1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

কলঙ্কিত ইনডেমনিটি আইন : ইতিহাসের এক কালো অধ্যায়

অধ্যাপক ড. আহমেদ আমিনুল ইসলাম : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
শনিবার, ৯ জুলাই, ২০২২

৯ জুলাই বাঙালির ইতিহাসে এক কলংকিত দিন। আজ সেই ৯ জুলাই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নিহত হন। এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডে সরাসরি জড়িত ছিল সেনাবাহিনীর কিছু উচ্চাকাঙ্ক্ষী তরুণ কর্মকর্তা- পেছনে ছিল রাজনৈতিক ক্ষমতালোভী একটি চক্র। তাদের সহায় ছিল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। স্বাধীন দেশে বঙ্গবন্ধুকে প্রাণ দিতে হবে তা তিনি কল্পনায়ও ভাবেননি। অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে নানা অসন্তোষ থাকলেও সাধারণ মানুষের ওপর আস্থাশীল বঙ্গবন্ধু বিশ্বাসই করতে পারেননি যে, যে-দেশের মানুষ তাকে এত ভালোবাসে সে দেশের মানুষই তাকে হত্যা করবে!

কিন্তু ক্ষমতালোভী চক্রটি জাতির পিতার গর্বিত আত্মবিশ্বাস ভঙ্গ করে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ক্ষমতা দখল করেন তারই রাজনৈতিক সহচর ও মন্ত্রিসভার সদস্য খন্দকার মোশতাক। মোশতাকই বঙ্গবন্ধুসহ পরিবারের ১৮ সদস্যের হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদেরকে আইনিভাবে ‘অনাক্রম্যতা’ বা শাস্তি এড়াবার ব্যবস্থা প্রদানের জন্য ‘ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ’ প্রণয়ন করেন। ১৯৭৫ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি মোশতাক ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেন। সপরিবারে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাত্র দেড় মাসের মাথায় এরূপ একটি ‘কালো আইন’ জারিই প্রমাণ করে ঘাতকদের পূর্ব-প্রস্তুতি কতটা গভীর ছিল! ঘাতকেরা একদিকে যেমন চিন্তা করেছিল জাতির পিতার সকল উত্তরসূরীকে বাংলাদেশের মাটি থেকে নিশ্চিহ্নের তেমনি চিন্তা করেছিল ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক চেতনার কোনো সরকারই যেন তাদের বিচারের মুখোমুখি করতে না পারে! যাকে বলে আঁটঘাট বেধেই ক্ষমতালোভী ষড়যন্ত্রকারীরা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে। বঙ্গবন্ধুর রক্তধারা এবং আওয়ামী লীগকে এদেশের মাটি থেকে চিরতরে নির্মূলের গভীর ষড়যন্ত্র করে তারা। সে সময় বিদেশে অবস্থানের জন্য সৌভাগ্যবশত বেঁচে যান শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। সময়ের বিবর্তনে ঘাতকদের কল্পনাকে মিথ্যা প্রমাণ করে শেখ হাসিনার হাত ধরেই বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগ পুনর্জীবন লাভ করে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই জাতির জনকের রক্তধারা বীরত্বের সাথে প্রবহমান হয়ে ওঠে!। সেই প্রবহমানতায় আবহমানকালের বাঙালি হৃদয় আপ্লুত করে চলেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা। ঘাতকেরা শারীরিকভাবে জাতির পিতাকে হত্যা করে সফল হয়েছিল বটে কিন্তু বঙ্গবন্ধুর চিরঞ্জীব আদর্শ হত্যা করতে তারা ব্যর্থ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ সমুন্নত রেখে এবং ইতিহাসের কলংকমুক্তির মধ্য দিয়ে শেখ হাসিনাই ঘাতকদের বিপন্নতা ও ব্যর্থতাকেও প্রমাণ করেছেন।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর সংসদ অধিবেশন অকার্যকর থাকায় রাষ্ট্রপতি মোশতাক সে বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর অধ্যাদেশ আকারে একটি আইন প্রণয়ন করেন। এটি ‘১৯৭৫ সালের অধ্যাদেশ নং ৫০’ নামেও অভিহিত। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের নেপথ্য নায়কদের অন্যতম মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমান ১৯৭৯ সালে ৯ জুলাই সংসদে সংবিধানের ৫ম সংশোধনীর মাধ্যমে এটিকে আইন হিসেবে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেন। এরূপ কালো আইনের মাধ্যমে বাঙালি জাতির কপালে এঁকে দেওয়া হয় কলংক তিলক! এই আইনের সুরক্ষা কবচের জোরে বঙ্গবন্ধুর খুনিরা সদম্ভে ঘুরে বেড়ায়! ৯ জুলাই সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি জিয়া ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকে ১৯৭৯ সালের ৯ এপ্রিল পর্যন্ত ঘটে যাওয়া সব অন্যায়-অবিচারের সাংবিধানিক বৈধতা দেন। ইনডেমনিটির মতো কালো আইন পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল! ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট ক্ষমতালোভীরা পরিকল্পিত উপায়ে যে ট্রাজেডির জন্ম দেয় অনুরূপ ঘটনাও পৃথিবীতে বিরল! মূলত নানারূপ বিরল ঘটনার জন্ম দিয়ে জনমনে ত্রাস সৃষ্টির মাধ্যমে ১৯৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশকে অনাকাঙ্ক্ষিত অভিজ্ঞতার মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়। একটি স্বাধীন দেশের রাতারাতি পরাজিত শত্রুপক্ষের আদর্শ ধারণে তৎকালীন বিশ্বও বিস্মিত হয়েছিল!

