিটারেও বেজে উঠেছে মুক্তির গান, তিনি বিশ্ববন্ধুই তো। গোটা বিশ্ব যাকে বন্ধু বলে আপন করে নিয়েছিলো, তিনিই বিশ্ববন্ধু, আমাদের হিমালয়, আমাদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

লেখক : সম্রাট দেব চৌধুরী – শিক্ষার্থী, লোকপ্রশাসন বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।


সর্বশেষ - রাজনীতি