1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

গ্লুকোমা ডেকে আনে অন্ধত্ব

জাকিয়া সুলতানা সহীদ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ১২ মার্চ, ২০২২

গ্লুকোমা চোখের একটি জটিল চোখের রোগ। শিশু থেকে বয়স্ক সবাই এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে। দেশে চল্লিশোর্ধ্ব ৩০ শতাংশ জনগোষ্ঠী কোনো না কোনোভাবে গ্লুকোমায় আক্রান্ত। এটি মারাত্মক রোগ রোগীকে চিরতরে অন্ধ করে দিতে পারে। ভয়ের বিষয় আক্রান্তের অনেকেই জানে না তিনি এই রোগে ভুগছেন।

গ্লুকোমা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা না থাকায় যেমন এটা কী ধরনের রোগ, কাদের বেশি হয়, কখন হয়, উপসর্গ কী, কখন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যেতে হবে, ওষুধ ব্যবহারের ব্যবস্থাপত্র, চিকিৎসার ক্ষেত্রে নিয়মানুবর্তিতা ইত্যাদি তাহলে এই রোগের উপসর্গ দেখলেই আমরা গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হতে পারি। তিনিই বলে দিতে পারবেন আপনার গ্লুকোমা আছে কি না? থাকলে কী ধরনের চিকিৎসা আপনার জন্য গ্রহণযোগ্য। কারণ সব ধরনের ব্যবস্থাপত্র সবার জন্য প্রযোজ্য নয়, সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই এর নীতিনির্ধারক।

অন্ধত্ব জীবন দুর্বিষহ করে তোলে তেমনি অভিশাপও পরিবার, সমাজ, কিংবা একটা জাতির জন্য। গ্লুকোমা মানুষের দৃষ্টিশক্তিকে কেড়ে নেয় ঠিক কিন্তু সঠিক সময়ে যদি রোগনির্ণয় করা যায় কিংবা চিকিৎসা করা যায় তাহলে এই রোগকে প্রতিরোধ করা সম্ভব।

একজন সচেতন ব্যক্তিই পারবেন গ্লুকোমায় অন্ধত্ব থেকে নিজেকে রক্ষা করতে। তার এই রোগ সম্পর্কে সচেতনতা তাকে সত্বর ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে এবং দ্রুত চিকিৎসা নিতে সাহায্য করবে।

আপনি কি জানেন গ্লুকোমা অন্ধত্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম কারণ? ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন মানুষ সারা বিশ্বে গ্লুকোমাজনিত রোগে অন্ধ এবং ২০২০ সালে এর সংখ্যা হওয়ার কথা ১১ দশমিক ২ মিলিয়ন। ২০৪০ সালে গিয়ে দাঁড়াবে ১১১ দশমিক ৪ মিলিয়ন। আক্রান্তের ৫০ শতাংশ ব্যক্তি জানে তার গ্লুকোমা রয়েছে

যেহেতু এই রোগ নীরব ঘাতক যার উপসর্গ বোঝা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সম্ভব হয় না, সেহেতু ৫০ শতাংশ আক্রান্ত ব্যক্তিই বুঝতে পারে না তার গ্লুকোমা হয়েছে এবং ধীরে ধীরে তিনি অন্ধ হয়ে যাচ্ছেন। এজন্য প্রতি বছর অন্তত একবার একজন চল্লিশোর্ধ্ব মানুষ যদি বিশেষজ্ঞের কাছে চোখ পরীক্ষা করান তাহলে গ্লুকোমা রোগে চোখ মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আগেই সেটা প্রতিরোধ করতে পারবেন।

গণসচেতনতা বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে ওয়ার্ল্ড গ্লুকোমা অ্যাসোসিয়েশন চলতি বছরের ৮ থেকে ১৪ মার্চকে বিশ্ব গ্লুকোমা সপ্তাহ হিসেবে চিহ্নিত করেছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের গ্লুকোমা সোসাইটি এই সময় তাদের দেশে গ্লুকোমার বিরুদ্ধে অভিযান চালাবে। গ্লুকোমা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা, গ্লুকোমায় আক্রান্ত রোগীকে চিহ্নিত করা, চিকিৎসা করাই এই সপ্তাহের উদ্দেশ্য। গত ২০২০সালের স্লোগান ছিল- Green = Go, get your eye tested for glaucoma and save your sight.