ক্ষমতা কাঠামোর মধ্যে থেকে স্বাধীনতা বিরোধী অপশক্তি বাঙালির ইতিহাসে একের পর এক কলংকজনক ঘটনার জন্ম দেয়। ধারাবাহিক ষড়যন্ত্র আর নানারূপ অপকৌশলে রাষ্ট্রকে তারা মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ থেকে বিচ্যুত করে। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে তারা ষড়যন্ত্রের নীল-নকশা বাস্তবায়ন শুরু করে। অতঃপর ইতিহাসের জঘন্যতম এই হত্যাকাণ্ডকে ‘জায়েজ’ করার লক্ষ্যে একের পর এক মিথ্যা অপপ্রচার ও ইতিহাসের বিকৃতি ঘটায়- জাতির সামনে মিথ্যা ইতিহাসের পাহাড় গড়ে তোলে! মিথ্যা ইতিহাসের উপর্যুপরি চর্চার মধ্য দিয়ে সাধারণের মন ও মগজে মিথ্যাকেই সত্য রূপ দেওয়ার কৌশলও গ্রহণ করে। মানুষকে বিভ্রান্তির গোলক ধাঁধায় ফেলে দেয়। এই অপশক্তি একুশটি বছর মিথ্যা ইতিহাসের বেসাতি করে। বিকৃত ইতিহাসচার্চার মধ্য দিয়ে যে প্রজন্মটি বেড়ে ওঠে তাদের মধ্যে মিথ্যারই ছায়াপাত ঘটে বেশি!

ইতিহাসের সবচেয়ে কলংকিত ঘটনা বঙ্গবন্ধু হত্যা এবং বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ রুদ্ধ করার ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স’ প্রণয়ন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদেরকে রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা দেওয়ার এরূপ আইন প্রণয়ন এবং খুনিদেরকে পুরস্কৃত করাও জাতির কলংক, ইতিহাসেরও কলংক! এরূপ আইনের মাধ্যমে খুনিদেরকে রক্ষার ঘটনা শুধু বিরলই নয় কলংকজনকও বটে! ইনডেমনিট আইন শুধু বাঙালিই নয় মানবসভ্যতার ইতিহাসকেও কলংকিত করেছে।

বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী জেনারেল জিয়া এবং তার দল বিএনপি। মোশতাক খুনিদের রক্ষার জন্য যে অধ্যাদেশ জারি করেছিলেন সেই অধ্যাদেশকে সংবিধানিক স্বীকৃতির মাধ্যমে খুনিদের সুরক্ষা দিয়ে তাদের নিকট থেকেও মনস্তাত্তিক্ব সুবিধা নিয়েছিলেন জিয়া। ইনডেমনিটি অধ্যাদেশকে সংবিধানের চতুর্থ তফসিলে অন্তর্ভুক্ত করেন তিনি। খুনিদের বিচারের আওতায় না এনে বিদেশি দূতাবাসে চাকুরি দিয়ে পুরস্কৃতও করেন। উপরন্তু খুনিরাও সদম্ভে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার কথা গণমাধ্যমে বলে বেড়ান। বঙ্গবন্ধু হত্যার পূর্বাপর সবকিছুই জানতেন জিয়া। কিন্তু চতুরভাবে তিনি নেপথ্যে থেকেছেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারে রাষ্ট্রপক্ষের স্বাক্ষী কর্নেল (অব.) শাফায়াত জামিলের বিচার আদালতে সাক্ষ্য এরূপ: ১৫ আগস্ট আনুমানিক ৬টায় মেজর রশিদ তাকে বলেন, We have captured state power under Khandaker Mustaque, Sheikh is killed, do not try to take an action against us. এ কথা শুনে শাফায়াত জামিল হতচকিত হন। দ্রুত ইউনিফরম পরে হেড কোয়ার্টারের দিকে রওনা দেন। পথিমধ্যে জেনারেল জিয়াউর রহমানের বাসায় যান এবং তাকে শেভরত অবস্থায় দেখতে পান। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের খবর শুনে জিয়াউর রহমান তখন শাফায়াত জামিলকে বলেন: So what president is killed! বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান ১৯৯৬ সালের ১৯ ডিসেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে বলেন: ‘এ ব্যাপারে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত হয় এবং সেমতে এপ্রিল মাসের এক রাতে তার বাসায় আমি যাই […] আলোচনা হয় এবং সাজেশান চাইলে জিয়াউর রহমান বলেন, তোমরা করতে পারলে কিছু কর। পরে আমি রশিদের বাসায় গিয়ে জিয়ার মতামত তাকে জানাই। রশিদ তখন বলেন, এ বিষয় নিয়া তোমাকে চিন্তা করতে হবে না […] আমি deal করব। রশিদ পরে জিয়া এবং খন্দকার মোশতাক আহমদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন।’ সাংবাদিক Lawrence Lifschulty বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে জিয়ার সম্পৃক্ততা বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন: Ziaur Rahman was passively involved in the assassination of Bangabandhu Sheikh Mujibur Rahman.

ইনডেমনিটির মতো কালো আইন নিয়ে যখন আমরা কথা বলি তখন বিএনপিপন্থীরা মোশতাকের ওপর সকল দায়দায়িত্ব চাপিয়ে আলোচনাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করেন। কিন্তু আসামী ও রাষ্ট্রপক্ষের সব স্বাক্ষীর সাক্ষ্য থেকে হত্যাকাণ্ডে জিয়ার সম্পৃক্তিকে স্পষ্ট করে। বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে তার সম্পৃক্তি না থাকলে মোশতাক প্রণীত অধ্যাদেশটিও সংবিধানে কৌশলগতভাবে অন্তর্ভুক্ত হতো না। হত্যাকাণ্ডের নীরব সাক্ষী ও মদদদাতা হওয়ায় জিয়া তার শাসনামলে নিজেকে সুরক্ষাসহ প্রতিহিংসামূলক অনেকগুলো বিষয়ে স্বৈরাচারী সিদ্ধান্ত নেন। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের তদন্তে যুক্তরাজ্যের অনুসন্ধান কমিটিকে বাংলাদেশে আসতে না দেওয়া, শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানাকে জার্মানিতে আশ্রয় দেওয়ার জন্য তৎকালীন রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন রশীদ চৌধুরীকে ওএসডি করা, শেখ রেহানার পাসপোর্ট নবায়ন না করার জন্য লন্ডন দূতাবাসকে নির্দেশ দেওয়া, শেখ হাসিনার পাসপোর্ট নবায়ন করায় ভারতে নিযুক্ত তৎকালীন রাষ্ট্রদূতকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া প্রভৃতি। এছাড়া দালাল আইন বাতিলসহ কারাগারে অন্তরীণ যুদ্ধাপরাধীদেরও মুক্তি দেন।

ধর্মনিরপেক্ষ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশে তিনি ধর্মভিত্তিক রাজনীতিকে সুগম করে সংবিধানের ৩৮ অনুচ্ছেদের শর্তাবলি প্রত্যাহার করেন। ১২২ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহার করে দালালদের ভোটার হওয়ার সুযোগ তৈরি করেন। দালাল ও যুদ্ধাপরাধীদের সংসদ সদস্য হওয়ার পথও সুগম করেন চতুর জিয়া! এ লক্ষে সংবিধানের ৬৬ এবং ১২ অনুচ্ছেদের কিছু অংশও তুলে দেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ জলাঞ্জলি দিয়ে কুখ্যাত রাজাকার শাহ আজিজকে প্রধানমন্ত্রী এবং আলীমকে মন্ত্রী করেন। মুক্তিযুদ্ধের শহিদ পরিবারের জন্য বঙ্গবন্ধু যেসব বাড়ি বরাদ্দ করেছিলেন জিয়াউর রহমান পুলিশ ও সেনা সদস্যদের দিয়ে ওইসব বাড়ি থেকে শহিদ পরিবারকে উচ্ছেদ করেন।

