সিআইডি’র প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান বলেছেন, সিআইডি আত্মহত্যা রোধে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করবে। সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর আত্মহত্যা করার পর এই বিষয়টি উঠে এসেছে। এজন্য ফেসবুককে অনুরোধ করা হয়েছে যাতে আত্মহত্যা রোধে আমাদের সঙ্গে কাজ করে। তিনি জানান, জরুরী সেবা ৯৯৯ চালুর পর থেকে গত প্রায় চার বছরে ফোনে সাড়া দিয়ে ১ হাজার ৪৯২টি আত্মহত্যা ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। বুধবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগ কার্যালয়ে আত্মহত্যা বিষয়ে আয়োজিত সেমিনারে সিআইডি’র প্রধান এসব তথ্য জানান। সিআইডির প্রধান জানান, সম্প্রতি ফেসবুক লাইভে এসে নিজের পিস্তলের গুলিতে আত্মহত্যা করেন চিত্রনায়ক রিয়াজের শ্বশুর ব্যবসায়ী আবু মহসীন খান। তবে তার লাইভের শুরুতে ফেসবুক কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারেনি তিনি আত্মহত্যা করবেন। তাই যথাসময়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে পারেনি সংস্থাটি। সিআইডি প্রধান ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান জানান, মহসীন খান ফেসবুক লাইভে ছিলেন সাড়ে ১৬ মিনিটের বেশি। পরে মনে হলো কেন এ বিষয়টি আমরা টের পেলাম না? এ বিষয়ে কেউ আমাকে দোষারোপ করেনি। আমি নিজেই নিজেকে দোষারোপ করেছি। এরপর বিষয়টি নিয়ে ফেসবুকের সিঙ্গাপুর অফিসের কাছে জানতে চাই। ফেসবুক আমাদের জানাল, লাইভের প্রথমে মহসীন খানের কথা স্বাভাবিক ছিল। তিনি আত্মহত্যা করবেন এমনটা তাদের মনে হয়নি।
তিনি জানান, ফেসবুক জানিয়েছে লাইভে প্রথমে পারিবারিক জীবন, ব্যক্তিগত জীবন, ব্যবসায়িক জীবন নিয়ে কথা বলছিলেন মহসীন খান। এর ফলে আত্মহত্যার বিষয়টি সংস্থাটি বুঝতে পারেনি। তবে লাইভ শেষ হওয়ার আড়াই মিনিট আগে ফেসবুক বুঝতে পারে তিনি আত্মহত্যা করবেন। এ বিষয়ে ফেসবুককে অনুরোধ করা হয়েছে, তারা যাতে আত্মহত্যা রোধে আমাদের সঙ্গে কাজ করে। ব্যারিস্টার মাহবুবুর রহমান জানান, মহসীন খান যখন লাইভ শুরু করেন, তখন যারা লাইভ দেখছিলেন আমরা তাদের ট্র্যাক করার চেষ্টা করেছি। এটার উদ্দেশ্য কাউকে দোষারোপ করা নয়, তাদের সচেতন করা। যাতে করে ভবিষ্যতে তারা সচেতন হয়ে আমাদের জানাতে পারে। সিআইডি আত্মহত্যা রোধে কাজ করে যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে এ বিষয়ে জনসচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করবে।
সেমিনারে ৯৯৯- এর অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক তবারক উল্লাহ জানান, জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ চালুর পর থেকে গত প্রায় চার বছরে ফোনে সাড়া দিয়ে ১ হাজার ৪৯২টি আত্মহত্যা ঠেকানো সম্ভব হয়েছে। তবে ফোনকলে সাড়া দিয়ে ১ হাজার ১৩৫টি মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ, যারা আত্মহত্যা করেছেন। তিনি জানান, ২০১৭ সালে চালু হওয়া জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ বর্তমানে ৫০০ জনবল নিয়ে কাজ করছে। চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯৯৯-এ প্রায় সাড়ে ৩ কোটি কল এসেছে। এর মধ্যে ১ কোটি ১৫ লাখ ফোন কলের সেবা দেয়া হয়েছে। যা মোট কলের ৩৩ শতাংশ। এর মধ্যে ৭৮ ভাগ পুলিশী সেবা, ৯ ভাগ ফায়ার সার্ভিস এবং ১১ ভাগ এ্যাম্বুলেন্স সংক্রান্ত সেবা। অতিরিক্ত উপ-মহাপরিদর্শক তবারক উল্লাহ জানান, ৯৯৯’র শুরু থেকে চলতি বছরের ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত ১ হাজার ৪৯২টি আত্মহত্যা নিয়ে ফোন কল এসেছে, যা আমরা প্রতিরোধ করতে পেরেছি। তবে কয়েকজন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। এর বাইরে আত্মহত্যার ফোন পেয়ে ১ হাজার ১৩৫টি আত্মহত্যা জনিত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ৯৯৯’র এই কর্মকর্তা জানান, জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯-এ অটো কলার লোকেশন না থাকায় অনেক সমস্যায় পড়তে হয়। কলারের লোকেশন আমরা যত তাড়াতাড়ি পেয়ে যাব তত তাড়াতাড়ি যে কোন সমস্যার সমাধান করা সহজ হবে। ৯৯৯-এ অটো কলার লোকেশন যুক্ত করতে কাজ চলছে।
