সম্প্রতি মদের দোকানের সাইনবোর্ডের একটি ছবি ফটোশপে এডিট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। সাইনবোর্ডের ছবিটি ফটোশপের মাধ্যমে মাঝখানে শেখ হাসিনার ছবি, ওপরের ডান পাশে আছে বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা ও সজীব ওয়াজেদে ছবি এবং বাম পাশে আওয়ামী লীগের দলীয় প্রতীক বসিয়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয়া হয়। ভাইরাল হওয়া সেই সাইনবোর্ডের ওপরে এডিট করে লেখা হয় —‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার অনুমোদিত। সরকারি দোকান দেশি মদের দোকান’। নিচে লেখা রয়েছে—‘নালিতাবাড়ী রোড, হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ঢাকা, বাংলাদেশ’।
ছবিটি ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে অনেকে বিরূপ মন্তব্য করেন। তবে অনেকেই তা এডিট করা ছবি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
হালুয়াঘাট থেকে মোহাম্মদ মাসুদ করিম শান্ত নামের এক ফেসবুক ব্যবহারকারী প্রকৃত সাইনবোর্ডের একটি ছবি পোস্ট করে লেখেন, ‘এই ছবিটা আমার নিজ হাতে অদ্য বেলা ১.২০ মিনিটের সময় তোলা, ছবিটা স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে কি লিখা আছে। এমন একটা ছবি বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে দেশের সাধারণ মানুষের মাঝে যারা বিভ্রান্তি সৃষ্টি করতে চায় তারা কখনো বাংলাদেশ চায়নি, তারা বাংলাদেশের উন্নয়ন চায় না। এরা দেশ বিরোধী অপশক্তি, এদের রুখে দাও বাংলাদেশ।’
ছবির বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসন বলছে, সাইনবোর্ডের ছবি তুলে এডিট করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং সজীব ওয়াজেদ জয়ের ছবি বসিয়ে দিয়েছে।
হালুয়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. রেজাউল করিম বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুরে সাইনবোর্ডটি আমাদের নজরে আসে। হালুয়াঘাটের নির্ধারিত স্থানে সাইনবোর্ডটি থাকলেও তাতে কারও ছবি নেই। কেউ ইচ্ছে করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফেক ছবি ছড়িয়ে দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি তৈরি করেছে।
বিষয়টি জানতে পেরে এবার এসব সাইবার অপরাধীদের ধরতে মাঠে নেমেছে স্থানীয় প্রশাসন ও একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। তারা গুজব সৃষ্টিকারী এসব ফেসবুক ইউজারদের খুঁজছে ।
গুজবের হোতা কে বা কারা?
ডিজিটাল সিকিউরিটি এ্যাক্ট অনুসারে অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনো কিছু শেয়ার, পোস্ট, মন্তব্য, এমন কি লাইক দেয়ার জন্যও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি দায়ি থাকবে। তাই যারাই শেয়ার করে ছড়িয়েছে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা যায়। তবে অনুসন্ধানে গুজবের মূল হোতাদের চিহ্নিত করা গেছে।
গুজবের মূল হোতা অনলাইনে শিবির ক্যাডার সুমন মাহমুদ, জঙ্গিবাদের সমর্থক খোমেনি এহসান এবং ছাত্র অধিকার পরিষদের শাহরিয়ার আরাফাত পারভেজ। শিবিরের পরিচালিত https://twitter.com/sajib2273 আইডি থেকে প্রথম এ পোস্টটি আপলোড করা হয়।
সোমবার রাত ২টা ১২ মিনিটে একটি জাতীয় দৈনিকের বিশেষ প্রতিনিধি একটি মেসেঞ্জার গ্রুপে ছবিটি পোস্ট করেন। সেখানে নানা মন্তব্য করেন ঐ গ্রুপের সদস্যরা। এরপর আরও গ্রুপ ও অনেকের ফেসবুক ওয়ালে ছবিটি দেখা যায়। এছাড়া সুমন মাহমুদ পোস্টটি টুইটারে এবং তার পরিচালিত রিয়াজ মিডিয়া পেইজে পোস্টটি শেয়ার করে।
পোস্টটি ছড়িয়ে দেয়ার কাজ করে ছাত্র অধিকার পরিষদের শাহরিয়ার আরাফাত পারভেজ ও খোমেনি এহসান ও আতিকুর রহমান।
এছাড়া সুমন আহমেদ ও কাজী জহির নামে দুই ব্যবহারকারীও শেয়ার করে ছড়িয়ে দিতে ভূমিকা রাখেন।
গুজব ছড়ানো এই সাইবার অপরাধীকে পুলিশ খুঁজছে বলে জানা গিয়েছে। ফটোশপে এডিট করে এভাবে আগেও অনেক গুজব ছড়ানো হয়েছে। সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকারীগণ এ ধরণের অপপ্রচার ও গুজব প্রতিরোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের দাবি করেছেন।