1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

শেখ হাসিনার দূরদর্শিতায় এসেছিলো আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি

মানিক লাল ঘোষ : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
মঙ্গলবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

ভাষার জন্য জীবন দিয়ে রাজপথ রঞ্জিত করার ইতিহাস বাঙালিকে করেছে মহিমান্বিত। নিজের রক্ত দিয়ে মায়ের ভাষার সম্মান রক্ষা করার এই গৌরবময় দিন ২১ ফেব্রুয়ারি আজ আর শুধু মহান শহিদ দিবস নয়, এই দিনটি আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে। বাঙালির এই গৌরবময় ইতিহাস বিশ্বদরবারে উপস্থাপিত হয়েছে স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের যোগ্য উত্তরসূরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে। বাঙালির এই গৌরবময় অর্জন বিশ্ব দরবারে উপস্থাপিত হওয়ার কারণেই মিলেছে এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি।

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করার পর পাল্টে যেতে থাকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। বিকৃত ইতিহাস চর্চা আর মুক্তিযুদ্ধের সকল অর্জনকে ধ্বংস করার নানামুখী ষড়যন্ত্র চলে দীর্ঘ দিন। ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে জনগণের স্বতস্ফুর্ত রায়ে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব পায় মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী গণমানুষের সংগঠন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সাহসী নেতৃত্বে আবার ঘুরে দাঁড়াবার স্বপ্ন দেখে দেশবাসী।

বাঙালির ললাটে যুক্ত হতে থাকে একের পর এক সাফল্য। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার প্রথমবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে সরকার পরিচালনার সময়ই ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ এর স্বীকৃতি দেয়। এখানেই থেমে থাকা নয়। জাতির পিতার রক্তের উত্তরসূরি অদম্য শেখ হাসিনার কূটনৈতিক তৎপরতায়, দ্বিতীয় দফা সরকার গঠনের পর ২০১০ সালে জাতিসংঘের ৬৫তম সাধারণ অধিবেশনে জাতিসংঘে প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব পাস হয়।

দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে রাষ্ট্রভাগ হলেও মাতৃভাষার প্রশ্নে বাঙালি বরাবরই ছিল আপোসহীন। ফলে উর্দুকে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা ঘোষণা করা হলে তা মেনে নিতে পারেনি আপোসহীন বীর বাঙালি। ক্ষোভ পরিণত হয় প্রতিবাদে। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে শুরু হয় আন্দোলন। ঢাকার পিচঢালা রাজপথ রঞ্জিত হয় রফিক, শফিক, বরকতদের তাজা রক্তে। সে আন্দোলনে বাঙালির আত্মত্যাগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিন ছিল ১৯৫২ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি। ভাষা সৈনিকদের রক্তে রঞ্জিত রাজপথ আগামী দিনের পথ নির্দেশনা দেয় বাঙালিকে। বলে দেয় কোথায় তার ঠিকানা। ভাষা আন্দোলন থেকেই শুরু হয় বাঙালির মুক্তি সংগ্রামের পথচলা।

আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারির সেই গৌরবময় দিনটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি মিলে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর। বাংলাদেশের সাফল্যের ঝুলিতে যোগ হয় আরো একটি অনন্য অর্জন। বাঙালির চেতনার প্রতীক, ভাষার জন্য আত্মত্যাগের দিন, একুশে ফেব্রুয়ারি জাতীয় শহিদ দিবস পায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদা। জাতিসংঘের সেই স্বীকৃতির পর থেকে পৃথিবীর নানা ভাষাভাষীর মানুষ দিনটি পালন করছে যথাযথ মর্যাদায় আর নিজ নিজ মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার নিদর্শন হিসেবে। ভাষার জন্য বাঙালির এই চরম আত্মত্যাগকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করার পাশাপাশি নিজস্ব ভাষা আর সংস্কৃতিকে লালন করার প্রয়োজনীয়তা আরও বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে বিশ্বব্যাপী।

বাঙালির কোন অর্জন সহজ পথে আসেনি। প্রতিটি অর্জনের পেছনে রয়েছে হয় আত্মত্যাগের ইতিহাস নয় কূটনৈতিক তৎপরতার সাফল্য, আর রয়েছে কারো না কারো দেশপ্রেমের অনন্য নিদর্শন। ২১ ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতির এই অসামান্য অর্জনের পথে যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৯৮ সালে বাঙালির হাত ধরেই। ২৯ মার্চ কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়ার মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অব দ্য সোসাইটি জাতিসংঘের মহাসচিব কফি আনানের কাছে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস’ হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব তুলে ধরেন।

সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম সুদূর প্রবাসে থেকেও বাঙালির আত্মত্যাগকে স্বীকৃতি দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। সেই প্রস্তাবনায় স্বাক্ষর করেছিলেন ভিন্ন ভাষাভাষীর ১০ জন সদস্য। এর পর জাতিসংঘের পরামর্শ অনুযায়ী বিষয়টি নিয়ে প্যারিসে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতিবিষয়ক সংগঠন ইউনেস্কোতে যোগাযোগ করা হয়।