মানে রাস্তার ট্রাফিক সিগন্যালের সবুজ বাতি এগিয়ে যাওয়ার সংকেত। বলা হচ্ছে আপনি এগিয়ে যান, গ্লুকোমার জন্য চোখ পরীক্ষা করান এবং আপনার চোখকে রক্ষা করুন।

জেনে রাখা ভালো, গ্লুকোমা এক ধরনের চক্ষূরোগ যা চোখের অপটিক স্নায়ুকে ধীরে ধীরে ধ্বংস করে এবং চোখের দৃষ্টিকে কেড়ে নেয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রে এই স্নায়ু ধ্বংসের একমাত্র কারণ চোখের উচ্চচাপ, তবে কিছু ক্ষেত্রে চোখের স্বাভাবিক চাপ ও চোখের অপটিক স্নায়ুর ক্ষতি করতে পারে। সুতরাং যত তাড়াতাড়ি রোগীর চোখের চাপকে আয়ত্তের মধ্যে আনা যাবে তত তাড়াতাড়ি চোখকে গ্লুকোমার হাত থেকে বাঁচানো যাবে।

যাদের গ্লুকোমা আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি

যাদের বয়স ৩৫-৪০ এর ঊর্ধ্বে, যাদের পরিবারে বাবামা কিংবা নিকটতম আত্মীয় যেমন- নানা-নানী, দাদা-দাদী, খালা-ফুপু, চাচা গ্লুকোমায় ভুগছেন তাদের ৩০ শতাংশ সম্ভাবনা গ্লুকোমা হওয়ার। ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, চোখের মাইনাস পাওয়ার ব্যবহার করেন, মাইগ্রেন, চোখের ছানি দীর্ঘদিন অপারেশন না করা, স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ ব্যবহার করা। এই রোগের ক্ষেত্রে রোগী সচরাচর যে সমস্ত উপসর্গগুলো বলে থাকেন সেগুলো হচ্ছে- প্রায়শ মাথাব্যথা ও চোখব্যথা, অস্বস্তি ভাব, যে চশমা তিনি পরছেন তাতে স্বস্তি না পাওয়া, দৃষ্টির চারপাশে রংধনুর মতো রং দেখা, স্বল্প আলোতে টিভি দেখা, লেখাপড়া বা সেলাই কাজ করতে গিয়ে মাথাব্যথা, চোখব্যথা করা ও চোখ লাল হয়ে যাওয়া অথবা স্বল্প আলো ছাড়াও চোখব্যথা,মাথাব্যথা ও চোখ লাল হওয়া, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে জন্মগত বড় চোখ কিংবা জন্মের পর আস্তে আস্তে চোখ বড় হয়ে যাওয়া, চোখের মণির চারপাশে চোখের সাদা অংশ দেখা বা মণি ঘোলাটে হয়ে যাওয়া। সবচেয়ে বড় কথা রোগী যদি অনুভব করেন তার চোখের ব্যাপ্তি বা দৃষ্টির চারদিকের পরিসীমা আগের চাইতে অনেক ছোট হয়ে গেছে, তিনি হাঁটতে চলতে বার বার চারপাশের জিনিসের সঙ্গে হোঁচট খাচ্ছেন তখন অবশ্য অবশ্যই আপনি গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞের কাছে দেখিয়ে জেনে নিন আপনি গ্লুকোমায় ভুগছেন কি না।

গ্লুকোমার কারণে যে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে যায় তা আর ফেরত পাওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু যতটুকু দৃষ্টিশক্তি আছে তাকে যদি আমরা চিকিৎসার মাধ্যমে ঠিক করতে পারি তাতে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যভাবে আপনার বাকি জীবন কাটিয়ে নিতে পারবেন। যার জন্য একজন বিশেষজ্ঞের সহযোগিতা যেমন দরকার, তেমনি একজন রোগীর নিয়মিত ওষুধ নেয়া, নিয়মিত ডাক্তারের কাছে চোখ দেখিয়ে নেয়া এই সহযোগিতা ও সদিচ্ছাও দরকার। আসুন আমরা গ্লুকোমাকে বরণ করে নয়, গ্লুকোমার সঙ্গে যুদ্ধ করে নিজেদের জয় করে নেই।

লেখক : জাকিয়া সুলতানা সহীদ, অধ্যাপক-চিকিৎসক। ফ্যাকো-গ্লুকোমা বিশেষজ্ঞ ও সার্জন; চক্ষু বিভাগ, আনোয়ার খান মডার্ন মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল।


সর্বশেষ - রাজনীতি