1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

সাইবার অপরাধ: বর্তমান অবস্থা ও আমাদের করণীয়

খন্দকার ফারজানা রহমান : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

নারীর প্রতি সহিংসতা ও অন্যায় নতুন কোনো ঘটনা নয়, বরং যুগ যুগ ধরে আমাদের সমাজে বিভিন্ন পরিবর্তিত রূপে নারীদের নির্যাতন, অত্যাচার এবং তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এরই একটি নতুন রূপ হলো অনলাইন ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নারীদের ভিকটিমাইজ করার প্রক্রিয়া। বর্তমানে নারীরা যেমন পরিবার ও সমাজে অপরাধ ও অন্যায়ের শিকার হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি শিকার হচ্ছে অনলাইন মাধ্যমগুলোতে। কারণ ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে সহজেই পরিচয় গোপন রেখে অপরাধ সংঘটন করা যায় এবং তত্ক্ষণাৎ প্রতিক্রিয়া ভুক্তভোগীর কাছ থেকে পাওয়া যায় না। এ ছাড়া সাধারণ মানুষ ডিজিটাল মাধ্যমের আইনগুলো সম্পর্কে পুরোপুরি অবগত নয়। অনেক নারীই হয়রানির বিষয়গুলো কারো কাছে বলতে চায় না। ফলে বেশির ভাগ ঘটনাই জানা যায় না বা বিচারের আওতায় আসে না। এ অবস্থায় অপরাধীরা বারবার অপরাধ করার সুযোগ পায় এবং ভুক্তভোগীর সংখ্যা বাড়তেই থাকে। পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন, ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ, বেসরকারি সংস্থা অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ এবং বিভিন্ন সংস্থার গবেষণায় অনলাইন প্ল্যাটফরমে নারীদের প্রতি অপরাধের ভয়াবহ চিত্র উঠে এসেছে।

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে মানবাধিকারের এই স্পষ্ট লঙ্ঘনের রূপ হয় সাইবার স্টকিং, প্রতিশোধ পর্নো, সাইবার বুলিং ও ট্রলিং। বেনামি ও জাল উৎস থেকে সাইবার স্পেসে আপত্তিকর এবং প্রায়ই আক্রমণাত্মক যৌন অভিব্যক্তি ও মানহানিকর বার্তাগুলোর প্রাথমিক প্রাপক মহিলারা। স্প্যাম, যৌনকর্মের ভিডিও, ধর্ষণের হুমকি এবং অশালীন প্রস্তাবসহ মহিলাদের মিথ্যা এবং পরিবর্তিত পোশাকহীন ছবি সোশ্যাল মিডিয়ার নতুন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এসব কারণে পারিবারিক ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন হওয়ার পাশাপাশি একজন নারী মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়তে পারেন।

পুলিশ সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেনের তথ্যানুসারে ২০২০ সালের নভেম্বর মাস থেকে শুরু হওয়া এই ইউনিটটি গত দুই বছরে ২২ হাজারের বেশি নারী অনলাইন বা সাইবার স্পেসে হয়রানির বিষয় নিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে, যাদের মধ্যে বেশির ভাগ ভুক্তভোগীই সব ধরনের তথ্য দিয়ে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে তাদের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সহায়তা করেছে। পুলিশের সাইবার সাপোর্টের তথ্য মতে, হয়রানির শিকার বেশির ভাগ নারীকেই (৪৩ শতাংশ) ফেক আইডির মাধ্যমে ব্ল্যাকমেইল বা হেনস্তা করা হয়েছে। এ ছাড়া পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের (উত্তর) হিসাব মতে, ২০২২ সালে সাইবার অপরাধ বিষয়ে মোট মামলা হয়েছে ১৭১টি। এর মধ্যে ২০.৪৬ শতাংশ পর্নোগ্রাফি ও অনলাইনে হয়রানির অভিযোগের এবং ২৯.২৩ শতাংশ মামলা করা হয়েছে অনলাইনে প্রতারণার অভিযোগে। অন্যদিকে অ্যাকশন এইডের দেশের ছয়টি জেলার ওপর গবেষণা থেকে দেখা যায়, মাত্র ১৪.৯১ শতাংশ নারী অনলাইন হয়রানির বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দেয়। অভিযোগকারীদের মধ্যে বেশির ভাগই সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে (৪৪.১২ শতাংশ) এবং সবচেয়ে কমসংখ্যক (৫.৮৮ শতাংশ) সাইবার ক্রাইমের ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন, সিটিটিসি ও ডিএমপির মাধ্যমে অভিযোগ দায়ের করেছে। এই সংস্থাটির গবেষণা অনুযায়ী বেশির ভাগ নারীই সমাজ এবং তাদের পরিচয় ফাঁসের ভয়ে অনলাইনে নাম প্রকাশ না করেই অভিযোগ দেয়।

