1. অন্যরকম
  2. অপরাধ বার্তা
  3. অভিমত
  4. আন্তর্জাতিক সংবাদ
  5. ইতিহাস
  6. এডিটরস' পিক
  7. খেলাধুলা
  8. জাতীয় সংবাদ
  9. টেকসই উন্নয়ন
  10. তথ্য প্রযুক্তি
  11. নির্বাচন বার্তা
  12. প্রতিবেদন
  13. প্রবাস বার্তা
  14. ফিচার
  15. বাণিজ্য ও অর্থনীতি

জনসম্পৃক্ততা না রেখে আর কারো জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ নেই

নিউজ এডিটর : ইবার্তা টুয়েন্টিফোর ডটকম
সোমবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৪

৭ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রেরই বিজয় হলো। আওয়ামী লীগ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখার পক্ষে কাজ করেছে। অন্যদিকে বিএনপি জোট অনির্বাচিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আন্দোলনের নামে জ্বালাও-পোড়াও সহিংসতা চালিয়েছে। নির্বাচন বানচাল করতে বিএনপির সঙ্গে যোগ দেয় দেশি-বিদেশি একাধিক চক্র।

এমন পরিস্থিতিতে নির্বাচন আয়োজন করা অনেকটা চ্যালেঞ্জ ছিল, কিন্তু নির্বাচন কমিশন সাংবিধানিক ধারা অক্ষুণ্ন রাখতে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করে। সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করে দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন যথাসময়ে অনুষ্ঠিত হয়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশবাসীকে কথা দিয়েছিলেন, তিনি একটি সুন্দর নির্বাচন উপহার দেবেন। অনেকেই আশঙ্কা করেছিল, হয়তো এটি কথার কথা।

পশ্চিমা শক্তির চাপের কারণে অনেকেই নির্বাচন নিয়ে সন্দিহান ছিল। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার কারণেই দলীয় সরকারের অধীনে যে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করা যায়, সেটি প্রমাণিত হয়েছে।
রাজনীতিতে নতুন বার্তাবাংলাদেশের সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাই রাষ্ট্র পরিচালনা করবেন। এর বাইরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।

আর জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে প্রতিনিধি বা সংসদ সদস্য নির্বাচিত হবেন। আর এই ভোট আয়োজন, গ্রহণ ও ফলাফল প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। এটি একটি স্বাধীন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। নির্বাচন কমিশন মেরুদণ্ড সোজা করে দায়িত্ব পালন করলে যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করা যায়, তার প্রমাণ দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন। দলীয় সরকারের অধীনেও যে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব, সেটি এবার প্রমাণিত হয়েছে।

নির্বাচনের দিন অনিয়ম হয়েছে, এটি কেউ জোর দিয়ে বলতে পারবে না। কমিশন খুব কঠোর ভূমিকা পালন করেছে। সরকারি দলের কোনো প্রার্থী বাড়তি সুবিধা তো পানইনি, বরং যাঁরা ক্ষমতা দেখাতে গিয়েছেন, তাঁরাই বিপদে পড়েছেন। তফসিল ঘোষণার পর প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী সরকারের প্রভাবমুক্ত হয়ে কমিশনের অধীনে কাজ করেছে। প্রশাসনও পক্ষপাতিত্ব করার চেষ্টা করলে তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে।

নির্বাচন ভোট উৎসবে পরিণত হয়েছিল। শহরের তুলনায় গ্রামে উৎসবমুখর পরিবেশ বেশি ছিল। বিএনপি-জামায়াতের আগুন সন্ত্রাসের কারণে মানুষের মনে কিছুটা আতঙ্ক থাকলেও অতীতের যেকোনো নির্বাচন থেকে পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন যে একটি মডেল নির্বাচন হয়েছে, তার পক্ষে অনেক যুক্তি আছে। বাংলাদেশের নির্বাচন উৎসবমুখর হলেও নির্বাচনকেন্দ্রিক সহিংসতা, সংঘাত ও মৃত্যুর ঘটনা দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। একাদশ সংসদ নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল অংশগ্রহণ করলেও নির্বাচনে সংঘাত-সহিংসতা অনেক বেশি হয়েছিল। শুধু নির্বাচনের দিন ও তার আগের দিন মিলিয়ে ১৭ জন নিহত হয়েছিল। আর ২০১৪ সালের নির্বাচন বানচাল করতে শতাধিক মানুষকে হত্যা করেছিল বিএনপি ও জামায়াতের সন্ত্রাসীরা।

