পর্যটন অবকাঠামো নির্মাণসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে বিনিয়োগে আগ্রহের কথা জানিয়েছে শ্রীলঙ্কা। বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতকালে বাংলাদেশে নবনিযুক্ত শ্রীলঙ্কার হাইকমিশনার সুদর্শন দীপাল সুরেশ সেনাভিরত্ন এ আগ্রহের কথা জানান।
সাক্ষাতকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শ্রীলঙ্কান উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করছি। শ্রীলঙ্কান উদ্যোক্তারা এখানে বিনিয়োগ করতে পারেন।’ এসময় শেখ হাসিনা বাংলাদেশের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ এবং উদার বৈদেশিক বিনিয়োগ নীতির কথা উল্লেখ করেন।
শ্রীলঙ্কান হাইকমিশনার পর্যটনের পাশাপাশি সি-ক্রুজ চালু এবং উপকূলীয় এলাকায় পর্যটন অবকাঠামো নির্মাণে তার দেশের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি বলেন, ‘তার দেশ জাহাজ, হাসপাতাল, পর্যটন, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, এভিয়েশন সেক্টরে বিনিয়োগ এবং পারস্পরিক সহযোগিতা বিনিময়ে আগ্রহী।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভিশনারি নেতৃত্ব এবং প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশে অভূতপূর্ব উন্নয়ন সফলতার প্রশংসা করেন হাইকমিশনার। তিনি জানান, করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশের নেয়া ব্যবস্থায় তিনি অভিভূত।
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার সরকার জনগণের মধ্যে করোনাভাইরাস নিয়ে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করেছে। মানুষ সচেতন হয়েছে। যার ফলে করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হয়েছে।’
বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কূটনীতিকদের জন্য করোনা টিকা সরবরাহ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন শ্রীলঙ্কান হাইকমিশনার।
অটিজম বিষয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় সায়মা ওয়াজেদ হোসেনকে অভিনন্দন জানিয়ে হাইকমিশনার বলেন, ‘অটিজম সেক্টরে তার কাজ প্রশংসনীয়।’ অটিজম বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে সহযোগিতা বিনিময়ে শ্রীলঙ্কা আগ্রহী বলে জানান তিনি।
এসময় অটিস্টিক, তৃতীয় লিঙ্গসহ বিপদগ্রস্ত মানুষের সহায়তায় সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
সামাজিক সুরক্ষা সুবিধার আওতায় প্রান্তিক উপকারভোগীদের ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ সহায়তা প্রদানের প্রশংসা করেন শ্রীলঙ্কান হাইকমিশনার। তিনি এটিকে ‘groundbreaking’ (যুগোপযোগী) হিসেবে উল্লেখ করেন।
নিজের ছাত্র জীবনের কথা স্মরণ করে হাইকমিশনার জানান, ‘দিল্লিতে পড়াশোনা করার সময় বিভিন্নভাবে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সহায়তা করার চেষ্টা করেছেন তিনি।
মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সহায়তার জন্য তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধানমন্ত্রী।
একই দিনের আরেকটি সাক্ষাতে গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে মালদ্বীপের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ও সহযোগিতা বিনিময়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নিয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশে নবনিযুক্ত মালদ্বীপের হাইকমিশনার শিরুজিমাথ সামির।
বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাতে যান মালদ্বীপের হাইকমিশনার। তখন এ বিষয়ে তার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কথা হয়। এছাড়াও বৈঠকে সি-ক্রুজ চালু, রোহিঙ্গা ইস্যু, দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য, শিক্ষা, করোনা সঙ্কটসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
গভীর সমুদ্রে মাছ শিকারে মালদ্বীপের সঙ্গে অভিজ্ঞতা ও সহযোগিতা বিনিময়ে আগ্রহের জবাবে হাইকমিশনার বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতি বাংলাদেশ সফরের সময় এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হতে পারে।
এ সময় মালদ্বীপে সি-ক্রুজ চালুর সম্ভাবনার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, শীতে সমুদ্র শান্ত থাকে। শীত মৌসুমে আমরা সি-ক্রুজ চালু করতে পারি।
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে আগ্রহের কথা জানিয়ে মালদ্বীপের হাইকমিশনার বলেন, আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্য বাড়াতে চাই। এ সময় বাংলাদেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ফিশারিজ ছাড়াও আমাদের কৃষি এবং কৃষিজাত পণ্য, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য আছে। এগুলোর বিষয়েও মালদ্বীপের উদ্যোক্তারা বিবেচনা করতে পারে। সিরামিক, ওষুধ, তথ্য প্রযুক্তি সেক্টরেও মালদ্বীপ বিনিয়োগ করতে পারে।
মালদ্বীপের রাজধানী মালে আইল্যান্ডের পাশে নতুন শহর গড়ে তোলা হচ্ছে জানিয়ে সেখানে বিনিয়োগ করতে বাংলাদেশকে আহ্বান জানান হাইকমিশনার শিরুজিমাথ সামির।
মালদ্বীপের শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা করতে আরও বেশি বাংলাদেশে আসার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে আমরা অনেক প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং কলেজ, মেডিকেল কলেজ, এভিয়েশন বিশ্ববিদ্যালয়, মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছি। সেখানের মালদ্বীপের শিক্ষার্থীরা পড়াশোনা করতে পারে।
এ সময় হাইকমিশনার তাদের পর্যটন শিক্ষা গ্রহণে বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, মালদ্বীপ পর্যটনে ভালো। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা সেখানে পর্যটন বিষয়ে পড়াশোনা করতে যেতে পারে।
ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জায়গায় মালদ্বীপের শিক্ষার্থীরা মেডিকেলে পড়াশোনা করছে। তাদের করোনা টিকা দিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন শিরুজিমাথ সামির। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা প্রথমে শিক্ষকদের টিকা দিচ্ছি। পর্যায়ক্রমে তাদেরও টিকা দেওয়া হবে। পাশাপাশি মালদ্বীপে বসবাসরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের করোনা টিকা দেয়ার অনুরোধ জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শ্রমিকরা মালদ্বীপের আর্ত-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন উল্লেখ করে বাংলাদেশে নিযুক্ত দেশটি হাইকমিশনার জানান, তার সরকার সেখানে কর্মরত শ্রমিকদের টিকা দেয়া শুরু করতে যাচ্ছে।
সাক্ষাতের সময় অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রধানমন্ত্রীর সামরিক সচিব মেজর জেনারেল নকিব আহমদ চৌধুরী।