১৯৭৩ সালের ১৮ এপ্রিল তারিখের গেজেটে গোলাম আযমসহ অনেকের নাগরিকত্ব বাতিল করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। ১৯৭৮ সালে পাকিস্তানিদের সহযোগী ও যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে এনে নাগরিকত্ব প্রদান করেন জিয়া। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদরে বেছে বেছে কোর্ট মার্শালের মাধ্যমে হত্যা করেন। নিহতদের অনেকের লাশও পরিবারের কাছে দেননি। জিয়াই নির্বিচার হত্যা ও গুম-খুনের মাধ্যমে সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন! ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার লক্ষে সূক্ষ্ম কৌশল ও পরিকল্পিতভাবে তিনিই মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের ইতিহাস নিষিদ্ধ করে বিকৃত ইতিহাসচর্চার ভিত্তি রচনা করেন। এসব কর্মকাণ্ডই মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে জিয়ার অবস্থান তরুণ প্রজন্মের কাছে আজ প্রশ্নচিহ্ন হয়ে দেখা দিয়েছে! মনস্তাত্ত্বিকভাবে ভীত থাকার কারণেই তার সময়ে ‘বঙ্গবন্ধু’, ‘জয় বাংলা’ প্রভৃতি শব্দের ব্যবহারও নিষিদ্ধ করেন। ‘বীর-উত্তম’ খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা হয়েও তিনি পাকিস্তান-প্রীতিতে এতটাই নিমগ্ন ছিলেন যে, ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী’ কিংবা ‘রাজাকার’ শব্দ ব্যবহারেও গণমাধ্যমে বিধিনিষেধ আরোপ করেন! এসব কারণেই সাম্প্রতিককালে তার খেতাব প্রত্যাহারের যে কথা উঠেছে তার পটভূমি একেবারেই যে অমূলক তাও মনে হয় না। জিয়ার রাজনৈতিক প্রতিহিংসামূলক কর্মকাণ্ডের জন্য পরবর্তীকালে বাংলাদেশে সামাজিক বিশৃঙ্খলা দানা বেঁধে ওঠে। এ ছাড়া, দীর্ঘদিনের আন্দোলন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু যে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করেছিলেন বহুদলীয় গণতন্ত্রের নামে জিয়াই জাতিকে বিভক্ত করেন। ধর্মভিত্তিক রাজনীতির আড়ালে সাম্প্রদায়িকতারও বিস্তার ঘটান। জিয়ার উত্তরাধিকার হিসেবে বেগম খালেদাও ইতিহাস বিকৃতি অব্যাহত রাখেন। ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় এসে বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পদোন্নতি দেন। আর ১৯৯৩ সাল থেকে জাতির বিষাদঘন ১৫ আগস্টকে নিজের জন্মদিন হিসেবে পালন শুরু করেন! কালান্তরে প্রকাশিত খালেদার ৬টি জন্মদিন থাকলেও ১৫ আগস্টের শোককে ভিন্নখাতে প্রবাহের জন্য জাতীয় শোক দিবসেই জন্মোৎসবে মাতেন!

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ১৯৯৬ সালের ১২ নভেম্বর সংসদে ‘ইনডেমনিটি অর্ডিন্যান্স রোহিতকরণ বিল’ আনে। এই বিল বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ প্রশস্ত করে। সেদিন সংসদ অধিবেশনে বিএনপির সবাই ছিলেন অনুপস্থিত! উপরন্তু, দায়রা জজ আদালতকর্তৃক বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় ঘোষণার দিন তারা হরতালও পালন করে! উচ্চ আদালত ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করলে বাঙালির ইতিহাস থেকে অন্ধকার কলংকচিহ্নের অপনোদন ঘটে। ইনডেমনিটি আইন বাতিলসহ বিএনপি-জামায়াতের নানারূপ বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। খুনিদের কেউ কেউ বিদেশে অবস্থানের কারণে তাদেরকে বিচারের মুখোমুখি করা যায়নি। তাদেরকে দেশে ফিরিয়ে আনার কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই যুদ্ধাপরাধীর বিচার প্রক্রিয়া অব্যাহত আছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচারও আমাদের ইতিহাসের কলংকমুক্তির অনন্য দৃষ্টান্ত। জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই একের পর এক ইতিহাসের কলংক মোচন সম্ভব হচ্ছে। শেখ হাসিনার প্রজ্ঞা ও দূরদর্শিতায় জাতির কলংক মোচনের মাধ্যমেই বাংলাদেশ আজ অসীম আলোর আহ্বানে এগিয়ে চলেছে। তাই ইতিহাস নিজের প্রয়োজনেই অনন্তকাল মনে রাখবে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাকে।

লেখক : ড. আহমেদ আমিনুল ইসলাম – অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়


সর্বশেষ - রাজনীতি