এক বছর পেরিয়ে গেলেও এ বিষয় কোনো সিদ্ধান্ত না আসায় কানাডাপ্রবাসী আরেক বাঙালি আবদুস সালামকে নিয়ে ইউনেস্কোর সঙ্গে যোগাযোগ করেন রফিকুল ইসলাম। ১৯৯৯ সালের ৩ মার্চ আরেক ধাপ এগিয়ে যাওয়ার পথে যাত্রা শুরু করেন তিনি । ইউনেস্কো থেকে জানানো হয়, বিষয়টি ইউনেস্কোর সাধারণ পরিষদের আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত করতে হলে প্রয়োজন দাবির সপক্ষে কয়েকটি দেশের প্রস্তাব পেশ।

বিষয়টি তেমন সহজ ছিল না। কারণ এমন নির্দেশনা পাওয়ার কিছুদিনের মধ্যেই সাধারণ পরিষদের সভা। তাই রফিকুল ইসলাম যোগাযোগ করেন বাংলাদেশের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে। বাঙালির আত্মত্যাগের মহত্তম অর্জনের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির এই সুযোগ যেনো কোনভাবে হাত ছাড়া নয় সে লক্ষ্যে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা সবকিছু উপেক্ষা করে ইউনেস্কোর সদর দফতরে পাঠিয়ে দেন সেই ঐতিহাসিক প্রস্তাব। যেটি প্যারিসে পৌঁছায় ৯ সেপ্টেম্বর।

প্রস্তাব পাস নিয়ে দেখা দেয় নানামুখী অনিশ্চয়তা। উদযাপনের খরচসহ কয়েকটি কারণে ইউনেস্কোর নির্বাহী পরিষদের ১৫৭তম অধিবেশন ও ৩০তম সম্মেলনে বিষয়টি আটকে পড়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়। এই জট থেকে বেরিয়ে আসতে বেশ বড় ধরনের ভূমিকা রাখেন সেসময়ের শিক্ষামন্ত্রী ও ওই অধিবেশনের প্রতিনিধি দলের নেতা এএসএইচ কে সাদেক। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পক্ষে জনমত গড়ে তোলার পাশাপাশি অধিবেশনে তিনি সবাইকে বোঝাতে সক্ষম হন যে, দিবসটি উদযাপনে সংস্থাটির কোনো খরচ বহন করতে হবে না।

দেশি-বিদেশী ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সকল প্রতিকূলতা পার হয়ে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতায় অবশেষে ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর একুশে ফেব্রুয়ারি পায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের বিশেষ সেই মর্যাদা। ইউনেস্কোর সেই অধিবেশনে এই দিবস পালনের মূল প্রস্তাবক ছিল বাংলাদেশ ও সৌদি আরব। আর সমর্থন ছিল পৃথিবীর বেশিরভাগ দেশেরই।

২০০০ সালের একুশে ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কোর প্রধান কার্যালয় প্যারিসে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসটি পালন করা হয়। সেবছর থেকে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোতেও মর্যাদার সঙ্গে পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। বাঙালির এই মহৎ অর্জনের উদ্যেক্তা সংগঠন কানাডার মাদার ল্যাঙ্গুয়েজ লাভার্স অব দ্য সোসাইটিকে ২০০১ সালে একুশে পদকে ভূষিত করে বাংলাদেশ সরকার। মাতৃভাষা দিবসের আন্তজার্তিক স্বীকৃতি আদায়ের অনন্য ভুমিকা পালনকারী ভাষাপ্রেমী মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম ২০১৩ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ২০১৬ সালে রফিকুল ইসলামকে সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পদক ‘স্বাধীনতা পদক’-এ সম্মানিত করে বাংলাদেশ সরকার।

মায়ের ভাষার মর্যাদা রক্ষার সেই গৌরবময় একুশে ফেব্রুয়ারির ৭১ বছর স্মরণে বাঙালি আজ যেমন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় স্মরণ করবে রফিক, শফিক, বরকতসহ বায়ান্নর ভাষাসৈনিকদের। তেমনি ভালোবাসায় উচ্চারিত হবে এই আত্মত্যাগের ইতিহাসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ে মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম ও আব্দুস সালামসহ যারা রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা তাদের নামও। আর ইতিহাসের পাতায় লেখা থাকবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নাম। যার দূরদর্শিতা ও ত্বরিৎ সিদ্ধান্তের কারণে বাঙালির ললাটে যুক্ত হলো ত্যাগের মহিমায় মহিমান্বিত ২১ ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের স্বীকৃতি।

লেখক : মানিক লাল ঘোষ – সহসভাপতি, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন ও বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য।


সর্বশেষ - রাজনীতি