আমরা যদি সাইবার অপরাধের প্রভাবগুলো বিশ্লেষণ করি, তাহলে আরো ভয়াবহ অবস্থা দেখতে পাই। অ্যাকশন এইডের তথ্য মতে, অনলাইন হয়রানি ও সহিংসতার কারণে নারীর জীবনে সবচেয়ে গুরুতর প্রভাব হলো মানসিক আঘাত, হতাশা ও উদ্বেগ। এতে ৬৫.০৭ শতাংশ এবং ২৫.৩৩ শতাংশ নারী ট্রমা বা মানসিক আঘাতের শিকার হয়। বিশেষ করে ১৮ বছরের নিচের কন্যাশিশুরা হয়রানির শিকার বেশি হচ্ছে। এসব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করলে আমরা সহজেই বলতে পারি, নারীরা পুরুষের তুলনায় কম ডিজিটালি সাক্ষর ও সচেতন; এই অসম ডিজিটাল বিভাজন নারীদের বিভিন্নভাবে ডিজিটাল জগতে অরক্ষিত হওয়ার সুযোগ তৈরি করে। এ ছাড়া সাইবার প্রতিরক্ষা কৌশলগুলোতে লিঙ্গ দৃষ্টিভঙ্গির অভাবের কারণে অনেক সময় নারীরা সুরক্ষা চাইতে পিছপা হয়ে থাকে।

অ্যান্টিভাইরাস ব্যবহার করা হলো ডিজিটাল সিস্টেমকে সাইবার আক্রমণ থেকে রক্ষা করার একটি স্মার্ট উপায়। সেই সঙ্গে মহিলাদের তাদের ব্যক্তিগত তথ্য বা ছবি অন্য লোকদের সঙ্গে শেয়ার করা উচিত নয়, যারা বিশ্বাসযোগ্য সম্পর্কের মধ্যে নেই। সম্ভাব্য হুমকি সম্পর্কে সচেতন হলে ভবিষ্যতে নারী ও মেয়েদের শিকার হওয়া রোধ করা যাবে। যদি কেউ শিকার হয়, তবে প্রথম এবং প্রধান কর্তব্য হবে পরিবারের সঙ্গে বিষয়টি ভাগ করে নেওয়া এবং প্রাথমিক পর্যায়ে উপলব্ধ আইনি প্রতিকার খুঁজে বের করা।

অপরাধী দেশের বাইরে অবস্থান করলে তাকে আইনের আওতায় আনার জন্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর তৎপর হওয়ার প্রয়োজন রয়েছে। সরকারের উচিত অনলাইন সহিংসতা রিপোর্ট করার জন্য মহিলাদের পরিস্থিতিগত দুর্বলতাগুলো চিহ্নিত করা এবং নির্যাতনের শিকার নারীদের আইনি সুরক্ষা ত্বরান্বিত করার পদ্ধতি শক্তিশালী করা। সরকার এবং এর সহযোগী সংস্থাগুলোকে তৃণমূল স্তরে অভিযোগ ব্যবস্থা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করার জন্য বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। সর্বোপরি সমাজের মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো, অপরাধীর যথার্থ শাস্তি এবং আইনের কঠোর প্রয়োগ না করলে নারীদের সামাজিক জীবন সাইবার অপরাধের দ্বারা বিভিন্নভাবে ব্যাহত হতে পারে।

লেখক: খন্দকার ফারজানা রহমান – সহযোগী অধ্যাপক, ক্রিমিনোলজি বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। 


সর্বশেষ - রাজনীতি