নির্বাচন অতীতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের কাছে নির্যাতনে পরিণত হয়েছিল। ২০০১ সালে বিএনপি নির্বাচনে জয়লাভ করার পর সনাতন ধর্মের লোক আওয়ামী লীগকে ভোট দেয়—এই অপরাধে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় হামলা হয়েছিল। বাড়িঘর লুটপাট, খুন, ধর্ষণের বিভীষিকার মাত্রা বিশ্বমানবতাকে লজ্জা দিয়েছিল। তারপর ২০১৪ সালেও নির্বাচন বানচাল করতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট করা হয়েছিল। সে সময়ও বেশ কয়েকটি জেলায় হামলার শিকার হয়েছে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়। একসময় পরিস্থিতি এমন হয়েছিল যে নির্বাচন হলেই অবধারিতভাবে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট করা হতো। ওই সময় তাদের কাছে নির্বাচন হয়ে ওঠে আতঙ্কের নাম।

ভোটগ্রহণের প্রক্রিয়া, গণনা ও ফলাফল প্রকাশ নিয়ে কোনো ধরনের বড় অভিযোগ দেশি-বিদেশি গণমাধ্যম, দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের কাছ থেকে আসেনি, বরং কমিশন প্রশংসিত হয়েছে। ভোটের এক দিন আগে যেভাবে ট্রেনে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছিল দুর্বৃত্তরা, তাতে অনেক ভোটারই ভোটকেন্দ্রে যেতে উত্কণ্ঠিত ছিলেন, যার কিছুটা প্রভাব শহরাঞ্চলে দেখা গেছে। বিছিন্ন কিছু ঘটনা ছাড়া এককথায় বলা যায়, নির্বাচন সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে।

নির্বাচনে বড় স্বস্তির জায়গা হলো, যাঁরা ভোট দিতে চেয়েছেন, তাঁরা অবাধে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পেরেছেন। কেউ ভোট দিতে গিয়ে ভোট দিতে পারেননি কিংবা দিতে গিয়ে বাধার শিকার হয়েছেন, এমন কোনো অভিযোগ কারো নেই।

গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ক্ষেত্রে ভোটের হার কোনো মুখ্য বিষয় নয়। নির্বাচনে ৪১.৮ শতাংশ ভোট পড়েছে। এটিকে ভালো উপস্থিতি বলা না গেলেও প্রেক্ষাপট বিবেচনা করলে এটি কমও নয়। ভোটের হার নিয়ে এক শ্রেণির মানুষ কমিশনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে।

ভোট অবাধ ও সুষ্ঠু হয়েছে—এই সার্টিফিকেট বিদেশি পর্যবেক্ষকরা সবাই একবাক্যে দিয়েছেন। সব বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকের একই অভিমত। ভারত, চীন, রাশিয়া, সৌদি আরব, জাপানসহ বেশির ভাগ দেশ সরকারকে স্বাগত জানিয়েছে। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও কমনওয়েলথ পাশে থাকার কথা বলছে। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা শুরুতে নির্বাচন নিয়ে অভিযোগ করলেও তাদেরও সুর নরম হয়েছে, কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছে এসব দেশ।

নির্বাচন কমিশন শুরু থেকেই আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে খুব কঠোর ছিল। এ ক্ষেত্রে দলীয় কিংবা স্বতন্ত্র কাউকেই ছাড় দেওয়া হয়নি। শোকজ, জরিমানা, মামলার মুখোমুখি হতে হয়েছে অনেক হেভিওয়েট প্রার্থীকেও। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে নির্বাচন শেষ হওয়ার দুই ঘণ্টা আগে চট্টগ্রাম-১৬ আসনের নৌকা প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছে। এমন ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। যেখানেই অনিয়ম হয়েছে, সেটি প্রশাসন কিংবা প্রার্থী কাউকেই ছাড় দেওয়া হয়নি।

নির্বাচনে অনেক ক্ষেত্রেই নতুনত্ব আছে। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার কারণে একদিকে যেমন নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়েছে, অন্যদিকে দলীয় নেতাদের জনপ্রিয়তা যাচাই করা গেছে। আগে নৌকা পেলেই তাঁকে যাঁরা নিশ্চিত বিজয়ের গ্যারান্টি মনে করতেন, তাঁদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। জাতীয় পর্যায়ের অনেক নেতা নৌকা নিয়েও জিততে পারেননি।

জনগণের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার সুযোগ হয়েছে, যার কারণে ব্যাপকসংখ্যক স্বতন্ত্র প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন। এটি রাজনীতি ও রাজনীতিবিদদের কাছে নতুন বার্তা। জনগণের জন্য কাজ না করে, জনসম্পৃক্ততা না রেখে আর কারো জনপ্রতিনিধি হওয়ার সুযোগ নেই।

লেখক : তাপস হালদার – সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য, সম্প্রীতি বাংলাদেশ


সর্বশেষ - রাজনীতি